ঢাকা ও গাজীপুরের দেড় কোটির বেশি মানুষ এক নারকীয় সড়কের কাছে জিম্মি। এ দুই মহানগরীর যাতায়াতের প্রধান মাধ্যম উত্তরা-গাজীপুর সড়ক বাস র্যাপিড ট্রানজিট প্রকল্পের কাজের জন্য চলাচলের অযোগ্য হয়ে পড়েছে। তা দুই মহানগরীর অধিবাসীদের জন্যই শাঁখের করাত হয়ে উঠেছে। এ সড়কে যাতায়াতকারীরা একে সাক্ষাৎ নরক বলে ভাবতে শুরু করেছেন। বাধ্য না হলে কেউ ঢাকা থেকে গাজীপুর কিংবা গাজীপুর থেকে ঢাকা সড়কপথে যাতায়াত করেন না। চাকরি বা অন্য সূত্রে যারা প্রায় প্রতিদিন এ সড়কে যাতায়াত করতে বাধ্য হন তাদের কষ্টটা সহজেই অনুমেয়। সোমবার গার্ডার পড়ে এক প্রাইভেট কারের পাঁচ যাত্রীর প্রাণহানির পর বিআরটির কাজ বন্ধ থাকলেও জানমালের নিরাপত্তার কোনো ব্যবস্থা না রাখায় ঝুঁকি নিয়ে চলতে হচ্ছে পরিবহন ও পথচারীদের। সড়কের মাঝখানে রাখা ঝুঁকিপূর্ণ গার্ডার ও যত্রতত্র ফেলে রাখা স্লাব রাস্তার বিপদ বাড়িয়ে দিয়েছে। স্লাবগুলোর রড বের হয়ে থাকায় যানবাহন, বিশেষ করে মোটরসাইকেলের চালকদের দুর্ঘটনার ঝুঁকিতে পড়তে হচ্ছে। উত্তরা-গাজীপুর সড়কের বিভিন্ন স্থানে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে নির্মাণসামগ্রী। সার্ভিস রুটগুলো ভেঙে মূল সড়কে মিশিয়ে দেওয়ায় ফুটপাত ল-ভ- হয়ে পড়েছে। বিআরটি প্রকল্পের কাজে সড়ক প্রশস্ত করায় ফুটওভার ব্রিজগুলো এখন সড়কের মাঝখানে এসে পড়েছে। এতে চরম ঝুঁকি নিয়ে পথচারীদের ফুটওভার ব্রিজের কাছে আসতে হচ্ছে। নির্মাণাধীন এলাকায় সড়কজুড়ে খানাখন্দ থাকায় গাড়ি চালাতে চালকরাই খেই হারিয়ে ফেলেন। এতে এ সড়কে প্রতিদিন ঘটছে দুর্ঘটনা। ফলে বিমানবন্দর থেকে টঙ্গী-গাজীপুর পর্যন্ত সড়কটিতে দিনভর যানজট লেগে থাকে। যে-কোনো উন্নয়নকাজে কাউকে না কাউকে শ্রম দিতে হয়, ভোগান্তির শিকারও হতে হয় কাউকে না কাউকে। কিন্তু বিআরটির ক্ষেত্রে যা ঘটছে তা এক কথায় নজিরবিহীন। আমাদের স্পষ্ট বক্তব্য, জনগণ উন্নয়ন চায় তবে উন্নয়নের জন্য বছরের পর বছর সীমাহীন ভোগান্তির মুখে পড়তে হবে এমন উন্নয়ন চায় কি না সে বিষয়ে জনগণের মতামতকে গুরুত্ব দিতে হবে। বিআরটি বাস্তবায়নে দ্বিগুণের বেশি সময় ও অর্থ ব্যয়ের বিষয়েও দায়িত্বপ্রাপ্তদের জবাবদিহিতার বিকল্প থাকা উচিত নয়।