শিরোনাম
বৃহস্পতিবার, ২২ সেপ্টেম্বর, ২০২২ ০০:০০ টা

বৃক্ষরোপণের তাগিদ দিয়েছেন নবীজি (সা.)

মাওলানা সেলিম হোসাইন আজাদী

বৃক্ষরোপণের তাগিদ দিয়েছেন নবীজি (সা.)

বৃক্ষ ও প্রাণিকুল একে অন্যের জীবনের সঙ্গে ওতপ্রোত জড়িত। প্রাণীদের বেঁচে থাকার প্রধান ও মূল উপকরণ অক্সিজেন, যা বৃক্ষ থেকেই পাওয়া যায়। প্রতি নিঃশ্বাস -প্রশ্বাসে প্রাণিজগৎ কার্বন-ডাইঅক্সাইড বর্জন করে। এটি এক ধরনের বিষাক্ত পদার্থ, যা পরিবেশের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর। বৃক্ষ সেই দূষিত কার্বন-ডাইঅক্সাইড গ্রহণ করে এবং প্রাণিকুলের বেঁচে থাকার মূল উপাদান অক্সিজেন নিঃসরণ করে। অন্যান্য ধর্মের মতো ইসলামও জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণে বৃক্ষরোপণ সম্পর্কে অধিক গুরুত্ব দিয়েছে।

গাছের প্রয়োজনীয়তা উপলব্ধি করে আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য সওয়াবের নিয়তে বৃক্ষরোপণ করতে হবে। এতে মানব জাতি ও প্রাণিকুলের বৃহত্তর কল্যাণ সাধিত হয়। তাই রসুল (সা.) বৃক্ষরোপণ ও বৃক্ষ পরিচর্যার প্রতি গুরুত্বারোপ করেছেন। তিনি নিজ হাতে বৃক্ষ রোপণ করেছেন। একে ইবাদত হিসেবে গণ্য করেছেন। তিনি তাঁর উম্মতকে বৃক্ষ রোপণ করতে বারবার তাগিদ দিয়েছেন। যাতে উদ্ভিদ বৃদ্ধি পায় এবং পরিবেশের ভারসাম্য অক্ষুণœ থাকে। কারও কাছে একটি চারা থাকলেও তা রোপণ করার নির্দেশ দিয়ে রসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘যদি কেয়ামত সংঘটিত হওয়ার সময়ও এসে যায় আর তোমাদের হাতে একটি চারা গাছ থাকে তাহলে বসা অবস্থায় থাকলে দাঁড়ানোর আগেই যেন সে তা রোপণ করে দেয়।’ (মুসনাদে আহমাদ)

রসুল (সা.) বৃক্ষরোপণের ব্যাপারে এত গুরুত্ব দিয়েছেন যে সাহাবায়ে আজমাইনরাও বৃক্ষরোপণ আন্দোলন শুরু করেন। বিশিষ্ট সাহাবি আবু দারদা (রা.) থেকে বর্ণিত, একবার তিনি দামেশকে বৃক্ষ রোপণ করছিলেন। এ অবস্থায় এক ব্যক্তি তাঁর পাশ দিয়ে অতিক্রম করার সময় বলল, আপনি এ কাজ করছেন, অথচ আপনি রসুলুল্লাহ (সা.)-এর সম্মানিত সাহাবি। তখন আবু দারদা (রা.) বললেন, আপনি ব্যতিব্যস্ত হবেন না। আমি রসুল (সা.)-কে বলতে শুনেছি, ‘যে ব্যক্তি এমন বৃক্ষ রোপণ করল যা থেকে কোনো মানুষ বা আল্লাহর কোনো সৃষ্টজীব ভক্ষণ করল, তাতে তার জন্য সদকা রয়েছে।’ (মুসনাদে আহমাদ, সহিহুল জামে) অন্য বর্ণনায় এসেছে, রসুল (সা.) বলেছেন, ‘কোনো মুসলমান যদি বৃক্ষরোপণ বা ফসল চাষাবাদ করে, এরপর তা থেকে পাখি, মানুষ অথবা চতুষ্পদ প্রাণী কিছু খেয়ে নেয় তবে তার জন্য সেটি সদকা হিসেবে গণ্য হবে।’ (বুখারি, মুসলিম)

কারও গাছের ফল অন্য কেউ না বলে খেলেও এমনকি চুরি করে খেলেও তা সদকা হবে বলে উৎসাহ দিয়েছেন নবী (সা.)। হাদিসে বর্ণিত, ‘কোনো মুসলিম যদি বৃক্ষ রোপণ করে, এরপর তা থেকে যা কিছু খাওয়া হয় তা তার জন্য সদকাস্বরূপ। যা কিছু চুরি হয়ে যায় তা সদকা। হিংস্র পশু যা খেয়ে নেয় তা সদকা। সেখান থেকে পাখি যা খায় তা সদকা। আর কেউ ক্ষতিসাধন করলে সেটাও তার জন্য সদকা হিসেবে গণ্য হয়।’ (মুসলিম)

বৃক্ষরোপণকে ‘সদকায়ে জারিয়া’ বা প্রবহমান দান হিসেবে উল্লেখ করেছেন নবী (সা.)। হজরত আনাস (রা.) থেকে বর্ণিত, রসুলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেন, ‘মানুষের মৃত্যুর পর তার কবরে সাতটি নেক আমলের সওয়াব জারি থাকে- ১. যে ব্যক্তি উপকারী জ্ঞান শিক্ষা দিল বা ২. খাল-নালা প্রবাহিত করল অথবা ৩. কূপ খনন করল বা ৪. ফলবান বৃক্ষ রোপণ করল অথবা ৫. মসজিদ নির্মাণ করল বা ৬. কোরআনের উত্তরাধিকারী বানাল অথবা ৭. এমন সুসন্তান রেখে গেল যে মৃত্যুর পর তার জন্য ক্ষমাপ্রার্থনা করে।’ (বায়হাকি শুয়াবুল ইমান, তারগিব) অন্য এক হাদিসে বর্ণিত হয়েছে, রসুলুল্লাহ (সা.) একদিন উম্মে মাবাদের বাগানে প্রবেশ করেন। তখন তিনি জিজ্ঞাসা করলেন, হে উম্মে মাবাদ! এ গাছ কে রোপণ করেছে? কোনো মুসলমান না কাফের? সে বলল, মুসলমান রোপণ করেছে। তখন তিনি বললেন, ‘কোনো মুসলমান যদি বৃক্ষ রোপণ করে আর তা থেকে মানুষ কিংবা চতুষ্পদ প্রাণী অথবা পাখি কিছু ভক্ষণ করে তবে কেয়ামতের দিন পর্যন্ত তার জন্য তা সদকারূপে প্রবাহিত থাকবে।’ (মুসলিম, মুসনাদে আহমাদ)

লেখক : চেয়ারম্যান, বাংলাদেশ মুফাসসির           সোসাইটি, পীর সাহেব, আউলিয়ানগর

   www.selimazadi.com

সর্বশেষ খবর