শুক্রবার, ৯ সেপ্টেম্বর, ২০২২ ০০:০০ টা

খাদ্য অপচয় ঠেকাতে হবে

মুফতি রফিকুল ইসলাম আল মাদানি

খাদ্য অপচয় ঠেকাতে হবে

খাদ্য অপচয় ও অপব্যয়ের কারণে খাদ্যের বরকত উঠে যায়। নেমে আসে দুর্ভিক্ষ, অভাব-অনটন। খাবার হলো মহান আল্লাহর অন্যতম অনুদান। এ খাবারের পেছনে মানুষ সময় ও জীবন বিসর্জন দেয়, শ্রম বিনিয়োগ করে। কেউবা এক মুঠো খাবারের আশায় দ্বারে দ্বারে ভিক্ষা করে। কত মানুষ, কত প্রাণী খাবারের অভাবে মারা যাচ্ছে। রসুলুল্লাহ (সা.) খাবার অপচয় থেকে বাঁচানোর জন্য খাবারের সময় দস্তরখানা বিছিয়ে দেওয়ার জন্য বলেছেন। আনাস ইবনে মালিক (রা.)  বলেন, আল্লাহর নবী (সা.) টেবিলে আহার করতেন না, ছোট ছোট প্লেটে খাবার নিতেন না এবং তাঁর জন্য পাতলা চাপাতিও তৈরি করা হতো না। বর্ণনাকারী বলেন, আমি কাতাদাকে জিজ্ঞাসা করলাম, তিনি কীসের ওপর খানা খেতেন? তিনি বলেন, দস্তরখানার ওপর রেখে খানা খেতেন। (বুখারি) ইমাম গাজ্জালি (রহ.) লিখেছেন, ‘খানা খাওয়ার শিষ্টাচার হলো দস্তরখানার ওপর খানা খাওয়া।’ (এহইয়াউ উলুমিদ্দীন-২/৩)।

মহানবী (সা.) খাদ্যের প্রতি যথাযথ সম্মান প্রদর্শন করতেন, তিনি খাবার সংরক্ষণের প্রতি অনেক দায়িত্বশীল ছিলেন। আঙুল চেটে খাবার খেতেন, খাওয়ার সময় খাদ্যবস্তু পড়ে গেলে উঠিয়ে খাওয়ার নির্দেশ দিতেন। আনাস (রা.) বলেন, রসুলুল্লাহ (সা.) খাওয়ার পর তাঁর হাতের তিনটি আঙুল চাটতেন এবং বলতেন যখন তোমাদের কারও খাবারের লোকমা থেকে কিছু পড়ে যায় তখন তা পরিষ্কার করে খেয়ে নেবে এবং তা শয়তানের জন্য ছেড়ে দেবে না। তিনি আমাদের খাওয়ার প্লেট পরিষ্কার করে খাওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন, আর বলেছেন, তোমাদের মধ্যে কেউ অবহিত নয় যে, তার জন্য কোন খাদ্যবস্তুতে বরকত রাখা হয়েছে। (আবু দাউদ)

রসুলুল্লাহ (সা.)-এর প্রতিটি সুন্নতেই আমাদের ইহকালীন ও পরকালীন কল্যাণ নিহিত রয়েছে। মহানবী (সা.)-এর উল্লিখিত সুন্নতের ওপর যথাযথভাবে আমল করা গেলে একদিকে তাঁর আদর্শ অনুসরণের সওয়াব পাওয়া যাবে, আর পৃথিবী মুক্তি পাবে মহাবিপর্যয় ও মারাত্মক দুর্ভিক্ষ থেকে। চলমান বিশ্বে দ্রব্যমূল্য সাধারণ মানুষের নাগালের বাইরে। খাদ্য সংকট পৃথিবীকে হাতছানি দিয়ে ডাকছে। প্রতিনিয়ত পৃথিবীতে বাড়ছে খাবারের চাহিদা। তার পরও আমাদের চারপাশে খাদ্য অপচয়ের অপ্রীতিকর চিত্র প্রতিদিন চোখে পড়ছে। সাধারণ বাড়িঘর, বিয়ের অনুষ্ঠান, হোটেল- রেস্টুরেন্ট, ছাত্রাবাসসহ এমন কোনো স্থান নেই যেখানে খাবার অপচয় হচ্ছে না। প্রায়ই দেখা যায় মানুষ প্লেট ভরে খাবার নেয়, কাপ ও গ্লাস ভরে পানীয় নেয়, এর কিছু অংশ খায় বাকিটা নষ্ট করে রেখে দেয়। তার আত্মা কাঁপে না! মাথায় একটু চিন্তা আসে না! সে যে মুহূর্তে খাবার নষ্ট করছে তখন হয়তো তারই পাশে কোনো অসহায় ক্ষুধার্ত খাবারের জন্য কষ্ট করছে। হয়তো তাকেই কোনো এক দিন এ খাবারের অভাবে অনাহারে জীবন দেওয়ার পরিস্থিতি হতে পারে। আসুন আমরা পানাহার, পোশাক-পরিচ্ছদ ও জীবন সংস্কৃতি সব ক্ষেত্রে রসুলুল্লাহ (সা.)-এর সুন্নত বাস্তবায়নের জন্য দৃঢ় প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হই, আত্মীয়স্বজন অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়াই। মহান প্রভু ঘোষণা করেন, আত্মীয়স্বজনকে দেবে তার প্রাপ্য এবং অভাবগ্রস্ত, মুসাফিরকেও এবং কিছুতেই অপব্যয় করবে না। (সুরা বনি ইসরাইল, আয়াত ২৬) অন্য আয়াতে আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘আহার কর এবং পান কর, কিন্তু অপচয় করবে না।’ (সুরা বনি ইসরাইল, আয়াত ৩১)

লেখক : গবেষক, ইসলামিক রিসার্চ সেন্টার বসুন্ধরা, ঢাকা

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর