বুধবার, ৮ জুন, ২০২২ ০০:০০ টা
রৌদ্র ছায়া

আমাদের শিক্ষা

মাকিদ হায়দার

আমাদের শিক্ষা

শ্রীচৈতন্য দেব সন্ন্যাস গ্রহণ করেছিলেন। অন্যদিকে শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় সন্ন্যাস গ্রহণ করতে গিয়ে ফিরে এসেছিলেন। তিনি জানিয়েছিলেন তাঁর দ্বারা সন্ন্যাস গ্রহণ সম্ভব নয়। বনজঙ্গলে মশার উপদ্রবেই তিনি ওই সিদ্ধান্তে উপনীত হয়েছিলেন। আমার মনে হয়, শিল্প, বিজ্ঞান বা সাহিত্যের যে কোনো শাখায় এমনকি সাংবাদিকতার ক্ষেত্রেও মগ্ন হয়ে কাজ করাকে সন্ন্যাসের সঙ্গে তুলনা করা যেতে পারে। উপরন্তু শিল্প-সাহিত্যের ক্ষেত্রে এ সন্ন্যাস বাংলা ভাষায়ও কখনই নিঃসঙ্গ ছিল না।

ফলে মানবহিতৈষী থাকাটাই শিল্প-সাহিত্যের অন্যতম লক্ষ্য। দেশপ্রেম, সাহিত্যপ্রেম, বৃক্ষপ্রেম এবং প্রকৃতিপ্রেম এরা সবাই অভাবনীয় সখ্য। এ সখ্য, এ দেশপ্রেম শিল্প-সাহিত্যে প্রেম, গল্প, উপন্যাসের প্রেম- সব বিষয়কে লেখকরা স্পষ্টভাবেই চিত্রিত করেছেন ভিন্ন ভিন্ন চিন্তা-চেতনায়, আঙ্গিকে। বিধায় বাংলা সাহিত্যের আছে নিজস্বতা। আছে শেকড় সন্ধান এবং আত্মপরিচয় খোঁজার সঙ্গেই আছে মানববৃত্তির বিশুদ্ধকরণ। আমাদের শিল্প-সাহিত্য-সাংবাদিকতা যা-ই বলি না কেন, সবই সন্ন্যাসীর মতো একাগ্রচিত্তে সাধনা এবং ধ্যান দ্বারা আমাদের প্রতিনিয়ত সামনের দিকে এগিয়ে যাওয়া। এ সামনের দিকে এগিয়ে যাওয়ার জন্যই আমাদের কমবেশি সবাইকে শিক্ষাদীক্ষায় আলোকিত হতে হয়। হতে হয় সচেতন।

২০০ বছর আগে ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর, রাজা রামমোহন রায়, মাইকেল মধুসূদন, বিহারীলাল এবং পরবর্তীতে রবীন্দ্রনাথ ও রামতনু লাহিড়ী এবং অনেকেই তৎকালীন ব্রিটিশ ভারতে শিক্ষার আলো জ্বালিয়েছিলেন, তবে সবাই যে উচ্চশিক্ষিত বা পিএইচডি ডিগ্রিধারী ছিলেন এমনটা নয়। শোনা যায়, পিএইচডির সার্টিফিকেট কেনা যায় এবং নামের সামনে ডক্টর/ড. শব্দটি লেখা যায়। আমি যত দূর জেনেছি, অনেকে সত্যিকার অর্থে দেশে এবং বিদেশে ডক্টরেট পেয়েও নিজের নামের সামনে ওই শব্দটি লিখতে লজ্জাবোধ করেন। আমি ব্যক্তিগতভাবে জেনেছি জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের দুজন কৃতী ছাত্রকে। তাদের মধ্যে একজন সরকার আবদুল মান্নান। তিনি বিখ্যাত তিনজনকে নিয়ে বাংলা সাহিত্যের বিশিষ্ট কথাশিল্পীদের ওপর পিএইচডি করেছেন। নরেশচন্দ্র সেনগুপ্ত, জগদীশ গুপ্ত এবং অতিবিখ্যাত মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের ওপর। ইতোমধ্যে জনাব মান্নানের গবেষণামূলক তিনটি বই বাংলা একাডেমি থেকে প্রকাশিত হয়েছে এবং অন্যান্য প্রকাশনা থেকে বেরিয়েছে ২০টি। যত দূর জানি সরকার আবদুল মান্নানের আরও কয়েকটি বই জাতির জনকের ওপর লেখা অচিরেই প্রকাশিত হবে বাংলা একাডেমি থেকে। তিনি পাঁচ-ছয়টি কলেজে অধ্যাপনা শেষে যোগ দিয়েছিলেন পরিচালক পদে জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড বাংলাদেশে। তাঁর কাছ থেকে জানতে চেয়েছিলাম বাংলাদেশের প্রাথমিক, মাধ্যমিক লেভেলে কতগুলো স্কুল আছে। আরও জানতে চেয়েছিলাম, প্রাথমিক স্কুলের ছাত্রছাত্রী, শিক্ষক এবং মাধ্যমিক স্কুল, স্কুলের ছাত্রছাত্রীর সংখ্যা ও তাদের সংখ্যা এবং শিক্ষকদের সংখ্যা, তিনি সমগ্র বাংলাদেশের প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্কুলের শিক্ষক সংখ্যা জানিয়েছিলেন এবং শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের একান্ত প্রচেষ্টায় শিক্ষিতের হার অনেক বেড়েছে বলে জানিয়েছিলেন। সরকার আবদুল মান্নানের দেওয়া তথ্য-উপাত্ত থেকে জানা যায়, বাংলাদেশের শিক্ষাব্যবস্থায় যথেষ্ট উন্নতি হয়েছে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার একান্ত প্রচেষ্টায়। যে দেশে যত শিক্ষার হার বেশি সে দেশটির শিক্ষক, শিক্ষার্থীরা নিজ মাতৃভূমিকে আগামী দিনের পথ আলোকিত করবে বলে আমার যথেষ্ট আস্থা আছে। একটি শিক্ষিত জাতির মেরুদন্ড তার শিক্ষা, শিক্ষার জ্ঞান দেশে-বিদেশে সমাদৃত এবং পৃথিবীর বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে আমাদের দেশের ছেলেমেলেরা যেভাবে ভিনদেশি ছেলেমেয়েদের বিভিন্ন বিষয়ে পাঠদান করেন সেটি অত্যন্ত আনন্দের বিষয়। প্রসঙ্গক্রমে বলতেই হয় একটি বিষয়, ১৯৮১ সালে নেদারল্যান্ডস সরকারের বৃত্তি পেয়ে গিয়েছিলাম ফিলিপাইনের ম্যানিলা বিশ্ববিদ্যালয়ে গণসংযোগ ও গণমাধ্যম বিষয়ে ডিপ্লোমা ডিগ্রি অর্জন করতে। তখন আমি বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটিরশিল্প সংস্থার গণসংযোগ বিভাগের প্রধান নির্বাহী। তখন ওই সংস্থার চেয়ারম্যান ছিলেন মোহাম্মদ সিরাজুুদ্দিন (সিএসপি)। সে বছর ম্যানিলা বিশ্ববিদ্যালয়ে সহপাঠী হিসেবে পেয়েছিলাম শ্রীলঙ্কার দুজনকে। ওই দুজনের একজন ছিলেন মোহাম্মদ হানিফ, অন্যজন ছিলেন রামাগুতাবাত্তে। অল্প সময়ের ভিতরেই আমার বন্ধুবান্ধবীর সংখ্যা ক্রমান্বয়ে বৃদ্ধি পেয়েছিল। নেপালের হরিশঙ্কর, কোরিয়ার জনাকয়েক, জাপানের সুশ্রী এক তরুণী ও নাইজেরিয়ার হুসেন মোহাম্মদ কালুফিয়া। আকাতু ইনুই নামে একজন, তিনি মুসলিম। হুসেন মোহাম্মদ কালুফিয়া ক্যান্টিনে খাওয়ার পর একদিন দুপুরে আমাকে বললেন, ‘তোমাদের দেশের আর্মিরা ভীষণ নিষ্ঠুর। তারা তোমাদের দেশের দুই রাষ্ট্রপতিকে খুন করল, আমরা নাইজেরিয়াতেই শুনেছি শেখ মুজিবুর রহমান ও জিয়াউর রহমান ছিলেন আপন দুই ভাই।’ আমি কালুফিয়াকে থামিয়ে দিয়ে জানিয়েছিলাম জিয়াউর রহমান ছিলেন সেনাবাহিনীর উচ্চপদে। তিনি এবং খন্দকার মোশতাক, কর্নেল ফারুক, মেজর ডালিম ও কয়েকজন একত্র হয়ে ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের পুরো পরিবার এবং আত্মীয়স্বজনকে খুন করেন। দেশে আর্মির শাসন প্রতিষ্ঠিত হওয়ার বেশ কয়েক বছর পর সেই জিয়াউর রহমান নিহত হয়েছিলেন আর্মিদের হাতে ১৯৮১ সালে।

