শুক্রবার, ২৩ সেপ্টেম্বর, ২০২২ ০০:০০ টা

আলা হজরত (রহ.) এর জীবন ও কর্ম

মুফতি মুহাম্মদ এহছানুল হক মুজাদ্দেদি

আলা হজরত (রহ.) এর জীবন ও কর্ম

আল্লাহ রব্বুল আলামিনের নির্দেশিত ও রসুল (সা.) প্রদর্শিত সাহাবায়ে কিরামের রূপরেখা থেকে বিচ্যুত হয়ে মানব জাতি যখন আল্লাহর একাত্মবাদের পরিবর্তে দ্বিত্ববাদ, ত্রিত্ববাদ উপাসনায় লিপ্ত হয়ে যায়; সব স্তরে কোরআন- সুন্নাহর বিপরীতে মানুষ কুফর-শিরক বিদাত কুসংস্কার ও ইসলামবিরোধী কার্যকলাপে নিমজ্জিত হয়ে যায় তখনই দিগ্ভ্রান্ত মানবদের সঠিক পথনির্দেশনার লক্ষ্যে আল্লাহ শতাব্দীর পরিক্রমায় এক একজন মুজাদ্দিদ বা দীনের সংস্কারক পাঠিয়ে বিশ্বমানবের পথপ্রদর্শন করেন। এ সম্পর্কে প্রিয় নবী (সা.) ভবিষ্যদ্বাণী করেছেন।

হজরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, রসুল (সা.) ইরশাদ করেন, নিশ্চয়ই আল্লাহ এ উম্মতের জন্য প্রতি শতাব্দীর শুরুতে এমন ব্যক্তিকে প্রেরণ করেন যিনি দীনকে নতুনভাবে সংস্কার করবেন। (আবু দাউদ, জামেউস সগির)

আলা হজরত ইমামে আহলে সুন্নাত মাওলানা আহমদ রেজা খান বেরেলভি (রহ.) হলেন চতুর্দশ শতাব্দীর মুজাদ্দিদ। ভারতবর্ষে আরব -আজমে তিনি যুগের অদ্বিতীয় জ্ঞানী, মনীষী, আইনবিশারদ, হাদিসবিদ, তাফসিরকারক, নবীপ্রেমী। ইসলামের এ সেবকের জন্ম ১০ শাওয়াল ১২৭২ হিজরি (১৪ জুন, ১৮৫৬) ভারতের বেরেলি শহরে। পিতা মাওলানা নকি আলী খান ও মাতা হোসাইনি খানমের নেক দোয়ার ফসল তিনি। প্রাতিষ্ঠানিক ও আল্লাহ-প্রদত্ত জ্ঞানে তিনি ছিলেন মহাজ্ঞানী।

বহুমুখী প্রতিভা, অনন্য স্মরণশক্তির অধিকারী আলা হজরত (রহ.) ইলমে কোরআন, কিরাত, তাজবিদ, তাফসির ইলমে হাদিস, দর্শন, অঙ্কশাস্ত্র, প্রকৌশলবিদ্যা, মাজহাব তরিকতের কিতাবসহ ৫৫-এর অধিক বিষয়ে পারদর্শী ছিলেন।

তিনি রমজানে শুনে শুনেই আল কোরআনের হাফেজ হয়েছিলেন। ইসলামের খিদমতে আল কোরআনের তাফসির কানজুল ইমান, নবীজির শানে নাতে রসুল হাদায়েকে বখশিশ, ইলমে ফিকহের ৩০ খন্ডের অন্যতম গ্রন্থ ফাতওয়ায়ে রিজভিয়া, নুরুল মোস্তফা, গাউসুল আজম গাউসিয়ত, খতমে নবুয়ত, ইরফানে শরিয়ত, মাতা-পিতার হক, শরিয়ত ও তরিকত, আল অজিফাতুল কারিমাহ, ফেরেস্তা সৃষ্টির ইতিবৃত্ত, তামহিদে ইমানসহ প্রায় ১ হাজার ৫০০ কিতাব রচনা করেন।

শিক্ষকতার মহান পেশায় তিনি নিজেকে নিয়োজিত রেখেছিলেন। ব্যক্তিগত তিনি জীবনে সাত সন্তানের জনক। হজের সফরে হিজাজবাসী আলেমরা তাঁকে প্রাণঢালা সম্মান প্রদর্শন করেন। হুসসামুল হেরমাইন, আদদৌলাতুল মক্কিয়াহ কিতাবে তার বর্ণনা পাওয়া যায়।

ইমাম আহমদ রেজা (রহ.) সম্পর্কে মাওলানা আশরাফ আলী থানভি বলেন, ‘আমার যদি সুযোগ হতো তাহলে আমি আহমদ রেজা খান বেরেলভির পেছনে নামাজ পড়ে নিতাম।’ (উসউয়া-ই-আকাবির)

ইসলামের এ সেবক ২৫ সফর ১৩৪০ (২৭ সেপ্টেম্বর, ১৯২১) জুমাবার বেরেলি শহরে ইন্তেকাল করেন।  দারুল উলুম মানজারুল ইসলামের উত্তর পাশে তাঁকে সমাহিত করা হয়।

আল্লাহ তাঁর প্রিয় নবীর এ প্রেমিককে জান্নাতের উচ্চাসনে আসীন করুন।

 

লেখক : খতিব, মণিপুর বায়তুল আশরাফ (মাইকওয়ালা) জামে মসজিদ, মিরপুর-২, ঢাকা

সর্বশেষ খবর