মঙ্গলবার, ১৮ অক্টোবর, ২০২২ ০০:০০ টা

রসুল (সা.) ছিলেন এতিমদের প্রতি সহানুভূতিশীল

আবদুর রশিদ

রসুল (সা.) ছোটবেলায় তাঁর মা-বাবাকে হারান। জন্মের পাঁচ মাস আগে বাবা আবদুল্লাহ বিদায় নেন পৃথিবী থেকে। ছয় বছর বয়সে জননী আমিনাও তাঁকে ছেড়ে চলে যান পরপারে। কুরাইশ বংশের নেতৃত্বদানকারী অভিজাত পরিবারের সন্তান ছিলেন মহানবী (সা.)। কুরাইশদের ঐতিহ্য অনুযায়ী জন্মের কদিন পরই তাঁকে তুলে দেওয়া হয় ধাত্রীমায়ের কাছে। তিনি নিজে ছিলেন এতিম। সেহেতু আজীবন এতিমদের প্রতিও ছিলেন সহানুভূতিশীল। ড. আহমাদ রাহনুমায়ী নবীজীবন সম্পর্কিত এক বিশ্লেষণধর্মী লেখায় বলেছেন, অন্যান্য শিশুর মতো রসুল (সা.) মরুচারী গোত্রের এক ধাত্রীমায়ের দুধ পান করেন। তৎকালীন মক্কার অভিজাত পরিবারের এটি ছিল একটি রেওয়াজ। তারা তাদের আট দিন বয়সের বাচ্চাকে দুধপানের জন্য কোনো এক মরু পরিবারে পাঠাত এবং সেখানে তারা আট-দশ বছর পর্যন্ত প্রতিপালিত হতো। কোনো কোনো মরু গোত্রের বিশেষ করে বনু সাদ গোত্রের ধাত্রীমায়েদের এ কাজে বেশ সুনাম ছিল। যেমন মরুভূমির নির্মল বায়ু সেবনের ফলে শিশুরা দ্রুত বেড়ে ওঠে এবং মরুজীবনের কষ্টকর পরিবেশে বড় হওয়ার কারণে তাদের মধ্যে বিভিন্ন পরিবেশে খাপ খাইয়ে চলার যোগ্যতা তৈরি হয়।

মক্কার মিশ্র সাংস্কৃতিক পরিবেশ এবং হজ ও বাণিজ্যিক কাফেলার সঙ্গে মেশার সুযোগ থেকে বহু দূরে মরুভূমির এককেন্দ্রিক সমাজ-ব্যবস্থায় তারা শুদ্ধ ও ধ্র“পদি আরবি ভাষা রপ্ত করার সুযোগ পায়। মক্কাবাসী অধিকাংশ ক্ষেত্রে বনু সাদ গোত্রের ধাত্রীদের কাছে বাচ্চা প্রতিপালনের দায়িত্ব দিতে পছন্দ করত। কারণ আরবের শহর ও মরু এলাকার বিভিন্ন গোত্রের মধ্যে বনু সাদ ছিল শুদ্ধ আরবি সংস্কৃতির ধারক। সেজন্য রসুল (সা.) তাঁর অনুসারীদের বলতেন, ‘আমি তোমাদের সবার চেয়ে খাঁটি আরব। আমি কুরাইশ ও বনু সাদ বিন বকর গোত্রের ধাত্রীমায়ের দুধ পান করেছি এবং তাদের মাঝে বড় হয়েছি।’

বর্ণিত আছে, হালিমা যখন দুই বছর পর মুহাম্মদ (সা.)-কে তাঁর মায়ের কাছে ফেরত দিতে আসেন তখন মক্কায় মহামারি ছড়িয়ে পড়েছিল বলে তিনি আবার তাঁকে সঙ্গে নিয়ে যাওয়ার আগ্রহ দেখান। গ্রীষ্মকালে মক্কার আবহাওয়া থাকে উষ্ণ এবং খারাপ। এর ফলে শিশুরা বড়দের চেয়ে বেশি রোগে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কায় থাকে। সেজন্য গরমকালে মক্কা নবজাতকদের জন্য মোটেই উপযোগী থাকে না। তাই মক্কাবাসী তাদের নবজাতকদের মরুভূমিতে পাঠায়, যাতে তারা মক্কার গরম, উষ্ণ ও অস্বাস্থ্যকর হাওয়া থেকে নিরাপদ থাকে। এজন্য তারা তাদের শিশুদের জন্য ধাত্রীমায়ের খোঁজ করে, যাতে তারা কয়েক বছর মক্কার বাইরে থেকে বেড়ে উঠতে পারে। উপরোল্লিখিত দুটি কারণ নির্ভরযোগ্য হাদিসে বর্ণিত হয়েছে। দ্বিতীয় কারণটি ইবনে ইসহাকের ‘সিরাত’ গ্রন্থে একটি হাদিস হিসেবে এবং পঞ্চমটি ইবনে আসির হাদিস হিসেবে বর্ণনা করেছেন। এটি তাবারি তাঁর নবীর ইতিহাস গ্রন্থে এবং হাইকেল তাঁর হায়াত গ্রন্থে হালিমা প্রসঙ্গে বর্ণনা করেছেন। বাকি কারণগুলো জীবনীকাররা তাঁদের অভিজ্ঞতা থেকে বর্ণনা করেছেন।

 

লেখক : ইসলামবিষয়ক গবেষক

সর্বশেষ খবর