মঙ্গলবার, ১৬ আগস্ট, ২০২২ ০০:০০ টা

মূল্যবোধহীন রাজনীতির শেষ কোথায়?

সাইফুর রহমান

মূল্যবোধহীন রাজনীতির শেষ কোথায়?

গনা নামের ছেলেটি সেন্ট জেভিয়ার্স থেকে সদ্য ইন্টারমিডিয়েট পাস করে ভর্তি হয়েছে কলকাতার বিখ্যাত প্রেসিডেন্সি কলেজে। গনার একটি সুন্দর পোশাকি নামও রয়েছে বটে কিন্তু পাঠকদের সেই নামটি আপাতত না জানলেও চলবে। গনা প্রেসিডেন্সি কলেজের ছাত্র হলেও তার আধখানা মন ইতোমধ্যে চলে গেছে ইংল্যান্ডে। কারণ আর কিছুই নয়, প্রেসিডেন্সির পাট চুকালেই তাকে পাঠানো হবে ইংল্যান্ডে ব্যারিস্টারি পড়তে। ১৯৩৫ সালে গনা প্রেসিডেন্সি থেকে দ্বিতীয় শ্রেণি পেয়ে স্নাতক পর্যায়ের লেখাপড়া শেষ করল। গনার সান্ত¡না এতটুকুই যে ক্লাসের আর কেউ প্রথম শ্রেণি পায়নি। ১৯৩৫ সালে গনা ইংল্যান্ডে এসে ভর্তি হলো আইন বিষয়ে লন্ডন বিশ্ববিদ্যালয়ের ইউনিভার্সিটি কলেজে। পাঠ নিতে শুরু করল হিউ গেইটস্কেলের কাছে। যদিও গনা লন্ডন বিশ্ববিদ্যালয়ের ইউনিভার্সিটি কলেজের ছাত্র কিন্তু অন্যান্য কলেজের আর পাঁচজন উৎসাহী ছাত্রের সঙ্গে আমাদের গনাও যায় লন্ডন স্কুল অব ইকোনমিক্সে, বিশ্ববিখ্যাত দার্শনিক ও রাষ্ট্রবিজ্ঞানী হ্যারল্ড ল্যাস্কির উদ্দীপক ফ্যাসিবাদবিরোধী বক্তৃতা শুনতে। মন্ত্রমুগ্ধের মতো সে শুনে ল্যাস্কির ফ্যাসিবাদবিরোধী শানিত যুক্তি, ভারতে ব্রিটিশ শাসনের তীব্র নিন্দা। গনার মনে হয়, কে যেন তাকে জাগিয়ে দিচ্ছে খুব গভীর থেকে। নাড়া দিয়ে তাকে কে যেন বুঝিয়ে দিচ্ছে সাম্রাজ্যবাদের হাতে অপমান, চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিচ্ছে দারিদ্র্যের যন্ত্রণা। রাতভর গনা পড়তে শুরু করলেন মার্কস-এঙ্গেলসের বই ‘কমিউনিস্ট ম্যানিফেস্টো’, ‘দাস ক্যাপিটাল’, ‘জার্মান রেমিডিজ’ ইত্যাদি। পড়তে পড়তে গনার মনের জানালাগুলো একে একে খুলে যেতে থাকে। তার মনে হয়, এই তো সঠিক সমাধানের দিশা- সমাজতান্ত্রিক সমাজের পথ। কেন শুধু কিছু লোকের হাতে থাকে সম্পদের পর্বততুল্য সম্ভার আর কেনই বা অগণ্য মানুষ হয়ে থাকে অভুক্ত ও নিঃসম্বল। তার সব প্রশ্নের উত্তর সহজেই মিলে যেত ওইসব লেখাতেই। তিনি দারিদ্র্যমুক্ত, শোষণমুক্ত, স্বাধীন মানুষের উন্নত এক সমাজের স্বপ্ন দেখতে শুরু করলেন। গনার মানসপটের এ আমূল পরিবর্তনের প্রত্যক্ষ প্রভাব দেখা যায় অল্প সময়ের মধ্যেই। শান্তি ও সাম্রাজ্যের ওপর এক সম্মেলনে ১৯৩৮ সালের ১৫ এবং ১৬ জুলাই পন্ডিত নেহরু এক ভাষণ দেন। সম্মেলনটির আয়োজক ইন্ডিয়া লীগ এবং লন্ডন ফেডারেশন অব পিস কাউন্সিল। নেহরুর সঙ্গে গনার এই প্রথম দেখা। প্রথম সাক্ষাতেই গনা নেহরুকে তেজোদীপ্ত কণ্ঠে বললেন, তারা ভারতে সমাজতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করতে চান। নেহরু স্মিত হেসে গনার কাঁধে হাত রেখে বললেন, ‘আগে তো ভারত ইংরেজদের কাছ থেকে স্বাধীন হোক তারপর আমরা সমাজতন্ত্রের কথা ভাবব।’ সময়ের পরিক্রমায় গনা চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেললেন। না, সফল ব্যারিস্টারি তার জন্য নয়, তিনি রাজনীতিই করবেন। তত দিনে মনস্থির করে ফেলেছেন, তিনি কমিউনিজমের পথ ছাড়া অন্য কোনো পথে হাঁটবেন না। আইনে আর তাঁর কোনো আগ্রহ নেই। নেই কোনো মোহ। একসময় তিনি স্থির করে ফেললেন পরীক্ষাতেই আর বসবেন না। গনার প্রিয় শিক্ষক বেন ব্র্যান্ডলে অসামান্য স্নেহ করেন গনাকে। কাছে ডেকে আদর করে বললেন, ‘এমন আত্মঘাতী কাজ করতে যেও না গনা, পরীক্ষা না দিয়ে ব্যারিস্টার না হতে পারলে সমাজ সেটা তোমার অসাফল্য হিসেবে ভেবে নেবে।’

প্রিয় শিক্ষক বলে কথা। গনা তাঁর উপদেশ শুনলেন এবং পরীক্ষায়ও বসলেন। তবে ফল বেরোনোর জন্য অপেক্ষা না করেই দেশের উদ্দেশে পাড়ি দিলেন। ১৯৪০ সালের প্রথম দিন। ঠিক চার বছর ইংল্যান্ডে কাটানোর পর গনা দেশের মাটিতে পা রাখলেন। গিয়েছিলেন ব্যারিস্টার হওয়ার উচ্চাকাক্সক্ষা নিয়ে। যদিও ব্যারিস্টার হলেন কিন্তু ফিরলেন দুই চোখে সমাজতান্ত্রিক সমাজ গড়ার স্বপ্ন নিয়ে। গাড়িতে বসে বাবার সঙ্গে অনর্গল কথা বলতে বলতে বাড়ি পৌঁছলেন গনা। দুপুরে খাওয়া-দাওয়ার পর বাবাকে চমকটা দিলেন যে, তিনি আইন পেশায় যাচ্ছেন না। একটা স্তব্ধতার ঘোমটায় ঢাকল চারপাশ। গনার বাবা ডা. নিশিকান্ত বসু ঘরে বজ্রপাত হলেও বোধকরি এতখানি আঘাত পেতেন না। মা হেমলতা দেবীও যারপরনাই দুঃখিত হলেন। তাঁদের আদর্শের গনা তাঁদের এত দিনের স্বপ্ন ভেঙে দিল! সম্ভ্রান্ত, সম্পন্ন জমিদারবংশের ছেলে কমিউনিস্ট হবে? কিন্তু গনা তাঁর সিদ্ধান্তে অটল। বিস্ময়ের ধাক্কা কাটিয়ে ওঠার পর বাবা বোঝাতে শুরু করেন, ‘দেখ, রাজনীতি কর ঠিক আছে, দেশবন্ধু চিত্তরঞ্জন দাশও রাজনীতি করেছেন, আবার একই সঙ্গে ব্যারিস্টারিও করেছেন। তুমিও না হয় তা-ই কর।’ কিন্তু গনা কিছুতেই দুই নৌকায় পা দিতে রাজি নন। তিনি রাজনীতিকেই জীবনের ব্রত হিসেবে একেবারে মনস্থির করে ফেলেছেন। এবার পাঠকদের সঙ্গে এই গনা নামের মানুষটির একটু পরিচয় করিয়ে দিচ্ছি। এই মানুষটি আর কেউ নন পশ্চিমবঙ্গের অবিসংবাদিত নেতা জ্যোতিরিন্দ্র বসু- সংক্ষেপে জ্যোতি বসু। ইংল্যান্ডের অন্যতম সেরা লন্ডন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আইন ও ব্যারিস্টারি পাস করে ১৯৪০ সালে জ্যোতি বসু বেঙ্গল আসাম রেলওয়ে ওয়ার্কার্স ইউনিয়ন নামে একটি শ্রমিক সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত করেন নিজেকে। রাজনীতি করতে গিয়ে তাঁকে প্রায়ই পালিয়ে বেড়াতে হয়েছে বনজঙ্গলে। হামেশাই রাত কাটাতে হয়েছে রেলের কয়লার বগিতে। অনেক চড়াই-উতরাই পার করে ১৯৭৭ সালে তিনি প্রথমবারের মতো পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী নির্বাচিত হন। এরপর ২০০০ সাল পর্যন্ত সুদীর্ঘকাল এ দায়িত্ব পালন করেন। এখানে আমি ভারতের একজন মাত্র রাজনীতিকের সংসদ সদস্য হওয়ার দৃষ্টান্ত তুলে ধরেছি। এখানে উল্লেখ্য, এটি ভারতের কোনো বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়। বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই কাঠখড় পুড়িয়ে এভাবে নিজেকে তৈরি করে নিয়ে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হতে হয় প্রায় প্রতিটি রাজনৈতিক ব্যক্তিকে। পশ্চিমা বিশ্বের উদাহরণ এখানে না-ই বা টানলাম। কিন্তু অন্যদিকে বাংলাদেশের চিত্রটি একেবারেই উল্টো। এখানে সংসদে প্রতিনিধিত্বকারীদের স্বরূপ একেবারে আলাদা। বাংলাদেশের রাজনীতিতে সাধারণত  পেশিশক্তি ও ব্যবসায়ীদেরই আধিক্য। এ বিষয়গুলো এখানে তুলে ধরার কারণটি হলো এক থেকে দেড় বছরের মধ্যেই হতে যাচ্ছে জাতীয় নির্বাচন। সেই নির্বাচনে কারা অংশগ্রহণ করবেন সেটা নিঃসন্দেহে একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। গতবারের নির্বাচনে দেখা গেছে গণভবনে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী নিজে সংসদ সদস্য প্রার্থীদের সাক্ষাৎকার নিয়েছিলেন। সেসব খবরাখবর বেশ কয়েকটি পত্রিকা বেশ গুরুত্ব দিয়ে একটি খবর ছেপেছে যে, ‘বিপুলসংখ্যক প্রার্থী গণভবনের সামনে বিলাসবহুল পাজেরো ও অন্যান্য দামি গাড়িসহযোগে আগমনের মধ্য দিয়ে তাদের বিত্তবৈভব প্রদর্শনের প্রতিযোগিতায় নেমেছেন।’ বাংলাদেশে দুর্বৃত্ত, সন্ত্রাসী ও ব্যবসায়ীরা কেন সংসদ সদস্য হতে চান? আমি ভেবেচিন্তে এর দুটি মনস্তাত্ত্বিক কারণ উদ্ভাবন করেছি। প্রথমত, যে ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীটি সাধু কিংবা অসাধু যে কোনো উপায়ে যখন একসময় বিপুল সম্পদের মালিক বনে যান তখন সমাজের প্রায় প্রতিটি ক্ষেত্রে তিনি নির্দিষ্ট পরিমাণ সম্মান আশা করেন। কিন্তু যখন তিনি মনে করেন সেই সম্মানটুকু থেকে তিনি বঞ্চিত হচ্ছেন, তখন এমপি-মন্ত্রী হয়ে সেই সম্মান অর্জনে উদ্যোগী হন। দ্বিতীয়টি হচ্ছে, অনেকেই রাজনীতিটাকে একটি ব্যবসা মনে করে সেখানে বিনিয়োগে উৎসাহিত হন। তিনি নিশ্চিতভাবে জানেন যে, এমপি-মন্ত্রী হয়ে অল্প সময়ের মধ্যে দুর্নীতি করে তিনি বিপুল পরিমাণ টাকাপয়সা অর্জনে সক্ষম হবেন। সেজন্যই হঠাৎ তার নিজস্ব এলাকায় ঈদ কিংবা বিভিন্ন পূজা-পার্বণে ঢাকঢোল পিটিয়ে জাকাত, ফিতরা দেওয়ার মতো মৌসুমি উৎসবে মেতে ওঠেন, কিংবা কোরবানিতে হাটের সবচেয়ে বড় গরু কিনে এলাকাবাসীর জন্য ভূরিভোজের ব্যবস্থা করেন। পাশাপাশি আওয়ামী লীগ ও বিএনপি দুটি বৃহৎ দলেই যোগ্য ও মেধাসম্পন্ন সংসদ সদস্যরা সচরাচর উপেক্ষিত ও কোনো কোনো ক্ষেত্রে নিগৃহীত। গতবারের সংসদ নির্বাচনে কোটি মানুষের প্রাণের নেত্রী ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম জিয়াকে কারাবন্দি করে যেভাবে নির্বাচন করা হয়েছিল সেটা ছিল সাধারণ মানুষের চিন্তারও বাইরে। সেই পরিস্থিতি দেখে বারবার আমার শুধু ব্রিটিশ এমপি চার্লস ব্র্যাডলাফের কথা মনে হচ্ছিল। কে এই ব্র্যাডলাফ? চার্লস ব্র্যাডলাফ (১৮৩৩-৯১) ছিলেন প্রগতিশীল ও মুক্তচিন্তার অধিকারী রাজনীতিবিদ। পেশায় সাংবাদিক। অন্যায় ও অবিচারের বিরুদ্ধে তিনি ছিলেন মূর্তিমান সরব। দুর্দান্ত জনপ্রিয় এই মানুষটি ১৮৮০ সাল থেকে তিনবার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন। সে সময়টায় নারীদের অধিকার ছিল অতি সামান্য। তাই তিনি নারী অধিকার নিয়েও সোচ্চার ছিলেন। এ আন্দোলনে তিনি সহযোগী হিসেবে পেয়েছিলেন আরেক খ্যাতিমান নারীকে। যার নাম অ্যানি বেসান্ত। প্রসঙ্গক্রমে বলতে হয়, এলেনর মর্টন প্রণীত ‘গান্ধীর জীবনে নারী’ বইটিতে লেখক লিখেছেন ১৮৮৭ সালে মোহনদাস গান্ধী অ্যানি বেসান্তকে প্রথম দেখেই তার প্রতি অনুরাগী হয়ে উঠেছিলেন। লেখকের মতে, বিলেতে সেটিই ছিল গান্ধীর কোনো নারীর প্রতি একতরফা প্রেম। সে সময় বিলেতে অবস্থানরত ভারতীয় অভিবাসীরা ব্র্যাডলাফকে অসম্ভব পছন্দ করতেন। কারণ ব্র্যাডলাফ ছিলেন প্রচন্ড সাম্রাজ্যবাদবিরোধী। তিনি ভারতের ওপর আরোপিত ব্রিটিশ শাসনকে অন্যায় মনে করতেন। পাশাপাশি ছিলেন ভারতে ব্রিটিশ শাসনের ঘোর বিরোধী। এজন্য সব সময় তিনি পার্লামেন্টে ও বাইরের বিভিন্ন সভা-সমিতিতে জ্বালাময়ী বক্তৃতা দিতেন। তৎকালীন ব্রিটিশ সরকার ব্র্যাডলাফের প্রতি ছিল অসম্ভব রুষ্ট। ব্রিটিশ সরকারের মতে, এ যেন ঘরের শত্রু বিভীষণ! তাই ব্রিটিশ সরকারও তক্কে তক্কে ছিল তাঁকে কীভাবে শায়েস্তা ও নাজেহাল করা যায়। ব্র্যাডলাফ ছিলেন সময়ের চেয়েও আধুনিক। তিনি সে সময় জন্মনিয়ন্ত্রণের পক্ষে জোরালো প্রচারে লিপ্ত ছিলেন। ব্রিটেনের জনগণকে এ বিষয়ে সচেতন করতে ছিলেন নিবেদিতপ্রাণ। ব্র্যাডলাফ এ বিষয়ে একটি গ্রন্থও রচনা করেন। তাঁর এই মামুলি কাজটিকেই আইনবিরোধী দেখিয়ে ব্রিটিশ সরকার তাঁকে আটক করে নিক্ষেপ করে কারাগারে। সবচেয়ে মজার বিষয় হচ্ছে, এর বহুকাল পর বিংশ শতাব্দীর শুরুর দিকে চার্লস ব্র্যাডলাফের জীবন ও আদর্শ নিয়ে আলোচনা করতে গিয়ে অজস্র রাজনীতিবিদ, মন্ত্রী, প্রধানমন্ত্রী তাঁকে কারাগারে পাঠানোকে দুঃখজনক ও অনভিপ্রেত বলে উল্লেখ করেছেন। আমিও অপেক্ষায় আছি। কোনো একদিন হয়তো বেগম জিয়াকে কারাগারে পাঠানোর জন্যও কেউ দুঃখ প্রকাশ করবে।

আমি আশা করি, আগামীতে যে দলই সরকার গঠন করুক না কেন মেধাবী ও আলোকিত সংসদ সদস্যরা তার পদাঙ্ক অনুসরণ করতে পিছপা হবেন না। বিগত সংসদ নির্বাচনে প্রথমবারের মতো আওয়ামী লীগ ও বিএনপির অর্ধশতাধিক তরুণ সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন। এটি ছিল আশাজাগানিয়া ঘটনা। কিন্তু পরিতাপের বিষয় এই যে, যথাযথ হুইপিংয়ের কারণে তাঁরা সংসদে সে রকম কর্মদক্ষতার পরিচয় দিতে পারেননি। এখন পাঠকদের মনে হয়তো এ প্রশ্নটি জাগতে পারে, হুইপিং বলতে আসলে কী বোঝায়? পার্লামেন্টের ভাষায় এর অর্থ হলো পার্লামেন্টে দলীয় সদস্যদের গাইড করা, বৈঠকে তাদের উপস্থিতি ও তাদের ভোটদান নিশ্চিত করেন। পার্লামেন্টে হুইপদের কাজ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। নিজ নিজ দলের সদস্যদের বৈঠকে উপস্থিতি নিশ্চিত করা, দলের পক্ষে ভোট দিতে সদস্যদের উদ্বুদ্ধ করা, দলীয় সদস্যদের প্রয়োজনীয় সব দলিল, কাগজ ও তথ্য সরবরাহ করা, পার্লামেন্টে সংঘটিত ঘটনাবলি সম্পর্কে দলীয় নেতাদের অবহিত করা, দলনেতার কাজে সহায়তা করা হুইপের দায়িত্ব।

