সোমবার, ৩ অক্টোবর, ২০২২ ০০:০০ টা

রসুল (সা.)-এর স্মৃতিমন্ডিত রবিউল আউয়াল মাস

আবদুর রশিদ

রবিউল আউয়াল হিজরি সনের তৃতীয় মাস। রসুলের (সা.) জন্ম নবুওয়াত হিজরত এবং ওফাত সংঘটিত হয়েছে রবিউল আউয়াল মাসে। সেহেতু রসুল (সা.)-এর প্রতি ভালোবাসার মাস এটি। হাদিসে এসেছে ওই ব্যক্তি ততক্ষণ পর্যন্ত ইমানদার হতে পারবে না যতক্ষণ সে তার পিতা-মাতা ও সন্তান-সন্ততি থেকে রসুল (সা.)-কে বেশি ভালোবাসবে, অর্থাৎ পিতা-মাতা থেকেও নবীকে বেশি ভালোবাসতে হবে। এ ভালোবাসার মর্মার্থ হলো রসুল আমাদের জন্য যা নিয়ে এসেছেন তা পালন করা, যা থেকে বিরত থাকতে বলছেন তা থেকে বিরত থাকা। কেননা যেই ব্যক্তি রসুলের দেখানো পথে তাঁকে অনুসরণ করল সে তাকে অনুগত করল। পবিত্র কোরআনে আল্লাহতায়ালা বলেন, হে নবী আপনি বলে দিন, যদি তোমরা আল্লাহকে ভালোবাসতে চাও তবে তোমরা আমার অনুসরণ কর, তাহলেই আল্লাহ তোমাদের ভালোবাসবেন, আল্লাহতায়ালা তোমাদের গুনাহ মাফ করে দেবেন। আর আল্লাহ হলেন ক্ষমাশীল দয়ালু। (সুরা আলে ইমরান : আয়াত ৩১)। আল্লাহতায়ালা বলেন, নিশ্চয় আল্লাহতায়ালা নবীর ওপর রহমত নাজিল করেন এবং ফেরেশতা ও তার প্রতি রহমত কামনা করেন, হে মুমিনগণ তোমরাও তাঁর প্রতি দরুদ পড় এবং অধিক পরিমাণে সালাম পাঠাও। (সুরা আহজাব : আয়াত ৫৬)।

প্রতিটি মুমিনের দায়িত্ব সারা বছর রসুলের প্রতি দরুদ ও সালাম পাঠানো। বিশেষ করে রসুল (সা.)-এর স্মৃতিবিজড়িত রবিউল আউয়াল মাসে তার প্রতি বেশি বেশি দরুদ ও সালাম পাঠাতে হবে। এতে রয়েছে অনেক ফজিলত, সওয়াব, রহমত ও ক্ষমার ঘোষণা। হাদিসে এসেছে, হজরত আনাস (রা.) বর্ণনা করেন রসুল (সা.) বলেছেন, যে ব্যক্তি আমার ওপর একবার দরুদ পড়ে আল্লাহতায়ালা তার ওপর ১০টি রহমত বর্ষণ করেন, তার ১০টি গুনাহ মাফ করেন, তার জন্য রহমতের ১০টি দরজা খুলে দেওয়া হবে (মুসনাদে আহমদ ও নাসায়ি)। রসুল (সা.)-এর ওপর দরুদ পাঠকারীদের ক্ষমার প্রার্থনার জন্য ফেরেশতারাও নিযুক্ত। যারা দরুদ পাঠ করবে তাদের জন্য আল্লাহর কাছে ফেরেশতারা ক্ষমা প্রার্থনা করবেন।  আমর ইবনে রাবিয়া (রা.) বলেন, আমি আল্লাহর রসুল (সা.)-কে খুতবা দেওয়ার সময় বলতে শুনেছি, আমার ওপর দরুদ পাঠকারীগণ যতক্ষণ দরুদ পড়তে থাকে ফেরেশতারা ততক্ষণ তাদের জন্য মাগফিরাতের দোয়া করতে থাকে। সুতরাং বান্দার ইচ্ছা সে দরুদ কম পড়বে না বেশি পড়বে। (মুসনাদে আহমত ও ইবনে মাজা)। কিয়ামতের দিন রসুল (সা.)-এর সবচেয়ে নিকটবর্তী হবে ওইসব ব্যক্তি যারা বেশি বেশি দরুদ পড়ে। হাদিসে এসেছে আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা.) বর্ণনা করেন রসুল (সা.) বলেন, কিয়ামতের দিন ওই ব্যক্তি আমার সবচেয়ে বেশি কাছাকাছি হবে যে আমার ওপর সবচেয়ে বেশি দরুদ পড়েছে। (তিরমিজি)। দুনিয়া ও পরকালের সব চাওয়া-পাওয়া পূর্ণ হবে, রসুল (সা.)-এর প্রতি দরুদ পাঠে।  উবাই ইবনে কাব (রা.) বর্ণনা করেন, রসুল (সা.) একবার আল্লাহতায়ালার জিকিরের খুব তাগিদ দিলেন, আমি বললাম হে আল্লাহর রসুল (সা.) আমি আপনার ওপর বেশি বেশি দরুদ পাঠ করে থাকি। আমি আবার বললাম দোয়ার কত ভাগ আপনার জন্য নির্ধারণ করব। তিনি বললেন তোমার যে পরিমাণ ইচ্ছা, আমি বললাম চার ভাগের এক ভাগ। তিনি বললেন, তোমার যা ইচ্ছা তবে বেশি করলে ভালো, আমি বললাম অর্ধেক, তিনি বললেন তোমার যতটুকুন ইচ্ছা, বেশি করলে আরও ভালো। আমি বললাম তাহলে তিন ভাগের দুই ভাগ। তিনি বললেন তোমার যতটুকু ইচ্ছা হয়, তবে বেশি করলে আরও ভালো। আমি বললাম তাহলে কি আমার দোয়ার পুরোটাই হবে আপনার দরুদ। তিনি বললেন তবেই তো তোমার উদ্দেশ্য হাসিল হবে, তোমার গুনাহ মাফ করে দেওয়া হবে। (তিরমিজি ও তাবরানি)।

লেখক : ইসলামবিষয়ক গবেষক।

সর্বশেষ খবর