বৃহস্পতিবার, ২২ সেপ্টেম্বর, ২০২২ ০০:০০ টা

নামাজি সমাজে কেউ ক্ষুধার্ত থাকতে পারে না

শাইখ মুহাম্মাদ জামাল উদ্দীন

নামাজি সমাজে কেউ ক্ষুধার্ত থাকতে পারে না

যে সমাজ ও সভ্যতার মানুষ ক্ষুধামুক্ত পৃথিবীর স্বপ্ন দেখে না, অভুক্ত মানুষকে নিয়ে ভাবে না কোরআন সরাসরি তাদের জাহান্নামি ঘোষণা করেছে। আল কোরআনে আল্লাহ দ্ব্যর্থহীন ভাষায় ঘোষণা করেছেন, যারা মানুষকে খাবার খাওয়ায় না তারা সরাসরি জাহান্নামি। আল্লাহ বলেন, ‘জাহান্নামিদের জিজ্ঞেস করা হবে সব থেকেও কেন তোমরা অশান্তির আগুনে পুড়ছ? তারা বলবে, আমরা নামাজ পড়তাম না। অভাবীদের খাদ্য দিতাম না (সুরা মুদ্দাসসির, আয়াত ৪২-৪৪) মুফাসসিররা বলেন, এ আয়াতে একটি সূক্ষ্ম ব্যাপার ইঙ্গিত করেছেন আল্লাহতায়ালা। জাহান্নামি হওয়ার দুটি কারণ- একটি হলো নামাজ না পড়া। অন্যটি মানুষকে খাদ্য না দেওয়া। আয়াতের বর্ণনাভঙ্গিই বলে দেয়, নামাজি মানুষের প্রথম সংগ্রাম হবে ক্ষুধামুক্ত সমাজ গড়া। নামাজি সমাজে একজন মানুষও না খেয়ে থাকবে না। এজন্যই হজরত ওমর (রা.) ফোরাতের তীরে হাঁটতেন আর কাঁদতে কাঁদতে বলতেন, আমার সাস্রাজ্যের একটি কুকুরও যদি না খেয়ে মারা যায়, এজন্য আল্লাহর কাঠগড়ায় আমাকেই আসামি হতে হবে। কোরআনে নামাজের কথা বলার পরপরই জাকাতের কথা বলা হয়েছে। এ থেকেও বোঝা যায় নামাজি সমাজে ক্ষুধা ও দরিদ্রতার কোনো চিহ্নও দেখতে চায় না কোরআন। সুরা বাকারায় মুত্তাকির পরিচয় দিতে গিয়ে আল্লাহ বলেন, ‘এ কিতাব আল্লাহ-সচেতনদের জন্য হেদায়াত বা পথপ্রদর্শক। আল্লাহ-সচেতন তথা মুত্তাকিদের পরিচয় হলো তারা গায়েবে অর্থাৎ মানুষের সীমাবদ্ধ জ্ঞানে বোধগম্য না হওয়া সত্ত্বেও অদৃশ্য বাস্তবতায় বিশ্বাস করে, নামাজ কায়েম করে, প্রাপ্ত রিজিক থেকে অন্যের জন্য ব্যয় করে অর্থাৎ ক্ষুধা ও দরিদ্রতামুক্ত পৃথিবী গড়ার সংগ্রাম করে। (আয়াত ২-৩)

যাদের কর্মে ও চিন্তায় ক্ষুধামুক্ত পৃথিবী গড়ার স্বপ্ন নেই, কোরআন সরাসরি তাদের ধর্ম অস্বীকারকারী ঘোষণা করেছে। এ ক্ষেত্রে কোরআন কোনো রাখঢাক করেনি। আল্লাহ বলেন, ‘হে নবী! তুমি কি কখনো চিন্তা করেছ কোন ধরনের লোকেরা ধর্মকে অস্বীকার করে? এ ধরনের লোকেরা এতিমের সঙ্গে অত্যন্ত দুর্ব্যবহার করে, অভাবগ্রস্তকে অন্নদানে কোনো আগ্রহ বোধ করে না এবং অন্যকেও উৎসাহিত করে না। সুতরাং দুর্ভোগ সেই নামাজিদের জন্য, যারা সচেতনভাবেই নামাজে অমনোযোগী, শুধু লোক দেখানোর জন্য নামাজে শামিল হয়। দুর্ভোগ তাদের জন্যও, যারা নিত্যপ্রয়োজনীয় ছোটখাটো সাহায্য দানেও বিরত থাকে।’ (সুরা মাউন, আয়াত ১-৬)

যারা এতিম দরিদ্র শ্রেণিকে নিচু নজরে দেখে, যারা অভাবীদের খাদ্যসংস্থান তথা কর্মসংস্থান সম্পর্কে ভাবে না, উদ্যোগও নেয় না; এমনকি দারিদ্র্যমুক্তির ব্যাপারে অন্য কাউকে উৎসাহ পর্যন্ত দেয় না এরা যতই নামাজ পড়ুক, যতই ধর্মকর্ম করুক তারা আসলে ধর্ম অস্বীকারকারী। এদের নামাজ কিংবা নির্মিত জমকালো মসজিদ দেখে বিশ্বাসীরা যেন বিভ্রান্ত না হয়। সেজন্য আল্লাহ বলেছেন, এসব নামাজির জন্য দুর্ভোগপূর্ণ জাহান্নাম অপেক্ষা করছে। আসলে এরা মানুষকে দেখানোর জন্য ধর্মকর্ম করে, মসজিদ নির্মাণ করে, নামাজ পড়ে। মূলত এদের আত্মা এতই ছোট যে নিত্যপ্রয়োজনীয় ছোটখাটো সাহায্য দেওয়ার ক্ষেত্রেও তারা পিছপা হয়ে পড়ে।

লেখক : চেয়ারম্যান, জামালী তালিমুল কোরআন ফাউন্ডেশন এবং খতিব, রূপায়ণ টাউন সেন্ট্রাল মসজিদ

সর্বশেষ খবর