শুক্রবার, ১৯ আগস্ট, ২০২২ ০০:০০ টা

বাংলাদেশের ঋণ প্রত্যাশা ও বিশ্ব মিডিয়ার প্রচারণা

মেজর নাসির উদ্দিন আহাম্মেদ (অব.) পিএইচডি

বাংলাদেশের ঋণ প্রত্যাশা ও বিশ্ব মিডিয়ার প্রচারণা

আমি যখন এই লেখা শুরু করি তখন বিশ্বের ৯৩টি দেশে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল বা ইন্টারন্যাশনাল মনিটরি ফান্ড (সংক্ষেপে আইএমএফ) থেকে প্রদত্ত ঋণের পরিমাণ ১০৮ বিলিয়ন ডলারের বেশি। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি ঋণ পেয়েছে দক্ষিণ আমেরিকার দেশ আর্জেন্টিনা। পরিমাণ ৩২ বিলিয়ন ডলারের বেশি। আর সবচেয়ে কম ঋণ পেয়েছে বাংলাদেশের ১০ ভাগের ১ ভাগেরও কম আয়তনবিশিষ্ট দক্ষিণ-পশ্চিম প্রশান্ত মহাসাগরের দ্বীপরাষ্ট্র ভানুয়াতু। অইএমএফ থেকে পাওয়া বাংলাদেশের ঋণের পরিমাণ প্রায় ৭৬২ মিলিয়ন অর্থাৎ ১ বিলিয়নের কম। এ বছর জুলাইর মাঝামাঝি অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল সংবাদমাধ্যমকে আশ্বস্ত করে বলেছিলেন, বাংলাদেশের হয়তো বা আইএমএফের ঋণের প্রয়োজন হবে না। কারণ দেশে শুধু বিদেশি মুদ্রার পরিমাণ, আমদানির বিপরীতে ডলার প্রাপ্তি ও প্রবাসী বাংলাদেশিদের বৈধভাবে দেশে পাঠানো রেমিট্যান্সের পরিমাণ এক ধরনের অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতারই ইঙ্গিত বহন করে। এর বিপরীতে বিভিন্ন বেসরকারি গবেষণা সংস্থা, গবেষক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান সরকারকে সাময়িক তৃপ্তির ঢেঁকুর না তুলে দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা ও ভবিষ্যতের প্রয়োজনীয়তার ওপর গুরুত্ব প্রদানের পরামর্শ দেয়। এর মধ্যে অন্যতম সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি)-এর সম্মানিত ফেলো অর্থনীতিবিদ ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্যের সতর্কবাণী। ২১ জুলাই, ২০২২ বৃহস্পতিবার তাঁর বরাতে বিভিন্ন মিডিয়ায় প্রকাশিত সংবাদে জানা যায়, ১৩টি ক্ষেত্রে বাংলাদেশ কর্তৃক গৃহীত ৩২.২৫ বিলিয়ন ঋণের কিস্তি পরিশোধের গ্রেস পিরিয়ড বা কিস্তি শুরু বিলম্বের মেয়াদ শেষ হবে আগামী বছর (২০২৩ সাল)। এতে একলাফে ২০২৪ সালে বাংলাদেশের ঋণের কিস্তির অঙ্ক বা পরিমাণ বহুগুণে বৃদ্ধি পাবে। এর ফলে বর্তমানে দেশের মোট জিডিপির যে ১ শতাংশ বৈদেশিক ঋণের কিস্তি পরিশোধে ব্যয় হয় তা বেড়ে দ্বিগুণ বা ২ শতাংশে পৌঁছবে। ড. দেবপ্রিয়র দেওয়া তথ্যমতে, ১০ মাস আগে দেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ৪৮ বিলিয়ন ডলার থাকলেও বর্তমানে তা ৮ বিলিয়ন কমে ৪০ বিলিয়নে এসে দাঁড়িয়েছে। ঠিক এমনি এক প্রেক্ষাপটে ড. দেবপ্রিয় উত্থাপিত তথ্য-উপাত্ত প্রকাশের তিন দিন পর ২৫ জুলাই, ২০২২ রবিবার আইএমএফের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ক্রিস্টালিনা জর্জিয়েভার কাছে সাড়ে ৪ বিলিয়ন ডলার ঋণ চেয়ে পত্র