সোমবার, ৫ ডিসেম্বর, ২০২২ ০০:০০ টা

আমি বিজয়ের কথা বলি

মেজর জেনারেল এ কে মোহাম্মাদ আলী শিকদার পিএসসি (অব.)

আমি বিজয়ের কথা বলি

বছর ঘুরে আবার বিজয়ের মাস ডিসেম্বর এসেছে। বাঙালি জাতির সর্বশ্রেষ্ঠ অর্জনের মাস এই ডিসেম্বর। আমাদের এই বিজয় অনন্য মহিমায় মহিমান্বিত, যার তুলনা আর কোথাও নেই। সীমার মাঝে অসীম, তাই এত সুন্দর, এত সুমধুর। সুমধুর বিজয় ধ্বনি-প্রতিধ্বনির করতালিতে বাংলাদেশের আকাশ-বাতাস ও চিরস্তব্ধ গিরিবরের সঙ্গে নতুন প্রজন্মের হৃদয় জাগ্রত হবে এই প্রত্যাশায় সবাইকে বিজয়ের মাসের অভিনন্দন ও শুভেচ্ছা জানাই।  এই বিজয়ের ইতিকথার মধ্যে মানিক রত্নের মতো নিহিত অফুরন্ত সম্পদ ও শক্তির নিরবচ্ছিন্ন সঠিক ব্যবহার যত দিন বাংলাদেশের রাষ্ট্র ও রাজনীতিতে থাকবে তত দিন অন্ধকারের কোনো দানবীয় শক্তি আলোকিত পথের অগ্রযাত্রাকে স্তব্ধ করতে পারবে না। ১৯৭৫ সালের পর নতুন রূপে আবির্ভূত একাত্তরের পরাজিত রাজনৈতিক পক্ষ ও তাদের নতুন সঙ্গী দানবীয় মূর্তিতে বিজয়ের সব মহিমা, সম্পদ ও শক্তিকে শুধু দমন নয়, গলা টিপে হত্যা করে বাংলাদেশকে আবার পরিত্যক্ত, ব্যর্থ মধ্যযুগীয় রাষ্ট্রে পরিণত করার মাধ্যমে একাত্তরের শোচনীয় পরাজয়ের প্রতিশোধ নেওয়ার সব রকম হীন প্রচেষ্টা চালিয়েছে। কিন্তু তাতে অনেক দূর এগোতে পারলেও বিজয়ী চেতনার সহজাত অদম্য শক্তিকে তারা পরিপূর্ণ পরাস্ত করতে পারেনি; আর সেটা পারেনি বলেই ৫১ বছরের মাথায় এসে বাংলাদেশ আবার বিজয়ী চেতনায় সমুজ্জ্বলিত এক রাষ্ট্র। বিশ্বব্যাংকসহ বিশ্বের বড় বড় গবেষণা প্রতিষ্ঠান কর্তৃক অকাট্য তথ্য-উপাত্তসহ প্রকাশিত প্রতিবেদনে দেখা যায়, পাকিস্তানের চেয়ে বাংলাদেশ আজ সব ক্ষেত্রে অগ্রগামী ও উন্নত অবস্থানে অবস্থান করছে। অথচ ১৯৭২ সালের পরিসংখ্যানে দেখা যায়, ওই সময়ে সব সেক্টরের উন্নয়ন ও অগ্রগতিতে বাংলাদেশের চেয়ে পাকিস্তান দ্বিগুণ-তিন গুণ এগিয়েছিল। তাতে দুটি বিষয় প্রমাণিত হয়। প্রথমত, ১৯৪৭ থেকে ১৯৭১ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশের সম্পদ লুট করে তারা সমৃদ্ধ হয়েছে এবং দ্বিতীয়ত প্রমাণ হয় একাত্তরের বিজয়ের মধ্য দিয়ে অর্জিত রাজনৈতিক ও রাষ্ট্রীয় মূল্যবোধের জোরেই বাংলাদেশ পাকিস্তানকে পেছনে ফেলতে সক্ষম হয়েছে। রাষ্ট্রীয় মূল্যবোধই রাষ্ট্রের জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। রাজনৈতিক ও রাষ্ট্রীয় মূল্যবোধ যখন নিজস্ব সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যে