শিরোনাম
সোমবার, ১২ সেপ্টেম্বর, ২০২২ ০০:০০ টা

চেতনায় শুধুই মুক্তিযুদ্ধ

মেজর জেনারেল এ কে মোহাম্মাদ আলী শিকদার পিএসসি (অব.)

চেতনায় শুধুই মুক্তিযুদ্ধ

আজকের শিরোনামটি আমার নিজের হলেও নতুন নয়, পুরনো। এ শিরোনামেই আমার একটি বই প্রকাশিত হয়েছে ২০২১ সালে। এবারের লেখাটি ওই বইয়ের সূত্রে ও সাহায্যে নতুন করে বিষয়টি তুলে ধরতে চাই। কারণ, আমি মনে করি বাংলাদেশের উন্নতি, সমৃদ্ধ ও অগ্রগতিতে টেকসই করতে হলে নতুন প্রজন্মের জন্য মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় সমৃদ্ধ হওয়া এবং পঁচাত্তরের পর দুই সামরিক শাসক কর্তৃক প্রবর্তিত সামরিকতন্ত্র ও ধর্মাশ্রয়ী রাজনীতি থেকে সম্পূর্ণ মুক্ত হওয়া একান্ত অপরিহার্য। তার জন্য মুক্তিযুদ্ধের পক্ষ-বিপক্ষের যে রাজনীতি তার অবসান হওয়া এবং সবাই শুধু মুখে নয়, কার্যত মুক্তিযুদ্ধের মতাদর্শে বিশ্বাসী, এ জায়গায় ফেরত আসা প্রয়োজন। রাষ্ট্রের বৃহত্তর মৌলিক আদর্শ ও দর্শনের জায়গায় সব বড় রাজনৈতিক পক্ষ একই প্ল্যাটফরমে থাকলে একদিকে যেমন সুস্থ রাজনৈতিক সংস্কৃতি প্রতিষ্ঠিত হয়, তেমনি জনগণ সত্যিকার অর্থে মূল্যায়ন করতে পারে কোন রাজনৈতিক পক্ষ তাদের জন্য কল্যাণকর। পরিবেশ পরিস্থিতি ও খেলোয়াড় ভিন্ন হলেও প্রকৃতপক্ষে পঁচাত্তরের পর থেকে রাজনৈতিক অঙ্গনের যুদ্ধটা এখনো রয়ে গেছে সেই স্বাধীনতাপূর্ব পুরনো জায়গায়, পাকিস্তানি স্টাইলের ধর্মাশ্রয়ী রাজনীতি বনাম বাংলাদেশ স্টাইলের ধর্মনিরপেক্ষ রাজনীতি। পাকিস্তানের বিরুদ্ধে আমরা ২৩ বছর সংগ্রাম করেছি রাজনৈতিক মূল্যবোধকে পরিবর্তন করার জন্য। কারণ রাজনৈতিক মূল্যবোধই জনমানুষের মুক্তির সোপান। তাই রাজনৈতিক মূল্যবোধকে সঠিকভাবে চিহ্নিত এবং সমাজ ও রাষ্ট্রের সর্বত্র সেটি সুপ্রতিষ্ঠিত করতে পারলেই কেবল অর্থনৈতিক ও চিন্তা জগতের মুক্তি অর্জন সম্ভব, অন্যথায় নয়। শুধু বাংলাদেশ নয়, সারা বিশ্বের মানব সভ্যতার ইতিহাসে এটি এখন প্রতিষ্ঠিত স্বতঃসিদ্ধ, ধর্মাশ্রয়ী রাজনীতির মাধ্যমে কোনো জাতি-রাষ্ট্র এ পর্যন্ত উন্নত সমৃদ্ধশালী রাষ্ট্র হতে পারেনি বরং উল্টোটি হয়েছে এবং তাতে ধর্ম ও রাজনীতি দুটোই বিনষ্ট হয়েছে। বাংলাদেশের ইতিহাসে মুক্তিযুদ্ধের আদর্শ ও দর্শন এমন গৌরবোজ্জ্বল সংগ্রামের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে যে, তার প্রতিটি পথনির্দেশনা শুধু একবিংশ শতাব্দী নয়, আরও শত বছর পেরিয়েও আধুনিক ও প্রাসঙ্গিক থাকবে।

