শিরোনাম
বুধবার, ২৮ সেপ্টেম্বর, ২০২২ ০০:০০ টা

পানির মরতবা

আবদুর রশিদ

পানি মহান আল্লাহর এক অমূল্য নিয়ামত। দুনিয়া ও আখেরাতের জীবনে পানির বিশিষ্ট ভূমিকা থাকায় আল কোরআনের ৪৬ স্থানে পানির বিষয়টি সামনে আনা হয়েছে। সুরা আরাফের ৫০ নম্বর আয়াতে পানিকে জান্নাতবাসীর জন্য নিয়ামত ও জাহান্নামিদের জন্য শাস্তি হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। দুনিয়াদারির জীবনেও পানি এমন এক অপরিহার্য জিনিস যা ছাড়া জীবনধারণের কথা কল্পনা করাও কঠিন। পানি ইবাদতেরও অন্যতম অনুষঙ্গ। আল্লাহর ইবাদতের জন্য বান্দাকে পবিত্রতা অর্জন করতে হয়। পবিত্রতা অর্জনে পানির ব্যবহার সুবিদিত। মানব জীবনেই শুধু নয়, পৃথিবীতে জীববৈচিত্র্য টিকিয়ে রাখার ক্ষেত্রে পানির অবদান অনস্বীকার্য।

পানি জীবনের উৎস। কোরআনে এ বিষয়টি তাৎপর্যপূর্ণভাবে উল্লেখ করা হয়েছে। ইরশাদ হয়েছে, ‘আর আমি তো পানি থেকে সব প্রাণবান বস্তু সৃষ্টি করেছি।’ পানির সঙ্গে প্রাণী ও উদ্ভিদ জগতের সম্পর্কের কথা প্রকাশ পেয়েছে আরও কয়েকটি আয়াতে। ইরশাদ হয়েছে, ‘তিনি তো আকাশ থেকে বৃষ্টি বর্ষণ করেন এবং তা তোমাদের জন্য পানীয়। এ থেকেই উদ্ভিদের জন্ম হয়। যাতে তোমরা পশুচারণ করে থাক।’ (সুরা নাহল, আয়াত ১০)

আখেরাতের জীবনে পানি জান্নাতবাসীকে উপহার দেওয়া হবে ও জাহান্নামবাসীকে শাস্তি হিসেবে পানি থেকে বঞ্চিত করা হবে। জাহান্নামবাসী অত্যাচারের কষ্টে পানির পিপাসায় পড়ে জান্নাতিদের কাছে পানি চাইবে, কিন্তু তারা যেহেতু অবিশ্বাসী তাই তাদের পানি দেওয়া হবে না। আল্লাহ বলেন, ‘জাহান্নামবাসীরা জান্নাতবাসীদের ডেকে বলবে, আমাদের ওপর কিছু পানি বা খাদ্য ফেলে দাও বা আল্লাহ তোমাদের যা দিয়েছেন তা থেকে, তারা বলবে আল্লাহ এ দুটি অবিশ্বাসীদর জন্য নিষিদ্ধ করেছেন।’ (সুরা আরাফ, আয়াত ৫০)

পানি বর্তমান বিশ্বে ব্যাপকভাবে অপচয় হচ্ছে। পানি আমাদের জন্য বিশাল এক নিয়ামত। এজন্য আল্লাহ পানির অপচয় নিষেধ করেছেন। পানির অপচয় করা ইসলামের দৃষ্টিতে মারাত্মক গর্হিত কাজ। আল্লাহ বলেন, ‘তোমরা আহার কর ও পান কর কিন্তু অপচয় কোরো না, তিনি অপচয়কারীকে পছন্দ করেন না।’ (সুরা আরাফ, আয়াত ৩১) ইসলামে পানির সদ্ব্যবহারের ওপর বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। পানি যেহেতু মহান আল্লাহর নিয়ামত সেহেতু পানির সংরক্ষণ এবং এর সদ্ব্যবহার মোমিনদের জন্য অবশ্য পালনীয়। এমনকি অজু করার সময়ও যাতে পানির অপচয় না হয় সেদিকে তিনি সতর্ক করে দিয়েছেন। ইবনে মাজাহর হাদিসে বলা হয়েছে, ‘সাহাবি হজরত সাদ বিন আবু ওয়াক্কাস (রা.) একদিন বসে অজু করছিলেন। এমন সময় রসুলুল্লাহ (সা.) তাঁর পাশ দিয়ে যাচ্ছিলেন। তাঁর পানির ব্যবহার দেখে তিনি তাঁকে জিজ্ঞাসা করলেন, এত অপচয় কেন? সাহাবি জিজ্ঞাসা করলেন অজুর মধ্যে কি অপচয় হয়? রসুলুল্লাহ বললেন, হ্যাঁ। এমনকি নদীর পাশে বসে অজু করার সময়ও (পানি অযথা খরচ করলে অপচয় হিসেবে গুনাহ হবে)।’ আল্লাহ আমাদের পানির সদ্ব্যবহারের তৌফিক দান করুন। পানি কীভাবে পান করতে হবে সেই আদব প্রিয় নবী (সা.) শিক্ষা দিয়েছেন। বসে ডান হাত দিয়ে বিসমিল্লাহির রহমানির রহিম বলে পানি পান করা সুন্নত। তিন শ্বাসে পানি পান করা উত্তম। রসুল (সা.) পানি সম্পর্কে যে শিক্ষা দিয়েছেন সেগুলো শুধু সুন্নত নয়, বরং এর প্রতিটিতে রয়েছে শরীর সুস্থ রাখার নিদর্শন। রসুল (সা.) বলেছেন, ‘তোমরা পানির পাত্র ঢেকে রাখ এবং বাসনগুলো উল্টে রাখ।’ (মুসলিম)

লেখক :  ইসলামবিষয়ক গবেষক

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর