রবিবার, ৩০ অক্টোবর, ২০২২ ০০:০০ টা

প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের লীলাভূমি কুয়াকাটা

বাংলাদেশের প্রাকৃতিক রূপ সহজেই পর্যটকদের আকৃষ্ট করে। পটুয়াখালীর খেপুপাড়ায় কুয়াকাটার অবস্থান। প্রায় এক শতাব্দী আগের জনমানবহীন বেলাভূমি কুয়াকাটা আজ নৈসর্গিক শোভায় সমৃদ্ধ। সুন্দরবনের সুন্দরী ও গোলপাতা গাছের শ্যামল ছায়া কুয়াকাটার পরিবেশ আরও মনোরম করে তুলেছে। এ ছাড়া এখানে রয়েছে বিস্তীর্ণ সমুদ্রসৈকত। এ সৈকতে সূর্যোদয় ও সূর্যাস্তের অপরূপ দৃশ্য অবলোকন করা যায়। এখানকার উপজাতিদের জীবনপ্রণালি স্থানটির আলাদা আকর্ষণ। এ জীবনপ্রণালি একঘেয়ে জীবনে নতুন স্পন্দন জাগায়। খেপুপাড়া, গলাচিপা, দশমিনাসহ পটুয়াখালী ও বরিশালের বিভিন্ন স্থান থেকে প্রতি বছর মাঘী পূর্ণিমার সময় হাজার হাজার লোকের সমাবেশ ঘটে এখানে। খেপুপাড়ার লতাচাপলি ইউনিয়নের একাংশ সমুদ্রতট। দৈর্ঘ্যে ৬ মাইল, প্রস্থে আড়াই মাইলজুড়ে গড়ে উঠেছে কুয়াকাটা। এখানকার লোকসংখ্যা প্রায় ৫০ হাজার। দিনে দিনে বৃদ্ধি পাচ্ছে এর পরিধি। এলাকাটি আজ আকর্ষণীয় হয়ে উঠেছে পর্যটকদের কাছে। এ আকর্ষণের কারণ শুধু নৈসর্গিক শোভাই নয়, স্থানীয়দের আতিথেয়তাও মুগ্ধ করার মতো। এখানে বেশির ভাগই রাখাইন সম্প্রদায়ের বাস। প্রাচীন ঐতিহ্যের স্বাক্ষর বহন করছে রাখাইন। উপজাতিদের নির্মিত বৌদ্ধ বিহার ও ঘরবাড়ি। তিন পুরুষ আগে এসে আদিম অধিবাসীদের মতো তারা হিংস্র জীবজন্তুর সঙ্গে নিরন্তর লড়াই ও অরণ্যভূমি পরিষ্কার করে তাদের অস্তিত্ব বহাল রাখে। পরবর্তী সময়ে বাঙালি হিন্দু ও মুসলমান কিছু লোক সেখানে গিয়ে বসতি স্থাপন করে। হিন্দু ও বৌদ্ধদের তীর্থভূমি কুয়াকাটা। এখানে রাস ও মাঘী পূর্ণিমা উৎসবের সময় শূন্যস্থানে প্রতি বছর অসংখ্য লোকের সমাবেশ এবং বিরাট মেলা বসে। রুপালি সৈকত ও নীল উপহ্রদের সৌন্দর্যবেষ্টিত কুয়াকাটা একটি মনোরম অবকাশযাপন ও পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে গড়ে উঠতে পারে। আনন্দের কথা, কুয়াকাটাকে এখন পর্যটকদের উপযোগী আকর্ষণীয় করে গড়ে তোলার নানা উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। তাই দেশি-বিদেশি পর্যটক আসতে শুরু করেছেন। এ পর্যটন কেন্দ্রে সাঁতার, নৌভ্রমণ, ওয়াটার স্কি, স্ক্যাটিং, পিকনিক ও শিকারের আনন্দ উপভোগের ব্যবস্থা করা হয়েছে। তাই এখানকার প্রাকৃতিক মনোরম দৃশ্য অবলোকনের নিমিত্ত বহু লোকের সমাবেশ ঘটে। কিন্তু ভ্রমণকারীদের স্বাচ্ছন্দ্য ভ্রমণের ব্যবস্থা ও নিরাপত্তা জোরদার করতে হবে। যোগাযোগব্যবস্থার আরও উন্নয়ন এবং সুষ্ঠু পরিকল্পনার মাধ্যমে কুয়াকাটাকে বৃহত্তর পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে গড়ে তোলা সম্ভব। কুয়াকাটার দীর্ঘ বেলাভূমির মাঝে মাঝে শাখা নদীর মোহনায় যান্ত্রিক ফেরি, সেতু ও কালভার্ট স্থাপন করলে পর্যটকরা শিকার ও ভ্রমণের আরও সুযোগ পেতেন। দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে পটুয়াখালী সদর বা বরগুনা সদরে নৌপথে এসে সড়কপথে কুয়াকাটায় পৌঁছা সম্ভব। জলপথেও সরাসরি কুয়াকাটা যাওয়া যায়। এ ছাড়া ঢাকা থেকে সরাসরি বিমানে ভ্রমণ সম্ভব।

আফতাব চৌধুরী

সর্বশেষ খবর