সোমবার, ৫ সেপ্টেম্বর, ২০২২ ০০:০০ টা

ইসলামের দৃষ্টিতে ধনসম্পদের সদ্ব্যবহার

এম এ মান্নান

ইসলামের দৃষ্টিতে ধনসম্পদের সদ্ব্যবহার

মহান আল্লাহতায়ালা সৃষ্টি জগতের একমাত্র মালিক। আল্লাহ যাকে ইচ্ছা ধনসম্পদ ও সম্মানের অধিকারী করেন। ইচ্ছা হলেই যে কারোর সম্পদ ও সম্মান কেড়ে নেন। এ বিশ্বজগতের রাজা মহারাজা পরাক্রমশালী সম্রাটদের জীবনেরও অবসান ঘটেছে আল্লাহর ইশারায়। দৃশ্যত যারা মহা শক্তিমান তারাও প্রভাব-প্রতিপত্তি হারিয়ে অস্তিত্বহীন হয়েছে। যারা আল্লাহতায়ালার দেওয়া নিয়ামত, সম্মান, আল্লাহর নির্দেশিত পথে পরিচালনা করেছেন, ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা করেছেন, তাদের নাম-যশ তার ইচ্ছায় অমøান অমর হয়ে রয়েছে। এ জগতে যারা কৃতজ্ঞ চিত্তে আল্লাহর নিয়ামত ভোগ করে, আল্লাহর নির্দেশিত পথে মানবতার সেবা করে গেছেন তাদের অবদান অক্ষয়-চিরন্তন হয়ে আছে। এ পৃথিবীতে আজ পর্যন্ত যত নবী-রসুল আগমন করেছেন তারা চাইলে প্রচুর ধন-সম্পদের মালিক হতে পারতেন। কিন্তু তাঁরা বিলাসবহুল জীবনের বদলে আল্লাহর দীন প্রতিষ্ঠা ও মানবতার সেবায় উদ্ভাসিত হয়েছেন। তাঁরা মহান রাব্বুল আলামিনের সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে সর্বস্ব বিলিয়ে দিয়ে গেছেন। আল্লাহতায়ালা আমাদের ধনসম্পদ, মান-মর্যাদা ইজ্জত দান করে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করেন। আমাদের কর্তব্য সর্বাবস্থায় তার প্রশংসা ও কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করা। আল্লাহর এই বিশাল জগতের সৃষ্টিকুলকে অনিবার্য মৃত্যুর স্বাদ বিনা দ্বিধায় ভোগ করতে হবে। সবাইকে এক সময় মৃত্যুর দিকে যাওয়ার পরিণতি মেনে নিতে হবে। মৃত্যুর কোনো নির্দিষ্ট সীমা-পরিসীমা নেই। আল্লাহ যেভাবে ইচ্ছা করেন সেভাবেই বিনা বাক্যব্যয়ে মেনে নিতে হয়। দুনিয়ায় অর্জিত সব ধনসম্পদের মায়া একদিন আমাদের পরিত্যাগ করে একেবারেই শূন্য হাতে দুনিয়া থেকে বিদায় নিতে হবে। এ বিশ্বজগৎ সম্পূর্ণভাবেই একটি অতি অপ্রশস্ত খেলার মাঠ। এ মাঠে কিছুদিন খেলাধুলা করে এক অজানা নিরুদ্দেশ গন্তব্যের দিকে যেতে হবে। সেখানে অনন্তকালের জন্য চিরস্থায়ীভাবে থাকতে হবে। এ বিশ্ব চরাচরে পড়ে থাকবে আমাদের অতি কষ্টে অর্জিত সব অমূল্য ধনসম্পদ। যা সঙ্গে নেওয়ার কোনো ব্যবস্থাই আমরা করে যেতে পারি না। এ জন্য নিয়তি আমাদের কোনো সময়ই দেয় না। আমাদের জীবন অবসানের পর রেখে যাওয়া এ সম্পদের কী অবস্থা হবে, কীভাবে ব্যয় হবে তাও আমরা বলতে পারি না।

এরই পরিপ্রেক্ষিতে মহান আল্লাহতায়ালা মহাগ্রন্থ আল কোরআনের আলোকে আমাদের প্রিয় নবী মহামানব হজরত মুহাম্মদ (সা.)-এর মাধ্যমে সুসংবাদ প্রেরণ করেছেন যে, আল্লাহর সৃষ্টির মধ্যে সর্বশ্রেষ্ঠ জীব মানুষের মৃত্যুর পর রেখে যাওয়া তিনটি অবদান এ দুনিয়ায় বিরাজ করবে এবং পরকালেও নাজাত তথা জান্নাত লাভে সহায়তা করবে। যেমন- ১. তোমার সন্তানকে যদি সুসন্তান করে রেখে যেতে পার তবে তারা মহান রাব্বুল আলামিনের দরবারে দুই হাত তুলে প্রাণভরে তোমাদের জন্য দোয়া করবে- রব্বির হামহুমা কামা রাব্বা ইয়ানি ছগিরা। হে পরম দয়ালু আল্লাহ, আমার পিতা-মাতাকে সস্নেহে লালন পালন ও প্রতিপালন কর। ২. আল্লাহর রাস্তায় ফিসাবিলিল্লাহ হিসেবে কোনো বস্তু বা ধনসম্পদ দান করে যাওয়া যা এতিম নিঃস্ব হতদরিদ্র গরিব মিশকিন পঙ্গুদের জন্য ব্যয় হবে। ৩. মানবতার সেবাসহ সৃষ্টিকুলের জন্য কোনো দাতব্য প্রতিষ্ঠান তৈরি বা স্থাপন করে যাওয়া যাতে অব্যাহতভাবে পরোপকার হতে থাকবে।

ইসলামের দৃষ্টিতে সৎভাবে ধনসম্পদ অর্জন বা ধনী হওয়ার বিষয়ে বিধিনিষেধ নেই। তবে অর্জিত সম্পদ সৎভাবে সঠিক পথে ব্যয় করতে হবে। কিন্তু প্রকৃত পক্ষে আমাদের সমাজে দেখা যায়, আমরা ধনসম্পদ অর্জনের জন্য বেপরোয়াভাবে হিংসা বিদ্বেষ, জোর জবরদস্তি, লুটপাট, অন্যায়ভাবে সম্পদ আহরণ করে সম্পদের পাহাড় গড়ে তুলি। এ সম্পদ জমানোর ক্ষেত্রে অধিকাংশ সময় দেখা যায় নিজের জমানো সম্পদ মানুষ নিজেই ভোগ করে যেতে পারে না। একান্তভাবে লক্ষ্য করলে আমরা দেখতে পাব, হাজার হাজার কোটি টাকার ধনসম্পদ থাকলেও তার মালিক শান্তিতে ঘুমাতে পারে না তার জমানো টাকার চিন্তায় এবং লোভ লালসার প্ররোচনায়। ইচ্ছা থাকলেও পেট ভরে খেতে পারে না মুখে রুচি না থাকার কারণে। এর কারণ হলো- আমরা ধনসম্পদের প্রতি এত বেশি লোভী হয়ে পড়ি যে, লোভের বশবর্তী হয়ে খুনোখুনি করে হলেও ধনসম্পদ অর্জন করে থাকি। অন্যায়ভাবে ধনসম্পদ জমিয়ে কার জন্য রেখে যাব- তা আমরা ঘুণাক্ষরেও একবার ভাবী না। ধনসম্পদের লোভে মানইজ্জত বিসর্জন দিতে হলেও আমরা কুণ্ঠাবোধ করি না। মৃত্যুর পর আমাদের খালি হাতেই অজানার পথে যাত্রা করতে হবে। মূলত এ জীবনটা বড় বেশি ক্ষণস্থায়ী। এক মুহূর্তের জন্যও বেঁচে থাকার আশা করতে পারি না। তাই আমাদের সবাইকে প্রতিজ্ঞা করতে হবে, আমরা অন্যায়ভাবে অবৈধ পথে দুর্নীতির মাধ্যমে সম্পদের পাহাড় গড়ে তুলব না। যেহেতু দিন দুনিয়ার মালিক আল্লাহ সেহেতু তার ওপর আশা ভরসা রাখতে হবে। আল্লাহ নিরপেক্ষ ও ন্যায় বিচারক এবং তার বান্দাদের ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠার নির্দেশ দিয়েছেন। করুণাময় আল্লাহ কাউকেই তার দয়া থেকে নিরাশ করেন না। বর্তমান সামাজিক অবস্থায় মনুষ্যত্বের বিকাশ একেবারেই হারিয়ে যাচ্ছে। মূল্যবোধের অবক্ষয় হতে নিজেদের উদ্ধারে সংগ্রাম করতে হবে। তা না হলে ভয়াবহভাবে অশান্তি আর দুর্ভোগের মুখে হবে। যা থেকে সাবধান থাকাই শ্রেয়। আল্লাহ আমাদের সবাইকে সুবুদ্ধি ও সুমতি দান করুন। আমিন।

লেখক : সভাপতি, আমেনা খাতুন হাফিজিয়া কোরআন রিসার্চ অ্যান্ড ক্যাডেট ইনস্টিটিউট, পাঁচগাতিয়া,কটিয়াদী, কিশোরগঞ্জ।

সর্বশেষ খবর