সোমবার, ২০ জুন, ২০২২ ০০:০০ টা

রসুলের (সা.) শিক্ষা শান্তি, হানাহানি নয়

বিচারপতি শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিক

রসুলের (সা.) শিক্ষা শান্তি, হানাহানি নয়

ভারতের ক্ষমতাসীন দল বিজেপির এক গুরুত্বপূর্ণ নেত্রী নূপুর শর্মা যে ঘৃণ্য কাজটি করেছে, তার বিরুদ্ধে বিশ্বব্যাপী প্রতিবাদ অত্যন্ত যৌক্তিক। যারা ধর্মে বিশ্বাস করেন, তারা প্রত্যেকেই নিজ নিজ ধর্মকে শ্রেষ্ঠ বলে মনে করেন, আর তাই তার নিজের ধর্মের বিরুদ্ধে কেউ কথা বললে তারা স্বাভাবিকভাবেই ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠেন। কোনো শিশু কোন ধর্মের পিতা-মাতার ঘরে জন্ম নেবে, সে বিষয়টি তার নিয়ন্ত্রণের বাইরে, আর সে যে পিতা-মাতার ঘরে জন্ম নেয়, সাধারণত সে পিতা-মাতার ধর্মেই বেড়ে ওঠে। কোনো কোনো ক্ষেত্রে বয়ঃপ্রাপ্তির পর কেউ কেউ ধর্ম পরিবর্তন করে থাকেন বটে, কিন্তু তাদের সংখ্যা খুবই কম। ধর্মের বিষয়টি অত্যন্ত স্পর্শকাতর যার কারণে এটি নিয়ে তীর্যক কথা বললে শান্তি ভঙ্গের আশঙ্কা বিরাজ করে, আর তাই অন্য ব্যক্তির ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত করার জন্য আইনে শাস্তির ব্যবস্থা রয়েছে ২০০ বছর আগে থেকেই। শুধু ধর্মে বিশ্বাসী জনরাই নন, ধর্মে বিশ্বাস করেন না এমন ব্যক্তিদেরও কেউ কোনো ধর্মের বিরুদ্ধে আপত্তিকর মন্তব্য করলে ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠেন কেননা এ ধরনের মন্তব্য সমাজে শান্তি বিঘ্ন করে থাকে, সম্প্রীতি বিনষ্ট করে। ধর্ম বিষয়ে বিভিন্ন জনের বিভিন্ন মত থাকতে পারে। এমনকি একই ধর্মের বিভিন্ন মতবাদীদের বিভিন্ন ব্যাখ্যা রয়েছে। কিন্তু আপত্তিকর কথা বলে তা প্রকাশ করে অন্যের আবেগে আঘাত করা নিশ্চয়ই ঘৃণ্য কাজ, যার কোনো প্রয়োজন বা উপকারিতাও নেই, রয়েছে অমঙ্গলের শঙ্কা। ইসলাম ধর্মে বিশ্বাসীদের কাছে মহানবী (সা.)-এর বিরুদ্ধে কিছু বলা কোনো অবস্থায়ই গ্রহণযোগ্য নয় বলে মুসলমান সম্প্রদায় তার বিরুদ্ধে স্বভাবতই ক্ষেপে ওঠেন। নূপুর শর্মা নামীয় ঘৃণ্য ব্যক্তিটি এহেন বক্তব্য দিয়ে বিশ্বব্যাপী প্রতিবাদের ঝড় তুলেছে। নূপুর শর্মা সাধারণ মানুষের শ্রেণিভুক্ত নয়, সে একটি রাজনৈতিক দলের নেত্রী, তাই কথা বলার আগে অনেক ভেবেচিন্তে বলাই তার উচিত ছিল। এই জনরোষ সৃষ্টিকারী মন্তব্যের পর ভারত সরকার জানিয়ে দিয়েছিল, নূপুরের মন্তব্য তার নিজস্ব, এতে ক্ষমতাসীন দলের বা ভারত সরকারের নীতি প্রতিফলিত হয়নি। কিন্তু ক্ষমতাসীন দলের কোনো গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি কিছু বললে তার দায় থেকে সরকারের মুক্তি পাওয়া দুরূহ। তাই দলের শীর্ষ নেতাদের সব সময় উচিত সব সদস্যকে ধর্ম সম্পর্কে কিছু বলার আগে সতর্কতার নীতি অবলম্বন করা। ঘটনাটি প্রকাশিত হওয়ার পরপরই ভারতের ক্ষমতাসীন দল নূপুর এবং তাকে সমর্থনকারী কয়েকজনকে দল থেকে সাময়িক বরখাস্ত করেছে। তাছাড়াও তাদের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে পশ্চিমবঙ্গসহ কয়েকটি রাজ্যে। সর্বশেষ খবর অনুযায়ী পশ্চিমবঙ্গ পুলিশ তাকে তলব করেছে। ভারতের বহু হিন্দু ধর্মাবলম্বীও নূপুরের ঘৃণ্য কাজের সমালোচনায় সোচ্চার হয়েছেন। ক্ষমতাসীন দলের এবং পুলিশের পদক্ষেপগুলো নিশ্চিতভাবে প্রশংসনীয়। শুধু এজাহার করে বসে থাকলে চলবে না, নূপুরসহ অন্য অপরাধীদের বিচারও আমরা দেখতে চাই। ভারত বহু ভাষা এবং বহু ধর্মের লোকের বাসস্থান আর এই বহুত্ব ভারতকে করে তুলেছে বিশেষভাবে অপরূপ। বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম মুসলিম জনসংখ্যার বাস ভারতে। রয়েছে বৌদ্ধ, খ্রিস্টান, জৈন, শিখ, জরাস্ট্রিয়ান, ইহুদি প্রভৃতি ধর্মাবলম্বী লোক। মুসলমানসহ ভারতের অন্য ধর্মের লোকেরা কিন্তু ভারতে অন্য দেশ থেকে আসা আগুন্তুক নয়। দেশটিতে এক সময় শুধু হিন্দুদেরই বসবাস ছিল। পরবর্তীতে সে দেশের বহু হিন্দু ধর্মান্তরিত হয়ে বৌদ্ধ, জৈন, শিখ প্রভৃতি ধর্ম গ্রহণ করেন। তুর্কি সুলতানদের রাজত্বকালে ভারতের কোটি কোটি হিন্দু এবং বৌদ্ধ ধর্মের বাসিন্দারা বিভিন্ন কারণে ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেন। আজ গোটা ভারতবর্ষের মুসলিম ধর্মীয় জনগণ মূলত সেই সমস্ত ধর্মান্তরিত হিন্দু-বৌদ্ধদেরই বংশধর হওয়ায় তারা ভারতে বহিরাগত নন। এটিও ঐতিহাসিক সত্য যে, বহু তুর্কি, আরব, পারস্য থেকে আসা লোকও ভারতে স্থায়ী হয়েছেন। কিন্তু বছরের পর বছর তারা বৈবাহিকভাবে স্থানীয়দের সঙ্গে সংমিশ্রিত হওয়ার কারণে তাদের ধমনিতেও রয়েছে ভারতীয় রক্ত। এমনকি মুঘল সাম্রাজ্যের প্রতিষ্ঠাতা জহিরুদ্দিন মোহাম্মদ বাবর তুর্কি-মোঙ্গল বংশীয় হলেও আকবরের পর অন্য মুঘলরা আর খাঁটি তুর্কি-মোঙ্গল রক্তের দাবিদার ছিলেন না, এমন কি আওরঙ্গজেবও না। কারণ এর মধ্যে মুঘলরা ভারতীয়দের বিয়ে করে যেসব সন্তান জন্ম দিয়েছিলেন তাদের ধমনিতে ভারতীয় রক্তেরও প্রাধান্য ছিল। এমনকি পারস্য থেকে আসা জরাস্ট্রিয়ান সম্প্রদায়ও তাদের রক্তের একচেটিয়াত্ব বজায় রাখতে পারেনি, তারাও স্থানীয়দের সঙ্গে বৈবাহিক বন্ধনে যুক্ত হয়েছিলেন, যার বড় উদাহরণ ইন্দিরা গান্ধীর সঙ্গে জরাস্ট্রিয়ান ফিরোজ গান্ধী এবং মোহাম্মদ আলী জিন্নার সঙ্গে জরাস্ট্রিয়ান স্যার দিনসা পেটিটের মেয়ের বিয়ে। শুধু তুর্কি, ইরানি এবং আরবরাই এ দেশে আসেননি, অতীতে আলেকজান্ডারের সঙ্গে আসা প্রচুর গ্রিক লোকও এখানে স্থায়ী হয়েছিলেন, যারাও সংমিশ্রিত হয়ে আর নিজস্ব গ্রিক স্বকীয়তা রক্ষা করেননি, তারাও এখন ভারতীয়। এমনকি কুষান সাম্রাজ্যের সময় বহু চীনা লোকও ভারতে স্থায়ী হয়ে পরবর্তীতে স্থানীয়দের সঙ্গে বৈবাহিকভাবে আবদ্ধ হওয়ার কারণে তাদের বংশধরদের আর চীনা বলা যায় না। বহু পর্তুগিজ ভারতের বিভিন্ন অঞ্চল দখল করে সেখানে স্থায়ী বাসিন্দা হলেও স্থানীয়দের সঙ্গে বৈবাহিক কারণে তাদের পর্তুগিজ পরিচয়ও অনেক আগেই লোপ পেয়েছে। কবিগুরু তার “ভারত তীর্থ” কবিতায় এই সংমিশ্রণের কথা স্পষ্ট করে দিয়ে লিখেছেন “হেথায় আর্য, হেথা অনার্য, হেথায় দ্রাবিড়, চীন, শখ-হুন দল পাঠান মুঘল এক দেহে হলো লীন”। ভারত বর্ষে জনমানব গোষ্ঠীর বৈচিত্র্যের সৌন্দর্যের দিকটি উল্লেখ করে কবিগুরু আরও লিখেছেন, “এসো হে আর্য, এসো অনার্য, হিন্দু-মুসলমান। এসো এসো আজ তুমি ইংরাজ, এসো এসো খ্রিস্টান।” একইভাবে ভারতে ধর্ম এবং ভাষাগত বৈচিত্র্যের কথা ভেবে কবি অতুল প্রসাদ সেন লিখেছিলেন, “নানা ভাষা নানা জাত নানা পরিধান, নানা ব্যবধান তবু মিলন মহান”। এই মিলন ছিল বহু যুগের বৈশিষ্ট্য। কিন্তু ধর্মীয় সম্প্রদায়ের মধ্যে বিভক্তি এবং ঘৃণা সৃষ্টি করেছিল ইংরেজ শাসকগণ তাদের শাসন নিশ্চিত করার জন্য, যা দুঃখজনকভাবে আজও বিরাজমান। ভারতের লালিত ঐতিহ্য ছিল অসাম্প্রদায়িকতা, ধর্ম নিরপেক্ষতা, যে কথা বহু যুগ আগেই কবি চন্ডীদাস এই বলে প্রচার করেছিলেন, “সবার উপরে মানুষ সত্য, তাহার উপরে নাই”। আজ যারা সেই মূলমন্ত্রে আঘাত হানার চেষ্টা করছে, তাদের অবশ্যই সাজা ভোগ করতে হবে, কেননা সাম্প্রদায়িক অশান্তি সৃষ্টি করে তারা ভারতেরই ক্ষতি করছে।

ভারতে যেসব শীর্ষ স্থানীয় মুসলমান ছিলেন এবং রয়েছেন নিশ্চিতভাবে তাদের নিরঙ্কুশ আনুগত্য ভারতের প্রতি। সেদিন ভারতের বয়োজ্যেষ্ঠ চলচ্চিত্রকার নাসিরুদ্দিন শাহ, যার স্ত্রী হিন্দু ধর্মাবলম্বী, বলেছেন ভারতের এ ধরনের সাম্প্রদায়িকতা দেশকে ক্ষতবিক্ষত করবে। অতীতের আন্তর্জাতিক পুরস্কারপ্রাপ্ত অভিনেত্রী নার্গিস দত্তের মতো ভারতপ্রেমী মানুষ সারা ভারতেই কম ছিলেন। মোহাম্মদ রফি, মোহাম্মদ ইউসুফ খান (দিলীপ কুমার) দেশ ভাগের পর পাকিস্তানে গিয়েও পরে ভারতেই শিকড় গেড়েছিলেন ভারতের প্রতি অবিভক্ত আনুগত্য দিয়ে, যেমনটি করেছেন আদনান সামি। বিখ্যাত গীতিকার সাহের লুধি আনভি, কাইফি আজমি, সুরকার নওশাদ, শাবানা আজমি, ওয়াহিদা রহমান, এ আর রাহমান, সালমান খান, শাহরুখ খান, আমির খানের ভারতের প্রতি পূর্ণ আনুগত্য কষ্টিপাথরে প্রমাণিত। আন্তর্জাতিক খেতাবপ্রাপ্ত ছবি “মাদার ইন্ডিয়া”র পরিচালক মেহবুব খান যেভাবে ভারতপ্রেমকে প্রস্ফুটিত করেছিলেন, সত্যজিৎ রায়ও তা করতে পারেননি। সাবেক রাষ্ট্রপতি জাকির হোসেন, প্রধান বিচারপতি হেদায়েতুল্লা এবং সর্বশেষে এ পি জে আবদুল কালাম প্রমুখের ভারতের প্রতি অখন্ডনীয় আনুগত্য প্রশ্নাতীত। এই আবদুল কালামই ছিলেন ভারতের মিসাইল প্রযুক্তির জনক। এক সময়ের মুসলিম পররাষ্ট্রমন্ত্রী করিম চাগলা পৃথিবী ঘুরেছেন পাকিস্তানবিরোধী প্রচারণা চালাতে। যে দলই ক্ষমতায় থাকুক না কেন, ভারতে সম্প্রীতির ঐতিহ্য লালন করার দায়িত্ব তাদের ওপর। আর এ কারণেই নূপুর শর্মার মতো আগাছাদের ঝেড়ে ফেলে দেওয়া সেই দায়িত্বেরই অংশ।

