রাজধানীর পুরান ঢাকার চকবাজারে প্লাস্টিক কারখানায় ভয়াবহ আগুনে অন্তত ছয়জনের প্রাণহানি ঘটেছে। সোমবার দুপুরে ‘বরিশাল হোটেলে’ আগুনের সূত্রপাত। একজন প্রত্যক্ষদর্শীর ভাষ্য, আনুমানিক ১২টার দিকে বিকট শব্দ শুনে বেরিয়ে দেখেন বরিশাল হোটেলে আগুন জ্বলছে। সিলিন্ডার বিস্ফোরণে সৃষ্ট আগুন বৈদ্যুতিক ট্রান্সফরমারে বিস্তৃত হয়। সেখানে আরেক দফা বিস্ফোরণের পর প্লাস্টিকের খেলনা তৈরির কারখানায় আগুন লাগে। এরপর সেখান থেকে আগুন আশপাশে ছড়িয়ে পড়ে। প্রথমে যেখানে আগুন লাগে সেটি চার তলা ভবন। ভবনটির নিচতলায় খাবারের হোটেল। তৃতীয় তলা পর্যন্ত পাকা আর চতুর্থ তলায় টিনশেড ঘর। এ টিনশেড ঘরটি মূলত প্লাস্টিকের খেলনা উৎপাদন ও মজুদের গোডাউন। সকাল থেকে কারখানা বন্ধ ছিল। তাই অন্য দিনের তুলনায় কারখানায় শ্রমিকের উপস্থিতি কম ছিল। এ ভবনের আশপাশে আরও একাধিক পলিথিন কারখানা রয়েছে। যে ভবনে আগুনের সূত্রপাত সেটিসহ আশপাশের কোনো ভবন নির্মাণে প্রচলিত নিয়মনীতি মানা হয়নি। এ কারণে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে বেগ পেতে হয়। সরকারি জমি লিজ নিয়ে এসব স্থাপনা তৈরি হয়েছে। সে ক্ষেত্রেও কোনো নিয়মনীতির তোয়াক্কা করা হয়নি। আগুন লাগার পর ফায়ার সার্ভিসের সদস্যরা দ্রুত ঘটনাস্থলে হাজির হন। মোট ১০টি ইউনিট আগুন নেভানোর কাজে জড়িত হয়। অপ্রশস্ত রাস্তা আর মানুষজনের ভিড়ে ফায়ার সার্ভিস কর্মীদের আগুন নেভাতে কঠিন পরিশ্রম করতে হয় আড়াই ঘণ্টা ধরে। ২০১০ সালের ৩ জুন রাসায়নিকের আগুনে ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছিল চকবাজারের নিমতলী। শতাধিক মানুষ প্রাণ হারায় অসহায়ভাবে। রাসায়নিক গুদামে সে আগুনের সূত্রপাত। ২০১৮ সালে পুরান ঢাকা থেকে রাসায়নিক পণ্যের গুদাম কেরানীগঞ্জে সরিয়ে নেওয়ার পরিকল্পনা নেওয়া হলেও আজও বাস্তবায়ন হয়নি। প্লাস্টিক কারখানার জন্য আলাদা শিল্প এলাকা গড়ে তোলার একটি পরিকল্পনা সাত বছর ধরে ফাইলচাপা পড়ে আছে। মানুষের জীবনের প্রতি দায় থাকলে এসব প্রকল্পের দ্রুত বাস্তবায়ন নিশ্চিত করা হবে। অবসান ঘটবে দীর্ঘসূত্রতার।