লেখে অর্থ মন্ত্রণালয়, যা ২৬ জুলাই, ২০২২ থেকে বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে প্রকাশ হতে থাকে। বিগত কয়েক বছর এমনকি করোনাকালেও বাংলাদেশের জিডিপির হার রপ্তানিজনিত আয় ও বিদেশে থাকা বাংলাদেশের প্রবাসী জনগোষ্ঠীর পাঠানো রেমিট্যান্সের ইতিবাচক ধারার কারণে বাংলাদেশ কোনো প্রকার সংকটে পড়বে না বলে সরকার সমর্থকরা জোর প্রচার চালিয়েছেন। একই ধারণা হয়তো বা পোষণ করেছিল বহির্বিশ্বের কেউ কেউ। কিন্তু ড. দেবপ্রিয়র দেওয়া তথ্য প্রকাশের এক দিন পর ২৩ জুলাই, ২০২২ শনিবার স্থানীয় ডেইলি স্টারে একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। প্রতিবেদনে আইএমএফের প্রতিনিধির বরাতে লেখা হয়- আইএমএফ প্রতিনিধিদের নয় দিনের বাংলাদেশ সফর ও সরকারের সঙ্গে আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে প্রতীয়মান হয় যে, বাংলাদেশ আইএমএফের কাছ থেকে ঋণ চেয়ে দ্রুতই চিঠি লিখবে। এই প্রতিনিধির দৃষ্টিতে বিশ্বব্যাপী দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি, বিশ্ববাণিজ্য প্রসারে ধীরগতি এবং রেমিট্যান্স প্রবাহে উচ্চহারের বদলে স্বাভাবিক হারের কারণে দেশে বৈদেশিক মুদ্রার মজুদ আগামী বছরগুলোয় হ্রাস পাবে, যার ফলে আমদানিকৃত দ্রব্যের মূল্য পরিশোধের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ চাপে থাকবে। একটি ইংরেজি দৈনিকে একই সংবাদকর্মী ২৬ জুলাই, ২০২২ লেখা প্রতিবেদনে আইএমএফের কাছে বাংলাদেশের সাড়ে ৪ বিলিয়ন ডলার ঋণ লাভের জন্য আবেদন বা চিঠি লেখার বিষয়টি নিশ্চিত করেন। বাংলাদেশ যে এভাবে আইএমএফের কাছে ঋণ চাইতে পারে এমনটি যেন ছিল অকল্পনীয় বা অপ্রত্যাশিত। ফলে বিশ্ব মিডিয়া নানাভাবে বাংলাদেশের ঋণ প্রত্যাশার বিষয়টি তুলে ধরে। মিডিয়া মোড়ল রয়টার্স ওইদিনই (২৬ জুলাই, ২০২২) ওই ইংরেজি দৈনিকের বরাতে তাদের প্রতিনিধি রুমা পাল এবং দক্ষিণ এশিয়ার ব্রেকিং নিউজ এডিটর কৃষ্ণ এন দাসের লেখা একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে। এ রিপোর্টে বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. আতিউর রহমানের বরাতে বৈদেশিক দেনা বা আমদানি মূল্য পরিশোধে এ ঋণ গ্রহণের যৌক্তিকতা তুলে ধরে বলা হয়, দেশের আমদানি ব্যয় আগামীতে কেবল রপ্তানি আয় কিংবা রেমিট্যান্স প্রবাহ থেকে সংকুলান সম্ভব হবে না। প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, বিগত ১১ মাসে দেশের আমদানি ৩৯ শতাংশ বাড়লেও রপ্তানি বেড়েছে ৩৪ শতাংশ। এ পার্থক্য (কারেন্ট অ্যাকাউন্ট ডেফিসিট) টাকার অঙ্কে ১৭ দশমিক ২ বিলিয়ন, যা গত বছরও ছিল ২ দশমিক ৭৮ বিলিয়ন। জুনে বিদেশ থেকে পাঠানো রেমিট্যান্স ৫ শতাংশ কমার তথ্যও উঠে আসে এ তথ্যে। ২৭ জুলাই, ২০২২ রুমা পালের এ রিপোর্টটি প্রকাশ করে ‘বিজনেস ইনকয়েরার ডট নেট’ ও ‘কেএফজিও’ নামের দুটি অনলাইন সংবাদ প্ল্যাটফরম।

পরদিন (২৭ জুলাই, ২০২২) রয়টার্সের উদীয়মান মার্কেট রিপোর্টার জর্জেলিনা ডো রোজারিও এবং ট্রেড ও গ্লোবাল ইকোনমি করেসপনডেন্ট ডেভিড লাউডারের লেখা আরেকটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। এ প্রতিবেদনটি আমেরিকার চ্যানেল নাইনের অনলাইন প্ল্যাটফরম ডব্লিউটিভিএমে প্রকাশিত হয়। প্রায় একই সময়ে আমেরিকার শেয়ারবাজারের অন্যতম সদস্য ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান ‘নাসডাক’ও প্রকাশ করে এ প্রতিবেদন। এরপর পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের বিভিন্ন ভাষার সংবাদমাধ্যমে বাংলাদেশের আইএমএফ ঋণ প্রত্যাশার বিষয়টি স্থান পায়। স্বল্প সময়ের অনলাইন অনুসন্ধানে দেখা যায়, শুধু ইংরেজি ভাষায় এ সংবাদ প্রকাশ করে শতাধিক বার্তা সংস্থা, সংবাদ প্ল্যাটফরম, আর্থিক ও শেয়ারবাজার গবেষণা প্রতিষ্ঠান, ইংরেজি সংবাদপত্র, টিভি চ্যানেল ও অনলাইন নিউজ পোর্টাল। এক নজরে বা মোটা দাগে দেখা যায়, শুধু ভারতের ২২টি, আমেরিকার ১৫টি ও পাকিস্তানের ১১টি সংবাদমাধ্যম এ খবর প্রচার করে। সমগ্র বিশ্বে বিশেষত শেয়ারবাজারে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারী ও অন্যান্য প্রভাবশালী আর্থিক সংস্থার তথ্য-উপাত্ত ও ডাটা সংগ্রহের ক্ষেত্রে একটি বিশ্বস্ত নাম ‘ব্লুমবার্গ’। আমেরিকার এই আর্থিক গবেষণা ও মিডিয়া প্রতিষ্ঠান ২৯ জুলাই, ২০২২ অরুণ দেবনাথের লেখা একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে। এ প্রতিবেদনে বাংলাদেশে শেয়ারের মূল্যহ্রাস ও ডলারের মূল্যবৃদ্ধিকে দুশ্চিন্তার কারণ বলে চিহ্নিত করা হয়। দেশের অর্থনীতিবিদ ও আইএমএফের সাবেক অর্থনীতিবিদ ড. আহসান এইচ মনসুরের বরাতে ব্যাংক ঋণে সুদের সর্বোচ্চ হার ৯% বিলোপ এবং বিভিন্ন ক্ষেত্রে (যেমন জ্বালানি তেল, বিদ্যুৎ, সার) সরকারি ভর্তুকি কমানো তথা এসব দ্রব্যের মূল্যবৃদ্ধির ইঙ্গিত করা হয় সেই জুলাইর শেষে। তবে আর্থিক গবেষণার আরেক দিকপাল ‘মোডিস ইনভেস্টর সার্ভিস’ বাংলাদেশ তুলনামূলকভাবে কম ঝুঁকিতে আছে বলে মত প্রকাশ করে যা এ প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়। অন্যদিকে বাংলাদেশের ইংরেজি দৈনিকে শঙ্কা প্রকাশ করে লেখা হয়, ২০২১-২২ অর্থবছরের প্রথম ১১ মাসে আমদানি ব্যয় ও রপ্তানি ব্যয়ের মধ্যে পার্থক্য বিগত দিনের তুলনায় ৬ গুণ বেড়ে ১৭.২ বিলিয়নে দাঁড়িয়েছে। এ ক্ষেত্রে রয়টার্সের ২৬ জুলাই, ২০২২-এর প্রতিবেদনে শঙ্কার মাত্রা ছিল বেশি। প্রতিবেদনের শুরুতেই বাংলাদেশ এ ঋণের আবেদন জানিয়ে পাকিস্তান ও শ্রীলঙ্কার দলে অন্তর্ভুক্ত হয়েছে মর্মে উল্লেখ করা হয়, যা বাস্তবতাবিবর্জিত।