ফুরফুরা শরিফের পীরজাদা সানাউল্লা সিদ্দিকী নামীয় কলকাতাভিত্তিক এক মুসলমান ধর্ম অধিকারীকের কিছু বাণী দেখে আমি সত্যিই অভিভূত হয়েছি। এ ধরনের ওয়াজিদের বাংলাদেশে সংখ্যাধিক্য থাকলে এখানে সম্প্রীতি বাধাপ্রাপ্ত হতো না। এই পীরজাদা দ্ব্যর্থহীন ভাষায় তুলে ধরেছেন মিলনের বার্তা এই বলে, “আপনারা কি আইনকে হাতে তুলে নেবেন? আমাদের প্রিয় নবীজি (সা.) কখনো অন্য লোককে কষ্ট দেননি। হাসপাতালের রোগী, ডাক্তারেরাও অবরোধে আটকে আছেন। সবাই মিলে জাতি-ধর্ম-নির্বিশেষে দেশকে স্বাধীন করেছি, শান্তিতে বসবাসের জন্য। হাত জোড় করে বলি অবরোধ বন্ধ করেন, আমরা আইনের আওতায় লড়াই করি। যিনি অন্যায় করেছেন, তিনি আইনের শাস্তি পান। গোটা দেশ পাশে আছে, বিশ্ব পাশে আছে। হিন্দু ভাইয়েরাও নবীজিকে ভালোবাসেন। অবরোধ সরিয়ে নিন। গাড়িগুলো যেতে দেন।” সানাউল্লাহ সাহেবের ভিডিও বার্তাটি সতর্ক করছে, বিভেদকর্মীদের অপচেষ্টার বিষয়েও। বলা হয়েছে, “দেশের এক কুলাঙ্গারের জন্য পাঁচটা হিন্দুকে খারাপ বলতে পারি না। ঠিক তেমনই দু-একজন মুসলিমের কুকীর্তির জন্য দশজনকে খারাপ বলা যায় না।” পরে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, “মুরব্বিদের কাছে যা শিখেছি তাই বলেছি। বাংলার শান্তি, ভারতের শান্তি সব থেকে বড় কথা। বিভেদকামীদের বিরুদ্ধে আইনের পথেই লড়তে হবে।”