সমৃদ্ধ হয় তখন বৃহত্তর মানুষের মন-মানসিকতাও একই চেতনায় সমৃদ্ধ থাকে বিধায় ঐক্যবদ্ধ সমন্বিত চিন্তার কর্মফলে জাতি রাষ্ট্রের উন্নতি ঘটে। পরদেশি, পরজাতির সংস্কৃতি সামগ্রিকভাবে মানুষকে ঐক্যবদ্ধ করতে পারে না, বরং বৃহত্তর জনমানসিকতার চরম বিভক্তি ঘটে, যার ফলে অ্যাট দ্য অ্যাল্ড রাষ্ট্র পিছিয়ে পড়ে। এখানে উল্লেখ্য, কোনো ধর্মীয়, চিন্তা-বিশ্বাস রাজনীতি ও রাষ্ট্রীয় কর্মে আনলে বিভক্তি, অনিবার্য, এমনকি সংঘাত-সংঘর্ষ নিত্যনৈমিত্তিক ব্যাপার হয়ে দাঁড়ায়। তখন বিষয়টি হয়ে যায় কেউ কাউকে নাহি ছাড়ে। আজকের বাংলাদেশ ও বর্তমান পাকিস্তান এবং ঐক্যবদ্ধ পাকিস্তানের ২৩ বছরের তুলনামূলক তথ্য-উপাত্ত বিচার করলে আমার উপরোক্ত কথার যথার্থতা বোঝা যায়। তাই ৫১ বছর পেরিয়ে গেলেও আমরা যারা মুক্তিযুদ্ধে সরাসরি অংশ নিয়েছি এবং সে সময়ে বিজয়ের সেই মুহূর্তগুলোকে প্রত্যক্ষভাবে যারা দেখেছেন তাদের মনপ্রাণ ডিসেম্বর এলে আবেগে আপ্লুত হয়। কী বিস্ময়কর ও উত্তেজনায় পূর্ণ ছিল প্রতিটি ক্ষণ ও মুহূর্ত। আসলে সে এক অন্যরকম হদয় জাগানো কথা, যার কোনো শেষ নেই। ৯ মাসের যুদ্ধে দেশ, মাটি, মানুষ, মাতৃকার সীমাহীন ট্র্যাজিক বিচ্ছেদের বেদনাকে ছাপিয়ে তখন মনে হয়েছে এই বিজয়ের থেকে বড় সত্য আর কিছু নেই। সীমার মধ্যে অসীম সত্তার জাগরণে সেদিন মনে হয়েছে সত্যের কাছে মিথ্যার পরাজয় অনিবার্য, সে মিথ্যা যত বড়ই শক্তিশালী হোক না কেন। একাত্তরের ৯ মাসের যুদ্ধে প্রমাণ হয়েছে, একটা জাতির বৃহত্তর মানুষ যখন জেগে ওঠে তখন বিজয়ের পথে কোনো বাধাই আর বাধা হয়ে থাকতে পারে না। চার্লস ডিকেন্সের বিখ্যাত উপন্যাস ‘অ্যা টেল অব টু সিটিস’ গ্রন্থে উল্লিখিত উক্তির মতো একাত্তর ছিল আমাদের জন্য বেস্ট অব টাইমস অ্যান্ড ওয়ার্স্ট অব টাইমস’। কিন্তু ১৬ ডিসেম্বরে সব ওয়ার্স্টকে ছাপিয়ে হৃদয় ভরে গেছে, বেস্ট অব বেস্টে। সেদিন কষ্টটা যত বড় ছিল তার থেকে হৃদয়পুরের ভিতর থেকে জেগে ওঠা আনন্দ-উচ্ছ্বাসের অনুভূতি ছিল অনেক অনেক বড়। আজকে ৫১ বছর পর স্মৃতির টানে মনপ্রাণ যেমন ভরে ওঠে, তেমনি বাংলাদেশের বর্তমান বাস্তবতাও সামনে আসে; কী হতে পারত, আর এখন কী দেখছি। তাই আমাদের এই বিজয় যে অনন্য ও তুলনাহীন, সেটি নতুন প্রজন্মের কাছে তুলে ধরার জন্য ইতিহাস থেকে অন্য দু-একটি দেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ ও বিজয় অর্জনের কিছু তথ্য-উপাত্ত তুলে ধরছি। প্রথমে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, অর্থাৎ আমেরিকার কথা বলি। ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক শাসনের বিরুদ্ধে জর্জ ওয়াশিংটনের নেতৃত্বে ১৭৭৫ সালের ৯ এপ্রিল আমেরিকা যুদ্ধ শুরু করে। এক বছর তিন মাসের মাথায় এসে ১৭৭৬ সালের ৪ জুলাই আনুষ্ঠানিকভাবে স্বাধীনতার ঘোষণা দেওয়া হয় এবং ঐতিহাসিক স্বাধীনতার ঘোষণাপত্র গৃহীত হয়। আট বছর যুদ্ধ চলার পর ১৭৮৩ সালে প্যারিস শান্তিচুক্তির মাধ্যমে ব্রিটিশ সরকার আমেরিকার স্বাধীনতাকে মেনে নিয়ে স্বীকৃতি দেয়। এখানে বিশেষভাবে লক্ষণীয়, আট বছর যুদ্ধ চলার পরও ব্রিটিশ বাহিনীকে আমেরিকা যুদ্ধের মাঠে পরাজিত করতে পারেনি এবং আত্মসমর্পণের ঘটনাও ঘটেনি, চুক্তির মাধ্যমে যুদ্ধের সমাপ্তি ঘটেছে। এখানে আরেকটি বিষয় উল্লেখ্য, ফ্রান্স সমর্থন ও সহযোগিতা দিলেও আমেরিকার পক্ষে সেনাবাহিনী পাঠায়নি। স্বাধীনতা অর্জনের পর সংবিধান প্রণয়নে আমেরিকার সময় লেগেছে পাঁচ বছর। দ্বিতীয় উদাহরণটি ভিয়েতনামের। ইন্দো-চীনের মুক্তিকামী মানুষের অবিসংবাদিত নেতা হো চি মিন ১৯৪৫ সালের ২ সেপ্টেম্বর ভিয়েতনামের স্বাধীনতা ঘোষণা করেন। পরিপূর্ণভাবে ভিয়েতনাম স্বাধীন হয় ১৯৭৫ সালের ৩০ এপ্রিল। অর্থাৎ ৩০ বছর যুদ্ধ করতে হয়েছে। ৩০ বছর যুদ্ধ হলেও ১৯৭৩ সালে প্যারিস শান্তিচুক্তির পথ ধরেই ভিয়েতনামের স্বাধীনতা অর্জিত হয়। দখলদার বাহিনীকে আত্মসমর্পণ করতে হয়নি। দ্বিতীয় লক্ষণীয়, চীন ও তৎকালীন সোভিয়েত ইউনিয়ন সমর্থন ও সহযোগিতা দিলেও তাদের সেনাবাহিনী ভিয়েতনামের পক্ষে যুদ্ধ করেনি। তৃতীয় উদাহরণটি আলজেরিয়ার। ফ্রান্সের ঔপনিবেশিক শাসনের বিরুদ্ধে আলজেরিয়ার স্বাধীনতা যুদ্ধ শুরু হয় ১৯৫৪ সালে। প্রায় সাড়ে সাত বছর যুদ্ধের পর উভয় পক্ষের মধ্যে শান্তিচুক্তি হয় এবং সেই চুক্তির ভিত্তিতে গণভোটের মধ্য দিয়ে ১৯৬২ সালে আলজেরিয়া স্বাধীনতা অর্জন করে। জেনেভা লেকের তীরে অবস্থিত ফ্রান্সের মনোরম বিনোদন কেন্দ্র, ইভিয়ান লাস বেইনস নামের ছোট উপশহরে ১৯৬২ সালের ১৮ মার্চ চুক্তিটি স্বাক্ষরিত হয়। সাড়ে সাত বছর যুদ্ধ চললেও দখলদার ফ্রান্স বাহিনী আত্মসমর্পণ করেনি। মরক্কো ও তিউনিসিয়া স্বাধীনতা যুদ্ধে সমর্থন দিলেও সরাসরি তাদের সেনাবাহিনী আলজেরিয়ার স্বাধীনতা যুদ্ধে অংশ নেয়নি। উপরোক্ত তিনটি দেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ ও তা অর্জনের সঙ্গে তুলনা করলে বোঝা যায় আমাদের স্বাধীনতা ও বিজয় অর্জন