শনিবার, ১৩ আগস্ট, ২০২২ ০০:০০ টা

মৃত্যু থেকে পলায়ন সম্ভব নয় ...

মো. আমিনুল ইসলাম

মৃত্যু থেকে পলায়ন সম্ভব নয় ...

আল্লাহ বলেন, ‘কুল্লু নাফসিন জায়িকাতুল মাউত’ অর্থ, নিশ্চয়ই সব প্রাণীকে মৃত্যুর স্বাদ গ্রহণ করতে হবে। (সুরা আলে ইমরান, আয়াত ১৮৫) এ দুনিয়া ক্ষণস্থায়ী। আমরা সবাই এখানে মুসাফির। একজন মুসাফির যখন কোথাও যাত্রা করে সঙ্গে রাখে একান্ত প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র। তার বাইরে একটি খড়কুটা সঙ্গে রাখে না। এ পৃথিবী ক্ষণিকের। এখান থেকে চলে যেতে হবে আমাদের সবাইকে। সবার জন্য নির্দিষ্ট করা আছে সময়। আল কোরআনে আল্লাহ বলেন, ‘হে নবী, তুমি বল, জীবন হরণের ফেরেশতা যাকে তোমাদের মৃত্যুর ব্যাপারে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে, অচিরেই তোমাদের জান কবজ করে নেবে, এরপর তোমাদের সবাইকে তোমাদের মালিকের দরবারে ফিরিয়ে নেওয়া হবে।’ (সুরা আস সাজদা, আয়াত ১১)

সবচেয়ে মজার ব্যাপার হলো দুনিয়ার সবকিছুর জন্য আমরা প্রস্তুতি নিই। কি চাকরির জন্য, কি পেশায় উন্নতির জন্য, কি বিয়ের জন্য, এমনকি মাস শেষে বেতন পেলে কীভাবে তা খরচ করব তার জন্যও। তাহলে এ দুনিয়া থেকে এক দিন চলে যাব সেজন্য আমরা কি কোনো প্রস্তুতি নিই? কজনে নিই? বলতে গেলে তা হাতে গোনা কয়জন। আল্লাহ বলেন, ‘আমি তোমাদের যা দিয়েছি তা থেকে মৃত্যু আসার আগেই ব্যয় কর। অন্যথায় মৃত্যু এলে সে বলবে, হে আমার পালনকর্তা, আমাকে আরও কিছুকাল অবকাশ দিলে আমি তোমার পথে দান করতাম এবং নেক বান্দাদের শামিল হতাম।’ (সুরা মুনাফিকুন, আয়াত ১০) পরবর্তী আয়াতে আল্লাহ বলেন, ‘কিন্তু কারও নির্ধারিত সময় এসে গেলে তখন আল্লাহ কাউকে অবকাশ দেবেন না। তোমরা যা কর আল্লাহ সে বিষয়ে অবহিত রয়েছেন।’ (সুরা মুনাফিকুন, আয়াত ১১) আল্লাহ আরও বলেন, ‘বলুন, তোমরা যে মৃত্যু থেকে পলায়ন করছ তা অবশ্যই তোমাদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করবে। তারপর তোমাদের অদৃশ্য ও দৃশ্য সম্পর্কে পরিজ্ঞাত আল্লাহর কাছে ফিরিয়ে নেওয়া হবে। তারপর তিনি তোমাদের জানিয়ে দেবেন যা তোমরা করতে পারতে।’ (সুরা জুমা, আয়াত ০৮) সুতরাং আমাদের উচিত মৃত্যু আসার আগেই আল্লাহর বিধান মোতাবেক জীবন পরিচালনা করা।

আমাদের মনে রাখতে হবে মানুষের মৃত্যুর পর সে আর কখনই এ পৃথিবীতে ফিরে আসবে না। আর মৃত্যুর কষ্ট ও ভয়াবহতা যে কত কষ্টকর তা কোরআন ও হাদিসে বিশদভাবে বর্ণিত হয়েছে। রসুল (সা.) ইরশাদ করেছেন, ‘আমার উম্মতের হায়াত ৬০ থেকে ৭০ বছরের মধ্যে।’ (তিরমিজি) সুতরাং আমরা যারা রসুল (সা.)-এর উম্মত তাদের স্মরণ রাখতে হবে এ স্বল্প সময়ের জিন্দেগিতে আমরা যেন কোরআন ও হাদিসের আলোকে জীবন গড়ে এ পৃথিবী থেকে বিদায় নিতে পারি। তাহলে পরকালে আমাদের জন্য রয়েছে পরম শান্তি আর তা না হলে রয়েছে যন্ত্রদায়ক শাস্তি। আল্লাহ বলেন, ‘তাদের পার্শ্বদেশ রাতের বেলায় বিছানা থেকে আলাদা থাকে (তাহাজ্জুদ নামাজ) তারা নিশুতি রাতে আজাবের ভয়ে এবং জান্নাতের আশায় তাদের রবকে ডাকে, তদুপরি আমি তাদের যা দিয়েছি তারা তা থেকে আমার পথে ব্যয় করে।’ (সুরা আস সাজদা, আয়াত ৩২) মৃত্যু আসার আগে আল্লাহর শাস্তি থেকে বাঁচার জন্য আমাদের কী করা উচিত তা আয়াতে সুন্দরভাবে বিবৃত হয়েছে। সুরা আম্বিয়ার ১ নম্বর আয়াতে আল্লাহ বলেন, ‘মানুষের হিসাবের সময় নিকটবর্তী অথচ তারা বেখবর হয়ে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছে।’ প্রত্যেক মুসলমান নর-নারীকে চিন্তা করতে হবে যে আমার হিসাব-নিকাশের সময় আসন্ন। আমাকে উদাসীন হলে চলবে না। কারণ মৃত্যু আমার অতি নিকটে। আমাকে আল্লাহর কাছে দুনিয়ার জীবনের কৃতকর্মের জন্য জবাবদিহি করতে হবে।

আল্লাহ রব্বুল আলামিন আমাদের সবাইকে সেই তৌফিক দান করুন।

লেখক : অবসরপ্রাপ্ত ব্যাংকার

সর্বশেষ খবর