পীরজাদা সাফেরি সিদ্দিকীও ফুরফুরা শরিফের তালতলা হাটের এক সভায় সম্প্রতি প্রতিবাদের ভুল পথ নিয়ে সতর্ক করেন। তিনিও ফোনে বলেন, “প্রিয় নবী (সা.) আমাদের ইমান, ইবাদত, ভালোবাসা- সবকিছু। কিন্তু ঘণ্টার পর ঘণ্টা পথ অবরোধ করে মানুষকে কষ্ট দেওয়া কখনো তাঁর শিক্ষা নয়। এসবে উসকানি দিয়ে কেউ কেউ দেশে হিংসা সৃষ্টি করতে চাইছেন। আইন হাতে তুলে নেবেন না। সংবিধান নষ্ট করবেন না। এটা মানুষের কাজ নয়।”

নাখোদা মসজিদের ইমাম শাফিক কাশমিও বিবৃতি দিয়ে বলেছেন, “প্রতিবাদ করুন, হিংসার আশ্রয় নেবেন না। রাস্তাও আটকাবেন না। পশ্চিমবঙ্গে হিন্দু-মুসলিম মিলেমিশে থাকে। কেউ কাউকে কষ্ট দেবেন না।” কাশমি সাহেব উল্লেখ করেছেন “প্রিয় নবী বলেছেন, রাস্তায় পাথর থাকলে সরিয়ে দাও, তাতে পথচারীদের কষ্ট হবে। ইসলামের শিক্ষা কাউকে কষ্ট দিতে বলে না। আপনারা কেস করুন, এফআইআর করুন। এসব করবেন না।” ফুরফুরা শরিফের হেজবুল্লা সংগঠনের সহসম্পাদক নুরুল ইসলামও বলেছেন, “মিছিলের নামে ধ্বংস ও মানুষের ক্ষতি ইসলাম অনুমোদন করে না।” বেঙ্গল ইমামস অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মহম্মদ ইয়াহিয়া কয়েকদিন আগে এক ভিডিও বার্তায় বলেন, “আর যেন মানুষকে কষ্ট দিয়ে কোনো আন্দোলন না হয়।”

এই কথাগুলো শুধু ইসলাম ধর্মেরই কথা নয়, অন্য সব ধর্মেরও কথা তাই। বিখ্যাত ইসলামী মনীষী মাওলানা জালালউদ্দিন রুমি একই বাণী দিয়ে বলেছিলেন, ধর্ম-বর্ণ-নির্বিশেষে মানবপ্রেমের কথা। ইবনে সিনাও তাই বলেছিলেন। রাম কৃষ্ণ পরমহংস দেব, স্বামী বিবেকানন্দ, চৈতন্য দেব সবাই এই বাণী প্রচার করে গেছেন। বৌদ্ধ ধর্মের প্রবর্তক মহামতী গৌতম বুদ্ধও আজীবন এই বাণীই প্রচার করে গেছেন। সব ধর্মের গুরু যদি এমন মঙ্গলের বাণী, সম্প্রীতির বাণী, ভাতৃত্বের বাণী প্রচার করতেন তাহলে ধর্মের নামে হানাহানি হতো না। ফুরফুরা শরিফের পীর সানাউল্লাহ সাহেবসহ কলকাতায় মঙ্গলের সম্প্রীতির ভাষণ দেওয়া অন্য ধর্মগুরুরাও বাংলাদেশে এসে যদি এ ধরনের ভাষণ প্রচার করেন তাহলে অনেক ধর্মান্ধই ধর্মের প্রকৃত বাণী অনুধাবন করতে পারবেন।  যেসব ধর্মান্ধ ঘৃণার বাণী ছড়াচ্ছে, তারা ধর্মের আসল কথা উপলব্ধি করে সম্প্রীতি এবং ভালোবাসার কথা প্রচার করবেন, যা সময়ের দাবিও বটে। আমাদের দেশেও হিন্দু, মুসলমান, বৌদ্ধ, খ্রিস্টান একত্রিত হয়ে মুক্তিযুদ্ধ করে দেশ স্বাধীন করেছিলেন শান্তিতে বসবাসের জন্য। এই শান্তির সাগরে যারা  অশান্তির ঢেউ তোলার চেষ্টা করছে, তাদেরও বিচারের আওতায় আনতে হবে, যেমনটি করা হয়েছে নূপুর শর্মা এবং অন্য অপরাধীদের ক্ষেত্রে।

                লেখক : আপিল বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি।

সর্বশেষ খবর