বাস্তবেই অনন্য এবং বিশ্বের বুকে বিরল এক উদাহরণ। প্রথমত, মাত্র ৯ মাসের মাথায় চূড়ান্ত বিজয়ের মধ্য দিয়ে আমাদের স্বাধীনতা যুদ্ধের সমাপ্তি ঘটে, সেখানে আমেরিকার আট বছর, ভিয়েতনামের ৩০ বছর এবং আলজেরিয়ার লেগেছে সাড়ে সাত বছর। দ্বিতীয়ত, উল্লিখিত তিনটি দেশের বেলায় কোনোটাতেই দখলদার বাহিনী আত্মসমর্পণ করেনি। কিন্তু বাংলাদেশের ক্ষেত্রে পাকিস্তানি দখলদার বাহিনীর প্রায় ৯৩ হাজার সদস্য বিনাশর্তে প্রকাশ্যে লাখো জনতার সামনে আত্মসমর্পণ করে। তৃতীয়ত, আমেরিকা, ভিয়েতনাম  ও আলজেরিয়ার ক্ষেত্রে মিত্র দেশের অনন্য সহযোগিতা পাওয়া গেলেও তাদের সেনাবাহিনী সরাসরি যুদ্ধে অংশ নেয়নি। কিন্তু বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে ভারত সরকারের আনুষ্ঠানিক ঘোষণার মাধ্যমে ভারতের লক্ষাধিক সেনাবাহিনীর সদস্য প্রত্যক্ষভাবে সামরিক অভিযানে অংশ নেয়। প্রত্যক্ষ যুদ্ধে বাংলাদেশের মাটিতে ভারতের কয়েক হাজার সেনা সদস্য আমাদের স্বাধীনতার জন্য জীবন বিসর্জন দেন, যার উদাহরণ পৃথিবীতে দ্বিতীয়টি নেই। চতুর্থত, বিজয়ের পর মিত্রবাহিনী হিসেবে আসা ভারতের লক্ষাধিক সেনাবাহিনী মাত্র সাড়ে তিন মাসের মাথায় ১৯৭২ সালের মার্চ মাসে সম্পূর্ণভাবে ফেরত যায়, এটাও এক বিরল উদাহরণ। পঞ্চমত, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কর্তৃক ১৯৭১ সালের ২৬ মার্চ স্বাধীনতা ঘোষণার মাত্র ১৬ দিনের মাথায় ১০ এপ্রিল স্বাধীন বাংলাদেশের সরকার গঠন, মাত্র ২৩ দিনের মাথায় ১৭ এপ্রিল সেই সরকারের শপথ গ্রহণ এবং স্বাধীনতার ঘোষণাপত্র তৈরি করা হয়। অথচ আমেরিকার স্বাধীনতার ঘোষণাপত্র তৈরিতে সময় লেগেছে এক বছরেরও বেশি। আর আলজেরিয়া ও ভিয়েতনামের কোনো আনুষ্ঠানিক ঘোষণাপত্র নেই। ষষ্ঠত, স্বাধীনতা অর্জনের মাত্র ৯ মাসের মাথায় বঙ্গবন্ধুর দিকনির্দেশনায় ১৯৭২ সালের নভেম্বর মাসে স্বাধীন বাংলাদেশের সংবিধান আনুষ্ঠানিকভাবে প্রণয়ন ও গৃহীত হয়। অন্য কোনো দেশের অনুকরণ ও অনুসরণে নয়, বাঙালি সংস্কৃতি, পাকিস্তানের বিরুদ্ধে ২৩ বছরের সংগ্রাম ও একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে অর্জিত দর্শন, আদর্শ ও মূল্যবোধের পরিপূর্ণ পরিস্ফুটন ঘটে এই সংবিধানে। মাত্র ৯ মাসের মধ্যে এমন একটি অনন্য সংবিধান তৈরি হয়, যেখানে আমেরিকার লেগেছে পাঁচ বছর, আর আলাপ-আলোচনা ও শান্তিপূর্ণ পন্থায় স্বাধীনতা অর্জনের পর ভারতের লেগেছে প্রায় তিন বছর এবং পাকিস্তানের লেগেছে ৯ বছর। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর অসামান্য ত্যাগ, আপসহীন সংগ্রাম, সাড়ে ৭ কোটি মানুষের ঐক্য, বঙ্গবন্ধু কর্তৃক সঠিক সময়ে সঠিক সিদ্ধান্ত এবং তার সঙ্গে বঙ্গবন্ধুর রাষ্ট্র ও রাজনৈতিক চিন্তা এবং দর্শনের জন্য ভারতের অকুণ্ঠ সমর্থনের ফলেই এত স্বল্প সময়ের মধ্যে অসামান্য এবং অনন্য এ বিজয় আমরা অর্জন করতে সক্ষম হই। যুদ্ধের শেষ পর্যায়ে ভারত-বাংলাদেশ যৌথবাহিনীর সম্মিলিত অভিযানের মুখে পাকিস্তানি দখলদার বাহিনী অগ্রবর্তী যুদ্ধক্ষেত্র থেকে এমনভাবে পালাতে থাকে, যা ছিল একটা প্রফেশনাল সেনাবাহিনীর জন্য লজ্জাজনক ব্যাপার। যশোরে অবস্থিত পাকিস্তানের নবম পদাতিক ডিভিশন একটা গুলি না ছুড়ে ৬ ডিসেম্বর তল্পিতল্পা সব ফেলে খুলনা ও ঢাকার দিকে পালাতে থাকে। একমাত্র মেজর জেনারেল রহিম খান নিজের অধীনস্থ সেনাদের ফেলে পালিয়ে বার্মা চলে যান। এমন উদাহরণ সামরিক যুদ্ধের ইতিহাসে খুবই বিরল ঘটনা। ৬ ডিসেম্বর যশোর থেকে পাকিস্তান সেনাবাহিনী পালিয়ে যাওয়ার পর সবাই মোটামুটি নিশ্চিত হয়ে যান পাকিস্তানের পরাজয় এখন মাত্র সময়ের ব্যাপার। ১৬ ডিসেম্বর সকাল থেকে বাংলাদেশের মানুষ যে যেখানে ছিল সর্বত্র রেডিওর সামনে বসে আকাশবাণী ও স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র থেকে প্রচারিত পাকিস্তান সেনাবাহিনীর আত্মসমর্পণের ধারা বিবরণী শুনতে থাকেন। সবার চোখে-মুখে উত্তেজনা, কখন চূড়ান্ত খবরটি আসবে। একেকটি খবর আসার সঙ্গে সঙ্গে জয় বাংলা স্লোগানে স্লোগানে আকাশ-বাতাস প্রকম্পিত হয়ে ওঠে। সেদিন শুধু জামায়াত, মুসলিম লীগ, রাজাকার, আলবদরসহ পাকিস্তানি সহযোগীদের বাড়ি ছাড়া এমন কোনো ঘর ও বাড়ি ছিল না, যেখান থেকে মুহুর্মুহু জয় বাংলা স্লোগান ধ্বনিত হয়নি। মাঠে মুক্তিযোদ্ধাদের অবস্থা ছিল আরও রোমাঞ্চকর ও উত্তেজনাপূর্ণ।  সে যে কী এক মুহূর্ত। একেকটি খবর আসার সঙ্গে সঙ্গে একে অপরকে জড়িয়ে ধরার আবেগাপ্লুত আনন্দ অশ্রুধারা চোখ, মুখ, বুক পেরিয়ে সেদিন বাংলার মাটিতে মিশে গেছে।  এ বিজয় আপনার বিজয়, মুক্তিযোদ্ধাদের বিজয়, সমগ্র বাঙালি জাতির বিজয়। এ বিজয় আমার বিজয়, আমার গর্ব আমার অহংকার। সুতরাং এই বিজয়ের মাহাত্ম্য ও মূল্যবোধকে আগের মতো আর যেন কেউ ম্লান করতে না পারে তার জন্য এ সময়ের তরুণ প্রজন্মকে সদা সতর্ক থাকার আহ্বান জানাই।

লেখক : রাজনৈতিক ও নিরাপত্তা বিশ্লেষক

[email protected]

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর