বৃহস্পতিবার, ৭ জুলাই, ২০২২ ০০:০০ টা

বরকতময় মক্কা

মুফতি রফিকুল ইসলাম আল মাদানি

বরকতময় মক্কা

ইসলাম ধর্র্মের একটি মহান ভিত্তি হলো হজ। হজ আল্লাহর পক্ষ থেকে অপার ক্ষমা এবং অসীম রহমত ও কল্যাণ লাভের সুবর্ণ সুযোগ। হজ উপলক্ষে আল্লাহর ঘর পবিত্র কাবাসহ বিভিন্ন বরকতময় ও দোয়া কবুলের গুরুত্বপূর্ণ স্থান প্রদর্শনের তৌফিক হয়। এর মধ্যে সর্বোত্তম স্থান হলো আল্লাহতায়ালার পবিত্র ঘর। যে ঘর লক্ষ্য করে এ হজের বিধান প্রবর্তিত হয়েছে। সেই পবিত্র ঘর সম্পর্কে মহান প্রভু ঘোষণা করেন, ‘নিশ্চয়ই মানবজাতির জন্য সর্বপ্রথম যে ঘর প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল তা তো মক্কায়, এটা বরকতময় ও বিশ্বজগতের জন্য হেদায়েতের দিশারি।’ (সুরা আলে ইমরান, আয়াত ৯৬) এ ঘরকে পবিত্র কাবাঘর, আল বায়তুল আতিক, আল বায়তুল হারাম এবং মাসজিদুল হারাম বলা হয়। মহানবী (সা.) ইরশাদ করেন, ‘মাসজিদুল হারামে নামাজের ফজিলত অন্য মসজিদের তুলনায় ১ লাখ গুণ এবং আমার মসজিদে ১ হাজার গুণ আর বায়তুল মুকাদ্দাসে নামাজ আদায় করলে ৫০০ গুণ বেশি নামাজের সওয়াব হবে।’ (বায়হাকি) বর্তমান কাবাঘরের উত্তর দিকে সংযুক্ত অংশের নাম ‘হাতিমে কাবা’। কোরাইশ বংশের লোকজন কাবাঘর নির্মাণকালে অর্থ জোগানের অভাবে এ অংশটুকু ছেড়ে তারা কাবাঘর নির্মাণ করেছিল। তবে কাবাঘরের মূল পরিধি বোঝার জন্য তারা সামান্য উঁচু দেয়ালের মাধ্যমে স্থানটি চিহ্নিত করে রেখেছিল। যা আজও এভাবে চিহ্নিত আছে। এ অংশটুকু কাবাঘরের অন্তর্ভুক্ত। তাই এ অংশে নামাজ আদায় করার সুযোগ হলে তা কাবাঘরের ভিতরে নামাজ আদায়ের সমতুল্য গণ্য হবে। কাবাঘরের পাশে কাচের বেষ্টনীতে রাখা আছে মাকামে ইবরাহিম নামক একটি পাথর। এটি বেহেশতের ইয়াকুত পাথর। যা কাবাঘর নির্মাণের ক্ষেত্রে চলন্ত সিঁড়ি হিসেবে ইবরাহিম (আ.) ব্যবহার করতেন। এতে এখনো তাঁর পদচিহ্ন বিদ্যমান। তাওয়াফ শেষে এ পাথর অভিমুখে দুই রাকাত নামাজ আদায় করা ওয়াজিব। এ স্থানটিও দোয়া কবুলের অন্যতম মাকাম। মহান প্রভু নির্দেশ করেন, ‘আর তোমরা সেই সময়কে স্মরণ কর, যখন আমি কাবাঘরকে মানবজাতির মিলন কেন্দ্র ও নিরাপত্তাস্থল করেছিলাম এবং বলেছিলাম, তোমরা মাকামে ইবরাহিমকে নামাজের স্থানরূপে গ্রহণ কর।’ (সুরা বাকারা, আয়াত ১২৫)

কাবাঘরের ডান পাশের একটি কোণকে রোকনে ইয়ামানি বলা হয় এবং এর পরবর্তী কোণে কাবাঘরের দরজার নিকটবর্তী স্থানে হাজরে আসওয়াদ নামক একটি বেহেশতি পাথর স্থাপন করা আছে। মহানবী (সা.) প্রতি তাওয়াফে রোকনে ইয়ামানি ও হাজরে আসওয়াদ স্পর্শ করতেন। তিনি ইরশাদ করেন, ‘হাজরে আসওয়াদ ও রোকনে ইয়ামানি স্পর্শ করার ফলে যাবতীয় পাপ মুছে যায়।’ (জামিউস সগির) কাবাঘরের দরজা ও হাজরে আসওয়াদের মধ্যবর্তী তিন ৩ পরিমাণ স্থানকে ‘মুলতাজাম’ বলে। এটি দোয়া কবুলের বিশেষ একটি স্থান। রসুলুল্লাহ (সা.) এবং বিশিষ্ট সাহাবিরা সেখানে বুক ও বাহু লাগিয়ে দোয়া করতেন (আবু দাউদ, ইবনে আবি শায়বাহ)। হজের একটি ফরজ হলো আরাফায় অবস্থান। আল্লাহর সৃষ্ট ফজিলতপূর্ণ দিনগুলোর অন্যতম একটি আরাফার দিন। এদিন বান্দার ত্রুটি-বিচ্যুতি মুছে দেওয়া হয়, দোয়া কবুল করা হয়।

                লেখক : গবেষক, ইসলামিক রিসার্চ সেন্টার, বসুন্ধরা, ঢাকা।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর