মঙ্গলবার, ৫ জুলাই, ২০২২ ০০:০০ টা
পাঠক কলাম

দেশকে ভালোবাসতে হবে

মাজহারুল ইসলাম

দেশকে ভালোবাসতে হবে

সাবেক সংসদ সদস্য মেজর আখতারুজ্জামান (অব.) একটি কঠিন সত্য উচ্চারণ করেছেন। বলেছেন, ‘পদ্মা সেতু থেকে ছিটকে পড়ল অনেকেই’। পদ্মা সেতু দেশের ইতিহাসে নিজস্ব অর্থায়নে করা বৃহত্তম প্রকল্প। যাতে খরচ হয়েছে ৩০ হাজার কোটি টাকারও বেশি। এ সেতু নির্মাণের প্রধান কৃতিত্ব নিঃসন্দেহে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকারের। কোনো ব্যক্তি নয়, যেহেতু জনগণের টাকায় নির্মিত হয়েছে সেহেতু এ সেতুর মালিক মোক্তার দেশের সব মানুষ। দেশের অন্যতম বৃহত্তম দল বিএনপির নেতা-কর্মীরাও সে মালিকানার হকদার। কিন্তু শুরু থেকে বিএনপি সেতুর ওপর নিজেদের মালিকানা প্রতিষ্ঠায় ব্যর্থ হয়েছে। বিএনপির চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া জোড়াতালি দিয়ে পদ্মা সেতু তৈরি হচ্ছে, এ সেতু ভেঙে পড়বে ইত্যাদি নেতিবাচক কথা বলে পদ্মা পাড়ের ২১ জেলার অধিবাসীর কাছে নিজেকে হাস্যাস্পদ করে তুলেছেন। আমন্ত্রণ পেয়েও পদ্মা সেতু উদ্বোধনের অনুষ্ঠানে যাননি তারা। বিএনপির সাবেক সংসদ সদস্য মেজর আখতারের (অব.) ভাষায় রাষ্ট্র কোনো ব্যক্তি বা রাজনৈতিক দলের নয়। রাষ্ট্র পরিচালনা করে সরকার। সরকারের সঙ্গে আমি দ্বিমত পোষণ করতেই পারি কিন্তু রাষ্ট্রের সঙ্গে নয়। পদ্মা সেতু একটি রাষ্ট্রীয় সম্পদ যা নির্মাণ করেছে চলমান সরকার এবং সেটি নির্মিত হয়েছে জনগণের টাকায়। আমি রাষ্ট্রীয় অনুষ্ঠানে বাধা সৃষ্টি বা প্রয়োজনে বয়কট করতে পারি। কারণ অনুষ্ঠানের ব্যাপারে আমার ভিন্নমত থাকতে পারে। তবে তা স্পষ্ট করতে হবে। কারণ জনগণকে জানাতে হবে আমার অবস্থান কী।

আমি ব্যক্তিগতভাবে মনে করি, যেহেতু দেশনেত্রী খালেদা জিয়া জেলখানায় বন্দি তারপরও সাবেক প্রধানমন্ত্রী হিসেবে পদ্মা সেতু উদ্বোধন অনুষ্ঠানে শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানিয়ে প্রধানমন্ত্রীকে সেতু নির্মাণ সম্পন্ন করার জন্য ধন্যবাদ দিতে পারতেন। এতে ইতিবাচক জনমত তৈরি হতো বলেই আমি বিশ্বাস করি। সেই সঙ্গে সেতুর ব্যাপারে তার অভিমতও জনগণ জানতে পারত। তিনি জেলে বন্দি তারপরও এই শুভেচ্ছা আমরা তার কাছ থেকে নিয়ে আসতে পারতাম। এ ছাড়াও বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানও শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানাতে পারতেন। ধন্যবাদ দিতে পারতেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে। এর মাধ্যমে তিনি তার অস্তিত্বকেই জানান দিতে পারতেন। সুযোগ সৃষ্টি করতে পারতেন রাজনৈতিক সংলাপের। কমিয়ে নিয়ে আসতে পারতেন বৈরিতার। সেই মাহেন্দ্র সুযোগটিও হাতছাড়া হয়ে গেল।

যাই হোক, সব শেষে বলব, বিএনপি নেতাদের পদ্মা সেতু উদ্বোধন অনুষ্ঠানে না যাওয়া রাজনৈতিকভাবে ভুল হয়েছে। ভুল হয়েছে শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন না জানানোর। আমাদের মনে রাখতে হবে, পদ্মা সেতু জনগণের। বিএনপি জনগণের রাজনীতি করে। এক দিন হয়তো আল্লাহ চাইলে পদ্মা সেতুসহ রাষ্ট্রের দায়িত্ব বিএনপির ওপর বর্তাতে পারে। তখন কিন্তু পদ্মা সেতু গলার কাঁটা হতে পারে-যেমন ভারতের রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখার্জির সঙ্গে দেখা না করে যে ভোগান্তির শিকার হচ্ছি, তাইওয়ানকে কাছে ডেকে এনে যেভাবে পরম বন্ধু চীনকে চরম শত্রু বানিয়েছি। ভুলে যাওয়া কখনই সঠিক হবে না যে, চীন পদ্মা সেতু নির্মাণে সবচেয়ে বড় অবদান রেখেছে। পদ্মা সেতুর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে যোগদান না করে চীনকেই আমরা বৈরী করেছি-যা সম্ভবত প্রধানমন্ত্রী চেয়েছিলেন! এর আগে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল সাহেব আবিষ্কার করেছেন পদ্মা সেতুর ভিত্তিপ্রস্তর। তাদের চেয়ারপারসন বেগম সাহেবা স্থাপন করেছিলেন। এ আবিষ্কার নাকচ করে দিয়েছেন বেগম খালেদা জিয়ার সাবেক সহকারী প্রেস সচিব মহিউদ্দিন খান মোহন। তিনি বলেছেন, মির্জা আলমগীর সাহেব যে সময়ের কথা বলেছেন, তখন তিনি প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার সহকারী প্রেস সচিব ছিলেন। ওই মেয়াদে বেগম খালেদা জিয়া চারবার মুন্সীগঞ্জ জেলায় গিয়েছিলেন। একবার মুন্সীগঞ্জ সদর উপজেলার মোল্লাকান্দি ইউনিয়নে ‘রজতরেখা’ নামে একটি গুচ্ছগ্রাম উদ্বোধন করতে, দ্বিতীয়বার মুক্তারপুরে, তৃতীয়বার লৌহজংয়ে নতুন উপজেলা ভবন উদ্বোধন এবং চতুর্থবার গজারিয়ায় ইঞ্জিনিয়ারিং স্টাফ কলেজের ভিত্তি স্থাপন করতে। এর কোনোবারই তিনি মাওয়া পয়েন্টে পদ্মা সেতুর ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেননি। সবচেয়ে বড় কথা হলো, তার সহকারী প্রেস সচিব হওয়ায় তিনি মুন্সীগঞ্জ সফরে গেলে আমি তাঁর সফরসঙ্গী হতাম। বেগম খালেদা জিয়া পদ্মা সেতুর ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেছিলেন এমন কোনো ঘটনা আমার জানা নেই। বিষয়টি নিয়ে আমি কথা বলেছি তাঁর তৎকালীন সহকারী একান্ত সচিব মো. আবদুল মতিনের সঙ্গে। তিনি ওই সময়ে প্রধানমন্ত্রীর প্রতিশ্রুত উন্নয়ন প্রকল্পগুলো দেখভাল করতেন। মতিন সাহেবও তেমন কোনো ঘটনার কথা স্মরণ করতে পারলেন না। তাহলে মির্জা আলমগীর সাহেব কোথায় পেলেন এমন একটি ভিত্তিহীন তথ্য? সচেতন ব্যক্তিরা এ ব্যাপারটি খেয়াল করেছেন, ইদানীং মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর তাঁর দলীয় নেত্রীকে ওপরের দিকে তুলে ধরতে মাঝে-মধ্যেই বিতর্কিত মন্তব্য করছেন। এর আগে তিনি বেগম খালেদা জিয়াকে দেশের ‘প্রথম নারী মুক্তিযোদ্ধা’ বলে উল্লেখ করে বিতর্কের সূত্রপাত করেন। দেশবাসীর কাছে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর একজন শিক্ষিত, মার্জিত, রুচিবান এবং সংযত বক্তব্য দানকারী রাজনীতিক হিসেবেই পরিচিত। এ পর্যায়ে এসে কেন তিনি কোনো কোনো বিষয়ে প্রগলভ হয়ে পড়ছেন, অনেকের কাছেই তা বোধগম্য নয়। তার তো মনে রাখা দরকার, যিনি যে কৃতিত্বের অধিকারী নন, তাকে সে কৃতিত্বের সার্টিফিকেট দেওয়ার চেষ্টা ওই ব্যক্তির জন্য কখনো সম্মানজনক নয়, বরং বিব্রতকর।

                -মন্তব্য নিষ্প্রয়োজন।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর