সোমবার, ২৫ জুলাই, ২০২২ ০০:০০ টা

মিতব্যয়িতা সম্পর্কে ইসলামের বিধান

যুবায়ের আহমাদ

মিতব্যয়িতা সম্পর্কে ইসলামের বিধান

আল্লাহতায়ালা আমাদের সৃষ্টি করেছেন। দিয়েছেন আমাদের বেঁচে থাকার জন্য যা যা প্রয়োজন সব। অক্সিজেন, পানি, গ্যাস, নবায়নযোগ্য শক্তি, ফলমূল, ফুল-ফসল সব দিয়ে ভরে রেখেছেন আমাদের চারপাশ। এসব জীবনোপকরণ থেকে আমাদের যতটুকু প্রয়োজন, ততটুকু খাওয়া ও গ্রহণের নির্দেশ দিয়েছেন। পাশাপাশি প্রয়োজনের অতিরিক্ত ভক্ষণ ও গ্রহণে কঠোরভাবে নিষেধ করেছেন। আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘তোমরা আহার এবং পান কর, আর অপচয় করো না; তিনি (আল্লাহ) অপচয়কারীদের ভালোবাসেন না।’ (সুরা আরাফ : ৩২)।

শুধু খাদ্য নয়; গ্যাস, বিদ্যুৎ কোনোটিই অপচয় করার জায়েজ নেই। ইসলামে কঠোরভাবে নিষিদ্ধ। বাংলাদেশে চলমান বিদ্যুৎ সংকটেরও অন্যতম কারণ অপচয়। ঘর থেকে বের হওয়ার সময় ফ্যান বা লাইটের সুইচ বন্ধ করেছি কি-না তা আমরা অনেকে খেয়াল করি না। প্রয়োজন অপ্রয়োজনের বিবেচনা না করে কেবল আভিজাত্যের প্রতিযোগিতায় এসিসহ নানা বৈদ্যুতিক জিনিসপত্রের ব্যবহার করেন অনেকে। টয়লেট থেকে বের হয়ে লাইটটি বন্ধ করি না। অপ্রয়োজনেই সারারাত ঘরের লাইট জ্বালিয়ে রাখি, সামান্য কারণে আলোকসয্যা ও অপ্রয়োজনীয় ব্যবহার করে বিদ্যুৎ অপচয় করছি। বাড়ির মালিকই তো বিদ্যুৎ বিল দেন, ভাড়াটিয়া হয়ে আমি কেন কম ব্যবহার করব- এমন মানসিকতা অনেকের মাঝেই কাজ করে। ইসলামে তা কঠোরভাবে নিষিদ্ধ। রসুলুল্লাহ (সা.) অপচয়ের বিরুদ্ধে এতই কঠোর অবস্থানে ছিলেন যে, একটু পানিও অপ্রয়োজনে খরচ করতে নিষেধ করেছেন। একদা রসুলুল্লাহ (সা.) হজরত সা’দকে (রা.) অজুতে প্রয়োজনের অতিরিক্ত পানি ব্যয় করতে দেখে বললেন, ‘হে সা’দ! অপচয় করছ কেন? হজরত সা’দ (রা.) বললেন, অজুতে কি অপচয় হয়? নবীজি (সা.) বললেন, হ্যাঁ। প্রবাহমান নদীতে বসেও যদি তুমি অতিরিক্ত পানি ব্যবহার করো তা অপচয়’ (ইবনে মাজা)। অপচয়কারীর একটি পরিণাম হলো, দারিদ্র্য তাকে দ্রুত ধরে ফেলবে আর আল্লাহ তাকে পথ প্রদর্শন করেন না। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হচ্ছে, নিশ্চয় আল্লাহ অপচয়কারী ও মিথ্যাবাদীকে পথ প্রদর্শন করেন না। (সুরা মুমিনুন : ২৮)।

আমার উপার্জিত টাকা আমি যেভাবে ইচ্ছে খরচ করব, অপচয়-অপব্যয় করব সমস্যা কী- এমন চিন্তা অনেকে করেন। না, উপার্জন ও খরচের ক্ষেত্রেও আমরা জবাবদিহির মুখোমুখি হব। উপার্জন হালাল হলেও তা হালাল পথে খরচ হয়েছে কি-না, অপচয় অপব্যয়মুক্ত ছিল কি-না সে ব্যাপারে হাশরের ময়দানে আল্লাহতায়ালার কাছে জবাব দিতে হবে। আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা.) বলেন, রসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, কিয়ামতের দিন পাঁচটি বিষয়ে জিজ্ঞাসিত না হওয়া পর্যন্ত একজন আদম সন্তানের পা সরাতে পারবে না। যার মধ্যে রয়েছে সে সম্পদ কোত্থেকে উপার্জন করেছে। সম্পদ কোন পথে ব্যয় করেছে। অর্জিত জ্ঞান অনুযায়ী কতটুকু আমল করেছে।’ (তিরমিজি)। অপচয়-অপব্যয়ের কারণে আমার উপার্জিত সম্পদ যেন জাহান্নামে যাওয়ার কারণ না হয় সে ব্যাপারে অবশ্যই সতর্কতা কাম্য। অপব্যয়কারীকে পবিত্র কোরআনে আল্লাহতায়ালা শয়তানের ভাই হিসেবে অভিহিত করে ভর্ৎসনা করেছেন। আল্লাহতায়ালা বলেন, আত্মীয়-স্বজনকে তার হক দাও এবং অভাবগ্রস্ত ও মুসাফিরকেও। এবং কিছুতেই অপব্যয় করো না। নিশ্চয় অপচয়কারীরা শয়তানের ভাই আর শয়তান তো তার প্রতিপালকের প্রতি বড়ই অকৃতজ্ঞ। (সুরা বনি ইসরাইল ২৬-২৭)।

বিদ্যুৎ আমাদের জতীয় সম্পদ। জাতীয় ও আন্তর্জাতিক নানা কারণে সাময়িক যে ঘাটতি তৈরি হয়েছে তা মোকাবিলায় শুধু সরকার নয়, জনগণেরও আন্তরিক হওয়া উচিত। একজনের অপচয়ের কারণে সংকট বাড়লে অন্য মুসলমান কষ্ট পাবে। যার কারণে অন্যরা কষ্ট পায় সে প্রকৃত মুসলমান হিসেবে গণ্য হবে না। হজরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, রসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘যার কষ্ট থেকে আশপাশের মানুষেরা নিরাপদ নয় সে জান্নাতে প্রবেশ করবে না। (বুখারি, মুসলিম)। আমরা সচেতন হয়ে অপচয় বন্ধ করলে জাতীয় সম্পদ রক্ষা হবে, এ বিদ্যুতে অন্যরা প্রয়োজন পূরণ করতে পারবেন, আমি গুনাহ থেকে বাঁচব, পাশাপাশি খরচ কমিয়ে অর্থ জমিয়ে দান সদকা কিংবা ভালো কাজে খরচ করে আল্লাহতায়ালার সন্তুষ্টি অর্জন করতে পারব। যারা অপচয় এবং কৃপণতার পথ পরিহার করে মিতব্যয়িতার পথ অবলম্বন করবে তারা আল্লাহর কাছ থেকে পুরস্কৃত হবেন। আল্লাহ তাদের নিজের বান্দা হিসেবে উল্লেখ করেছেন। এরশাদ হয়েছে, ‘(রহমানের বান্দা তো তারাই) যারা অপব্যয়ও করে না আবার কৃপণতাও করে না। তাদের পন্থা হয় এতদুভয়ের মধ্যবর্তী’ (সুরা ফুরকান : ৬৭)। দয়ালু আল্লাহতায়ালার বান্দা হওয়ার সৌভাগ্য অর্জনে আমাদের সব ধরনের অপচয়-অপব্যয় পরিহার করে মিতব্যয়ী হতে হবে।

লেখক : খতিব, বাইতুশ শফিক মসজিদ ও পরিচালক, বাইতুল হিকমাহ একাডেমি, গাজীপুর।

সর্বশেষ খবর