বৃহস্পতিবার, ৯ জুন, ২০২২ ০০:০০ টা

সুলতানা রাজিয়া

সুলতানা রাজিয়া ছিলেন দিল্লির প্রথম নারী শাসক। সুলতান ইলতুতমিশের সুযোগ্য ছেলে নাসিরুদ্দিন মাহমুদের মৃত্যুর পর ইলতুতমিশ তাঁর অন্য ছেলের তুলনায় রাজিয়াকেই সুলতান হিসেবে যোগ্য মনে করেন এবং মনোনীত করেন পরবর্তী উত্তরসূরি। তাঁর যোগ্যতা ও বুদ্ধিমত্তার কারণে দুই ভাই থাকা সত্ত্বেও তিনি সিংহাসনে বসার সুযোগ পেয়েছিলেন। সে সময় মুসলিম বিশ্ব ও খ্রিস্টান ইউরোপ উভয় ক্ষেত্রেই খুব কম রাজ্যেই নারী শাসক ছিল। আর সে সময় এটি খুবই অস্বাভাবিক ছিল। যখন বৈধ কোনো পুরুষ উত্তরাধিকারী থাকত না তখন বাধ্য হয়ে নারীদের শাসনের ভার দেওয়া হতো। তবে রাজিরার বেলায় হয়েছিল তার উল্টো। তাঁর সৎ দুই ভাই উত্তরাধিকারী হিসেবে থাকার পরও তিনি শাসক হয়েছিলেন। রাজিয়া ছিলেন দিল্লির মামলুক সালতানাতের প্রথম ও একমাত্র নারী শাসক। আরবিতে তাঁকে ডাকা হতো ‘রাদিয়া’ নামে। সুলতান শামসুদ্দিন ইলতুতমিশের ঘরে ১২০৫ সালে রাজিয়ার জন্ম। ইলতুতমিশ ছিলেন তুর্কি দাস। তিনি মধ্য এশিয়ার উপত্যকা থেকে ভারতে দাস হয়ে এসেছিলেন। তাঁকে কিনেছিলেন কুতুবুদ্দিন আইবেক নামের একজন। তিনি ছিলেন মামলুক দাসবংশের প্রতিষ্ঠাতা। আরও পরিষ্কারভাবে বলতে গেলে রাজবংশের শাসকরা সবাই পূর্বসূরিদের বংশধর ছিলেন না।

অনেকেই অস্ত্রের জোরে ক্ষমতা দখল করেছিলেন। তেমনি একজন ছিলেন কুতুবুদ্দিন আইবেক। রাজিয়ার মা তুরকান খাতুন ছিলেন কুতুবুদ্দিন আইবেকের মেয়ে। ইলতুতমিশ স্ত্রীর জন্যই তাঁর শ্বশুরের রাজ্যের সিংহাসনে বসেছিলেন। ইলতুতমিশের শাসনামলে ভারতে মুসলিম শাসন খুবই শক্তিশালী হয়েছিল। রাজিয়া মাত্র সাড়ে চার বছর ভারতবর্ষ শাসন করেন। ভারতবর্ষের সমৃদ্ধ ইতিহাসের ভিড়ে এ সময়টুকুর কথা হয়তো তেমন আলোচনাতেই আসত না। তবে রাজিয়া নিজ যোগ্যতাবলেই ওই সময়টুকুকে গুরুত্বপূর্ণ করে তুলতে পেরেছিলেন। কারণ একজন নারী হিসেবে ওই সময় সিংহাসনে আরোহণ কল্পনার বাইরে ছিল। ১২৪০ সালে মাত্র ৩৫ বছর বয়সে মৃত্যু হয় এই বীরের। তাঁর মৃত্যু নিয়ে বেশ কিছু মতবাদ রয়েছে। ধারণা করা হয়, তিনি শুধু ভারতই নয়, পুরো বিশ্বের প্রথম মুসলিম নারী শাসক ছিলেন। সুলতানা রাজিয়া ছিলেন একদিকে সুশিক্ষিত, অন্যদিকে সাহসী। তিনি যুদ্ধে নেতৃত্ব দিতেন অন্য সব সুলতানের মতো। মাত্র ৩৫ বছর বয়সে মারা গেলেও তিনি ভারতবর্ষের ইতিহাসে অসামান্য প্রভাব রেখে গেছেন।

জাফর খান।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর