শনিবার, ৫ নভেম্বর, ২০২২ ০০:০০ টা

প্রশংসনীয় আইন

ধর্ষিতার চরিত্র নিয়ে প্রশ্ন নয়

ধর্ষণ মামলার ভুক্তভোগীকে হেনস্তা করা হতো পদে পদে। থানায় অভিযোগ করতে গেলে অভিযোগের সত্যতা পরীক্ষার নামে হেনস্তার ঘটনা প্রায়ই ঘটত। ডাক্তারি পরীক্ষার নামে একসময় পুরুষ চিকিৎসকের কাছে ভুক্তভোগীকে যে বাস্তবতার সম্মুখীন হতে হতো তা কোনোভাবেই স্বস্তিদায়ক ছিল না। এমনিতেই এ দেশে ধর্ষণের ভুক্তভোগীদের ভবিষ্যৎ হয়ে পড়ে অন্ধকারাচ্ছন্ন। ধর্ষিতার স্বজনরাও তাকে অনেক সময় ভাবে বোঝা হিসেবে। আর ধর্ষণ মামলার বিচারের সময় আসামিপক্ষের আইনজীবীরা তাদের মক্কেলকে আইনি সুরক্ষা দেওয়ার নামে ভুক্তভোগীর চরিত্র নিয়ে আদালতে যেভাবে প্রশ্ন করার সুযোগ পেতেন তা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। অথচ ঔপনিবেশিক যুগের এই অশোভন আইনটি টিকে ছিল বছরের পর বছর ধরে। গত বৃহস্পতিবার সেই পাপমুক্তি ঘটেছে। ধর্ষণের ভিকটিমকে আদালতে হেনস্তার হাত থেকে রেহাই দেওয়ার বিধান সংযুক্ত করে সাক্ষ্য আইনের ‘এভিডেন্স (অ্যামেন্ডমেন্ট) বিল, ২০২২’ পাস করেছে সংসদ। বিদ্যমান সাক্ষ্য আইনে ধর্ষণ বা ধর্ষণচেষ্টার অভিযোগকারীকে দুশ্চরিত্রা প্রমাণ করার ১৫৫ (৪) ধারাটি বিলে বিলুপ্ত করা হয়েছে। ওই ধারায় উল্লেখ ছিল- কোনো ব্যক্তি যখন বলাৎকার বা শ্লীলতাহানির চেষ্টার অভিযোগে ফৌজদারিতে সোপর্দ হন, তখন দেখানো যেতে পারে যে অভিযোগকারিণী সাধারণভাবে দুশ্চরিত্রা। সাক্ষ্য আইনের ১৪৬(৩) ধারায় বিশ্বাসযোগ্যতা যাচাই করার জন্য সাক্ষীর চরিত্রকে আঘাত করতে পারে, সংশোধিত সাক্ষ্য আইনে ভিকটিমের চরিত্র নিয়ে এমন কোনো প্রশ্ন করা যাবে না। অধিবেশনে বিএনপিসহ বিরোধী দলের বেশির ভাগ সদস্যই আইনটি সংশোধন করায় প্রশংসা করেন। বিলে ক্রস এক্সামিনেশন বা জেরার সময়ের নতুন বিধানে বলা হয়েছে, ধর্ষণ বা ধর্ষণচেষ্টা মামলার ভিকটিমকে তার নৈতিক চরিত্র বা অতীত যৌন আচরণ নিয়ে প্রশ্ন করা যাবে না। ন্যায়বিচারের স্বার্থে যদি আদালত মনে করেন এ ধরনের প্রশ্ন করা প্রয়োজন, তাহলে আদালতের অনুমতি নিয়েই কেবল করা যাবে। আইনটি পাসের ক্ষেত্রে সরকার ও বিরোধী দলের সমর্থন মিলেছে; যা প্রশংসনীয় দিক। তবে প্রতিপক্ষকে ঘায়েল করতে আইনটি যাতে ব্যবহৃত না হয়, সে বিষয়ে উদ্বেগও প্রকাশ করা হয়েছে বিরোধী দলের পক্ষ থেকে। আইন সভ্য সমাজের প্রতিবিম্ব। অপপ্রয়োগ সভ্যতার মান সম্পর্কেই প্রশ্ন সৃষ্টি করে। সে বিষয়ে সতর্ক থাকতে হবে।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর