শুক্রবার, ১৯ আগস্ট, ২০২২ ০০:০০ টা

ধান-চালের অপচয়

৫ শতাংশের নিচে নামাতে হবে

বাংলাদেশের প্রধান খাদ্য ধান তথা চাল। কৃষি বিভাগের তথ্যানুযায়ী বর্তমানে দেশে চালের উৎপাদন ৩ কোটি ৮৬ লাখ টন। এর এক উল্লেখযোগ্য অংশ ৮০ লাখ ৮৬ হাজার টন অপচয় হয়। এ হিসাব বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট-ব্রির। ব্রির গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০১১-১৬ সাল পর্যন্ত পাঁচ বছরে উৎপাদন পর্যায়ে ধানের গড় ফলন নষ্ট হয়েছে ২০ দশমিক ৬৭ শতাংশ অর্থাৎ এক-পঞ্চমাংশের বেশি। ব্যবস্থাপনা ত্রুটি অর্থাৎ কর্তন, মাড়াই, পরিবহন, গুদামজাতকরণ প্রভৃতি কারণে বছরে নষ্ট হচ্ছে ৬৭ লাখ মেট্রিক টন চাল। গৃহস্থালি পর্যায়ে অপচয় হয় আরও ১৩ লাখ ৮৬ হাজার টন, যার মধ্যে খাবার টেবিলেই অপচয় হয় অন্তত ৬ লাখ ৩০ হাজার টন চাল। শুধু খাবার টেবিলের অপচয় রোধ হলেই ৪২ লাখ ৬২ হাজার মানুষের সারা বছরের ভাতের চাহিদা মেটানো যাবে। ফলন-পার্থক্য আন্তর্জাতিক মানে নামিয়ে আনতে পারলে বৈদেশিক মুদ্রা খরচ করে চাল আমদানির বদলে উল্টো রপ্তানি করা সম্ভব হবে। বিশেষজ্ঞদের মতে, ধানের ফলনের স্ট্যান্ডার্ড অপচয় ধরা হয় ৫ থেকে ৭ শতাংশ। চীন ও জাপানে ফলন-পার্থক্য ৫ শতাংশের কাছাকাছি। আমাদের দেশে ফলন নষ্টের পরিমাণ ৫ শতাংশে নামিয়ে আনতে পারলে কমপক্ষে ৫০ লাখ টন বাড়তি চাল পাওয়া যাবে। এ ছাড়া আমরা বিয়ে-শাদির অনুষ্ঠানে, রেস্টুরেন্টে, খাবার প্লেটে প্রচুর অপচয় করি। শুধু ভাত নয়, অন্য খাবারও অপচয় হয়। কত দীর্ঘ পরিভ্রমণ ও পরিশ্রমের মাধ্যমে একটি শস্যদানা খাবার টেবিল পর্যন্ত পৌঁছায়, সেই উপলব্ধি থাকলে কেউ খাবার নষ্ট করত না। দেশে চাহিদার চেয়ে বেশি চাল উৎপাদন সত্ত্বেও এর একটি উল্লেখযোগ্য অংশ নানা কারণে নষ্ট ও অপচয় হওয়ায় বাংলাদেশকে বিপুল পরিমাণ চাল বিদেশ থেকে আমদানি করতে হয়। চাল ও গমের দাম আন্তর্জাতিক বাজারে বৃদ্ধি পেলে দেশের অর্থনীতির ওপর নেতিবাচক চাপ সৃষ্টি হয়। বিদেশ থেকে খাদ্যপণ্য বিশেষ করে চাল ও গম আমদানি এড়াতে পারলে বাংলাদেশের অর্থনীতি দ্রুত উচ্চ সোপানে ওঠার সুযোগ পাবে। চাল-গম আমদানির টাকা শিল্প খাতে ব্যয় হলে লাখ লাখ মানুষের কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হবে। দারিদ্র্য মোচনে যা ফলপ্রসূ ভূমিকা রাখতে সক্ষম হবে।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর