শুক্রবার, ১৪ অক্টোবর, ২০২২ ০০:০০ টা

শিক্ষকদের পর্যাপ্ত প্রশিক্ষণ না দিয়ে কারিকুলাম বাস্তবায়ন অসম্ভব

অধ্যাপক ড. ছিদ্দিকুর রহমান

শিক্ষকদের পর্যাপ্ত প্রশিক্ষণ না দিয়ে কারিকুলাম বাস্তবায়ন অসম্ভব

অধ্যাপক ড. ছিদ্দিকুর রহমান। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের সাবেক পরিচালক। ২০১০ সালের শিক্ষানীতি প্রণয়ন কমিটির সদস্য ছিলেন। ২০১২ সালের শিক্ষা কারিকুলামের ছিলেন একক পরামর্শক। ২০২৩ সালে শুরু হতে যাওয়া জাতীয় শিক্ষাক্রম নিয়ে তিনি কথা বলেছেন বাংলাদেশ প্রতিদিনের সঙ্গে। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন নিজস্ব প্রতিবেদক আকতারুজ্জামান-

 

আগামী বছর থেকে নতুন শিক্ষাক্রম চালু হতে যাচ্ছে নিয়ে কিছু বলুন

বলা হচ্ছে নতুন কারিকুলাম বাস্তবায়ন করা হবে। অথচ ২০১২ সালের কারিকুলামে এসবের ৯৫ বিষয়ই অন্তর্ভুক্ত ছিল। কিন্তু এগুলো বাস্তবায়নে উদ্যোগ নেওয়া হয়নি। আমি ছিলাম সেই কারিকুলাম প্রণয়ন কমিটির একক পরামর্শক। যে কারিকুলাম করা হচ্ছে সেটি নতুন নয়, বরং আগের কারিকুলামের সংস্কার বলা যেতে পারে। যারা বলছেন নতুন কারিকুলাম করা হয়েছে, তারা হয়তো ২০১২ সালের কারিকুলামে কী আছে তা পড়েই দেখেননি। উন্নত বিশ্বের কোনো কারিকুলাম চাইলেই তা এনে বাস্তবায়ন করা যাবে না। আমাদের দেশের উপযোগী করে ভাবতে হবে, সে অনুযায়ী কারিকুলাম করতে হবে। বিশ্বে ফিনল্যান্ডের শিক্ষাব্যবস্থা বা পাশের দেশ সিঙ্গাপুরের কারিকুলামও অনেক উন্নত। কিন্তু চাইলেই সেগুলো এখানে বাস্তবায়ন করা যাবে না।

 

কারিকুলামে দশম শ্রেণি পর্যন্ত বিভাগ বিভাজন থাকছে না, একে কীভাবে দেখছেন?

১৯৬০ সালে যখন ম্যাট্রিকুলেশন পাস করি, তখন দশম শ্রেণি পর্যন্ত একমুখী পড়াশোনা ছিল। বিভাগ বিভাজন হতো একাদশ শ্রেণিতে। ১৯৬২ সালে বিভাজন নবম শ্রেণিতে নামিয়ে আনা হলো। এখন এটা ফের ’৬২ সালের আগের অবস্থায় ফিরে যাচ্ছে। আমি মনে করি এটা ভালো উদ্যোগ।

 

সাপ্তাহিক ছুটি এক দিন থেকে বাড়িয়ে দুই দিন ক্লাসের কর্মদিবস কমিয়ে ১৮৫ দিন করা হয়েছে এটি কেমন প্রভাব ফেলবে?

২০১২ সালের কারিকুলামে বিষয়টি অন্যভাবে চিন্তা করেছিলাম। সেটি ছিল : প্রতিদিন আটটি বিষয়ে পড়ানোর পরিবর্তে ছয়টি বিষয়ে পড়ানো হবে। আমরা অ্যাকটিভিটি বেইজড লার্নিং বা অভিজ্ঞতানির্ভর শিক্ষা নিয়ে তখন চিন্তা করেছি। সে চিন্তা থেকেই ক্লাসের ব্যাপ্তি বাড়িয়ে ৫০ মিনিট করেছিলাম। এখন ফের অভিজ্ঞতানির্ভর শিক্ষার দিকে গেলে ক্লাসের ব্যাপ্তি কমানো ঠিক হবে না। সিলেবাস যদি নির্ধারিত সময়ে শেষ করা যায় তবে ছুটি দুই দিন হলেও সমস্যা হবে না।

 

কারিকুলামে পরীক্ষানির্ভরতা কমানো হয়েছে, তৃতীয় শ্রেণি পর্যন্ত পরীক্ষা থাকবে না; পঞ্চম অষ্টম শ্রেণির সমাপনী পরীক্ষাও বাতিল করা হয়েছে এসব উদ্যোগ কীভাবে দেখছেন?

