সোমবার, ১৩ জুন, ২০২২ ০০:০০ টা

কৃষিতে যান্ত্রিকীকরণ

ধান চাষিদের জিম্মি অবস্থা থেকে মুক্তি দেবে

সেই প্রাচীনকাল থেকেই পদ্মা মেঘনা যমুনা বিধৌত জনপদ বাংলাদেশের অধিবাসীদের পরিচিতি ভেতো বাঙালি হিসেবে। বাঙালির প্রধান খাদ্য ভাতকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠেছে এ পরিচিতি। কালের বিবর্তনে বাংলাদেশের মানুষের ভাতের জোগান দিন দিন কঠিন হয়ে পড়ছে ধান বা চালের দাম বৃদ্ধি পাওয়ায়। কৃষিশ্রমিকের মূল্য দেশজুড়ে এতটাই বৃদ্ধি পেয়েছে যে ধান ওঠার মৌসুমে সে অর্থের জোগান দিতে গিয়ে কৃষক নিঃস্ব হচ্ছেন। বলা যায় কৃষকের লাভের গুড় পিঁপড়ায় খেয়ে ফেলছে। এ বছর রংপুর বিভাগের আট জেলায় মৌসুমি কৃষিশ্রমিকরা বোরো মৌসুমে ধান কাটা-মাড়াই করে এক মাসে প্রায় ২০০ কোটি টাকা আয় করেছেন। গত কয়েক বছরে কৃষিশ্রমের মূল্য ৫-৬ গুণ বৃদ্ধি পাওয়ায় শ্রমিকরা খুশি হলেও ধানের উৎপাদন খরচ বেড়ে যাওয়ায় কৃষকরা উৎপাদনে উৎসাহ হারাচ্ছেন। এ অবস্থায় ধান কাটা-মাড়াইয়ে পুরোপুরি যান্ত্রিকীকরণ নিশ্চিত করা গেলে উৎপাদন খরচ অনেকটা কমবে- এমনটাই মনে করছেন কৃষিসংশ্লিষ্টরা। রংপুরের আট জেলার চাষিরা ৮ লাখ হেক্টরের বেশি জমিতে এ বছর বোরো ধান আবাদ করেছেন। এ পরিমাণ জমি থেকে প্রায় ৩৫ লাখ মেট্রিক টনের বেশি ধান গোলায় তোলার আশা করা হচ্ছে। কৃষি অফিসের তথ্যমতে, শনিবার পর্যন্ত ৯৫ থেকে ৯৭ শতাংশ ধান কাটা-মাড়াই হয়েছে। তবে ধান কাটা-মাড়াই করতে কৃষিশ্রমিক পাওয়াই দুষ্কর হয়ে পড়েছে। দিন হাজিরায় শ্রমিকরা ৫০০ থেকে ৫৫০ টাকা করে পারিশ্রমিক নিয়েছেন। দেশের অনেক এলাকায় মজুরি ছিল ১০০০ থেকে ১২০০ টাকা। কৃষিবিদদের মতে, ধান কাটা-মাড়াই যান্ত্রিকীকরণে ধানের উৎপাদন খরচ ও সময় দুটোই কমবে। ধান উৎপাদন খরচ হ্রাস পেলে কৃষক যেমন জিম্মি অবস্থা থেকে মুক্তি পাবে তেমন লাভবান হবে ভোক্তা পর্যায়ের সাধারণ মানুষ। চাল সাধারণ মানুষের ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে আসবে। উৎপাদন খরচ হ্রাস পেলে কৃষক ধান চাষে উৎসাহিত হবে। এর ফলে প্রতি বছর কোটি কোটি মণ খাদ্য আমদানির অপচয় থেকে জাতি রক্ষা পাবে। চালের মূল্য নিয়ন্ত্রণ থাকলে মূল্যস্ফীতির বিপদ থেকেও অনেকাংশে রেহাই পাওয়া যাবে।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর