বৃহস্পতিবার, ৭ জুলাই, ২০২২ ০০:০০ টা

অনুভূতি কী জিনিস?

তসলিমা নাসরিন

অনুভূতি কী জিনিস?

১. ধর্মীয় অনুভূতি নিয়ে ভয়ঙ্কর সব কান্ড চলছে উপমহাদেশ জুড়ে! জ্বালাও, পোড়াও, ভাঙচুর, ফতোয়া, ফাঁসির দাবি, গ্রেফতার, খুন, কিছুই থামছে না। অনুভূতিতে আঘাত লেগেছে এই অজুহাতে উগ্র ধর্মবাদিরা নিজ ধর্মের সমালোচকদের বাকস্বাধীনতা কেড়ে নিতে চাইছে, শুধু তাই নয়, তাদের অস্তিত্বও নিশ্চিহ্ন করতে চাইছে।

আজমীর শরিফের খাদিম সালমান চিশতিকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। কারণ তাঁর ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত লেগেছে এই অভিযোগ করে তিনি বলেছিলেন, যে লোক নূপুর শর্মার মু- কেটে নিয়ে আসতে পারবে, সেই লোককে তিনি তাঁর বাড়িটি পুরস্কার হিসেবে দেবেন। সালমান চিশতি একটি ভিডিও বাজারে ছেড়েছিলেন, সেই ভিডিওতে তিনি বলেছিলেন, ‘যে মা আমাকে জন্ম দিয়েছে, সেই মায়ের কসম খেয়ে বলছি, আমি নূপুর শর্মাকে জনসমুক্ষে গুলি করে মারবো। আমি আমার সন্তানদের কসম খেয়ে বলছি, আমি তাকে খুন করবো, এবং আজও বলছি, যে লোক তার মু-টা কেটে নিয়ে আসতে পারবে, সেই লোককে আমি আমার বাড়িটা পুরস্কার দেবো।’

খুব বেশি দিন আগের কথা নয় মোহাম্মদ রিয়াজ আর গাউস মোহাম্মদ উদয়পুরের কানাইয়া লালকে ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত দেওয়ার অভিযোগে হত্যা করবে, এই ঘোষণা দিয়েছিল। কানাইয়া লাল পুলিশের কাছে নিরাপত্তা চাইলে পুলিশ গ্রাহ্য করেনি। তারপর ঠিকই একদিন রিয়াজ আর গাউস উদয়পুরের জনবহুল এলাকায় কানাইয়া লালের দোকানে ঢুকে গলা কেটে তাকে খুন করে। খুনিরা এমনই উৎফুল্ল ছিল যে তারা গলা কাটার ছুরি নাচিয়ে সহাস্যে ভিডিও করে সোশ্যাল মিডিয়ায় আপলোড করেছে। তাদের গ্রেফতার করা হয়েছে বটে, কিন্তু তারা বিশ্বাস করে তাদের ধর্মীয় অনুভূতিতে কেউ আঘাত দিলে তাকে যা ইচ্ছে তাই করার অধিকার তাদের আছে।

মানুষের হাজারো অনুভূতি। অন্য কোনও অনুভূতি আঘাতপ্রাপ্ত হলে তুলকালাম কান্ড ঘটে না। বদ-লোকেরা জেনেছে ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত লেগেছে, এই গুজব ছড়িয়ে দিতে পারলে মতলব হাসিল করা সহজ। এই অনুভূতি আসলে বদ-লোকদের বদ-রাজনীতি করার অস্ত্র। এই অনুভূতিতে আঘাত লাগার অজুহাতে তারা এমন কোনও অবৈধ অনৈতিক অসাংবিধানিক কাজ নেই যে করে না।

কিছুদিন আগে বাংলাদেশের ধর্মোন্মাদ লোকেরা দেশজুড়ে তান্ডব করেছে, কারণ ভারতের একজন রাজনীতিক তাদের ধর্মগুরু সম্পর্কে কিছু বলেছে। কী বলেছে, আমার ধারণা, তারা জানে না। আমি যখন বহুকাল আগে কিছু কথা বলেছিলাম, তখন তারাও এমন তান্ডব করেছিল। বেশিরভাগ জানতো না আমি ঠিক কী বলেছিলাম। তান্ডব করার আগে তাদের জানার দরকার হয় না কে কী বলেছে, যা বলেছে তার সঙ্গে সত্যের কোনও সম্পর্ক আছে কি না, তাদের এও জানার দরকার হয় না সত্যটাই বা কী। ধর্মোন্মাদদের কানে কেউ যদি এই খবর পৌঁছে দিতে পারে, ধর্মগুরু নিয়ে কেউ কোনও প্রশ্ন করেছে, অমনি তারা বদ্ধোন্মাদের মতো রাস্তায় বেরিয়ে পড়ে। কোনও প্রশ্ন চলবে না, সমালোচনা চলবে না, গবেষণা চলবে না। ঐতিহাসিক সত্যও উচ্চারণ করা নিষিদ্ধ। তাঁদের সম্পর্কে ধর্মীয় পুস্তক কী লিখেছে, তা-ও বলা বারণ। মুসলিম দেশগুলো যখন বাকস্বাধীনতার বিপক্ষে এক পায়ে দাঁড়িয়ে যায়, তখন প্রশ্ন জাগে, পৃথিবী কি তাহলে মুসলিম বনাম অমুসলিমে ভাগ হয়ে যাবে একদিন?

আপাতত এইটুকু জানি, ভারতীয় পণ্য ছাড়া বাংলাদেশের চলবে না। ভারতের পেঁয়াজ রসুন থেকে শুরু করে গরু ছাগল পর্যন্ত বাংলাদেশে যাচ্ছে। ভারতের পণ্য ছাড়া বাংলাদেশের ঈদ উৎযাপন হয় না। সুতরাং আলটিমেটলি সমঝোতা করতেই হবে। ভুলে যেতে হবে কার অনুভূতির কোথায় আঁচড় লেগেছে। সবচেয়ে বড় জিনিস অন্ন বস্ত্র বাসস্থান। এইসবে আঁচড় পড়লে একেবারেই চলে না। অনুভূতি ধুয়ে বেশিদিন জল খাওয়া যায় না।

ধর্মীয় অনুভূতির অজুহাতে হাজার বছর ধরে মানুষ মানুষকে অত্যাচার করছে, বন্দি করছে, পুড়িয়ে মারছে, ফাঁসিতে ঝোলাচ্ছে, খুন করছে। কিন্তু অনুভূতির অভিযোগ আজও বন্ধ হয়নি। এতকাল উগ্র মুসলমানই শুধু ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত লাগার অভিযোগ করেছে। এখন কিন্তু উগ্র হিন্দুরাও শামিল হয়েছে মিছিলে। উগ্র হিন্দুরাও ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত লাগার অভিযোগ করছে।

হিন্দুদের যে জিনিসটা আমার ভালো লাগে তা হলো তাদের ভগবানকে যে যে রূপেই দেখুক, যে যেভাবেই কল্পনা করুক, এমনকী ভগবানকে যা খুশি তাই বলুক, তাতে তাদের কিছু যায় আসে না। তাদের গল্পে ভগবানদের নানা রকম কীর্তি কাহিনীর কথা লেখা। ভগবান হলেও তাঁরা মানুষের মতোই কখনও ভালো কাজ করেন, কখনও মন্দ কাজ করেন। ভগবান রামের নিন্দে করে ভগবান রামের শত্রু রাবণের প্রশংসাও করা হয়েছে শিল্পে-সাহিত্যে। সেই শিল্প সাহিত্য প্রচ- জনপ্রিয়তাও পেয়েছে। আদিকাল থেকে মানুষ এক ভগবানকে মেনেছে, আরেক ভগবানকে মানেনি। অথবা সব ভগবানেরই সমালোচনা করেছে। এতে কোনও হিন্দুই আপত্তি করেনি, অসন্তোষও প্রকাশ করেনি।

কিন্তু আজকাল আপত্তি, অভিযোগ আর অসন্তোষের অন্ত নেই। আজকাল বলছে ভগবান সরস্বতীর গায়ে কাপড় নেই কেন, ভগবান কালীর মুখে সিগারেট কেন, ভগবান রাম সম্পর্কে কেন অশ্লীল কথা বলা হলো, এতে আমাদের ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত লেগেছে, অতএব আঘাতকারীর শাস্তি চাই। এটা হিন্দুরা শিখেছে অন্য ধর্মের উগ্রবাদীদের কাছ থেকে। অথচ অনুভূতিতে আঘাত লাগার অজুহাতে জ্বালাও পোড়াও, ভাঙচুর, ফাঁসি চাই, মু-ু চাইকে হিন্দুরা খুব ঘৃণা করে। প্রশ্ন হলো, যা ঘৃণা করো, তা কেন গ্রহণ করো?

উত্তরপ্রদেশে তালিব হুসেইন নামের এক মুসলমান চিকেন বিক্রেতা কাগজের ঠোঙায় চিকেন দেয় তার ক্রেতাদের। এখন অভিযোগ এসেছে কাগজের ঠোঙায় হিন্দু দেব দেবীর ছবি ছিল। এতে নাকি হিন্দুদের ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত লেগেছে। বিক্রেতাকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। বিক্রেতা এখন জেলে।

দুঃখ এই, উগ্র হিন্দুরা দিন দিন অন্যদের মতো উগ্র হয়ে উঠতে চাইছে।

২. আমি মানুষের ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত দিয়েছি, এই কথা বলে আমাকে দেশ থেকে বের করা হয়েছে, ২৮ বছর দেশে প্রবেশ করতে দিচ্ছে না দেশের কোনও সরকারই। ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত লাগতে পারে এই কারণ দেখিয়ে একের পর এক আমার বই নিষিদ্ধ করেছে সরকার। ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত দিয়েছে এই অভিযোগে লেখক প্রকাশকদের কুপিয়ে মেরেছে সন্ত্রাসীরা। ধর্মীয় অনুভূতির কথা বলে কী কান্ড ঘটাতে পারে ধর্মান্ধ সন্ত্রাসীরা তা বাংলাদেশের মানুষ বেশ ভালো জানে।

সত্য কথা হলো, অনুভূতিতে আঘাত না করে সমাজ বদলানো যায় না। অনুভূতিতে আঘাত করতেই হবে। এ ছাড়া আর কোনও উপায় নেই। সমাজকে এক জায়গায় দাঁড় করিয়ে রাখলে চলবে না। সমাজকে এগোতে হবে। যারা সমাজটাকে যেমন আছে তেমন রাখতে চায়, তারা সবরকম অগ্রসরতাকে রোধ করে। অন্য কোনও অনুভূতিতে আঘাত লাগলে মানুষ এত বীভৎস বর্বর হয়ে ওঠে না, যত হয়ে ওঠে ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত লাগলে। ধর্মীয় অনুভূতিকে এত গুরুত্ব কেন দেওয়া হচ্ছে? অনেকে বলে, যেহেতু ধার্মিকের সংখ্যাটা দুনিয়াতে বেশি। প্রায়ই শুনি দেড় বিলিয়ন লোকের ধর্মানুভূতিতে আঘাত দেওয়াটা ঠিক নয়। বুঝি যে, মানুষের সংখ্যাটাকে খুব বড় করে দেখা হয়। ব্যাপারটা যেন এরকম, সংখ্যায় কম হলে তাদের ধর্মানভূতিতে আঘাত দেওয়া যেতে পারে, সংখ্যায় বেশি হলে দেওয়া উচিত নয়। দেড় বিলিয়ন না হয়ে দেড়শ বা দেড় হাজার হলে ঠিক ছিল কি?

অনেকে যারা বাংলাদেশের ব্লগার হত্যার বিরুদ্ধে, তারা ব্লগারদের পক্ষ নিতে গিয়ে হামেশাই বলেন, ব্লগাররা মানুষের ধর্মানুভূতিতে আঘাত দেননি। তাহলে কি তারাও ধর্মান্ধদের মতো মনে করেন ধর্মানুভূতিতে আঘাত দেওয়া অন্যায়? মুশকিলটা ঠিক এই জায়গায়। লক্ষ্য করেছি, এটা মেনে নিতে প্রগতিশীলদেরও অসুবিধে হচ্ছে যে মানুষের ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত দেওয়াটা অন্যায় নয়।

মানুষের অনুভূতিতে আঘাত লাগাটা অত্যন্ত স্বাভাবিক। কেউ যদি বলে, তার অনুভূতিতে কোনও রকম আঘাত সে চায় না, সুতরাং কারও অধিকার নেই তার অনুভূতিতে আঘাত দেওয়ার! নিশ্চিতভাবেই সে বাস্তবতা সম্পর্কে জ্ঞান রাখে না। তাছাড়া, অনুভূতিতে কোনওরকম আঘাত ছাড়াই পুরো জীবনটা কাটিয়ে দিতে চাওয়ার দাবি অত্যন্ত অন্যায্য দাবি। আমরা এমন মানুষ কখনও পাবো না, যার কোনও অনুভূতিতে আজ অবধি কোনও আঘাত লাগেনি। মানুষের ভিন্ন ভিন্ন মত। মানুষের সঙ্গে ওঠা বসা এবং চলাফেরা করলে আমাদের অনুভূতি সকাল থেকে সন্ধ্যে অবধি শতবার আঘাতপ্রাপ্ত হতে পারে। এভাবেই আমরা জীবন যাপন করি। ধরা যাক, ক যদি বলে সে সমাজবাদি দলের আদর্শে বিশ্বাস করে, এবং খ যদি উত্তরে বলে, সমাজবাদি এক নেতার চরিত্রের ঠিক নেই বা সমাজবাদির আদর্শ কোনও আদর্শই নয়, তাহলে কি ক দাবি করবে যে খ তার রাজনৈতিক অনুভূতিতে আঘাত দিয়েছে? এবং এই নিয়ে কোর্ট কাচারি করবে, জবাই চাপাতি করবে? খ আসলেই ক-এর রাজনৈতিক অনুভূতিতে আঘাত দিয়েছে। প্রশ্ন হলো, তাতে হলোটা কি? মতপ্রকাশের স্বাধীনতায় বিশ্বাস করলে অনুভূতির ওপর আঘাত নিয়ে কেউ মাথা ঘামায় না। মাথা ঘামালে মতপ্রকাশের স্বাধীনতা বলতে কিছুর অস্তিত্ব থাকে না। মতপ্রকাশের স্বাধীনতার অস্তিত্ব থাকতেই হবে যদি গণতন্ত্রের অস্তিত্ব থাকে।

আগেই বলেছি, অন্য কোনও অনুভূতি আঘাতপ্রাপ্ত হলে এত অঘটন ঘটে না, যত অঘটন ঘটে ধর্মীয় অনুভূতি আঘাতপ্রাপ্ত হলে। ধর্মীয় অনুভূতিকে কেন আমাদের বিশেষভাবে সমীহ করতে হয়? ধর্মের গল্পগুলো সত্যি বলে? নাকি প্রচুর লোক ধর্মকে ভালোবাসে, সে কারণে? ধর্মের গল্পগুলোকে যারা সত্যি বলে মানে, তাদের অনুভূতি আঘাতপ্রাপ্ত হতেই পারে ধর্মের গল্পগুলোকে যারা সত্যি বলে মানে না, তাদের দ্বারা। তবে আর সব অনুভূতি আঘাতপ্রাপ্ত হলে তারা যেভাবে শুশ্রূষা করে, ধর্মানুভূতিও আঘাতপ্রাপ্ত হলে ঠিক সেভাবেই শুশ্রূষা করতে পারে।

অনুভূতির রাজনীতি অনেককাল ধরে চলছে। ধর্মানুভূতির সঙ্গে সংঘাত লাগছে গণতন্ত্রের, শুভবুদ্ধির, জ্ঞানের, বিজ্ঞানের, নারীর অধিকারের, মানবাধিকারের, সমানাধিকারের। এখন দেখতে হবে আমরা কোন পক্ষ নিতে চাই। ধর্মানুভূতি রক্ষা করতে চাই নাকি গণতন্ত্র, শুভবুদ্ধি, জ্ঞান, বিজ্ঞান, নারীর অধিকার, মানবাধিকার, সমানাধিকার ইত্যাদি রক্ষা করতে চাই।

পৃথিবীর কোথাও নারীবিদ্বেষীদের অনুভূতিতে আঘাত না দিয়ে নারী অধিকার প্রতিষ্ঠিত হয়নি। পৃথিবীর কোথাও মানবাধিকারবিরোধী লোকদের অনুভূতিতে আঘাত না দিয়ে মানবাধিকার প্রতিষ্ঠিত হয়নি। পৃথিবীর কোথাও গণতন্ত্রবিরোধী লোকদের অনুভূতিতে আঘাত না দিয়ে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত হয়নি। পৃথিবীর কোথাও ধর্মান্ধদের অনুভূতিকে আঘাত না দিয়ে বিজ্ঞান প্রতিষ্ঠিত হয়নি।

অনুভূতির ভায়োলেন্স বন্ধ করতে হবে। আইডিওলজির বিরুদ্ধে যুদ্ধ আইডিওলজি দিয়েই হতে হবে। বিজ্ঞানের সঙ্গে ধর্মের সংঘাত চিরকালের। বিজ্ঞানীরা, বিজ্ঞান যারা মানে না তাদের ধারালো ছুরি শানিয়ে কোপাতে যায় না। কিন্তু উগ্র ধর্মবাদিরা, ধর্ম যারা মানে না তাদের কোপাতে যায়। কোপানোর বিরুদ্ধে দেশজুড়ে প্রতিবাদ না হলে কোপানো চলতে থাকবে। আজ বিজ্ঞানীদের আর মুক্তমনাদের কোপাবে, কাল হিজাব না পরলে, নামাজ না পড়লে, রোজা না করলে কোপাবে। অথবা দেব দেবীকে ন্যাংটো আঁকলে, দেবীর ছবিতে সিগারেট বসালে, দেব দেবী নিয়ে অশোভন কথা বললে কোপাবে।

                লেখক : নির্বাসিত লেখিকা।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর