শিরোনাম
বৃহস্পতিবার, ২২ সেপ্টেম্বর, ২০২২ ০০:০০ টা

মানুষ বলি প্রথা

মানুষ বলি প্রথা

রাজনৈতিক ও ধর্মীয় কারণে প্রাচীনকালে মানুষ বলির আয়োজন করা হতো। প্রত্নতত্ত্বীয় অনুসন্ধানে উৎসর্গীকৃত পশুর হাড়ের সঙ্গে বিপুলসংখ্যক শিশুর হাড় পাওয়া গেছে। প্লুতার্ক (৪৬-১২০ খ্রিস্টাব্দ) বলি প্রথার প্রচলন করেন। অনেক সময় শিশুকে আগুনে ঝলসে মেরে ফেলা হতো। ভারতবর্ষে দেবী কালীর উদ্দেশ্যে লাখ লাখ মানুষকে বলি দেওয়া হয়েছে। ইংরেজ আমলে বলি প্রথা নিষিদ্ধ হয়। ধর্মের অংশ হিসেবে আনুষ্ঠানিকভাবে বলিদান করা হতো দুনিয়ার সব প্রান্তে। স্রষ্টা বা স্রষ্টাসমূহ অথবা প্রকৃতির গতি পরিবর্তনের জন্য অনেক ধর্মের অনুগামী মানুষ বলিদান করত। এটা বলিদানে অংশ নেওয়া সংস্কৃতিতে সামাজিক বা অর্থনৈতিক উন্নয়নে কাজ করে কারণ উৎসর্গ অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণকারীদের খাওয়ার জন্য ভোজ্য মাংস বণ্টন করা হয়। হিন্দু, হিব্রু থেকে গ্রিক ও রোমীয় (লুস্ত্রাশিওর পবিত্র হওয়ার উৎসব), প্রাচীন মিসরীয় (আপিসের অর্চনা) এবং আজটেক থেকে ইয়োরুবা সব সংস্কৃতির মানুষ বলি প্রথা পালন করেছে। অসুস্থের রোগমুক্তি এবং ওডিশা দেবতার সন্তুষ্টি অর্জনের জন্য ওড়িশায় স্যানতারিয়া এবং অন্যান্য বংশানুক্রম বলি দেওয়া হতো। স্যানতারিয়ায় ছোট অনুষ্ঠানের মাধ্যমে বলি দেওয়া হতো। ওই সময় পূজা, অর্চনা, দান করা হতো। গ্রিসের গ্রামীণ খ্রিস্টানরা অর্থোডক্স সাধুদের উদ্দেশ্যে বলি দেয়  যা কৌরবানিয়া নামে পরিচিত।

প্রকাশ্যে এ আচার নিষিদ্ধ হলেও প্রায়ই সহ্য করতে হয়। নরবলি হলো দেবতাকে সন্তুষ্ট করার উদ্দেশ্যে বা ঐশ্বরিক অনুগ্রহ প্রাপ্তির আশায় কিংবা ক্রুদ্ধ দেবতাকে শান্ত করার লক্ষ্যে মানুষ হত্যা। এটি একটি প্রাচীন ধর্মীয় সংস্কার যা বিভিন্ন সভ্যতায় অঙ্গীভূত ছিল কিন্তু আধুনিক সভ্যতায় অবসিত হয়েছে। পৃথিবীর প্রধান ধর্মগুলোয় নরহত্যা তথা নরবলির বিধান নেই, বরং নরহত্যা নিষিদ্ধ। নরহত্যার সঙ্গে নরবলির পার্থক্য হলো, নরবলি সামাজিকভাবে অনুমোদিত মানুষ হত্যা। যার উদ্দেশ্য দেবতাদের সন্তুষ্টি অর্জন। ৫ হাজার বছর আগে আদি ইউরোপের কৃষিভিত্তিক সমাজে নরবলির ব্যাপক প্রচলন ছিল। অপরাধের কারণে বিচারাদেশ অনুযায়ী হত্যা বা দেবতার সন্তুষ্টি অর্জনের জন্য আত্মহত্যা নরবলি হিসেবে গণ্য হতো না।

                মোহাম্মদ সোহেল

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর