রবিবার, ৩১ জুলাই, ২০২২ ০০:০০ টা

হিজরি সনের প্রচলন যেভাবে

আবদুর রশিদ

হিজরি সন ইসলামী সন। ধর্মীয় কারণে মুসলিম সমাজে এ সন অনুসরণ করেন দুনিয়ার ১০০ কোটিরও বেশি মানুষ। মহররম মাস দিয়ে এই সনের শুরু। হিজরি সন চান্দ্রবর্ষভিত্তিক একটি সন। বাংলা সন সৌরবর্ষভিত্তিক হলেও এ সনকে হিজরি সনের উত্তরসূরি বলে ভাবা হয়। দ্বিতীয় খলিফা হজরত ওমর ফারুক (রা.)-এর খেলাফতকাল ছিল ইসলামের বিজয় ও সম্প্রসারণের স্বর্ণযুগ। আরবের সীমা পেরিয়ে রোম ও পারস্য পর্যন্ত ইসলামী খেলাফত সম্প্রসারণের ফলে নতুন এলাকার কর্মচারী-কর্মকর্তা নিয়োগ করে রাজধানী মদিনার সদর দফতর থেকে বিভিন্ন নির্দেশ সংবলিত চিঠি ইস্যু করা হতো। কর্মকর্তাগণও প্রয়োজন বোধে খলিফার কাছে দিকনির্দেশনার জন্য চিঠি পাঠাতেন। কিন্তু তাতে সুনির্দিষ্ট সন-তারিখ না থাকায় বিপাকে পড়তে হতো। হজরত আবু মুসা আশআরি (রা.) একদা এ বলে খলিফা ওমর (রা.)-এর দরবারে নিবেদন করলেন-“আমিরুল মুমিনীন! আপনার পক্ষ থেকে যে নির্দেশনা আমরা পেয়ে থাকি, তাতে সন-তারিখ না থাকায় কোন সময়ের লেখা তা বোঝা যায় না। ফলে নির্দেশ কার্যকর করতে গিয়ে অসুবিধার সম্মুখীন হতে হয়। অতএব, সন-তারিখ নির্ধারণ করা দরকার।” এরপর হজরত ওমর (রা.) হিজরি সন প্রবর্তন করেন। একইভাবে এক দিন স্বয়ং খলিফা হজরত ওমর (রা.) কোনো এক মোকদ্দমা সম্পর্কীয় চিঠিতে শুধু শাবান মাস লিখা থাকায় ঘটনার সময় নিরূপণ করতে গিয়ে বিপাকে পড়েন। দিন দিন রাষ্ট্রব্যবস্থার ক্রমোন্নতিতে এ সমস্যাটা আরও তীব্রতর হয়ে উঠল। মুসলমানদের জন্য নির্দিষ্ট একটা সন- তারিখ নির্ধারণের প্রয়োজনীয়তা উপলব্ধি করে ১৭ হিজরিতে হজরত ওমর (রা.) বিশিষ্ট সাহাবিদের নিয়ে এ বিষয়ে এক পরামর্শ সভার আয়োজন করেন। কয়েকজন সাহাবি রোম ও পারস্যের ধর্মীয় সম্প্রদায়গুলোর অনুসরণীয় সালকে গ্রহণ করার প্রস্তাব দিলে, অধিকাংশ সাহাবির কাছে এ মত গ্রহণযোগ্য মনে হয়নি। তৎকালীন বহুল প্রচলিত যাবতীয় সাল গণনার পদ্ধতি সম্পর্কে সাহাবিদের মাঝে কোনো ধরনের গোঁড়ামি ছিল না, ইতিহাসের পাতায় দেখা যায় যে, বিভিন্ন প্রয়োজনে বিজাতীয় অনেক মতামতকে যথেষ্ট মূল্যায়ন করা হতো তখনকার দিনে। কিন্তু এ ক্ষেত্রে হজরত ওমর (রা.) ও সাহাবিগণ অনুভব করছিলেন, সাল গণনা প্রত্যেক জাতির স্বাতন্ত্র্য এবং জাতীয় অস্তিত্বের একটি মৌলিক ভিত্তি। নিজস্ব সন-তারিখ একটি জাতির পরিচয় চিহ্নিত করে। জাতির উত্থান-পতন, জন্ম-মৃত্যু, জয়-পরাজয়, উন্নতি-অগ্রগতির সমুজ্জ্বল ধারাবাহিকতা রক্ষা করে এ সাল। বিভিন্ন জাতি-গোষ্ঠীর মধ্যে প্রচলিত সময় গণনার পদ্ধতি অনুসরণের বদলে সাহাবিগণ একটা নতুন সন প্রবর্তনের তাগিদ অনুভব করেন। মহানবী হজরত মুহাম্মদ সাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের হিজরতকে কেন্দ্র করে হিজরি সাল গণনা শুরু করার বিষয়ে সাহাবিগণ ঐকমত্যে পৌঁছান। সাহাবায়ে কেরাম (রা.) যেহেতু দীন ইসলামের অনুসারীদের তথা মুসলমানদের আদর্শের প্রতীক। তাই সর্বস্তরের মুসলমানের এ হিজরি সালের প্রতি গুরুত্বারোপ করা উচিত।

                লেখক : ইসলামবিষয়ক গবেষক।

সর্বশেষ খবর