বাংলাদেশ বেশ কয়েক বছর ধরে বিশ্বের অন্যতম শীর্ষ অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির দেশ হিসেবে পরিচিত। এ পরিচিতি একসময়কার সবচেয়ে পিছিয়ে পড়া দেশের শিরস্ত্রাণে সাফল্যের সে সোনালি পালক সংযোজন করেছে তা অনন্য। কিন্তু এ সাফল্য এখন প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে উঠছে বৈশ্বিক অর্থনৈতিক মন্দার মুখে। চলতি বছর সাড়ে ৭ শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জনের যে লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছিল তা সম্ভব হবে কি না বড় প্রশ্ন হয়ে উঠেছে। ডলারের বাজার নিয়ন্ত্রণ করতে গিয়েই পুরো অর্থনীতি প্রায় তছনছ হয়ে যাচ্ছে। আমদানি ব্যয় বেশি হওয়ায় বাণিজ্য ঘাটতিতে রেকর্ড সৃষ্টি হয়েছে। সরকারের প্রকল্প বাস্তবায়নও বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। শুধু তাই নয়, ডলারের বিকল্প হিসেবে অন্য কোনো বৈদেশিক মুদ্রায় আমদানির ব্যয় মেটানোর কৌশলও সফল হচ্ছে না। ফলে সামষ্টিক অর্থনীতির প্রবৃদ্ধি বাধার মুখে পড়েছে। চলতি অর্থবছরের প্রথম দুই মাসে এডিপি বাস্তবায়ন হয়েছে মাত্র ৩ দশমিক ৮৫ শতাংশ। এই সময়ে বাজেট বরাদ্দের ১ শতাংশ অর্থও ব্যয় করতে পারেনি ১৯ মন্ত্রণালয় ও বিভাগ। ফলে অর্থবছর শেষে কাক্সিক্ষত প্রবৃদ্ধি ৭ দশমিক ৫ শতাংশ বাস্তবায়ন নিয়ে সংশয় সৃষ্টি হয়েছে খোদ সরকারের ভিতরেও। বিনিয়োগ ও কর্মসংস্থান নিয়েও বাড়ছে দুশ্চিন্তা। নতুন কোনো বিনিয়োগ আসছে না। করোনা মহামারিতে
কাজ হারানো অনেকেই এখনো বেকার। একই সঙ্গে নতুন করে কাজে ঢুকতে পারছেন না স্নাতক শেষ করা তরুণরা। এতে শিক্ষিত বেকারের বোঝাও বাড়ছে। দুই-আড়াই বছর ধরে বিশ্বজুড়ে করোনার আগ্রাসন সত্ত্বেও বাংলাদেশ অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির কৃতিত্ব দেখিয়েছে। বিশ্বব্যাংক ও এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক চলতি বছর বাংলাদেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির যে পূর্বাভাস দিয়েছে তা বিশ্ববাস্তবতায় অন্তত দেড় শ দেশের চেয়ে ভালো। তবে কোনো দেশের অর্থনীতি নিছক প্রবৃদ্ধির ওপর নির্ভরশীল নয়। নিত্যপণ্যের মূল্যবৃদ্ধি এবং ডলারের বিপরীতে টাকার মূল্যহ্রাস কোটি কোটি মানুষের পকেট কাটার দুর্ভাগ্য সৃষ্টি করেছে। এ পরিস্থিতি মোকাবিলায় সরকার সব ক্ষেত্রে সতর্ক পদক্ষেপ নেবে এমনটিই প্রত্যাশিত।