মূলত বিগত কয়েক বছরে ধারাবাহিকভাবে জিডিপির হার ধরে রাখার কারণে বাংলাদেশকে অনেকেই অর্থনৈতিক উন্নতির রোল মডেল বলে গণ্য করে। বিশেষত করোনাজনিত আর্থিক মন্দা মোকাবিলায় বাংলাদেশের গৃহীত পদক্ষেপ এবং সাফল্য নজর কাড়ে বিশ্ববাসীর। এ ক্ষেত্রে পাকিস্তানের শৃঙ্খল থেকে মুক্ত হয়ে স্বাধীন বাংলাদেশের ৫০ বছরের সাফল্য আর খোদ পাকিস্তানের উল্টোরথ যাত্রা ছিল চোখে পড়ার মতো। পাশের দেশ ভারতের চেয়েও বিভিন্ন সূচকে বাংলাদেশ এখনো এগিয়ে আছে অনেক ক্ষেত্রে। শ্রীলঙ্কার দেউলিয়াপনা এবং নেপালের টালমাটাল অবস্থায় দক্ষিণ এশিয়াজুড়ে অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতার মূর্ত প্রতীকে পরিণত হয়েছিল বাংলাদেশ। মাঝে শ্রীলঙ্কাকে ২০০ মিলিয়ন ডলার ঋণ প্রদান, মহাকাশে স্যাটেলাইট পাঠিয়ে বিশ্বের ৫৭তম দেশ হিসেবে স্যাটেলাইট ক্লাবের গর্বিত সদস্য হওয়া, সাবমেরিনের সংখ্যার দিক থেকে ৩৪তম অবস্থান, নিজস্ব অর্থায়নে বিশ্বের ১২২তম দীর্ঘ পদ্মা সেতু নির্মাণ, টানেল, গভীর সমুদ্রবন্দর, বিমানবন্দরের টার্মিনাল নির্মাণ এবং পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণের মধ্য দিয়ে তাক লাগিয়েছিল বাংলাদেশ। ফলে স্বাভাবিকভাবেই আইএমএফের কাছে বাংলাদেশের ঋণের আবেদন সাড়া ফেলেছে সারা বিশ্বে। ইতোমধ্যে বিবিসি, আলজাজিরা, ডয়েচে ভেলে, অ্যারাব নিউজ, এএফপির মতো বহুল প্রচারিত সংবাদ সংস্থা লুফে নিয়েছে এ সংবাদ। তবে লক্ষণীয়, শতাধিক সংবাদপত্র, টিভি চ্যানেল ও মিডিয়া হাউস ঘুরেফিরে বাংলাদেশের একটি ইংরেজি দৈনিক কিংবা রয়টার্সের সংবাদই প্রকাশ করেছে, নতুন কিছু নয়। সৌদি আরব ভিত্তিক অ্যারাব নিউজ ২৮ জুলাই, ২০২২-এর শিরোনামেই প্রশ্ন রেখেছে, ‘একটি দ্রুত অগ্রসরমান অর্থনীতির দেশ হিসেবে বাংলাদেশ কেন আইএমএম থেকে ঋণ নিচ্ছে?’ একই তারিখে যুক্তরাজ্যের প্রভাবশালী দৈনিক ‘দ্য গার্ডিয়ান’-এর শিরোনাম ছিল পীড়াদায়ক। এ শিরোনামে যা লেখা হয় তার অর্থ দাঁড়ায়, ‘বেইলআউট’-এর জন্য আবেদন করার পর বাংলাদেশ আইএমএফের সঙ্গে আলোচনা শুরু করছে। এ ‘বেইলআউট’ কথাটির আরও উল্লেখ আছে ভারতের কালারস অব ইন্ডিয়া, ইন্ডিয়া এক্সপ্রেস, দ্য সিটিজেন, দি ইকোনমিক টাইমস, ডব্লিউআইওএন টিভি, মালয়েশিয়ার হেড টপিকস, যুক্তরাষ্ট্রের আটলান্টিক কাউন্সিল, ওয়াশিংটন পোস্টসহ বেশ কিছু সংবাদমাধ্যমে।

উল্লেখ্য, ‘বেইলআউট’ শব্দটি অর্থনৈতিক মানদন্ডে নেতিবাচক অর্থে ব্যবহৃত হয়। সাধারণত কোনো প্রতিষ্ঠান বা কোনো দেশ যখন আর্থিক ঋণের জালে আটকে পড়ে দেউলিয়া হওয়ার উপক্রম হয়, তখন বাইরে থেকে অর্থ সরবরাহ করে সেই প্রতিষ্ঠান বা দেশকে উদ্ধার করার প্রক্রিয়াকে অর্থনীতির ভাষায় ‘বেইলআউট’ বলা হয়। আমেরিকার অনলাইন সংবাদ প্ল্যাটফরম ‘গ্রিড’-এর ডেপুটি গ্লোবাল এডিটর এবং সিএনএনের দিল্লি ব্যুরোর সাবেক প্রধান নিখিল কুমার ২ আগস্ট, ২০২২ একটি প্রবন্ধ লেখেন। এ প্রবন্ধমতে, বিশ্বের ৪০টির বেশি দেশ বর্তমানে ঋণ ঝুঁকিতে আছে, যাদের বেইলআউটের জন্য আইএমএফ কিংবা আন্তর্জাতিক আর্থিক প্রতিষ্ঠানে যেতে হতে পারে। প্রবন্ধে আরও বলা হয়, শুধু চায়না থেকে ঋণ নিয়েই বিশ্বের ৪৪টি দেশ আজ বেকায়দায় আছে, যাদের ঋণের পরিমাণ জিডিপির ১০ শতাংশ কিংবা তারও বেশি। ব্লুমবার্গের তিন দিকপাল টম অরলিক, ব্রাইস বাসচুক এবং মেভা কাউসিন এ বছর ১৯ মে বিশ্ব অর্থনীতিতে ১ দশমিক ৬ ট্রিলিয়ন ডলারের বড় ধাক্কার মধ্য দিয়ে ‘অভাবের যুগের সূচনা’ শিরোনামে আরও একটি প্রবন্ধে সতর্কবাণী উচ্চারণ করেন। এমনি এক প্রেক্ষাপটে সতর্কতামূলক ব্যবস্থা হিসেবে বাংলাদেশের কৃচ্ছ্রসাধন নীতি সর্বাংশে যৌক্তিক ও সময়ের দাবি। একই সঙ্গে ভর্তুকি হ্রাসের ক্ষেত্রে বাংলাদেশের পদক্ষেপও প্রত্যাশিত ছিল। তবে দুঃখের বিষয়, এমন ক্রান্তিকালে দেশ-বিদেশের কিছু মিডিয়া বাংলাদেশকে শ্রীলঙ্কা বা পাকিস্তানের কাতারে দাঁড় করিয়ে ‘বেইলআউট’ প্রসঙ্গ টেনে এনেছে। এসব তথ্য দেশে অস্থিরতা তৈরি, দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি ও পণ্যের কৃত্রিম সংকট তৈরিতে ভূমিকা রাখে। বিদেশে নেতিবাচক প্রচারণার কারণে বৈদেশিক বিনিয়োগ প্রবাহ বাধাগ্রস্ত হয়। তবে এসব বিরূপ প্রচারণায় সরাসরি লাভবান হন অবৈধ হুন্ডি ব্যবসায়ীরা। একশ্রেণির মানুষের হাতে, পাতে, আলমারিতে কেবল টাকা আর টাকা, ফরিদপুর কিংবা নারায়ণগঞ্জে যারা ধরা পড়েছেন তারা তো ডুবন্ত বরফের পাহাড়ে ভেসে থাকা অগ্রভাগ মাত্র। দেশের হাওয়া-বাতাস খারাপ দেখলেই তারা বিদেশে টাকা পাঠান। এতে লাভ হুন্ডি ব্যবসায়ীদের। দেশে দুর্নীতি কমেছে না বেড়েছে তা বোঝার জন্য সুইস ব্যাংকে বাংলাদেশিদের ক্রমবর্ধমান সঞ্চয়ই কি যথেষ্ট নয়?

লেখক : কলামিস্ট ও গবেষক

সর্বশেষ খবর