লেখাটি শেষ করতে গিয়ে বিশেষ সতর্কতার সঙ্গে এ কথা বলতেই হয়, আমাদের রাজনীতি যে শুধু পদ্ধতিগতভাবেই ত্রুটিপূর্ণ কিংবা কোনো কোনো দলের কর্তাব্যক্তিদের অপরিসীম স্বেচ্ছাচারিতায় পরিপূর্ণ তা নয়। এসবের পাশাপাশি আমরা যারা সাধারণ ভোটার আমরাও আমাদের দায়িত্বগুলো সঠিকভাবে পালন করতে পারছি না। আমাদের ভোটারদের মানসিকতাও পরস্পরবিরোধী ও বৈপরীত্যে ভরা। যেমন ধরুন, আপনার এলাকার যে মানুষটি হঠাৎ পাজেরো হাঁকিয়ে, টাকার বস্তা উড়িয়ে এলাকা চষে বেড়ায়, সে তো আপনার-আমার অতি পরিচিত কিংবা প্রতিবেশী। তাকে হয়তো আপনি-আমি বহুকাল ধরেই ভালোভাবে চিনি -জানি। নিজেকে কি কখনো এ প্রশ্নটি করেছেন- এতগুলো বছর কাটল অথচ তাকে কোনো দিন একটি কড়িও খরচ করতে দেখলেন না। আচানক কেন সে এই মর্ত্যলোকে দাতা হাতেম তাই কিংবা দানবীর মুহসীন হিসেবে আপনার সামনে আবির্ভূত হলো? আমার মনে হয়, নিজেকে এখন এ প্রশ্নটি করার সময় এসে গেছে, কেন সে হঠাৎ আপনার কিংবা আমাদের পেছনে টাকা ঢালার জন্য এ রকম ব্যস্ত হয়ে উঠেছে। একটু বিবেকের দৃষ্টিতে ভেবে দেখুন শত কিংবা হাজার টাকার বিনিময়ে কি নিজের এলাকাটি তার কাছে বিক্রি করে দেবেন নাকি আপনার এলাকাটি কোনো সৎ ও যোগ্য লোকের হাতে তুলে দেবেন? নিজেকে এ প্রশ্ন করুন। একবার নয়, শতবার কিংবা হাজার বার। দেখবেন এর উত্তর একেবারে আপনার চোখের সামনেই।

                লেখক : গল্পকার ও সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী

সর্বশেষ খবর