কালুফিয়াকে বললাম তোমার ধারণা ভুল- তুমি বা তোমরা নাইজেরিয়ানরা ভেবেছ দুই রহমানই আপন ভাই। বাংলাদেশে হাজারো লাখো লোকের নামের শেষে ‘রহমান’ শব্দটি আছে। কালুফিয়া বিস্ময় প্রকাশ করে জানালেন আমার এবং আমাদের সবাই জানে, দুই রহমানই আপন ভাই। আমাদের কথোপকথনের মাঝে এসে উপস্থিত হলো শ্রীলঙ্কার বন্ধু মোহাম্মদ হানিফ। আমি কী যেন বলার আগেই জানতে চাইল- ‘হায়দার, তোমাদের বাংলাদেশে শিক্ষার হার কত?’ হানিফকে জানালাম, খুব বেশি নয়। উল্টো তার কাছ থেকে জানতে পারলাম শ্রীলঙ্কায় শিক্ষার হার ৯৫ থেকে ৯৮ শতাংশ। বলতে দ্বিধা নেই, আমার বড় ভাই ও বোন দুজনই পিএইচডি করেছেন কলম্বো বিশ্ববিদ্যালয় থেকে। আমারও ইচ্ছা আছে ভবিষ্যতে পিএইচডি করার। তবে সুখের বিষয়, যিনি রাস্তায় জুতো সেলাই করেন, পত্রিকার হকার থেকে শুরু করে মুদি দোকানিরাও লেখাপড়া জানেন এবং বিশুদ্ধ ইংরেজিতে কথা বলতে পারেন। কথাগুলো ভালো লাগল। ৪১-৪২ বছর আগে ম্যানিলা বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যান্টিনে আমাদের আলাপচারিতায় আমি মনে মনে বলেছিলাম আমার প্রিয় মাতৃভূমি, জন্মভূমি, প্রিয় বাংলাদেশে একদিন শিক্ষার হার বাড়বেই। বিগত ৫০ বছরে অনেকেই শিক্ষিত হয়েছেন। এবং ভবিষ্যতে শিক্ষার হার বাড়লে মানুষের রুচিবোধে পরিবর্তন ঘটবে। তারা অন্যায়ের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়ে যুক্তিসহকারে জানিয়ে দিতে পারবে, এটা ন্যায়। এটা অন্যায়। এ প্রসঙ্গে আরও একটু বলা যেতে পারে। বিসিকে জনাকয়েক অফিসার পদে নিয়োগ দেবেন কর্তৃপক্ষ। আশির দশকে লিখিত পরীক্ষা হতো না, হতো মৌখিক পরীক্ষা। সে বছর চাকরিপ্রার্থী ছিলেন অনেকেই। বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা শিক্ষা শেষে বিসিকে চাকরির আবেদন করেছিলেন। তার মধ্যে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের দুজন চাকরিপ্রার্থীর কথা মনে আছে। আমি তখন সংস্থার গণসংযোগ বিভাগ থেকে বদলি হয়েছি প্রশাসন বিভাগে। আমাকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল বিসিকের উপসচিব পদে। সমগ্র বাংলাদেশে সংস্থার কর্মরত কর্মকর্তা-কর্মচারীর নথি সংরক্ষণসহ অন্যান্য কর্মকান্ড। সহযোগী ছিলেন জনাকয়েক। এবং সঙ্গেই ছিলেন সালাউদ্দিন নামে একজন অভিজ্ঞ কর্মকর্তাসহ আরও পাঁচ-সাত জন। জনসংযোগ বিভাগের কর্মকর্তা মীর ইউসুফ আলী মিন্টু সংস্থার পক্ষ থেকে চাকরির বিজ্ঞাপন দিয়েছিলেন। বিজ্ঞাপনের পাঠকরা ছিলেন বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের এমএ, এমএসসি প্রার্থী। বিসিক প্রধান ভবন ১৩৭/১৩৮-এর চতুর্থ তলায় বসতেন সংস্থার চেয়ারম্যান মহোদয়। আর আমি সদলবলে বসতাম ওই একই ভবনের সাত তলায়। একদিন সকালবেলায় চাকরিপ্রার্থীদের সাক্ষাৎকার শুরুর আগেই চেয়ারম্যান মহোদয়ের ব্যক্তিগত সহকারী মীর ওমর ফারুক আমাকে জানালেন আমি যেন ইন্টারভিউ বোর্ডে থাকি। শিল্প মন্ত্রণালয় থেকে বিসিকের একজন অ্যাডমিন ক্যাডারের উপসচিবকে সচিব হিসেবে পাঠিয়েছিল বিসিকে। আর আমি ছিলাম বিসিক বোর্ডের উপসচিব। মীর ওমর ফারুক জানালেন, আজকের ইন্টারভিউ বোর্ডে আপনাকে থাকতে বলেছেন চেয়ারম্যান মহোদয়। যথারীতি চেয়ারম্যান মহোদয়ের কক্ষে ছিলেন জনাকয়েক পরিচালক ও সচিব মহোদয়। যথারীতি আমি যোগ দেওয়ার পর একজন পরিচালক আমাকে বললেন আপনাকে ডাকা হয়েছে দু-এক জন চাকরিপ্রার্থী আপনাদের উত্তরবঙ্গের। একজন পাস করেছেন বাংলা সাহিত্যে অনার্সসহ রেজাল্ট ভালো। আরেকজন পাস করেছেন ইসলামের ইতিহাস নিয়ে অনার্সসহ। মনে হলো তাদের জীবনবৃত্তান্ত পড়ে চাকরি হলেও হতে পারে। আপনাকে শুধু ওই বাংলায় পাস করা ছেলেটিকে দুটি বাংলা বানান মৌখিক পরীক্ষায় ধরতে হবে। দ্বিতীয় জনকেও ইতিহাস বিষয়ে দু-একটি মৌখিকভাবেই। তাদের কাছ থেকে তাদের পড়ালেখা কতটা গভীরে এমনকি বাংলা বানান বাংলায় পাস করা ছেলেটি কতটুকু জানে, জেনে নিতে হবে।

আমি পরিচালক মহোদয়ের কথা শুনে সঙ্গে সঙ্গে স্থির করলাম, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বাংলায় যে ছেলেটি পাস দিয়েছে তাকেই প্রথম জিজ্ঞেস করব, পরে ইতিহাসবিদকে। বেশ জনাকয়েক চাকরিপ্রার্থী ইতোমধ্যে সাক্ষাৎকার দিয়ে গিয়েছেন। এবার এলেন বাংলায় পাস করা চাকরিপ্রার্থী। দুই পরিচালক বিভিন্ন প্রশ্ন করলেন বাংলা সাহিত্যের দিকপালদের নিয়ে। শিল্প মন্ত্রণালয় প্রেরিত (উপসচিব) যিনি বিসিকের সচিব পদে আসীন তিনি কবি জসীমউদ্দীনের কবিতা সম্পর্কে এবং তাঁকে কেন পল্লীকবি বলা হয়? ছেলেটি সঠিক উত্তর দিতে পারেনি।

সবশেষে আমি ছেলেটিকে শুদ্ধভাবে উচ্চারণ করতে বলেছিলাম মুমূর্ষু শব্দটি, বোর্ডের সবাই একপর্যায়ে দেখলাম, চাকরিপ্রার্থী নিজেই মুমূর্ষু অবস্থায় পৌঁছেছেন। দ্বিতীয় বানানটি ছিল ‘শুশ্রƒষা’-শেষ অব্দি তাকে বিদায় নিতে হলো। চেয়ারম্যান মহোদয় উষ্মার সঙ্গেই বললেন, মূর্খ কোথাকার! ছেলেটিকে বিদায় দেওয়ার আগে একজন পরিচালক জানতে চেয়েছিলেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে বাংলা বিভাগের প্রধান কে। ছেলেটি জানিয়েছিল ডক্টর অমুক। বাংলাদেশে কয়েক লাখ ডক্টর আছেন। বিভিন্ন বিষয়ের ওপর তাঁরা পেয়েছেন তাঁদের ডক্টরেট ডিগ্রি। আজকাল আবার অনেকেই নিজের নামের আগে ড. (ডক্টর) লিখতে লজ্জাবোধ করলেও নামের শেষে লেখেন পিএইচডি, আবার অনেকে কিছুই লেখেন না। যেমন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের কৃতী ছাত্র সরকার আবদুল মান্নান এবং ওই বিশ্ববিদ্যালয়ের একই বিভাগের আরেক কৃতী ছাত্র ওবায়দুল্লাহ সাগর। জনাব সাগরের পিএইচডির বিষয় ছিলেন বিখ্যাত বামপন্থি নেতা, বৃহত্তর সিলেটের অজয় ভট্টাচার্য। অজয় বাবু ব্রিটিশ ও পাকিস্তান আমল মিলিয়ে ২২ বছর কারাগারে কাটিয়েছিলেন।

জনাব ওবায়দুল্লাহ সাগর ২০১৫ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ডক্টরেট ডিগ্রি পেলেও তিনি নিজ নামের আগে ড. লিখতে কুণ্ঠিতবোধ করেন। জিজ্ঞেস করেছিলাম কেন এ লজ্জা, কেন এ কুণ্ঠা? তিনি জানালেন, ‘পথে-ঘাটে, ট্রেনে-ড্রেনে, আকাশে-পাতালে সর্বত্রই ডক্টরদের ছড়াছড়ি। তাই নিজ নামের আগে ড. লিখতে ও নামের শেষে পিএইচডি লিখতে আমি ব্যক্তিগতভাবে দ্বিধাবোধ করি।’ শেষে জানালেন, আমি যত দূর জেনেছি আপনাদের অনুজ রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের নাট্যকলা বিভাগের অধ্যাপক আরিফ হায়দার নাট্যকলার পিএইচডি করেছেন রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে। এর আগে তিনি ওই বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এমএ পাস করেছিলেন, তাঁকে একদিন শিল্পকলা একাডেমিতে পেয়ে গেলাম, যেহেতু তিনি ছিলেন পূর্বপরিচিত, আরিফ হায়দারকে কথা প্রসঙ্গে বলেছিলাম, আমি না হয় কলেজশিক্ষক-আপনি তো বিশ্ববিদ্যালয়ের, নামের আগে ড. এবং শেষে পিএইচডি লেখেন না কেন? তিনি তখন আমাকে জানালেন রবীন্দ্রনাথ, নজরুল এমনকি জীবনানন্দের কথা। রবীন্দ্রনাথ ডিলিট পেলেও রবীন্দ্রনাথ, না পেলেও রবীন্দ্রনাথ, তবে প্রতিটি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছেলেমেয়েদের রবীন্দ্রনাথের শিক্ষা নামক গ্রন্থটি পাঠ করা উচিত। ওই গ্রন্থে ২৩টি প্রবন্ধ আছে। সবই শিক্ষা নিয়ে লেখা। জনাব হায়দারের কথাগুলো সব সময়ই মনে রাখি। আমি ওবায়দুল্লাহ সাগর। আমার নামের আগে-পিছে ড. শব্দটি ব্যবহার করতে ইচ্ছুক নই। এমনকি পিএইচডি শব্দটিও নয়। ওই একই কথা আমাকে বলেছিলেন সরকার আবদুল মান্নান।

লেখক : কবি।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর