মঙ্গলবার, ৭ জুন, ২০২২ ০০:০০ টা

মহান আল্লাহর সৃষ্টিকুশলতা

আল্লামা মাহ্‌মুদুল হাসান

এই যে আমার প্রশ্ন জাগছে, আল্লাহ শুধু এমন একটি অঙ্গ সৃষ্টি করলেন কেন, যা চোখের কাজ করত, দেমাগের কাজ করত, হাত-পা, নাক-কান সবকিছুর কাজ করত? আল্লাহ তো অসীম ক্ষমতার অধিকারী। একটি অঙ্গ দ্বারাই সব কাজ করাতে পারেন। এতগুলো অঙ্গের কী দরকার? আল্লাহ বলেন, এর উত্তর তোমার শরীরের মধ্যে গভীরভাবে গবেষণা করলে পেয়ে যাবে। উত্তর হলো, তোমার শরীরের সব অঙ্গ সুস্থ থাকলে এবং একটি অন্যটিকে সহযোগিতা করলে তোমার ভালো লাগে, নিরাপদ থাকে। এমনিভাবে পৃথিবীর সব মানুষ চাই সে মুসলিম হোক বা অমুসলিম, একটা শরীরের মতো। স্বভাবগতভাবে মানুষকে আল্লাহ একে অন্যের মুখাপেক্ষী বানিয়েছেন। আমি ড্রাইভারের মুখাপেক্ষী, ড্রাইভার আমার মুখাপেক্ষী। চাকর মালিকের মুখাপেক্ষী, মালিক চাকরের মুখাপেক্ষী। ডাক্তার রোগীর মুখাপেক্ষী, রোগী ডাক্তারের মুখাপেক্ষী। ইঞ্জিনিয়ার বাড়ির মালিকের মুখাপেক্ষী, বাড়ির মালিক ইঞ্জিনিয়ারের মুখাপেক্ষী। মুসল্লি ইমামের মুখাপেক্ষী, ইমাম মুসল্লিদের মুখাপেক্ষী। সৃষ্টিগতভাবে আল্লাহ যেমন শরীরে অনেক অঙ্গ রেখেছেন ব্যক্তির শান্তি-নিরাপত্তার জন্য, তদ্রূপ সামাজিক নিরাপত্তা, রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তা, অর্থনৈতিক নিরাপত্তা, ইমান ও আমলের নিরাপত্তা, দুনিয়া ও আখেআতের নিরাপত্তা, সব ক্ষেত্রেই মানুষের একজনকে অন্যের মুখাপেক্ষী বানিয়েছেন। অন্যের প্রতি দয়া করা, অন্যের দুঃখ-কষ্ট দেখে মন ব্যথিত হওয়া এবং সাহায্য করতে এগিয়ে যাওয়া ইত্যাদি কল্যাণকর স্বভাব আল্লাহ আমাদের দান করেছেন। এসব গুণসম্পন্ন ব্যক্তিকে আমরা পরোপকারী বলি, জনদরদি, সমাজসেবী বলি। এ গুণের কিছু অংশ ডাক্তারের মধ্যে আছে, কিছু অংশ ইঞ্জিনিয়ারের মধ্যে আছে, তদ্রূপ কিছু অংশ গরিবের মধ্যে, কিছু অংশ ধনীর মধ্যে, কিছু বৃদ্ধ-বৃদ্ধার মধ্যে, কিছু যুবক-যুবতীর মধ্যে, কিছু আলেমের মধ্যে, কিছু ইমামের মধ্যে, কিছু মুসল্লির মধ্যে, এভাবে সবার মধ্যে ভাগ করা আছে। সব গুণ তো একজনের মধ্যে থাকে না। আদর্শ ডাক্তার যখন রোগী দেখে তখন কত দেবে না দেবে সেদিকে লক্ষ্য করে না। আগে রোগী বাঁচানোর চেষ্টা করে। যেমন কোনো ব্যক্তি পানিতে পড়ে গেলে তাকে আগে তুলে এনে বাঁচানোর চেষ্টা করা হয়। দেশের শান্তির জন্য কী করণীয়? আল্লাহর দান করা দয়ামায়া, ক্ষমার স্বভাব যদি সমাজের লোকের মধ্যে থাকে, দেশের নাগরিকদের মধ্যে থাকে তাহলে পুরো দেশে শান্তির সুবাতাস বইবে সর্বদা। যেমন ছিল সাহাবায়ে কিরামের জমানায়। অনুসরণ করতে হলে নবীর জিন্দেগিকে, সাহাবিদের জিন্দেগিকে অনুসরণ করতে হবে। আল্লাহকে অস্বীকারকারী, আল্লাহর দীনকে অমান্যকারী কোনো ব্যক্তি, গোষ্ঠী বা জাতির কথা, কাজ ও চিন্তাধারার অনুসরণ-অনুকরণে শান্তির দেখা মিলবে না আদৌ। খোলাফায়ে রাশেদিন কীভাবে রাষ্ট্র পরিচালনা করেছে? ধনী-বিত্তশালীদের কাছ থেকে জাকাত আদায় করে গরিবদের দিয়েছে। ফলে সমাজের অর্থনৈতিক ভারসাম্য ঠিক ছিল। বেকার বাড়েনি, চোর-ডাকাত, ছিনতাইকারী-সন্ত্রাসী জন্ম নেয়নি। কোরআনে কারিমে আল্লাহ বলেছেন, হে বিত্তশালীরা! আমি তোমাদের যেভাবে অগণিত নিয়ামত দিয়ে পৃথিবীর বুকে প্রতিষ্ঠিত করেছি, আমার দেওয়া অঙ্গপ্রত্যঙ্গ দিয়ে তোমরা আজ অর্থের পাহাড় গড়েছ, তেমনি আমার দুস্থ, অসহায় বান্দাদের এহসান কর, সাহায্য কর। কৃপণতা কোরো না। মাল তো আমি দান করেছি, তা থেকে দেওয়ার ক্ষেত্রে তুমি কৃপণতা কর কেন? আমি যদি এখন তোমার সম্পদ কামাই করার মেশিনগুলো অকেজো করে দিই, অর্থাৎ চোখ, কান, হাত, পা, শান, আকল ইত্যাতি নষ্ট করে দিই তখন কী হবে তোমার অবস্থা? আমি অনেককে কোটিপতি, বিত্তশালী করেছি যাতে তারা তাদের আশপাশের গরিব-অসহায়দের সাহায্য করে, দয়া-মায়ার দৃষ্টিতে দেখে। কৃপণ যে ব্যক্তি হয় সে নিজে এবং নিজের পরিবারের জন্যই খরচ করতে চায় না, অন্যজনকে দান করতে বললে তো তার শরীরে আগুনের ফুলকি এসে পড়ে। কৃপণ মানুষকে আল্লাহ ভালোবাসেন না। হাদিসে আছে, দুটি বিষয় অত্যন্ত খারাপ- ১. কৃপণতা ২. বদ চরিত্র। হাদিসে এসেছে, যে কৃপণ সে যেন নিজেকে মোমিন হিসেবে পরিচয় না দেয়। কোরআনে কারিমে এসেছে, আল্লাহ কিয়ামতের দিন কৃপণকে কঠোর আজাবে গ্রেফতার করবেন এবং কৃপণতা করে যে মাল জমা করে রেখেছে, আল্লাহর ফরজ হুকুম জাকাত দেয়নি, হজ করেনি, অন্যান্য ওয়াজিব সদকা আদায় করেনি, তার সব সম্পদকে আগুনের বেড়ি বানিয়ে তার গলায় পরানো হবে। ধনীর মালসম্পদ সব গরিবের কায়িক শ্রমের মাধ্যমেই তো সঞ্চিত হয়। অতএব তাদের দিতে আবার কৃপণতা কীসের? তা ছাড়া সবকিছুর ওপর তো স্বীয় স্রষ্টা, মালিক ও প্রতিপালকের হুকুম মান্য করার ব্যাপারটি রয়েছে। আল্লাহর হুকুম মানার মধ্যেই শান্তি। আল্লাহ আমাদের বোঝার ও আমলের তৌফিক দান করুন।

 

লেখক : আমির, আল হাইআতুল উলয়া ও বেফাকুল মাদারিসিল আরাবিয়া বাংলাদেশ।

সর্বশেষ খবর