জুলফিকার আলি ভুট্টো ছিলেন জুনাগড়ের দিওয়ান বা প্রধানমন্ত্রী স্যার শাহ নওয়াজ ভুট্টোর পুত্র। জুলফিকার তার স্কুল ও কলেজ জীবন কাটান বোম্বেতে। ১৯৪৭ সালে জুনাগড়ের নওয়াব তার দিওয়ানের পরামর্শে পাকিস্তানে যোগদানের চেষ্টা করে ব্যর্থ হওয়ার পর ভুট্টো পরিবার পাকিস্তানে তাদের পারিবারিক নিবাস সিন্ধুতে ফিরে আসেন। সব ভারতীয়, বিশেষ করে হিন্দুদের প্রতি ভুট্টোর অবিশ্বাস ও অনাস্থার সৃষ্টি হয়েছিল তখনই। উচ্চতর শিক্ষার উদ্দেশে ভুট্টো হার্ভার্ডে যান এবং ‘ডাস ক্যাপিটাল’ পাঠ করার পর মার্কসবাদীতে পরিণত হন। তিনি যখন অক্সফোর্ডে ছিলেন তখন তার মাঝে মার্কসবাদ গভীর স্থান করে নেয়। তিনি পাকিস্তানকে সামন্ত রাষ্ট্র থেকে একটি সমাজতান্ত্রিক রাষ্ট্রে পরিণত করার কল্পনাবিলাসী মনোভাবে আক্রান্ত হন। দেশে ফিরে আসার পর জুলফিকার আলী ভুট্টো নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন ও বিজয়ী হন। জেনারেল আইয়ুব খানের মন্ত্রিসভায় তিনি সর্বকনিষ্ঠ মন্ত্রী পদে অধিষ্ঠিত হন। একনায়ক-জেনারেল পাকিস্তানকে আমেরিকান নীতির অধীনস্থ করে কমিউনিস্ট চীন ও সমাজতান্ত্রিক সোভিয়েত ইউনিয়নের দিকে একটি বেষ্টনী তৈরি করেছিলেন। ১৯৬৫ সালের ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধে পাকিস্তান পরাজিত হলে আইয়ুবের মন্ত্রিসভা থেকে পদত্যাগ করে জুলফিকার আলি ভুট্টো পাকিস্তান পিপলস পার্টি প্রতিষ্ঠা করেন। দলের প্রথম সভা অনুষ্ঠিত হয় এক শিয়া মতাবলম্বী ও ভারতের পরিকল্পনা কমিশনের সদস্য সৈয়দা হামিদের চাচা মুবাশ্বের হোসেনের বাসভবনে। অন্য বিষয়ের মধ্যে তার কৃতিত্ব ছিল পাকিস্তানকে একটি পারমাণবিক শক্তিতে পরিণত করার প্রক্রিয়া সূচনা করা এবং পূর্ব পাকিস্তানকে স্বাধীন বাংলাদেশে পরিণত করতে পরোক্ষভাবে সহায়তা করা। তিনি উপলব্ধি করেছিলেন যেকোনো ধরনের গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় বাঙালিরা পশ্চিম পাকিস্তানিদের চেয়ে সংখ্যাগরিষ্ঠ হবে, যা তার কাছে কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য ছিল না। বেশ কজন সিনিয়র জেনারেলকে ডিঙিয়ে তিনি জেনারেল জিয়াউল হককে সেনাবাহিনী প্রধান নিয়োগ করার পর প্রকাশ্যে জিয়াউল হককে বিদ্রƒপ ও অবমাননা করতে শুরু করেন। জেনারেল জিয়া তাকে নিয়ে জনসমক্ষে ঠাট্টা-মশকরা করার কারণে ভুট্টোকে কখনো ক্ষমা করতে পারেননি। জুলফিকার আলি ভুট্টোকে যখন মৃত্যুদণ্ড প্রদান করা হয় তখন একজন বিচারক ভিন্ন রায় দেন, যিনি একজন পার্সি ছিলেন। জিয়াউল হক ভুট্টোকে ক্ষমা করার জন্য গোটা বিশ্বের আবেদন অগ্রাহ্য করেন। তিনি বলেছিলেন, ‘দুটি লাশ, একটি কফিন’ অর্থাৎ এটি হয় ভুট্টো অথবা তিনি। ১৯৭৯ সালে ভুট্টোকে ফাঁসি দেওয়া হয়।