এ দুই সমাপনী পরীক্ষা শুরুর বছর থেকেই বাতিল করতে লেখালেখি করেছি। এগুলো শিক্ষার্থীদের ওপর চাপিয়ে দেওয়া হয়েছিল। পরীক্ষাগুলো বাতিল করা ভালো পদক্ষেপ। আর তৃতীয় শ্রেণি পর্যন্ত পরীক্ষা না নিয়ে শিখনকালীন মূল্যায়ন করার সুযোগ রাখা হয়েছে। এও ভালো উদ্যোগ। কিন্তু এটি বলে যদি ছেড়ে দেওয়া হয়, তবে আমার আপত্তি আছে। যথাযথভাবে এ মূল্যায়ন করা হলে এসব ক্লাসে পরীক্ষার প্রয়োজন নেই।

 

চতুর্থ থেকে দ্বাদশ শ্রেণি পর্যন্ত শিখনকালীন সামষ্টিক- উভয় মাধ্যমেই মূল্যায়ন করা হবে এর প্রভাব কেমন হবে?

শিখনকালীন মূল্যায়ন অত্যন্ত ভালো প্রক্রিয়া। কিন্তু এর চ্যালেঞ্জগুলো মোকাবিলার পদ্ধতি যদি যথাযথভাবে প্রয়োগ করা যায় তবে শতভাগ নম্বরে শিখনকালীন মূল্যায়ন থাকলেও তা সমর্থন করব। কিন্তু এ মুহূর্তে ২০ শতাংশের বেশি নম্বর শিখনকালীন মূল্যায়নে রাখা উচিত নয়। কারণ এর চ্যালেঞ্জ মোকাবিলার ব্যবস্থা না থাকলে শিখনকালীন মূল্যায়ন পদ্ধতি ব্যর্থ হতে বাধ্য।

 

শিখনকালীন মূল্যায়নের চ্যালেঞ্জগুলো কী কী?

চলমান কারিকুলামে এসএসসি ও এইচএসসিতে ব্যবহারিক পরীক্ষায় নম্বরের সুযোগ রাখা হয়েছে। কোনো কোনো ক্ষেত্রে ছাত্রছাত্রী পদার্থ বা রসায়নের ব্যবহারিক পরীক্ষায় ২৫ নম্বরের মধ্যে ২৩ বা ২৪ নম্বর পেয়ে যাচ্ছে। কিন্তু লিখিত পরীক্ষায় একই শিক্ষার্থী পাসও করতে পারছে না বা ন্যূনতম নম্বর পেয়ে পাস করছে। পরীক্ষাব্যবস্থা নিয়ে যাঁরা গবেষণা করেছেন তাঁরাই এমন বলেছেন। ব্যবহারিকে ইচ্ছামতো বাড়তি নম্বর দেওয়াই তো নিয়ন্ত্রণ করা যাচ্ছে না। ব্যবহারিক পরীক্ষায় নম্বর পেতে বেশির ভাগ স্কুল-কলেজেই শিক্ষার্থীদের টাকা পরিশোধ করতে হচ্ছে। শিক্ষার্থীদের মাথায় কম বয়সে দুর্নীতি ঢুকিয়ে দেওয়া হচ্ছে। এটা বন্ধ না করে বিষয় ও শ্রেণিভেদে ৪০, ৫০ বা ৬০ শতাংশ নম্বর শিক্ষকের হাতে দেওয়া হচ্ছে। কোনো কোনো বিষয়ে শতভাগ নম্বরই এভাবে মূল্যায়ন করা হবে। চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা না করে শিক্ষকদের হাতে নম্বর দেওয়া হবে আত্মঘাতী সিদ্ধান্ত। পরীক্ষায় তুলনামূলক কম ফল করা স্কুল-কলেজগুলো মনে করবে ফল ভালো না হলে এমপিও বা বেতন বন্ধ হতে পারে। তাই তারা এসব নম্বর বাড়িয়ে দেবেন। আমরা কোচিং-প্রাইভেট বন্ধ করতে চাই। কিন্তু নতুন কারিকুলাম বাস্তবায়ন হলে আর চ্যালেঞ্জগুলো মোকাবিলা করা না গেলে কোচিং-প্রাইভেট বেড়ে যাবে। শ্রেণিশিক্ষকের কাছে ছাত্রছাত্রীদের প্রাইভেট পড়ার মাত্রা বহুগুণে বৃদ্ধি পাবে। শিক্ষার্থীদের জিম্মি হয়ে পড়ার শঙ্কা থাকে। তুলনামূলক দরিদ্র শিক্ষার্থীরা প্রাইভেট পড়তে না পেরে ক্ষতিগ্রস্ত হবে। ক্লাসে পাঠদানে মনোযোগ কম দিয়ে প্রাইভেটে নজর দেবেন শিক্ষকরা। ইউনিয়ন পরিষদের মেম্বার, চেয়ারম্যান থেকে শুরু করে স্থানীয় মাতব্বর, রাজনৈতিক নেতাসহ প্রভাবশালীরা শিখনকালীন মূল্যায়নের এই নম্বর দিতে শিক্ষকদের ওপর খবরদারি করবেন। এগুলো মোকাবিলার সক্ষমতা শিক্ষকরা অর্জন করলে শ্রেণিকক্ষের মূল্যায়নে শতভাগ রাখলেও আমার আপত্তি নেই। শিখনকালীন মূল্যায়নে আরেকটি বিষয় খেয়াল রাখতে হবে, তুলনামূলক পিছিয়ে পড়া শিক্ষার্থীদের সমানভাবে যোগ্য করে তুলতে হবে। যারা পিছিয়ে পড়ছে তাদের বাদ দিয়ে শুধু যারা যোগ্য তাদের নিয়ে চললে হবে না। যারা পিছিয়ে থাকবে তাদের জন্য নিরাময়মূলক ব্যবস্থা থাকতে হবে। এ ব্যবস্থা না থাকলে শিখনকালীন মূল্যায়নের কোনো অর্থ নেই।

 

শিক্ষা আইন করে শ্রেণিশিক্ষকের কাছে প্রাইভেট পড়া বন্ধের নিয়ম হচ্ছে তবু কি শিক্ষকের কাছে ছাত্রছাত্রীদের জিম্মি হওয়ার সুযোগ থাকবে?

সরকার বলছে শ্রেণিশিক্ষকের কাছে প্রাইভেট পড়া নিষিদ্ধ করবে। কিন্তু শিক্ষকের বাসায় বাসায় তদারকি সরকার কীভাবে করবে? অনেক আইন হয়তো হবে, কিন্তু কার্যকর হবে না।

 

ধর্ম শিক্ষা, ডিজিটাল প্রযুক্তি, জীবন-জীবিকাসহ কিছু বিষয়ে চূড়ান্ত পরীক্ষা না নিয়ে শিখনকালীন মূল্যায়ন করা হবে এতে কোনো সমস্যা দেখছেন?

এখন যে কারিকুলাম চালু আছে তা ২০১২ সালে ডেভেলপ করেছি। আমি এ কারিকুলাম প্রণয়ন কমিটির একক পরামর্শক ছিলাম। তখন প্রতি বিষয়ে ২০ শতাংশ রেখেছিলাম শিখনকালীন মূল্যায়ন। ধর্ম শিক্ষাসহ সব বিষয়েই পরীক্ষা রেখেছিলাম। তখন পরীক্ষা বেশির কথা বলে তা কমানোর ব্যাপারে ধুয়া তোলা হলো। আমি কারিকুলাম প্রণয়ন কমিটির একক পরামর্শক ছিলাম, কিন্তু আমাকে বাদ দিয়ে কক্সবাজারে একটি অনুষ্ঠান করে চার-পাঁচটি বিষয়কে সামষ্টিক মূল্যায়নের বাইরে আনা হলো। তার ফলটা কী হলো? সরকার কোটি কোটি টাকা খরচ করে এসব বিষয়ে বই দিল শিক্ষার্থীদের। কিন্তু বেশির ভাগ স্কুল এ বিষয়গুলো ছাত্রছাত্রীদের পড়ায়নি। তবে এসব বিষয়ে প্রায় শতভাগ নম্বর দিয়ে চূড়ান্ত পরীক্ষায় যোগ করে দেওয়া হচ্ছে। এতে দুই ধরনের ক্ষতি হচ্ছে। একটি হলো, শিক্ষার্থীরা এসব বিষয়ে কোনো জ্ঞান লাভ করল না। অন্যটি হলো, তাদের মনন-মগজে ঢুকিয়ে দেওয়া হলো যে না পড়েও নম্বর পাওয়া যায়। বিষয়টি মারাত্মক ক্ষতি জাতির জন্য। না পড়িয়ে ফাউ নম্বর দেওয়া শিক্ষার্থীদের ভবিষ্যৎ জীবনের জন্য অত্যন্ত ভয়ংকর।

 

ধর্ম বিষয়ে সামষ্টিক মূল্যায়ন করা হবে না পুরোটাই শিখনকালীন মূল্যায়ন করা হবে ব্যাপারে সম্প্রতি ধর্মভিত্তিক কিছু রাজনৈতিক দল ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছে আপনার মন্তব্য কী?

২০১২ সালের কারিকুলামে শিক্ষার্থীদের নীতি-নৈতিকতা, চরিত্র গঠন, দেশপ্রেম তৈরি ইত্যাদি বিষয়ে বেশি জোর দিয়েছিলাম। এটি স্কুলে কতটুকু বাস্তবায়িত হয়েছে সে প্রশ্ন রয়েছে। ধর্ম শিক্ষার বইগুলোর নাম পরিবর্তন করে সঙ্গে ‘নৈতিক শিক্ষা’ শব্দটিও যুক্ত করেছিলাম। আসলে কার্যকর কোনো ব্যবস্থা না নিয়ে সামষ্টিক মূল্যায়ন বাদ দিয়ে শুধু শ্রেণিকক্ষে শিখনকালীন মূল্যায়ন করা হলে না পড়ানোর সংস্কৃতি চালু হয়ে যাবে। আর এ সংস্কৃতি অনেকটাই ইতোমধ্যে চালু হয়ে গেছে।

 

আগামী বছর কারিকুলাম বাস্তবায়ন শুরু হওয়ার কথা থাকলেও এখনো মাঠপর্যায়ের শিক্ষকদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়নি বিষয়টি কীভাবে দেখছেন?

শিক্ষকদের পর্যাপ্ত প্রশিক্ষণ না দিয়ে নতুন কারিকুলাম বাস্তবায়ন অসম্ভব। আর মাত্র পাঁচ দিন প্রশিক্ষণ দিয়ে শিক্ষকদের প্রশিক্ষিত করা যাবে না। এমন চিন্তা অবাস্তব। যাঁরা এমন ভাবছেন তাঁদের প্রশিক্ষণ পরিচালনা করার অভিজ্ঞতা নেই হয়তো। শিক্ষকদের প্রশিক্ষণের বেশ কিছু ধাপ রয়েছে। শিক্ষকদের প্রশিক্ষণ দেবেন মাস্টার ট্রেইনাররা। আর মাস্টার ট্রেইনারদের প্রশিক্ষণ দেবেন যাঁরা কারিকুলাম ও বই লেখার সঙ্গে জড়িত তাঁরা। এই বিশেষজ্ঞদের সংখ্যা কত? বিশেষজ্ঞরা তো এক মাসেও মাস্টার ট্রেইনারদের প্রশিক্ষণ শেষ করতে পারবেন না। আর সারা দেশের শিক্ষকদের প্রশিক্ষণ দিতে লাগবে অন্তত ছয় মাস। অথচ মাত্র পাঁচ দিনে নাকি শিক্ষকদের প্রশিক্ষণ শেষ করার পরিকল্পনা করেছেন তাঁরা! এটা অসম্ভব, অবাস্তব। হাতে-কলমে শিক্ষকদের প্রশিক্ষণ দিতে চাইলে পাঁচ দিনে কোনোভাবেই সম্ভব নয়।

 

কারিকুলাম বাস্তবায়নে আর কী চ্যালেঞ্জ মনে করেন?

বাস্তবায়নের প্রথম চ্যালেঞ্জ হচ্ছে, যে লক্ষ্য নিয়ে নতুন কারিকুলাম করা হলো সে লক্ষ্য অর্জন করতে অনেক শিখনসামগ্রী দরকার। এর প্রথম হলো পাঠ্যবই। তারপর শিখন উপকরণ, শিক্ষকদের ট্রেনিং ম্যাটেরিয়ালস। এমন বই লেখার যোগ্যতাসম্পন্ন লেখকের অভাব রয়েছে দেশে। বই লেখা, শিখন উপকরণ তৈরি, ট্রেনিং ম্যাটেরিয়ালস তৈরি করাটাও বড় চ্যালেঞ্জ। কারিকুলাম পাইলটিংয়ের জন্য যে বই লেখা হয়েছে সেখানে কনসেপ্টের বড় বড় ভুল রয়েছে। অল্প কয়েকটি বইয়েই যদি এত ভুল হয় আগামীতে এতগুলো বই লিখতে কত ভুল হতে পারে? এসব বই দিয়ে নতুন কারিকুলামের লক্ষ্য অর্জন করা বড় চ্যালেঞ্জ। কারিকুলাম বাস্তবায়ন করবেন শিক্ষক। শিক্ষকদের তৈরি করতে যে ধরনের প্রশিক্ষণ দরকার, যে সময় নিয়ে প্রশিক্ষণ দেওয়া দরকার তা বড় চ্যালেঞ্জ। এমন প্রশিক্ষক, মাস্টার ট্রেইনার তৈরি করাও বড় চ্যালেঞ্জ। মূল্যায়ন পদ্ধতি নিয়ে অনেক কথা আছে। অভিজ্ঞতাভিত্তিক কলাকৌশল উল্লেখ নেই। ২০১২ সালের কারিকুলামের প্রতিটি বইয়ে কারিকুলাম শিখন কলাকৌশল, মূল্যায়ন কৌশল ইত্যাদি বিস্তারিত উল্লেখ করা ছিল। তা সত্ত্বেও ক্লাসরুমে শিক্ষকরা এটি বাস্তবায়ন করতে পারেননি। ২০২৩ সাল দেশের জন্য খুব গুরুত্বপূর্ণ। এটি জাতীয় নির্বাচনের বছর। এ কারিকুলাম চালু করতে গিয়ে শিক্ষকরা যদি বাস্তবায়ন করতে না পারেন, সারা দেশে যদি এ নিয়ে নেতিবাচক পরিস্থিতি বা হইচই পরিস্থিতির তৈরি হয় তবে সেটি সরকারের জন্য বিব্রতকর হতে পারে। তাই এটি বাস্তবায়ন করা নিয়ে ভাবনার অবকাশ রয়েছে।

 

আপনার মতে নতুন যে কারিকুলামের কথা বলা হচ্ছে, তার ৯৫ শতাংশই ২০১২ সালের কারিকুলামে অন্তর্ভুক্ত ছিল এগুলো কী কী?

২০১২ সালের কারিকুলাম প্রণয়নের সময় দুটি ব্যবস্থা অবলম্বন করা হয়েছিল। পাঠ্যবইয়ের মধ্যে বক্স করে শিক্ষার্থীদের জন্য বাড়ির কাজ দেওয়া আছে। এ বই এখনো পড়ছে শিক্ষার্থীরা। আমরা তো অ্যাকটিভিটি বেইজড লার্নিং তখনই শুরু করে দিয়েছিলাম। কিন্তু শিক্ষকরা ক্লাসে এটি পড়াননি। আমরা অনুসন্ধানমূলক প্রজেক্টও দিয়েছিলাম শিক্ষার্থীদের কারিকুলামে। তা-ও শিক্ষকরা বাস্তবায়ন করতে পারেননি। এজন্য তাঁদের দোষ দেওয়া যাবে না। আসলে আমরাই শিক্ষকদের তৈরি করতে পারিনি। শিক্ষকদের নতুন কারিকুলামের জন্য তৈরি করতে এখন বিশেষ কী উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে, এ নিয়ে আমার প্রশ্ন রয়েছে।

 

নতুন কারিকুলামে চলমান সৃজনশীল পদ্ধতি বাতিল করা হবে প্রসঙ্গে বলুন

আসলে চলমান সৃজনশীল পদ্ধতিতে শিক্ষার্থীদের তৈরি করা যায়নি। নতুন কারিকুলামে সৃজনশীল পদ্ধতি বাদ দেওয়া হচ্ছে। এটি কারিকুলামের আরেকটি গলদ। ক্লাসে শিক্ষার্থীদের সৃজনশীল করে তুলতে উদ্যোগ নিতে হবে। একই সঙ্গে প্রশ্নপত্রও সৃজনশীল রাখতে হবে।

 

সময় দেওয়ার জন্য অনেক ধন্যবাদ আপনাকে

বাংলাদেশ প্রতিদিনকেও ধন্যবাদ।

সর্বশেষ খবর