মুক্তি সংগ্রাম এবং মুক্তিযুদ্ধ, শব্দযুগল বাঙালি জাতির ইতিহাসের সবচেয়ে সমৃদ্ধ ও অমূল্য দুটি অভিধা। এ দুটি শব্দকে কেউ ইতিহাস থেকে সরাতে পারবে না, কথাটি ঠিক হলেও একটা সময় গেছে যখন রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতায় এর মধ্যে যা কিছু অমূল্য, সেগুলোকে চরমভাবে বিকৃত করা হয়েছে এবং এখনো একটি পক্ষ থেকে সে চেষ্টা অব্যাহত আছে। এ অপচেষ্টা দুভাবে হয়েছে এবং হচ্ছে। প্রথমত, সরাসরি গোয়েবলসীয় মিথ্যাচার এবং দ্বিতীয়ত সত্যের সঙ্গে মিথ্যার মিশ্রণ। তাতে সত্যের অবমূল্যায়ন হয়েছে এবং সত্য-মিথ্যা মিলে একাকার হয়ে যাওয়ায় মানুষ সত্য-মিথ্যার পার্থক্য বুঝতে পারছে না। মানুষ বিভ্রান্তিতে পড়ে সত্য-মিথ্যাকে একই পাল্লায় ওজন করছে এবং তার মাধ্যমে কেউ কেউ আবার সত্য-মিথ্যাকে সমান দৃষ্টিতে দেখার ভান করে ছদ্মবেশী নিরপেক্ষ সাজার সুযোগ পাচ্ছে। এর ফলে মিথ্যা সুবিধা পাচ্ছে। এ কারণেই আধুনিক ভারতের রূপকার পন্ডিত জওহরলাল নেহরু একবার বলেছিলেন- ইংরেজরা ২০০ বছর শাসন করে ভারতবর্ষের যত ক্ষতি করেছে, তার থেকে শত গুণ বেশি ক্ষতি করেছে ইতিহাস বিকৃত করে। নেহরুর কথা অনুসারে পঁচাত্তরের পর যারা বাংলাদেশের ইতিহাসকে বিকৃত করেছেন তারা ক্ষমার অযোগ্য অপরাধ করেছেন। তাদের সবার যথাযথ বিচার হওয়া আবশ্যক, এমনকি যারা এতবড় জঘন্য রাষ্ট্রবিরোধী অপরাধ করে গত হয়েছেন তাদের মরণোত্তর বিচার হওয়া উচিত এবং এদের জাতীয় বিশ্বাসঘাতক হিসেবে চিহ্নিত করা প্রয়োজন। বাকি কথায় একটু পরে আসছি। তার আগে সত্য-মিথ্যা এবং ভালো-মন্দের মিশ্রণ ও তার পরিণতি সম্পর্কে একটা পৌরাণিক গল্প ছোট করে বলে নিতে চাই। মানুষের আত্মা অবিনশ্বর। পরমেশ্বরের পক্ষ থেকে নিয়ম, মানুষের মৃত্যু হলে আত্মা ঊর্ধ্বে চলে আসবে এবং সেটি ভ্রƒণের ভিতর দিয়ে নবজন্ম লাভ করবে। জন্ম নেবে নতুন মানব সন্তান। রিসাইকেল পদ্ধতি আর কী। কিন্তু এক সময়ে পৃথিবীতে মানুষের আয়ু বেড়ে যাওয়ায় মৃত্যুর হার কম হওয়াতে রিসাইকেল পদ্ধতিতে সংকট সৃষ্টি হয়। ফলে নতুন শিশুর জন্ম ভীষণভাবে কমে যায়। ভয়াবহ অবস্থা! পরমেশ্বরের পক্ষে যমরাজ ও তার ম্যানেজার চিত্রগুপ্ত গভীর আলোচনায় বসলেন, কী করা যায়। দুজনই একমত হলেন মানুষের আয়ু বাড়ছে, বাড়বে এবং তাতে মৃত্যুর হার কমে যাওয়াতে আগের মতো রিসাইকেল পদ্ধতি সচল রাখতে মানব আত্মা মর্ত্যে পাঠানো যাবে না। কিন্তু সৃষ্টি তো রক্ষা করতেই হবে। অনেক ভেবে-চিন্তে দুজনেই পরবর্তী করণীয় সম্পর্কে সিদ্ধান্তে পৌঁছালেন। বললেন উপায় নেই, ভেজাল আত্মা