রাজধানী থেকে একের পর এক খাল ও প্রাকৃতিক জলাধার উধাও হয়ে যাচ্ছে। এর পেছনে রয়েছে প্রভাবশালীদের কারসাজি। ঢাকার খালগুলো এখন স্থানীয় প্রভাবশালীদের কবজায়। তারা খালগুলো ব্যক্তিগত সম্পদে পরিণত করে সেখানে বিভিন্ন ব্যবসা কেন্দ্র বসিয়েছেন। গত ৩২ বছরে ঢাকা মহানগরী থেকে উধাও হয়ে গেছে ৩৯টি খাল। রাজধানীতে এ মুহূর্তে ১৫টি খাল থাকলেও এর চারটি লেক হিসেবে টিকে আছে। অন্যগুলো ভরাট-দখলে সংকুচিত হয়ে নর্দমার আকৃতি পেয়েছে। ঢাকা ওয়াসার হিসাবেই নগরীতে ১৯৮৫ সাল পর্যন্ত ৫৪টি খালের অস্তিত্ব ছিল। এসব খালের সংযোগ ছিল রাজধানী লাগোয়া প্রধান চারটি নদ-নদীর সঙ্গে। রাজধানীর এসব খাল ও অন্যান্য জলাশয় এখন বিস্মৃত অতীত মাত্র। খাল-বিল-জলাশয় যথেচ্ছভাবে দখলের পরিণতিতে বর্ষা হলেই রাজধানীতে জলাবদ্ধতার অভিশাপ নেমে আসে। ওয়াসার কর্তাব্যক্তিদের পকেটপূর্তিতেই শুধু অবদান রেখেছে। তবে এখন এ দায়িত্ব যেহেতু ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনের সেহেতু তা সুরক্ষার দায়িত্ব তাদের ওপর বর্তায়। সিটি করপোরেশনের কাউন্সিলররা প্রতি ওয়ার্ডের জনপ্রতিনিধি। তাঁরা ওয়ার্ডকেন্দ্রিক তদারকি করতে পারেন। কাউন্সিলররা যদি এ কাজে সক্রিয় হন তাহলে অবৈধ দখলের মাত্রা অনেক কমে যাবে। সাধারণত দেখা যায়, খাল দখলের সঙ্গে যুক্ত রাজনৈতিক ব্যক্তি ও সাধারণ মানুষ। এর মধ্যে রাজনৈতিক ব্যক্তিদের কিছু অংশ রাজউক থেকে অনুমোদন নিয়ে নকশাবহির্ভূত ভবন নির্মাণ করেন। আর কিছু অংশ অনুমোদন ছাড়াই খাল দখল করে ভবন নির্মাণ করছেন। প্রাকৃতিক জলাশয়ের যে সামান্য অংশ টিকে আছে তা দখল ও দূষণে স্বাভাবিক অবস্থা হারিয়েছে বহু আগেই। এগুলো কার্যত মশা উৎপাদনের ক্ষেত্রে পরিণত হয়েছে। বর্ষা মৌসুমে রাজধানীতে যে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয় তাতে অনুমান করা যায় খালসহ প্রাকৃতিক জলাশয়ের বিলুপ্তি কী অভিশাপ সৃষ্টি করছে। জলাবদ্ধতার অবসান শুধু নয়, রাজধানীতে শ্বাস নেওয়ার মতো পরিবেশ বজায় রাখতে দখল হয়ে যাওয়া খালগুলো উদ্ধার ও তা পুনঃখননের উদ্যোগ নিতে হবে।