শনিবার, ৩ সেপ্টেম্বর, ২০২২ ০০:০০ টা

ওষুধের দাম বাড়ছে

বন্ধ হোক ঘুষের সংস্কৃতি

দেশে উৎপাদিত ৫৩টি ওষুধের দাম বেড়েছে এবং আরও বেশ কিছু ওষুধের দাম বৃদ্ধির পাঁয়তারা চলছে। ওষুধ কোম্পানির মালিকরা তাদের একান্ত অনুগত ঔষধ প্রশাসন অধিদফতরের কর্মকর্তাদের দিয়ে ওষুধের মূল্যবৃদ্ধি অনুমোদন করিয়ে নিচ্ছেন ‘দেবে আর নেবে’ নীতির বাস্তবায়ন ঘটিয়ে। এর আগে লোকসানের অজুহাত দেখিয়ে কিছুদিনের জন্য বাজারে ওষুধ সরবরাহ বন্ধ রাখা হয়। তারপর জনস্বার্থের নামে মহাদয়ালু ঔষধ প্রশাসন অধিদফতর জনগণ ওষুধ না পেয়ে চিকিৎসা থেকে যাতে বঞ্চিত না হয় তা নিশ্চিত করতে উঠেপড়ে লাগে। দাম বাড়ানোর প্রস্তাব শুধু মেনে নেওয়া নয়, কখনো কখনো তার চেয়ে বেশি দাম পাইয়ে দিয়ে মালিকপক্ষ এবং নিজেদের পকেট সমৃদ্ধ করে এমন রটনাও প্রবল। আর ক্ষতিগ্রস্ত হয় সাধারণ মানুষ। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্য অর্থনীতি ইউনিটের তথ্যমতে, বর্তমানে বাংলাদেশে চিকিৎসা নিতে গিয়ে ব্যক্তির নিজস্ব ব্যয় ৬৮.৫০ শতাংশ। এর মধ্যে ৬৪ শতাংশ ব্যয় হয় ওষুধে। চিকিৎসা নিতে গিয়ে ওষুধে মানুষের সবচেয়ে বেশি ব্যয় হয়। ওষুধের দাম বাড়লে আউট অব পকেট এক্সপেন্ডিচার আরও বেড়ে যাবে। বাংলাদেশে ওষুধনীতি প্রণয়নে অগ্রণী ভূমিকা পালনকারী ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরীর মতে, দেশে চিকিৎসা ক্ষেত্রে ব্যক্তির পকেট থেকে খরচ সবচেয়ে বেশি, প্রায় ৭২ শতাংশ। আমাদের দেশে স্বাস্থ্যবীমা নেই। বাড়তি ওষুধের দাম রোগীর ওপর চাপ আরও বাড়াবে। ৩০টি বড় ওষুধ কোম্পানি হাজারখানেক চিকিৎসককে ৫০০ কোটি টাকা ঘুষ দেয়। এ টাকা তারা নিজেদের পকেট থেকে দেয় না, ওষুধের দাম বাড়িয়ে তা তোলে। তিনি বলেন, ‘১৯৯৪ সালে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া ভুল করেছিলেন ওষুধের দামে ইনডিকেটিভ প্রাইস ঠিক করে দিয়ে। ১১৭টি ওষুধের মূল্য সরকার নিয়ন্ত্রণ করে, বাকি ৩০০ ওষুধের মূল্য কোম্পানি নিয়ন্ত্রণ করে। কোম্পানি তার মর্জিমতো দাম বসিয়ে ঔষধ প্রশাসন অধিদফতরে নিয়ে যায়। অধিদফতর তখন এর সঙ্গে ভ্যাট যোগ করে একটা মূল্য নির্ধারণ করে দেয়। ১৯৮২ সালের ওষুধনীতিতে ফেরত না গেলে কেউ রেহাই পাবে না, ওষুধের দাম কমবে না।’ বাংলাদেশে ওষুধ বিপণনে অবিশ্বাস্য অঙ্কের ঘুষ বা উপহারের বিষয়টি ওপেন সিক্রেট। দেশবাসীর প্রতি ঔষধ প্রশাসনের ন্যূনতম দায়বোধ থাকলে এ ঘুষের সংস্কৃতি বন্ধ করতে হবে। জেনেরিক নামে ওষুধ তৈরি নিশ্চিত হলে চিকিৎসকদের ঘুষ দিয়ে নিজেদের কোম্পানির ওষুধ ব্যবস্থাপত্রে লিখতে বাধ্য করার যে নিয়ম রয়েছে তার ইতি ঘটবে।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর