শুক্রবার, ১৮ নভেম্বর, ২০২২ ০০:০০ টা

আওয়ামী লীগের কমিটি শেখ হাসিনা কীভাবে সাজাবেন

অধ্যাপক ডা. সৈয়দ মোদাচ্ছের আলী

আওয়ামী লীগের কমিটি শেখ হাসিনা কীভাবে সাজাবেন

২৪ ডিসেম্বর দেশের সর্ববৃহৎ এবং সবচেয়ে পুরনো দল বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সম্মেলন হবে। মোটামুটি প্রায় সঠিক সময়েই সম্মেলন হতে যাচ্ছে। এ সম্মেলন নিয়ে বিভিন্ন আলাপ-আলোচনা হচ্ছে। শুধু আওয়ামী লীগ নয়, যারা আওয়ামী লীগের বাইরের তারা সবাই জানেন, বিনা প্রশ্নে এবং সবার আকাক্সক্ষা অনুযায়ী রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনাই আওয়ামী লীগের সভাপতি হতে যাচ্ছেন। এটা এমন এক বাস্তবতা, যদি দার্শনিক শেখ হাসিনা ইচ্ছাও করেন যে, না, আমি এখন রাজনীতি থেকে অবসর নিয়ে একটু সময় কাটাতে চাই। তাহলে তা তিনি পারবেন না। যে সামান্য কয়েকটি কাজ করা তাঁর ক্ষমতার মধ্যে নেই তার মধ্যে এটি একটি। আওয়ামী লীগ সভাপতি হওয়া থেকে বিরত থাকার কোনো উপায় তাঁর এটি নেই। কারণ, তিনি এখন বাংলাদেশের জনগণের সম্পদ।

বাংলাদেশে এক ক্রান্তিকাল চলছে। সুতরাং তাঁর আওয়ামী লীগের সভাপতিও থাকতে হবে এবং একই সঙ্গে নির্বাচনও করতে হবে। দেশের প্রান্তিক জনগোষ্ঠীও সবাই তাঁকে চায়। তাঁর দলই আবার ক্ষমতায় আসবে এবং তিনি প্রধানমন্ত্রীও হবেন। এই টার্ম শেষ হওয়ার পরে আমার নিজস্ব বিশ্বাস হচ্ছে, পরবর্তী টার্মেও তিনি দলীয় প্রধান এবং দেশের সরকারপ্রধান থাকবেন। এটা হলো বাস্তবতা। এর বাইরে কোনো কিছু ঘটতে পারে না তা না। আল্লাহ কখন কী করেন সেটা অন্য বিষয়। সুতরাং আওয়ামী লীগের সম্মেলনে সভাপতি নিয়ে কোনো আলাপ-আলোচনার সুযোগ নেই। আওয়ামী লীগের কাউন্সিলে বেশি আলোচনা হয় সাধারণ সম্পাদক কাকে করা হবে। আমি বিষয়টি ঘুরিয়ে বলতে চাই। এই দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ককে এবং তাঁর পরিবারকে আমি ৬২ বছরের বেশি চিনি। তিনি হঠাৎ করে কোনো সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন না, কাজও করেন না। তাঁর প্রতিটি কাজের পেছনে দর্শন থাকে। এবং প্রত্যেকটা খুব ক্রিটিক্যাল অ্যানালাইসিস থাকে, যা আমরা চিন্তাও করি না। এমনকি কার্যকরী পরিষদের সদস্য কাকে করবেন আর কাকে করবেন না, তা-ও তিনি গভীরভাবে চিন্তা করেই সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন। সুতরাং এ দুই দিনের ভিতরে সিদ্ধান্ত নিয়ে কোনো কিছু করবেন এটা যারা ভাবেন তাদের আওয়ামী লীগ সম্পর্কে আসল ধারণা নেই, আর অবশ্যই এই দার্শনিক সম্পর্কেও কোনো ধারণা নেই। তিনি মোটামুটিভাবে কাকে কোন পদে বসাবেন সেটা ঠিক করবেন ভেবেচিন্তে। আমি একটা উদাহরণ হিসেবে বলি, যখন ওয়ান-ইলেভেনে কারামুক্তির পর তিনি চিকিৎসার জন্য যুক্তরাষ্ট্রের জন হপকিন্স হাসপাতালে যান। তাঁর ইচ্ছা অনুযায়ী আমি তাঁর সফরসঙ্গী হইনি, বরং কয়েকদিন পরে যাই এবং তাঁর সঙ্গে গিয়ে আমি পাঁচ দিনের মতো প্রায় বেলা ১১টায় যেতাম এবং মোটামুটি রাত ১০-১১টার দিকে যেখানে থাকতাম সেখানে জয় আমাকে পৌঁছে দিত। আমি তখন দেখেছি, দেশে নির্বাচনের তারিখ বা কোনো কিছু ঠিক হয়নি। কিন্তু তিনি ওইখানে বসে কাকে নির্বাচনে নমিনেশন দেবেন, না দেবেন ৩০০ সিটের সমস্ত কিছু তাঁর কাছে তৈরি। তখন বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি ও সংগঠন প্রধানের সঙ্গে তিনি ব্রেকফাস্ট মিটিং করেছেন, আলাপ-আলোচনাও করেছেন তাঁর যেটুক প্রয়োজন সেটা। এবং বিশেষ করে জয় তাঁর একজন ঘনিষ্ঠ ইংরেজ বন্ধুর সঙ্গে মোটামুটি মিলিটারি শাসন এবং সিভিল শাসন এসব বিষয় নিয়ে গবেষণামূলক পড়াশোনা করতেন। যেটা কখনো প্রকাশ পায়নি। তখন জয়কে আমি দেখেছি, তাঁর ডেপথ অব নলেজ। আমার স্বীকার করতে কোনো লজ্জা নেই, তাঁর অনেক বিষয় সঠিকভাবে আমি অনুধাবন করতে পারতাম না। কিন্তু এটুকু বুঝতাম, তাঁরা রাজনীতির এমন এক পর্যায়ে আলোচনা করছেন, যে পর্যায়ে অনেক রাজনীতিবিদও হয়তো পৌঁছাতে সক্ষম হন না। এই হচ্ছেন শেখ হাসিনা।

জয় যখন বক্তব্য দেন তাঁর বক্তব্যের প্রতিটি শব্দ লক্ষ করবেন। শব্দগুলো কিন্তু আকাশ থেকে আসে না। এটা দীর্ঘদিনের লেখাপড়া, যারা এসব ব্যাপারে বোঝেন তাদের সঙ্গে আলোচনা, তাদের সঙ্গে বিতর্ক করা এবং তার পরই কিন্তু একজন এটা ধারণ করতে পারেন, সেটাই জনগণের কাছে প্রকাশ করতে পারেন। এটি হচ্ছে এখন ভবিষ্যতে বাংলাদেশে গর্ব করার মতো যুবক জয়। তখন আমি দেখেছি, নেত্রী প্রতিটি কাজ কীভাবে নিষ্ঠার সঙ্গে করেন। যেমন একটি ঘটনার কথা বলি। তখন সিটি করপোরেশন নির্বাচন চলছে। বরিশালের ক্যান্ডিডেট হিরণ বেশ জনপ্রিয়। তিনি মোটামুটি ১০ হাজার ভোটে হেরে গেছেন এরকম একটা ধারণা করে বাসায় গিয়ে শুয়ে পড়েছেন। নেত্রীকে কেউ একজন খবর দিল। তিনি আমার সামনে ফোন করে হিরণকে খুব ধমকালেন। বললেন, ‘নির্বাচন এখনো শেষ হয়নি তুমি বাড়ি গিয়ে ঘুমিয়ে আছ কী জন্য আহাম্মকের মতো? নির্বাচনে দেখ কী হয়।’ সেই নির্বাচনে কিন্তু হিরণ জয়লাভ করে। শেখ হাসিনা কয়েক হাজার মাইল দূরে বসে বুঝেছেন, নির্বাচনের অবস্থা কী। অথচ যে প্রার্থী নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেছে সে বোঝেনি। লিটনের নির্বাচনে আমি দেখেছি যে, তার কি অসুবিধা হচ্ছে রাজশাহীতে তিনি সেটা সমাধান করছেন। খুলনারটায় অল্প কিছু সমস্যা ছিল। তিনি সিলেট সম্পর্কে কোনো চিন্তা করছিলেন না। শেখ হাসিনার যে আসলে প্রতিটি ব্যাপারে একটা দার্শনিক ভূমিকা থাকে, এটা অনেকে বাইরে থেকে বুঝতে পারে না। এই যে যেটা নিয়ে আসলে আলোচনা শুরু করেছিলাম, আওয়ামী লীগের যে সম্মেলন হবে সে সম্মেলনে যে নতুন কমিটি হবে, তার প্রতিটি স্তরে কাকে কী দায়িত্ব দেওয়া হবে না হবে, নেত্রীর অবশ্যই একটি মাস্টারপ্ল্যান আছে। এবং সে মাস্টারপ্ল্যানটি এক দিন-দুই দিনের না। প্রত্যেকের আমলনামা তাঁর কাছে আছে। এবং তিনি সামগ্রিকভাবে বিচার করবেন।

দার্শনিক শেখ হাসিনার সমকক্ষ লেখাপড়া করেন বিশ্বের খুব কম দেশের রাষ্ট্রনায়কই। কারণ হচ্ছে আমাদের চেয়ে তিনি ৩ ঘণ্টা সময় বেশি পান। তিনি তাহাজ্জুদ আর ফজরের নামাজ শেষে কাজ শুরু করেন। আর আমরা কোনোরকম ফজরের নামাজ অর্ধেক ঘুমের মধ্যে পড়ে তারপর উঠি। তাতে দেখা গেছে, আমাদের সবার চেয়ে তাঁর গড়ে ৩ ঘণ্টা কর্মক্ষম সময় বেশি। যেখানে তিনি অ্যাকটিভ কাজ করতে পারেন, ফাইল দেখতে পারেন, পত্রিকা পড়তে পারেন। যার সময় বেশি তার কাজ করার ক্ষমতাও বেশি। এ কারণে প্রতিটি বিষয় তিনি অত্যন্ত সুচারুভাবে করেন। তাই এবার কাউন্সিলে শেখ হাসিনা যাকেই সাধারণ সম্পাদক করবেন, তা ভেবেচিন্তেই করবেন। তার পেছনে একটা দার্শনিক ভিত্তি থাকবে।

আশা-আকাক্সক্ষার কথা যদি প্রথম বলি, তাহলে আমি বিশ্বাস করি, সাধারণ সম্পাদক নিশ্চয়ই এমন একজন কর্মক্ষম হবেন যাকে দীর্ঘদিনের রাজনৈতিক ইতিহাসে দেখা যাচ্ছে। যিনি প্রতিটি বাঁকে সংগ্রামে ছিলেন, যিনি কঠিন সময়ে মাথা উঁচু করে দাঁড়াবেন এবং কোনো ভয়ভীতির সামনে মাথা নত করবেন না। নেত্রী যেটা বলেন, বঙ্গবন্ধুও বলতেন। নেত্রী বারবার বলেন, মুসলমান মাত্র একবারই মৃত্যুবরণ করে। তিনি আরও বলেন, আমি তো বেঁচে আছি ১৫ আগস্টের পর এটাই তো অনেক। শুধু তো একবার নয়, এরপর আরও কতবার নেত্রীর ওপর আঘাত এসেছে। ঢাকায় যুবলীগ নেতা নূরকে যখন হত্যা করা হয় আসলে নেত্রীকে টার্গেট করেই করা হয়েছিল। চট্টগ্রামে হয়েছে। সবচেয়ে ভয়ংকর ছিল একুশে আগস্টের গ্রেনেড হামলা। যুদ্ধে ব্যবহৃত গ্রেনেড দিয়ে হামলা করা হয়েছিল। সেখানেও আল্লাহ তাঁকে বাঁচিয়ে রেখেছেন। বিশ্বের ইতিহাসেই নেই যে, এরকমভাবে হত্যা করার চেষ্টা ব্যর্থ হয়েছে। আল্লাহ নিজে না করলে এটা সম্ভব নয়। কারণ এরকম দ্বিতীয় কোনো উদাহরণ পৃথিবীর কোথাও নেই। একুশে আগস্ট যেভাবে পরিকল্পনা করে তার ওপর হামলা করা হয়েছে এখান থেকে আল্লাহ তাঁকে জীবন্ত রেখেছেন। নিশ্চয়ই আল্লাহরও একটি ইচ্ছা আছে। সুতরাং এসব কিছু দেখে এমন একজন সাধারণ সম্পাদক হবে যে, সাধারণ সম্পাদক অবশ্যই নেত্রীর নির্দেশ অনুযায়ী পথ চলবে, তার বিশ্বস্ত হবে। এ ব্যাপারে কোনো আলোপ-আলোচনা কিংবা তর্ক-বিতর্কের সুযোগ নেই। সাধারণ সম্পাদক হতে হবে তাঁর বিশ্বস্ত এবং যিনি দার্শনিক শেখ হাসিনার দর্শনটা বোঝেন যে কী দর্শন নিয়ে তিনি রাষ্ট্র এবং দল পরিচালনা করতে চান। তার ক্যারিশমার দরকার নেই। কারণ, শেখ হাসিনার ক্যারিশমা দিয়ে তার চললেই হবে। তাঁর শুধু এই দার্শনিকের বক্তব্যটি ঠিকমতো কর্মীদের কাছে পৌঁছে দিতে হবে এবং কর্মীদের কাছে তার যেন একটা গ্রহণযোগ্যতা থাকে সেটাও দেখতে হবে। কারণ আওয়ামী লীগ কর্মীরা কিছু পাক আর না পাক, তারা নেতাদের সঙ্গে দেখা করতে চায়। এটা তাদের ন্যূনতম আশা। অনেক কষ্ট করে কত দূরদূরান্ত থেকে আসে তারা। অনেক সময় ঠিকমতো খেয়ে আসতে পারে না। এসে যদি তারা এমন একজন সাধারণ সম্পাদক পায় যার সঙ্গে ঠিকমতো দেখা করতে না পারে, কথা না বলতে পারে, তবে তারা মনে খুব দুঃখ পায়। তারা বোঝেন, দার্শনিক শেখ হাসিনার পক্ষে সবার সঙ্গে কথা বলা সম্ভব না।

সাংগঠনিক সম্পাদক পদটাও খুব গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব। তারাই দায়িত্ব নিতে পারেন দ্রুত সময়ে যার যার অঞ্চলে ইউনিয়ন পর্যায়ে শেখ হাসিনার বার্তা পৌঁছে দিতে। তাহলে দেখা যাবে, রোজই আওয়ামী লীগের সমর্থকরা দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনার কোনো না কোনো বক্তব্য শুনতে পারছেন। তাতে তারা যে উৎফুল্ল হবেন, তাদের মনের জোর বাড়বে, এর কোনো তুলনা হতে পারে না। এটা সামান্য কাজ মনে হতে পারে; কিন্তু এখন অসামান্য কাজ হয়ে দাঁড়িয়েছে। কারণ তাকেই তো সবাই বেশি বিশ্বাস করে। হাজারো আমরা বলি না কেন, তারা নেত্রীর মুখ থেকেই শুনতে চান। সরাসরি নেত্রীর কাছ থেকে শোনার যে গুরুত্ব তার কোনো তুলনা করে লাভ নেই। এটা করতেই হবে। এটা যদি তারা কালকে থেকেই বা আজকে থেকেই ইমপ্লিমেন্ট করেন, তাহলে দেখা যাবে যে, বাংলার জনগণ বিশেষ করে যারা বঙ্গবন্ধুর আদর্শে বিশ্বাসী, যারা এই দার্শনিকের পথ অনুসরণ করতে চান তারা রোজ নেত্রীর কোনো না কোনো বক্তব্য শোনার সুযোগ পাচ্ছেন। তারা অন্য কাজ বাদ দিয়ে হলেও আধা ঘণ্টার জন্য তার বক্তব্য শুনবেন। এটা করতেই হবে। সেজন্য যিনি সাধারণ সম্পাদক হবেন তাকে এসব দেখা শোনা করতে হবে যে এই কাজগুলো ঠিকভাবে হচ্ছে কি না। এটা ঠিক নেত্রী অনেক সময়ই মাইক্রো ম্যানেজমেন্ট করতে বাধ্য হন এবং করেন। আমরা এর ফলও পাই। কিন্তু সেই ফলটা কিছু তো আমার হাতে নেই। যেমন একটি ছোট উদাহরণ দিই, উনি বললেন যে, কমিউনিটি হেলথ ওয়ার্কার নিয়োগের সময় যেন সামান্যতম দুর্নীতি না হয়। ৯৯.৯৯% ফেয়ারও না, শতভাগ ফেয়ার হতে হবে। আমরা সম্প্রতি এই যে নতুন লোক নিয়োগ করলাম, এখানে আমি একা না, পুরো টিম বিশেষ করে স্বাস্থ্য সচিব সেবা ড. আনোয়ার থেকে শুরু করে আমাদের এমডি তুলসীরঞ্জন সাহা এবং আরও আমার সব সহকর্মী অত্যন্ত দক্ষতা এবং সততার সঙ্গে নেত্রীর কথা অনুযায়ী সব করতে পেরেছি। তা সে জন্য এই যে, নেত্রীর কথা যারা বুঝতে পারেন এবং করতে পারবেন সেরকম লোক যাতে ট্রান্সলেট করতে পারেন তার প্রথম স্টপ হচ্ছে সাধারণ সম্পাদক। সে কারণে সাধারণ সম্পাদক কে হবেন সেটা আমরা সাধারণ মানুষ হিসেবে আশা করতে পারি এবং আমার বিশ্বাস নেত্রী জনগণের যেটা আকাক্সক্ষা সেই আকাক্সক্ষার প্রতিফলন করবেন।

তার পরে আসে অন্যান্য। প্রেসিডিয়াম সদস্যের মাঝে লক্ষ করেছি, তারা নিশ্চয়ই নেত্রীর মূল্যায়ন করবেন। আমরা বাইরে থেকে মনে করি, হয়তো এখানে কিছু পরিবর্তন সম্ভবত আসবে। কারণ সবাই সমানভাবে তাদের যোগ্যতা প্রমাণ দিতে পারেননি। এবং সেজন্য সমস্ত দল নিয়ে নিশ্চয়ই শেখ হাসিনা চিন্তা করবেন। এবং একটি কাজ খুব ভালো, যেটা বঙ্গবন্ধু দেখিয়ে দিয়েছিলেন, আওয়ামী লীগকে যে সবাই চায় দল না করে মন্ত্রিত্ব করতে। ভাবে তা না হলে ক্ষমতা কীসের। আর বঙ্গবন্ধু মন্ত্রিত্ব ছেড়ে দিলেন সাংগঠনিক কাজ করার জন্য। আজকে যে আমরা স্বাধীন বাংলাদেশ পেলাম তার অনেক কারণ আছে। তার মধ্যে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে এই, জাতির পিতা শেখ মুজিবের মন্ত্রিত্ব ছেড়ে দিয়ে দলকে সংগঠিত করার জন্য গ্রামে গ্রামে যোগাযোগ করা। এটা যদি তিনি না করতেন তাহলে আওয়ামী লীগ এতটা শক্তিশালী হতো না। শেষ পর্যন্ত আমরা দেশ স্বাধীন করতে পারতাম না। তাহলে যদি বলি, দলীয়ভাবে চিন্তা করলে এটি ছিল একটি ঐতিহাসিক পদক্ষেপ। এবারও নেত্রী অনেকবার বলেছেন, তিনি বিশ্বাস করেন যে, কেউ অপরিহার্য না। সুতরাং দল এবং সরকারকে অবশ্যই আলাদা করা যায় এবং করা উচিত। কারণ এখানে অপরিহার্য হচ্ছেন দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনা। কী জন্য ঠিক? যেমন এখন অনেকে অ্যানালাইসিস করে বলছে যে, দেশ স্বাধীনের পরে যখন পাকিস্তান কারাগার থেকে বঙ্গবন্ধু ফিরে আসেন, দেশের পরিচালনার দায়িত্ব তিনি গ্রহণ না করে যদি অন্য কাউকে দিতেন, তবে অস্ত্রও জমা পড়ত না এবং দেশও উন্নতির দিকে যেত না। সুতরাং এখানে শেখ হাসিনা দলীয় প্রধানও থাকবেন, সরকারপ্রধানও থাকবেন। তা ছাড়া বাকি সম্পূর্ণ দলের কারও সরকারে থাকার কোনো প্রয়োজন আছে বলে আমি মনে করি না। এবং আমার মতো অনেক লোকই মনে করেন, কেউই অপরিহার্য নয়।

সুতরাং দল দলের কাজ করবে, সরকার সরকারের কাজ করবে। বরং সরকার দলের কাছে জবাবদিহিমূলক হবে। কারণ দল যদি সঠিক থাকে, জনগণের সঙ্গে থাকে, যে-ই সরকার পরিচালনা করেন না কেন, তিনি দলের সঙ্গে আলাপ করা ছাড়া, দলের স্বার্থে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে মতামত দেওয়া ছাড়া কিছু করতে পারেন না। ঘুরিয়ে বললে বলা চলে, দলই বরং নেত্রীর পক্ষ থেকে যদি কোথাও কোনো গ্যাপ হয়ে থাকে, তাহলে সেটা সঙ্গে সঙ্গে সরকার যারা চালাচ্ছেন হোক সেটা মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রী কিংবা উপদেষ্টা যেই হোক না কেন, তাকে স্মরণ করিয়ে দেবে যে, এটা হচ্ছে দার্শনিকের চিন্তাধারা, আপনি দয়া করে এটা করেন। কিন্তু সেটা পাবলিক করার দরকার নেই। সেটা তারা নিজস্ব উপায় সম্পর্ক ভালো রেখে করতে পারেন। কাউকে ইন্সপেক্টরগিরিও করার দরকার নেই, বড় বড় কথা বলারও দরকার নেই। বরং একসঙ্গে বসে চা/কফি খেতে খেতে গল্পের ছলে হলেও বলা চলে। কারণ যার যার নিজস্ব একটি সম্মানের স্তর আছে। যারা মন্ত্রী তাদেরও তো একটি সম্মানের স্তর আছে। আপনি যেমন দলীয় একজন নেতা আপনার যেমন সম্মান, তারও সম্মান আছে। সুতরাং পারস্পরিক সম্মানবোধ রেখেই নেত্রীর পক্ষ থেকে দায়িত্ব পালন করতে হবে। মনে রাখতে হবে যে, আসলে এটা মুখের কথা না, যখন কেউ বলে আমাদের একজন শেখ হাসিনা আছেন। আসলে এটা মনের কথাই।

লেখক : সাবেক উপদেষ্টা, চেয়ারম্যান, বিএমআরসি

ইমেইল : [email protected]

সর্বশেষ খবর