শিরোনাম
শনিবার, ৩ সেপ্টেম্বর, ২০২২ ০০:০০ টা

কোরআন ও হাদিসের আলোকে জান্নাত

মো. আমিনুল ইসলাম

কোরআন ও হাদিসের আলোকে জান্নাত

আরবি শব্দ জান্নাতের অর্থ বাগান, উদ্যান বা আবৃত স্থান। ফারসি ভাষায় বলা হয় বেহেশত।

ইসলামী পরিভাষায় ইহজীবন পরে পরকালের জীবনে বা আখেরাতে আল্লাহর নৈকট্যপ্রাপ্ত ইমানদার ব্যক্তিদের জন্য যে চিরশান্তির আবাসস্থল তৈরি করে রাখা হয়েছে তাকেই জান্নাত বা বেহেশত বলে। আল কোরআনে আল্লাহ রব্বুল আলামিন বলেন, ‘সেখানে তারা (জান্নাতিরা) সুসজ্জিত আসনে হেলান দিয়ে বসবে, সেখানে সূর্যের তাপ তারা যেমন দেখবে না, তেমনি দেখবে না শীতের প্রকোপও।’ (সুরা আদ দাহর, আয়াত ১৩) এ আয়াতে জান্নাতিরা কীভাবে বসবে এবং জান্নাতের আবহাওয়া কেমন হবে তা পরিষ্কারভাবে বর্ণিত হয়েছে। ‘সেখানে তোমাদের মন যা চাইবে তা-ই তোমাদের জন্য রয়েছে আর তোমরা যা দাবি করবে তা-ও তোমাদের দেওয়া হবে।’ (সুরা হামিম আস সাজদা, আয়াত ৩১) অর্থাৎ আল্লাহর কাছে জান্নাতিরা যা-ই দাবি করবে তাদের তা-ই দেওয়া হবে। রসুল (সা) বলেন, আল্লাহ ইরশাদ করেন, ‘আমি আমার নেক ও পুণ্যবান বান্দাদের জন্য জান্নাতে এমন সব বস্তু তৈরি করে রেখেছি যা মানুষ কোনো দিন দেখেনি, শোনেনি এমনকি কল্পনাও করতে পারেনি।’ (মিশকাত) কোরআনে আল্লাহ রব্বুল আলামিন বলেন, ‘মোমিন পুরুষ নারীদের আল্লাহ এমন এক সুরম্য জান্নাতের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন যার তলদেশ দিয়ে ঝরনাধারা প্রবহমান থাকবে, সেখানে তারা চিরদিন অবস্থান করবে, জান্নাতে তাদের জন্য সুন্দর সুন্দর বাসস্থানের ব্যবস্থা থাকবে। সেদিনের সবচেয়ে বড় নিয়ামত হবে আল্লাহর পক্ষ থেকে সন্তুষ্টি, এটাই হবে সবচেয়ে বড় সাফল্য।’ (সুরা তওবা, আয়াত ৭২)

জান্নাতে প্রচুর ফলমূল থাকবে জান্নাতিদের খাওয়ার জন্য। কোরআনে আল্লাহ বলেন, ‘জান্নাতে থাকবে প্রচুর ফলমূল, যা শেষ হবে না নিষিদ্ধও হবে না।’ (সুরা ওয়াকিয়া, আয়াত ৩২-৩৩) এ পার্থিব জীবনে যারা আল্লাহ ও তাঁর রসুলের আদেশ-নিষেধ মেনে জীবন পরিচালিত করবে এবং কেয়ামতের ময়দানে যেসব বান্দার নেক আমলের পাল্লা ভারী হবে এবং আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন করতে পারবে তারাই এ জান্নাতের নিয়ামতের সৌভাগ্য লাভ করতে পারবে। আল্লাহ তাঁর নেক বান্দাদের জন্য কোরআনে আটটি জান্নাতের কথা বর্ণনা করেছেন। সেগুলো হলো- জান্নাতুল ফেরদৌস, দারুল মাকাম, দারুল কারার, দারুস সালাম, জান্নাতুল মাওয়া, দারুন নাইম, দারুল খুলদ ও জান্নাতুল আদন। কোরআনে আল্লাহ বলেন, ‘আর যারা ইমান এনেছে এবং নেক আমল করেছে তারা জান্নাতের অধিবাসী হবেন। তারা সেখানে হবে চিরস্থায়ী।’ (সুরা বাকারা, আয়াত ৮২) আল্লাহ মোমিন বান্দাদের বলবেন, ‘তোমরা ও তোমাদের সহধর্মিণীরা সানন্দে জান্নাতে প্রবেশ কর। স্বর্ণখচিত থালা ও পানপাত্র নিয়ে তাদের প্রদক্ষিণ করা হবে, সেখানে মন যা চায় এবং যাতে নয়ন তৃপ্ত হয় তা-ই থাকবে। আর তা হবে স্থায়ী। সেখানে তোমাদের জন্য রয়েছে প্রচুর ফলমূল তা থেকে তোমরা খাবে।’ (সুরা আজ জুখরুফ, আয়াত ৭০, ৭১, ৭৩) অর্থাৎ ইমানদারদের ইমানদার স্ত্রী ও তাদের মোমিন বন্ধুরাও জান্নাতে তাদের সঙ্গে থাকবে। ‘আর আমি তার মধ্যে খেজুর ও আঙুরের বাগান বানিয়ে দিয়েছি এবং তার মধ্যে প্রবাহিত করেছি অনেক ঝরনা। যাতে করে তারা এর ফলমূল খেতে পারে।’ (সুরা ইয়াসিন, আয়াত ৩৪, ৩৫)

কোরআনে আল্লাহ আরও বলেন, ‘যারা আল্লাহর ওপর ইমান এনেছে এবং তাদের সন্তানরাও ইমানে তাদের অনুগামী হয়েছে আমি জান্নাতে তাদের সন্তান-সন্ততিদের তাদের সঙ্গে মিলিয়ে দেব আর এজন্য তাদের পিতা-মাতার কর্মফল একটুও কমিয়ে দেব না। প্রত্যেক ব্যক্তিই তার কৃতকর্মের জন্য দায়ী।’

                লেখক : অবসরপ্রাপ্ত ব্যাংকার

সর্বশেষ খবর