তৈরি করতে হবে। মর্ত্যে মানুষ তো সবকিছুতেই ভেজাল জিনিস তৈরি করছে। সুতরাং মানুষের আত্মায়ও ভেজাল দিতে হবে। সিদ্ধান্ত হলো কুকুর, শিয়াল, হায়েনা, সাপ ইত্যাদি সব আত্মার দ্বারা মানুষ সৃষ্টি করা হবে। পশু আর মানুষের এক চমৎকার মিশ্রণ। বাহ্যিকভাবে মানুষ, ভিতরে পশুর আত্মা। বাহ্যিকভাবে মানুষ হলেও তাদের কার্যকরণে বোঝা যাবে না কোনটি পশু আর কোনটি মানুষের কাজ। পৌরাণিক গল্প, এর কোনো ঐতিহাসিক সত্যতা হয়তো নেই। কিন্তু মানবরূপী হায়েনায় ভর্তি আমাদের সমাজ ও রাষ্ট্র। ফিরে আসি মূল কথায়। আমার ধারণা ১৯৭৫ সালে বঙ্গবন্ধুর হত্যাকান্ডের পথ ধরে যারা ক্ষমতায় এলেন তারা হয়তো এ পৌরাণিক গল্পটা জেনে থাকবেন। একজন মুক্তিযোদ্ধা যা করলেন তা সত্যিকার একজন মুক্তিযোদ্ধা করতে পারেন সেটি তো ভাবা যায় না। কিন্তু বাস্তবে সেটাই হয়েছে। প্রথম সামরিক শাসক জেনারেল জিয়াউর রহমান রাষ্ট্রক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হয়ে সামরিক আদেশ দ্বারা, দীর্ঘ সংগ্রামের ফসল বাহাত্তরের সংবিধান থেকে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা জন্ম হয় এমন সব বাক্য, শব্দ ও অনুচ্ছেদ বাতিল করে দিলেন। তাতে কে প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধা, আর কে নয় এবং কোনটি মুক্তিযুদ্ধের আদর্শ আর কোনটি নয়, সেটি বোঝার আর কোনো উপায় থাকল না। মানুষ বিভ্রান্তিতে পড়ে গেল। কারণ, সবকিছু হলো একজন বীরউত্তম মুক্তিযোদ্ধার হাত দিয়ে। পঁচাত্তরের পরে মুক্তিযুদ্ধ ও মুক্তি সংগ্রামের বিষয়ে মানুষকে সত্য জানতে দেওয়া হয়নি। বরং মিথ্যা আর সত্য-মিথ্যার মিশ্রণ দিয়ে মানুষের মনকে দূষিত করা হয়েছে। ফলে ১৯৪৮ থেকে একাত্তর পর্যন্ত সংঘটিত উজ্জ্বল ঘটনাবলি এবং তার মহানায়ক বঙ্গবন্ধুকে যারা সামনে আনে না, স্বীকার করে না, তারাও মুখে মুক্তিযুদ্ধের কথা বলে নতুন প্রজন্মকে বিভ্রান্ত করছে। কিছু ঘটনা উল্লেখ করা যাক। সংবিধানের প্রথম পৃষ্ঠায় শুরুতে প্রস্তাবনার দ্বিতীয় লাইনে বাহাত্তরের সংবিধানে ছিল- জাতীয় মুক্তির জন্য ঐতিহাসিক সংগ্রামের মাধ্যমে স্বাধীন ও সার্বভৌম গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠিত করিয়াছি। এখানে জাতীয় মুক্তির জন্য ঐতিহাসিক সংগ্রাম, এইটুকু অত্যন্ত তাৎপর্যময় ও গুরুত্বপূর্ণ, আরও সুনির্দিষ্টভাবে গুরুত্বপূর্ণ দুটি শব্দ-মুক্তি ও সংগ্রাম। উপরোক্ত প্রস্তাবনার মাধ্যমে বাংলাদেশকে স্বাধীন করার প্রধান ও মৌলিক লক্ষ্যকে নির্ধারণ করা হয়েছে। ২৩ বছরের সংগ্রাম, একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধ এবং দেশের প্রায় শতকরা ৭৫-৮০ ভাগ মানুষের ঐক্যবদ্ধ মতামত ও সমর্থনে এটা করা হয়েছে। এ রাষ্ট্রীয় লক্ষ্যকে জিয়াউর রহমান পরিবর্তন করলেন সামরিক আদেশ দ্বারা। তিনি মুক্তি ও সংগ্রাম, এ দুটি শব্দ বাতিল করে সেখানে বসালেন যথাক্রমে স্বাধীনতা ও যুদ্ধ, এ দুটি কথাও সত্য। কিন্তু চেতনার উৎস ও অনুপ্রেরণা সৃষ্টির জায়গা বিবেচনায় মুক্তি ও সংগ্রাম, শব্দ দুটি তাৎপর্যের বিশালতা অনেক বিস্তৃত ও বড়, যার শুরু ১৯৪৭ সাল থেকে। অন্যদিকে স্বাধীনতা ও যুদ্ধ এ দুটি শব্দের দ্বারা সবকিছু গন্ডিবদ্ধ হয়ে যায় একাত্তরের ৯ মাসের মধ্যে। এর পেছনের ও ভবিষ্যতের কোনো স্থান থাকে না। আর সংগ্রাম শব্দ বাদ দিলে ১৯৪৭ সাল থেকে ১৯৭১ পর্যন্ত ইতিহাসের বাঁকে বাঁকে আমাদের যেসব গৌরবোজ্জ্বল অধ্যায় রয়েছে, যেগুলো মূলত মুক্তিযুদ্ধের চেতনা সৃষ্টির বড় বড় জায়গা, সেগুলো নাই হয়ে যায়। তার সঙ্গে আরেকটি ঘটনা ঘটে। আর তা হলো- ওই সময়ে বাংলাদেশের মানুষের বিরুদ্ধে পাকিস্তানি শাসকেরা যতরকম অত্যাচার, নির্যাতন এবং বঞ্চনা ও বৈষম্যের স্টিমরোলার চালিয়েছে তার সবকিছু ইতিহাসের আড়ালে চলে যায়। বাংলাদেশের কোনো মানুষ এটা করতে পারে, তা তো ভাবা যায় না। কিন্তু বাস্তবে সেই কাজটিই হয়েছে। মুক্তিযুদ্ধের চেতনা সৃষ্টিকারী জায়গাগুলোই যদি ইতিহাসে, সাহিত্যে, গল্প, উপন্যাসে, চলচ্চিত্রে এবং শিক্ষাব্যবস্থার পাঠচক্রে না থাকে তাহলে নতুন প্রজন্মের মনের ভিতরে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা সৃষ্টি হবে কী করে? সুতরাং মুক্তিযুদ্ধের চেতনাই যদি নতুন প্রজন্মের মনে প্রথিত করতে হয়, তাহলে উৎসের জায়গাগুলো অটুটু শুধু নয়, সহজলভ্য করে সেটি তুলে ধরতে হবে, সর্বত্র ছড়িয়ে দিতে হবে এবং সেগুলো রাষ্ট্র পরিচালনার মৌলিক ভিত্তি হিসেবে নিতে হবে। মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় সমৃদ্ধ আরেকটি বিশাল জায়গা ধর্মনিরপেক্ষ আদর্শ। এটিকে রাষ্ট্রের সবচেয়ে বড় মৌলিক আদর্শ হিসেবে অত্যন্ত শক্তিশালীভাবে বাহাত্তরের সংবিধানে বঙ্গবন্ধু প্রতিষ্ঠা করেন। এর মূল কথা ছিল- ধর্ম নিয়ে কেউ রাজনীতি করতে পারবে না। তবে প্রতিটি ধর্ম স্ব-স্ব জায়গায় মর্যাদা ভোগ করবে, রাষ্ট্র সব ধর্মের স্বাধীনতা নিশ্চিত করবে এবং প্রয়োজন মতো সব ধর্মকে সমভাবে পৃষ্ঠপোষকতা দেবে। বাংলাদেশের হাজার বছরের সংস্কৃতি, ইতিহাস ও ঐতিহ্যকে ধারণ করে বঙ্গবন্ধু ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করতে চেয়েছেন। এটিকে কোনোভাবেই ধর্মহীনতা বলার সুযোগ নেই। এটি ছিল একেবারে আলাদা বাংলাদেশি চরিত্রের ধর্মনিরপেক্ষতা। বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশকে একটি আধুনিক ও প্রগতিশীল রাষ্ট্র বানানোর লক্ষ্যে ধর্মনিরপেক্ষ আদর্শকে অবলম্বন করে নবরাষ্ট্রের যাত্রা ১৯৭২ সালে শুরু করেন। কিন্তু পঁচাত্তরের পর সব উল্টে গেল। সামরিক আদেশ দ্বারা ধর্মনিরপেক্ষ আদর্শকে সংবিধান থেকে বাতিল করে দেওয়া হলো। তার পরিণতিতে যা হওয়ার সেটাই হয়েছে। ধর্মীয় রাজনীতি নিয়ে পাকিস্তানের মতো জামায়াত, মুসলিম লীগ ও ধর্মীয় উগ্রবাদী গোষ্ঠী আবার সক্রিয় হলো। তারপর রাষ্ট্র ও রাজনীতির ছত্রছায়ায় ধর্মীয় উন্মাদনা ক্রমশই বৃদ্ধি পেয়ে চলেছে। ধর্মের নামে রক্তারক্তি আর হাঙ্গামা কিছুতেই বন্ধ হচ্ছে না। ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের ওপর পরিকল্পিত আক্রমণ কিছুদিন পরপরই বেদনাহত হৃদয়ে আমাদের দেখতে হচ্ছে। ২০০১-২০০৬ মেয়াদে সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদী তৎপরতা যখন রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতায় হতে থাকল, তখন বিশ্বের বড় বড় মিডিয়া থেকে বলা হলো- বাংলাদেশ হবে পরবর্তী আফগানিস্তান। গত ১৩-১৪ বছর বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা বঙ্গবন্ধুর আদর্শে রাষ্ট্র পরিচালনা করার চেষ্টা করছেন বিধায় অর্থনৈতিক অগ্রগতিতে বাংলাদেশ এখন উন্নয়নের মহাসড়কে উঠতে পেরেছে। কিন্তু ধর্মান্ধতা ও সাম্প্রদায়িকতার বিস্তার ঠেকিয়ে রাখা যাচ্ছে না। মুক্তিযুদ্ধের আদর্শবিরোধী রাজনৈতিক পক্ষ স্ব-অবস্থানে আগের মতোই আছে। তাদের কোনো পরিবর্তন ও উপলব্ধি হয়নি। সুতরাং আগামীতে মুক্তিযুদ্ধের আদর্শ রাষ্ট্রীয়ভাবে অটুট এবং চলমান উন্নয়নের ধারা অব্যাহত থাকবে তার নিশ্চয়তা পাচ্ছি না। ধর্মাশ্রয়ী রাজনীতি বহাল আছে। বাহাত্তরের সংবিধানে পরিপূর্ণভাবে ফেরত যাওয়া যায়নি। এ কাজগুলো সম্পন্ন করার জন্য জনমানুষের মনোজগৎ যেভাবে সমৃদ্ধ হওয়া প্রয়োজন তা হচ্ছে না। রাষ্ট্র ও সমাজ সে পথে হাঁটছে না। তরুণ প্রজন্ম ও নতুন ভোটার, তারা যদি মনে করে মুক্তিযুদ্ধের আদর্শই তাদের উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ নিশ্চিত করতে পারে তাহলেই কেবল মুক্তিযুদ্ধ আদর্শবিরোধী রাজনীতি থেকে বাংলাদেশকে মুক্ত করা সম্ভব। সেটা হলেই রাষ্ট্র ও রাজনীতির সর্বত্র চেতনায় শুধু মুক্তিযুদ্ধই থাকবে, অন্য কিছু নয়।

 

লেখক : রাজনৈতিক ও নিরাপত্তা বিশ্লেষক।

[email protected]

সর্বশেষ খবর