রবিবার, ১৯ জুন, ২০২২ ০০:০০ টা

ইসলামে বাবার মর্যাদা ও গুরুত্ব

মাহমুদুল হক জালীস

ইসলামে বাবার মর্যাদা ও গুরুত্ব

পৃথিবীর বুকে সন্তানের জীবন শুরু হয় একজন বাবার মাধ্যমে। এজন্য প্রতিটি সন্তানের জীবনে বাবার অবদান অনস্বীকার্য। সন্তান কোনো দিন বাবার ঋণ পরিশোধ করতে পারে না। বাবা তো তিনিই যিনি সন্তানের সুখস্বাচ্ছন্দ্যের কথা ভেবে সারা জীবন অক্লান্ত পরিশ্রম করেন। কিন্তু সন্তানকে দুঃখকষ্ট ভোগ করতে দেন না। রসুলুল্লাহ (সা.) বাবার মর্যাদা সম্পর্কে বলেছেন, ‘বাবার সন্তুষ্টিতে আল্লাহ সন্তুষ্ট হন; বাবার অসন্তুষ্টিতে আল্লাহ অসন্তুষ্ট হন।’ সে কারণেই ইসলামে বাবা-মার সঙ্গে অন্যায় আচরণ করাকে বড় গুনাহের কাজ বিবেচনা করা হয়েছে। হজরত আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা.) বলেন, ‘আমি রসুলুল্লাহ (সা.)-কে জিজ্ঞেস করলাম, আল্লাহর কাছে সবচেয়ে প্রিয় কাজ কোনটি? তিনি বললেন সময়মতো নামাজ পড়া। আমি বললাম তারপর কোনটি? তিনি বললেন পিতা-মাতার সঙ্গে উত্তম আচরণ করা। আমি জিজ্ঞেস করলাম তারপর কোনটি? তিনি বললেন আল্লাহর পথে জিহাদ করা।’ (বুখারি, মুসলিম)

ইসলামে বাবার প্রতি যেমন অত্যন্ত গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে তেমনি মায়ের প্রতিও গুরুত্ব প্রদান করা হয়েছে। তাঁদের সেবা-যত্ন ও তাঁদের সঙ্গে সদাচরণ করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। তাঁদের মান্য করা ইসলামের দৃষ্টিতে ফরজ। বাবা-মাকে কষ্ট দেওয়া, তাঁদের সঙ্গে দুর্ব্যবহার, তাঁদের কথা অমান্য করা নিঃসন্দেহে অনেক বড় অন্যায়। এ প্রসঙ্গে কোরআনে আল্লাহ বলেছেন, ‘তোমার প্রতিপালক আদেশ দিয়েছেন তিনি ছাড়া অন্য কারও ইবাদত না করতে ও বাবা-মায়ের প্রতি সদ্ব্যবহার করতে।’ (সুরা বনি ইসরাইল, আয়াত ২৩)

কোরআনে আরও বলা হয়েছে, ‘তাদের একজন বা উভয়েই জীবদ্দশায় বার্ধক্যে উপনীত হলে তাদের ‘উফ’ বোলো না। তাদের ধমক দিও না, তাদের সঙ্গে সম্মানসূচক কথা বল।’ (বনি ইসরাইল, আয়াত ২৩)

হাদিসে এসেছে, ‘একবার জনৈক সাহাবি রসুল (সা.)-এর দরবারে এসে জিহাদে যাওয়ার তীব্র আকাক্সক্ষা প্রকাশ করলেন। রসুল তাকে জিজ্ঞাসা করলেন, তোমার বাবা-মা কেউ কি জীবিত আছে? সাহাবি হ্যাঁ-সূচক জবাব দিলেন। রসুলুল্লাহ বললেন, বাড়ি গিয়ে তাদের সেবা কর।’ (বুখারি)

পিতা-মাথার সন্তুষ্টির ওপর আমাদের জীবনে সার্বিক কল্যাণ নিহিত রয়েছে। তাঁদের অবাধ্যতা ক্ষমার অযোগ্য অপরাধ। এ প্রসঙ্গে রসুলুল্লাহ বলেছেন, ‘আল্লাহ তাঁর ইচ্ছামতো বান্দার সব গুনাহ মাফ করে দেন, কিন্তু পিতা-মাতার অবাধ্যতার গুনাহ মাফ করেন না; বরং এ গুনাহগারকে পার্থিব জীবনে মৃত্যুর আগেই শাস্তি দেন।’ অন্য হাদিসে ভর্ৎসনার সুরে বলা হয়েছে, ‘ওই লোক হতভাগ্য! ওই লোক হতভাগ্য! ওই লোক হতভাগ্য! জিজ্ঞেস করা হলো, হে আল্লাহর রসুল! কার শানে এ কথা বললেন? তিনি বললেন, যে লোক পিতা-মাতার একজন কিংবা দুজনকে তাদের বৃদ্ধ বয়সে পেল অথচ জান্নাতে দাখিল হলো না, সে হতভাগ্য।’ (মুসলিম)

কবিরা গুনাহগুলোর অন্যতম হচ্ছে কোনো ব্যক্তি কর্তৃক তার পিতা-মাতাকে অভিসম্পাত করা। ‘এক সাহাবি বললেন, হে আল্লাহর রসুল! মানুষ তার পিতা-মাতাকে কীভাবে অভিশাপ দেয়? তিনি বললেন, কোনো ব্যক্তি অন্যের পিতা-মাতাকে গালি দেয়। ফলে সেও তার পিতা-মাতাকে গালি দেয়।’ (বুখারি)

 

                লেখক : ইসলামবিষয়ক গবেষক।

সর্বশেষ খবর