শনিবার, ২৩ জুলাই, ২০২২ ০০:০০ টা

পরনিন্দা কবিরা গুনাহ

মুফতি মুহাম্মদ এহছানুল হক মুজাদ্দেদী

পরনিন্দা কবিরা গুনাহ

গিবত আরবি শব্দ। এর আভিধানিক অর্থ পরনিন্দা। ইমাম গাজ্জালি মুকাশিফাতুল কুলুবে বলেছেন, কারও অনুপস্থিতিতে তার এমন কোনো দোষত্রুটি নিয়ে সমালোচনা করা, যা শুনলে সে আঘাত পাবে। হোক তা মুখে আলোচনার মাধ্যমে অথবা ইশারা-ইঙ্গিতে, কলমের খোঁচা কিংবা ভিন্ন কোনো উপায়ে। গিবত বা পরনিন্দা কবিরা গুনাহ। আল্লাহ বলেন, ‘তোমরা পরনিন্দা কোরো না। তোমাদের কেউ কি আপন মৃত ভাইয়ের গোশত খেতে পছন্দ করবে? অথচ তোমরা তা খুবই ঘৃণা কর। আল্লাহকে ভয় কর, নিশ্চয়ই আল্লাহ বলেন, প্রত্যেক পশ্চাতে ও সম্মুখে পরনিন্দাকারীর জন্য ধ্বংস হোক।’ (সুরা হুমাজাহ, আয়াত ১)

পরনিন্দার কারণে স্বামী-স্ত্রী, ভাই-বোন, পরিবারে, সমাজে ঝগড়া, কলহ-বিবাদ লেগেই থাকে। ভুল বুঝে অনেকে অনেকের ক্ষতিসাধন করে। প্রিয় নবী (সা.) পরনিন্দা, পরচর্চা না করার জন্য আমাদের সাবধান করেছেন।

হজরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, ‘নবী (সা.) জানতে চাইলেন তোমরা কি জান গিবত কাকে বলে? সাহাবায়ে কিরাম বললেন, আল্লাহ ও তাঁর রসুলই ভালো জানেন। রসুল বললেন, তোমার কোনো মুসলমান ভাই সম্পর্কে এমন কথা বলা, যা শুনলে তার খারাপ লাগবে। জিজ্ঞাসা করা হলো, যদি ভাইয়ের মধ্যে সে দোষ থাকে, যা আমি বললাম। তা কি গিবত হবে? নবীজি বললেন, যা তুমি বলছ সে দোষ যদি তোমার ভাইয়ের মধ্যে থাকে, তাহলে গিবত। আর যদি সে ত্রুটি না থাকে তবে তুমি তার প্রতি অপবাদ দিলে।’ (মুসলিম)

গিবতের গুনাহ খুবই ভয়াবহ। কেননা গিবত হলো বান্দাহর হক। গিবতের অপরাধ বান্দা ক্ষমা না করা পর্যন্ত আল্লাহও ক্ষমা করেন না। হাদিসে পরনিন্দা-গিবতকে ব্যভিচার থেকেও মারাত্মক গুনাহ বলা হয়েছে।

রসুল (সা.) বলেন, ‘গিবত জিনা থেকেও মারাত্মক। সাহাবিরা আরজ করলেন এটা কীভাবে? নবীজি বললেন, মানুষ ব্যভিচার করার পর তওবা করে আর আল্লাহ দয়া করে ক্ষমাও করে দেন কিন্তু নিন্দাকারীকে আল্লাহ কখনো ক্ষমা করেন না, যতক্ষণ যার নিন্দা করা হয়েছে সে ক্ষমা না করে।’ (তাবারানি, মুজামুল আওসাত) আমাদের মনে রাখতে হবে, তিন শ্রেণির মানুষের দোয়া আল্লাহর দরবারে কবুল হয় না- ১. হারামখোর ২. গিবতকারী ৩. কৃপণ ও হিংসুক। (তাফসিরে কুরতুবি)

দুনিয়া-আখেরাতে পরনিন্দার পরিণাম অত্যন্ত ভয়াবহ। তাই আসুন চলার পথে মসজিদ-মাদরাসা, হাটবাজারে, পরিবারে, ব্যবসায়িক কার্যক্রমে আমরা পরনিন্দা থেকে বেঁচে থাকি। পরনিন্দা-পরচর্চা না করে আল্লাহর ইবাদতে মশগুল থাকি। মহান আল্লাহ প্রিয় নবী (সা.)-এর অসিলায় আমাদের তৌফিক দান করুন। নেক আমলের সঙ্গে, পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ আদায়কারী, পরোপকারী হিসেবে আমাদের কবুল করুন।

 

লেখক : এমফিল গবেষক আরবি প্রভাষক, আউশপাড়া ফাজিল (ডিগ্রি) মাদরাসা, লাকসাম, কুমিল্লা।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর