ছোটদের স্নেহ ও বড়দের সম্মান করা ইসলামের বিধান। মানবতার সেবা এবং প্রতিটি মানুষের স্ব স্ব অধিকার আদায় ও মর্যাদা প্রদান করা মহান প্রভুর ইবাদতের অন্তর্ভুক্ত। কারও অধিকার নষ্ট ও কাউকে সামান্যতম অপমান করার প্রতি ইসলাম সমর্থন দেয় না। মহানবী (সা.) তাঁর ঐতিহাসিক বিদায় হজের ভাষণে ঘোষণা দেন, ‘নিশ্চয়ই তোমাদের জন্য পরস্পর রক্তপাত, মালসম্পদ আত্মসাৎ ও সম্মান ক্ষুণ্ন করা হারাম, যেমনিভাবে আজকের এ হজের দিনে এসব অন্যায় হারাম।’ (বুখারি, মুসলিম) কাউকে ভিত্তিহীন কোনো কারণে দোষারোপ করা অপবাদ এবং কোনো বিষয়ে ভিত্তিহীন তথ্য প্রচার করা হচ্ছে অপপ্রচার। অপবাদ ও অপপ্রচারের অন্যতম অসৎ উদ্দেশ্য হলো মানুষকে কোনো কারণ ছাড়াই অপরাধী হিসেবে তুলে ধরা। সমাজে মানুষের সম্মান-মর্যাদা ও ব্যক্তিত্বকে ক্ষুণ্ন করা। এক ধরনের স্যাডিস্ট বা বিকৃত মনস্কের লোকজন অবান্তর অপবাদের মাধ্যমে সামাজিক সুস্থতা বিনষ্ট করে। সত্যকে মিথ্যা আর মিথ্যাকে সত্য হিসেবে ধূম্রজাল সৃষ্টির জঘন্য প্রবণতায় মেতে ওঠে। অপবাদ দেওয়া এবং অহেতুক কাউকে দোষারোপ করা বর্তমানে সামাজিক মহামারির আকার ধারণ করেছে। ইসলামের দৃষ্টিতে অপবাদ-অপপ্রচার জঘন্যতম অপরাধ। মহানবী (সা.) বলেছেন, ‘মুমিনদের প্রতি তোমরা ভালো ধারণা পোষণ করবে। অনুমান করেও কিছু বলা যাবে না। কারণ আল্লাহ বলেন, “হে মুমিনরা! তোমরা অনুমান থেকে দূরে থাক। কারণ অনুমান কোনো কোনো ক্ষেত্রে পাপ”।’ (সুরা হুজুরাত, আয়াত ১২) অন্য হাদিসে রসুলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেন, ‘যে ব্যক্তি কোনো মুমিনকে এমন কোনো দোষে দোষারোপ করবে যা থেকে সে মুক্ত, আল্লাহ তাকে জাহান্নামিদের বমি এবং তাদের শরীরের ক্ষতস্থান থেকে নির্গত দূষিত রস-পুঁজ জমা হওয়া গর্তে স্থান করে দেবেন।’ (আবু দাউদ)
ইসলামে মিথ্যা দোষারোপ ও অপবাদের মোটেও সুযোগ নেই। এটা কোরআন-হাদিসে ও সামাজিকভাবে অত্যন্ত ঘৃণিত ও শাস্তিযোগ্য অপরাধ। আল্লাহ বলেন, ‘তোমরা মিথ্যাচার থেকে দূরে থাক।’ (সুরা হজ, আয়াত ৩০) অন্য আয়াতে মহান প্রভু ঘোষণা করেন, ‘যারা বিনা অপরাধে ইমানদার পুরুষ ও নারীদের কষ্ট দেয় তারা মিথ্যা অপবাদ ও প্রকাশ্য পাপের বোঝা বহন করে।’ (সুরা আহজাব, আয়াত ৫৮) যদি কেউ কোনো ব্যক্তির মানসম্মান ক্ষুণœ করে, তার সম্পর্কে রসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘কোনো মুসলমান যদি অন্য মুসলমানকে এমনভাবে লাঞ্ছিত করে, যাতে তার মানহানি ঘটে ও খাটো করা হয়, আল্লাহ তাকে এমন স্থানে লাঞ্ছিত করবেন, যেখানে তার সাহায্য প্রাপ্তির আশা ছিল।’ (আবু দাউদ) এ ধরনের অপবাদপ্রবণতা যারা পরিহার করবে তাদের প্রতি সুসংবাদ হিসেবে রসুলুল্লাহ (সা.) ঘোষণা করেন, ‘যে তার ভাইয়ের অনুপস্থিতিতে সম্মানহানি করা থেকে বিরত থাকে, তাকে জাহান্নাম থেকে মুক্ত করা আল্লাহ নিজের জন্য অপরিহার্য করে নেন।’ (আহমদ)
কোনো দুর্বৃত্ত তার হীনস্বার্থ চরিতার্থের জন্য কোনো মিথ্যা খবর পরিবেশন করলে অনেকে এর সত্যতা যাচাই না করেই সবার কাছে প্রচার করে বেড়ায়। ইসলামের দৃষ্টিতে তা-ও মহাপাপ ও জঘন্যতম অপরাধ। আল্লাহ ঘোষণা করেন, ‘হে ইমানদাররা! যদি কোনো পাপাচারী ব্যক্তি তোমাদের কাছে কোনো খবর নিয়ে আসে তাহলে তোমরা তার সত্যতা যাচাই করবে, যাতে অজ্ঞতাবশত তোমরা কোনো জাতির ক্ষতি সাধনে প্রবৃত্ত না হও এবং পরে তোমাদের কৃতকর্মের জন্য লজ্জিত না হও।’ (সুরা হুজুরাত, আয়াত ৬)লেখক : গবেষক, ইসলামিক রিসার্চ সেন্টার, বসুন্ধরা, ঢাকা।