রবিবার, ৩০ অক্টোবর, ২০২২ ০০:০০ টা

আমলাতন্ত্র এবং সরকারের সুস্পষ্ট বার্তা

আলম রায়হান

আমলাতন্ত্র এবং সরকারের সুস্পষ্ট বার্তা

‘পথ ভাবে আমি দেব, রথ ভাবে আমি,

মূর্তি ভাবে আমি দেব, হাসে অন্তর্যামী।’

কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের এ পঙ্ক্তির সঙ্গে অনেকেই পরিচিত এবং অনেক সময় এর প্রতিফল দেখা যায় বিভিন্ন ক্ষেত্রে। পরিবার থেকে সমাজ, এরপর রাষ্ট্র- অনেককেই ক্ষমতার বলয়ে বেপরোয়া আচরণ করতে দেখা যায়। এ ক্ষেত্রে ব্যক্তি ও শ্রেণি সমার্থক। সামরিক সরকারের সময় ক্যাপ্টেন সাহেবই যেন দেব, সামরিক আমলাদের রাজত্ব। রাজনৈতিক সরকারের সময় দাপট বাড়ে সিভিল আমলাদের। এদিকে নীরবে সব সময়ই ক্ষমতাধর পুলিশ। চিরকালই যেন পুলিশের বসন্ত। কখনো কুহু ডাক, কখনো আবার চুপচাপ- এই যা ফারাক। বিপরীতে জনগণ থাকে একই অবস্থানে; যাদের বড় গলায় বলা হয় দেশের মালিক। কিন্তু জনগণ আসলে কী? এ প্রশ্নের উত্তর সবারই জানা। এটি আজকের আলোচ্য নয়। তথ্য সচিব পদ থেকে মো. মকবুল হোসেনকে ১৬ অক্টোবর পত্রপাঠ বিদায় করার ঘটনা কেন্দ্র করে আমলা প্রসঙ্গ টক অব দ্য কান্ট্রি হয়ে আছে। যেন মহাভারত অশুদ্ধ হয়েছে।

সরকারব্যবস্থার অন্যতম ভিত্তি আমলাতন্ত্র। ফলে সরকারি লোকেরা সব সময়ই এক ধরনের অঘোষিত ইনডেমনিটি ভোগ করেন। এদিকে বলা হয়, আমলা শ্রেণির ক্ষমতা অসীম। অধুনা প্রয়াত সাংবাদিক আবদুল গাফ্ফার চৌধুরী দৈনিক ইত্তেফাকে ২০২১ সালের ৬ জুন তাঁর কলামে আমলাদের ক্ষমতা ও প্রভাব নিয়ে লিখেছেন অনেক অপ্রিয় সত্য। এর দুই দিন পর পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান বলেছেন, ‘আমলাতন্ত্র সব সময়ই থাকবে। ফেরাউনও অত্যন্ত শক্তিশালী শাসক ছিলেন। তিনিও আমলাতন্ত্রের বাইরে যেতে পারেননি, আমলাতন্ত্রের বিকল্প বের করতে পারেননি। সোভিয়েতরা চেষ্টা করে বের করতে পারেননি। চীনারাও বের করতে পারেননি। এমনকি খলিফারাও বের করতে পারেননি।’ মজার ব্যাপার হলো, কেউ কিন্তু আমলাতন্ত্রের বিকল্প বের করতে বলেনি। শুধু প্রত্যাশা হচ্ছে, আমলারা থাকবেন তাঁদের স্বীকৃত চৌহদ্দির মধ্যে; হবেন না রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের কবিতার তাল গাছ। সুদূর ইতিহাসের পাতায় কেবল নয়, নিকট অতীতেও আমলাদের বিষয়ে বিশেষ বিবেচনার একাধিক উদাহরণ আছে। এমনকি মুুক্তিযুদ্ধ চলাকালেও গুরুতর অভিযোগ থাকা সত্ত্বেও বিশেষ বিবেচনায় আমলার ছাড় পাওয়ার উদাহরণ আছে। একই অভিযোগে মুক্তিবাহিনীর হাতে আটক তিনজনের মধ্যে একজনকে ফায়ারিং স্কোয়াডে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয় এবং বিশাল আয়োজনে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর হয় সামরিক কায়দায়। কিন্তু অন্য দুজনকে সপ্তাহখানেক কারাগারে রেখে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। উল্লেখ্য, তারা ছিলেন খুলনা জেলা প্রশাসনের সর্বোচ্চ ব্যক্তি। একজন ডিসি, অন্যজন এসপি। ’৭১-এর পাকিস্তান-অনুগত সেই এসপি পরে বাংলাদেশ পুলিশের আইজি হয়েছিলেন। শুধু তাই নয়, মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে পাকিস্তান সরকারের চাকরিতে নিয়োজিত থাকা আমলারা বাংলাদেশ সরকারেরও দাপুটে আমলা হিসেবে চাকরি করেছেন। এই হচ্ছে অনিবার্য বাস্তবতা। কিন্তু এ বাস্তবতার ওপর ভিত্তি করে যখন নগ্নভাবে সীমা লঙ্ঘিত হয় তখন ঘটে বিপত্তি। শুধু তাই নয়, আমলাতন্ত্র নিয়ে খোদ সংসদে ক্ষুব্ধ বক্তব্য দিয়েছেন তোফায়েল আহমেদসহ বেশ কয়েকজন অভিজ্ঞ সংসদ সদস্য। ঝানু পার্লামেন্টারিয়ান তোফায়েল আহমেদের সঙ্গে সুর মিলিয়ে জাতীয় পার্টির সিনিয়র সংসদ সদস্য সাবেক মন্ত্রী কাজী ফিরোজ রশীদ বলেছেন, ‘...মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ডিসিদের সঙ্গে কথা বলেন আর এমপি সাহেবরা পাশাপাশি বসে থাকেন, দূরে। তারপর বলেন ডিসি সাব! আমি একটু কথা বলব প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে।’

মহান জাতীয় সংসদে উল্লিখিত বক্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে পরিস্থিতির দৃশ্যমানে হেরফের হয়েছে বলে মনে করার কোনো কারণ নেই। তবে বিলম্বে হলেও এ প্রসঙ্গে একটি মেসেজ পরিষ্কার হয়েছে তথ্য সচিব পদ থেকে নির্ধারিত সময়ের আগে মো. মকবুল হোসেনের বাধ্যতামূলক বিদায়ের মধ্য দিয়ে। এর ইতিবাচক প্রভাব জেলা ও উপজেলা পর্যন্ত এরই মধ্যে বেশ স্পষ্ট। এমনকি বেপরোয়া আচরণ ও বক্তব্যের জন্য আলোচিত একজন ডিসি তাৎক্ষণিকভাবে সুবোধ বালক হয়ে গেছেন বলে জানা গেছে।

দেশের আমজনতা আমলাতন্ত্রকে প্রত্যক্ষভাবে অনুভব করে জেলা প্রশাসনের মাধ্যমে। যে প্রশাসনের প্রধান হচ্ছেন ডিসি। এ পদের এন্তার ক্ষমতা ও এখতিয়ার রয়েছে। জেলা পর্যায়ে ডিসিদের সাধারণ কার্যাবলির মধ্যেই রয়েছে ৬২টি বিষয়। কোনো কোনো ক্ষেত্রে ডিসিদের যে পরিচয় দেশের মানুষ পায় তা এক কথায় ভয়াবহ। কোনো কোনো ডিসি তো জেলার সরকারপ্রধান এবং রাষ্ট্রপ্রধানের প্রতিনিধি হিসেবে নিজকে জাহির করে থাকেন। ডিসির এই ভাবসাব তার চেইনের নিচের দিকেও সংক্রমিত হয় বোধগম্য কারণেই। এ ধারায় অনেক উপজেলায় প্রশাসনিক প্রধান হিসেবে ইউএনওর যে কর্মকাণ্ডের খবর গণমাধ্যমে শিরোনাম হয় তা চরম উদ্বেগের। এ ক্ষেত্রে মহা উদ্বেগের উদাহরণ সৃষ্টি হয়েছে গত বছর ১৮ আগস্ট বরিশালে। সেদিন দিবাগত রাতে বরিশাল সদর ইউএনওর দাম্ভিকতায় যে জটিল পরিস্থিতি সৃষ্ট হয়েছিল তা থেকে কোনোরকম রক্ষা পাওয়া গেছে সরকারের উচ্চমহল ও স্থানীয় রাজনৈতিক নেতৃত্বের বিচক্ষণতার কারণে। তা না হলে বড় রকমের অঘটন ঘটতে পারত। এর পরও ১৭ অক্টোবর জেলা পরিষদ নির্বাচনে ভোট গ্রহণের দিন সকালে বরিশাল সদর ইউএনও আরও একটি অঘটনের সূত্রপাত করার প্রায় দোরগোড়ায় গিয়েছিলেন। অনেক ঘটনার আলোকে জেলা পর্যায়ে আমজনতার হালহকিকত সহজেই অনুুমেয়। বরিশালের ১৮ আগস্টের উল্লিখিত ঘটনা ও কিছু বিষয়কে দাম্ভিক দৃষ্টান্ত হিসেবে গ্রহণ করার মানসিকতায় নিমজ্জিত হয়েছেন কোনো কোনো জেলা প্রশাসক। হয়তো এ বিভ্রম থেকেই একজন ডিসি গভীর রাতে সাংবাদিককে বাড়ি থেকে তুলে এনে হেনস্তা করতে অনুপ্রাণিত হয়েছেন। আবার সাংবাদিক প্যাঁদানোর জন্য আলোচিত ডিসির লঘুদণ্ড মার্জনা করে দিয়েছেন মহামান্য রাষ্ট্রপতি। ফলে যে মেসেজ স্পষ্ট হয়েছে, তা বুঝতে কারও আর বাকি থাকার কথা নয়। এদিকে অন্যরকম মেসেজ পাওয়া গেছে করোনাকালের সংকট মোকাবিলায় জেলার দায়িত্ব ডিসিদের ওপর ন্যস্ত হওয়ায়। বাংলাদেশেংং আমলাতন্ত্র চলে গেল অন্যরকম উচ্চতায়। করোনাকালে প্রধানমন্ত্রী সব জেলার সঙ্গে ভিডিও কনফারেন্স করেছেন। সেই ভিডিও কনফারেন্সে সভাপতিত্ব করেছেন জেলা প্রশাসকরা। সেখানে পার্শ্বচরিত্র হিসেবে ছিলেন এমপিরা। কোথাও কোথাও মন্ত্রীরাও ছিলেন পার্শ্বচরিত্রে। ফলে বাস্তবতা যা-ই হোক, জনগণ দেখল ‘এমপিদের কোনো ভূমিকা নেই, কোনো কাজ নেই’। অথচ একজন জেলা প্রশাসক উপসচিব পদমর্যাদার কর্মকর্তা। রুলস অব বিজনেস অনুসারে উপসচিবের অবস্থান একজন সংসদ সদস্যের চেয়ে অন্তত ১০ ধাপ নিচে। সবচয়ে বড় কথা, সংসদ সদস্য জনগণের নির্বাচিত প্রতিনিধি। দেশের আমলাতন্ত্র কতটা শক্তিশালী তার প্রমাণ নানা ঘটনায় পাওয়া যায়। এর পেছনে সুস্পষ্টভাবে বেশকিছু কারণও রয়েছে; যার সব হয়তো এখানে উল্লেখ করা সংগত নয়। আমলাদের মধ্যে বিশেষ করে মাঠ প্রশাসনের কর্মচারীদের মধ্যে ‘স্যার’ ও ‘ভাই’ সম্বোধন ইস্যুতে এমন সব ঘটনা ঘটছে যা শুধু অনাকাক্সিক্ষতই নয়, বরং এ ঘটনাগুলো পুরো ব্যবস্থাকে প্রশ্নের মুখোমুখি দাঁড় করিয়ে দিয়েছে। অনেক সময় সরকারি লোকজনের আচরণে মনে হয় গণকর্মচারীদের কাছে জনগণ জিম্মি। বিশেষ করে প্রতি বছর যখন ডিসি সম্মেলন হয়, তখন সেখানে ডিসিরা যেসব দাবি-দাওয়া তোলেন তাতে মনে হতে পারে রাজনীতিবিদরা নন, দেশটা চালান আমলারা। সর্বশেষ নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে ডিসি-এসপিদের বৈঠকের যে দৃশ্যপট দেশবাসী প্রত্যক্ষ করেছেন তাতে বলার আর তেমন কিছুই থাকে না।

অন্যদিকে অন্যরকম বাস্তবতাও আছে। সরকারের কর্তৃত্ব মন্ত্রীদের দ্বারা প্রতিফলিত হয়। মন্ত্রীদের দক্ষতা-যোগ্যতা-আচার-আচরণে প্রশাসনের লোকেরা যদি মনে করেন, তাদের ওপর ভর করে সরকার টিকে আছে, তাহলে প্রশাসনের শৃঙ্খলা বজায় রাখার আশা সোনার পাথরবাটি ছাড়া কিছু নয়। সাধারণভাবেই জানা কথা, ঘোড়া নিয়ন্ত্রিত হয় লাগাম দ্বারা। আর গুরুত্বপূর্ণ বিষয়টি হচ্ছে লাগাম হাতে ব্যক্তিটি কে। বলাই তো হয়, ম্যান বিহাইন্ড গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। সবারই জানা, ক্ষমতা ও দায়িত্বের দিক থেকে সবচেয়ে শক্তিশালী প্রশাসন ক্যাডার। যাকে প্রচলিতভাবে আমলাতন্ত্র বলা হয়। এদিকে অনেক রাজনৈতিক সমস্যাই আসলে আমলাতান্ত্রিক। এই যে যাকে সরকার বলি বা সরকারি সিদ্ধান্ত বলা হয়, তা আসলে অধিকাংশ ক্ষেত্রে আমলাতন্ত্রেরই সিদ্ধান্ত। ধরা যাক, স্থানীয় পর্যায়ে ডিসি বা ইউএনও যখন কোনো নির্দেশ জারি করেন, সেটা সরকারি সিদ্ধান্ত হিসেবেই পরিগণিত হয়। জনকল্যাণ, পাবলিক পরীক্ষা, জমিজমাসংক্রান্ত বহুবিধ কাজের দায়িত্ব ন্যস্ত করা থাকে জেলা ও উপজেলা পরিষদের বিবিধ দফতরে। সংবিধান অনুসারে সরকারি ব্যক্তিরা গণসেবক বা সিভিল সার্ভেন্ট হলেও জনগণের সামনে তারা মাস্টার, মানে প্রভু। এ বাস্তবতায় জনগণ নিজেদের সার্ভেন্ট ভাবতে বাধ্য হয়। যদিও জনগণতান্ত্রিক রাষ্ট্রব্যবস্থায় উল্টোটা হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু বাস্তবে তা হয়নি। প্রবীণ কলামিস্ট আবদুল গাফ্ফার চৌধুরী তাঁর কলামে লিখেছেন, ‘গণতান্ত্রিক কর্তৃত্ববাদ নয়, নব্য ধনী ও আমলাতন্ত্রের মিতালি এক ধরনের অসহিষ্ণু সমাজ ও দাম্ভিকতাপূর্ণ আমলারাজ সৃষ্টির দিকে দেশটিকে ঠেলে দিচ্ছে মনে হয়।’ (যুগান্তর, ২৩ আগস্ট, ২০২১)। এর পরও আমলাতন্ত্র অনিবার্য এক বাস্তবতা। কিন্তু তখনই অঘটন ঘটে যখন ক্ষমতার বলয়ে রাজনীতিবিদদের অতিক্রম করতে চায় আমলাতন্ত্র। এ ব্যাপারে সুবিধাজনক প্রবণতায় আছেন আমলারা। টিকে থাকার ক্ষেত্রে তারা একে অন্যের সহযোগী। আর আমলাতন্ত্রে জবাবদিহি সরাসরি জনগণের কাছে নেই। রাজনৈতিক ক্ষমতার চেয়ে আমলাদের ক্ষমতা অধিক স্থায়ী। আর জেলা প্রশাসক যেন জেলার সম্রাট। বিশাল বাংলো, সজ্জিত কামরা, ফুলেল চত্বর, সতর্ক প্রহরা আর কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ব্যতিব্যস্ততা। দেখে মনোজগতে ভেসে ওঠে উপনিবেশ আমলের সাহেবদের ছবি।

আমাদের দেশের আমলাতন্ত্র ঔপনিবেশিক লিগ্যাসি বহন করে চলেছে প্রায় অক্ষরে অক্ষরে। অথচ আমলাতন্ত্রকে জনমুখী করা রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে ইনসাফ প্রতিষ্ঠার অপরিহার্য শর্ত। গণমুখী আমলাতন্ত্র ও অনাড়ম্বর প্রশাসন কল্যাণ রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার প্রধান ধাপ। কাজেই আমাদের রাষ্ট্র ও ঔপনিবেশিক মনোকাঠামো এবং সাংস্কৃতিক মান বিবেচনায় নেওয়া প্রয়োজন। আর সে কারণেই ২০১৮ সালের সরকারি চাকরি আইন সরকারের দরকার। আমলানির্ভর হলেও প্রয়োজনে এ আইনের ব্যবহার সরকারের কাছে জরুরি। কেননা, কোনো কর্মকর্তা যদি সরকারের আনুগত্য করতে ব্যর্থ হয় অথবা কোনো বিষয়ে বাড়াবাড়ি করে তাহলে তাকে শায়েস্তা করার অস্ত্র হলো এ আইন। একটি বিষয় বিবেচনায় রাখা প্রয়োজন। তা হচ্ছে, কেবল আমলারা নন, আলামতের দিকে ব্যক্তি ও শ্রেণি নজর রাখে। এ ক্ষেত্রে আমলার শ্রেণি হচ্ছে সবচেয়ে অগ্রগামী। আমাদের দেশের আমলাদের অন্যরকম ভূমিকার উদাহরণ আছে ১৯৯৬ সালে। ‘জনতার মঞ্চ’-এর কথা স্মরণ করা যাক। এ মঞ্চের প্রধান কুশীলবদের উদাহরণ সামনে রেখে আওয়ামী লীগ সরকারের বিরুদ্ধে কতিপয় আমলার সক্রিয় হওয়ার ঘটনা কি চাঞ্চল্য সৃষ্টি করেনি? যা ‘উত্তরা ষড়যন্ত্র’ হিসেবে বেশ পরিচিতি পেয়েছে। আবার এ ধরনের ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটানোর বাসনা অতি উৎসাহী কোনো কোনো আমলার মধ্যে থাকতে পারে। তবে আশার কথা হচ্ছে, অতীতের যে-কোনো সময়ের চেয়ে নজরদারির নেটওয়ার্ক বেশ শক্তিশালী। প্রত্যাশা হচ্ছে, আমলারা থাকবেন তাদের ক্ষমতার চৌহদ্দির মধ্যে। এজন্য নজরদারি খুব জরুরি। কারণ, অঘটনঘটনপটীয়সীরা অতীতের যে-কোনো সময়ের চেয়ে এখন অধিক সক্রিয়। এরা মরিয়া হয়ে খেলছে। এরা ’৭১-এ পরাজিত শক্তি, ’৭৫-এর থিঙ্কট্যাঙ্ক, এরা চায় বাংলাদেশের বিনাশ!

অনেকে মনে করছেন, তথ্য সচিবকে পত্রপাঠ বিদায় করা আমলাদের প্রতি সরকারের অনিবার্য একটা কঠোর বার্তা। আমলাদের সবকিছু যে সরকার মনিটর করছে এ ঘটনার মধ্য দিয়ে তা স্পষ্টভাবে প্রমাণিত হলো এবং এর মধ্য দিয়ে সরকারপ্রধান শেখ হাসিনা জানান দিলেন, ‘কেউ সরকারের ঊর্ধ্বে নয় এবং সবকিছুই রয়েছে নজরদারির মধ্যে।’ একটা বিষয় বিবেচনায় রাখা প্রয়োজন, সরকার অকারণে কোনো সচিবকে পত্রপাঠ বিদায় করে না!

লেখক : জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক

সর্বশেষ খবর