মঙ্গলবার, ৬ ডিসেম্বর, ২০২২ ০০:০০ টা

ব্যবসা ও উন্নয়নবান্ধব পদক্ষেপ

মো. খসরু চৌধুরী

ব্যবসা ও উন্নয়নবান্ধব পদক্ষেপ

বাণিজ্যে বসতে লক্ষ্মী। এটি প্রাচীন বাংলার একটি প্রবচন। তার পরও আমাদের দেশ ব্যবসা-বাণিজ্যে এগিয়ে যেতে পারেনি সঠিক নেতৃত্বের অভাবে। এ দেশ ছিল অভাবী মানুষের দেশ। গত ১৪ বছরে সে বদনাম থেকে দেশের উত্তরণ ঘটেছে। এটি সম্ভব হয়েছে ব্যবসা ও উন্নয়নবান্ধব সরকার ক্ষমতায় থাকার কারণে। বিনিয়োগ বৃদ্ধির লক্ষ্যে আওয়ামী লীগ সরকার বিভিন্ন ধরনের সুযোগ-সুবিধা দিয়েছে। সে কারণে মানুষের মাথাপিছু আয় বেড়েছে। দেশের শহর থেকে গ্রামগঞ্জ সবখানে উন্নয়নের ছোঁয়া লেগেছে। দেশের অর্থনীতি বিশ্বমন্দার মধ্যেও চাঙা রয়েছে। তলাবিহীন ঝুড়ি হিসেবে বিশ্বের কাছে পরিচিত বাংলাদেশ আজ মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত হচ্ছে। বাংলাদেশ বিশ্বের কাছে আজ অনুসরণযোগ্য অর্থনীতির দেশ। বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা ক্ষমতায় আসার পর দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়ন দ্রুত এগিয়ে নিতে কৃষি ও শিল্প উৎপাদনের পাশাপাশি অবকাঠামো এবং যোগাযোগব্যবস্থার উন্নয়নের ওপরও গুরুত্ব দিয়েছেন। রাজধানী এবং রাজধানীর বাইরে বিশেষ করে ব্যবসা-বাণিজ্যের দিক থেকে গুরুত্বপূর্ণ অঞ্চলকে বিবেচনায় নিয়ে যোগাযোগব্যবস্থার আধুনিকায়ন ও অবকাঠামো গড়ে তোলা হয়েছে এবং হচ্ছে। অর্থনৈতিক উন্নয়ন এবং শিল্পায়নের প্রসারেও সারা দেশে ১০০ অর্থনৈতিক অঞ্চল গড়ে তোলা হয়েছে। যার কয়েকটি গড়ে তোলা হয়েছে বেসরকারি তত্ত্বাবধানে। আধুনিক যোগাযোগব্যবস্থা গড়ে তুলতে সরকার বিভিন্ন প্রকল্প প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন করে চলেছে। রাজধানীতে যানজট দূর করতে মেট্রোরেল প্রকল্পের কাজ এগিয়ে চলেছে। উত্তরা থেকে মতিঝিল মেট্রোরেল এখন দৃশ্যমান। রাজধানীর উপকণ্ঠ হেমায়েতপুর থেকে গুলশান হয়ে ভাটারা এবং বিমানবন্দর থেকে রামপুরা হয়ে কমলাপুর পর্যন্ত আরও দুটি মেট্রোরেল প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়েছে। ইতোমধ্যে রাজধানীর বিভিন্ন রুটে ও স্থানে নির্মিত হয়েছে বেশ কয়েকটি ফ্লাইওভার। নির্মাণ হচ্ছে এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে।

চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দরকে আধুনিকায়ন করা হয়েছে। এ বন্দরের ওপর চাপ কমাতে পটুয়াখালীর কলাপাড়ায় রাবনাবাদ চ্যানেলে পায়রা গভীর সমুদ্রবন্দর নির্মাণ হচ্ছে। আগামী বছরের মধ্যে ১৬ মিটার গভীরতায় চ্যানেল ড্রেজিং সম্পন্ন করে বন্দর গড়ে তোলা হবে। আন্তর্জাতিক বাণিজ্যব্যবস্থা আরও এগিয়ে নিতে সরকারের সুদূরপ্রসারী পরিকল্পনা রয়েছে। এ লক্ষ্যে সোনাদিয়া গভীর সমুদ্রবন্দর নির্মাণের কাজ শুরু হয়েছে। এ সমুদ্রবন্দরটি নির্মাণে কারিগরি ও অর্থনৈতিক সমীক্ষা শেষ করেছে জাপানের প্যাসিফিক কনসালট্যান্ট ইন্টারন্যাশনাল (পিসিআই)। গভর্নমেন্ট টু গভর্নমেন্ট (জিটুজি) পদ্ধতিতে এ বন্দর নির্মাণের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। ডিজিটাল বাংলাদেশের স্লোগান দিয়ে ২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বরের নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ইশতেহারে দিনবদলের সনদ, ভিশন-২০২১ ঘোষণা করে আওয়ামী লীগ। ওই নির্বাচনে বিপুল বিজয়ের মাধ্যমে ক্ষমতায় আসে শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ সরকার। এরপর ২০০৯ সালের ৬ জানুয়ারি সরকার গঠন করে তারা। টানা তিন মেয়াদের এ সরকারের প্রথম মেয়াদেই দৃশ্যমান হয় ডিজিটাল বাংলাদেশ। প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দেশ শাসন করে শেখ হাসিনা প্রমাণ করেছেন শাসক হিসেবে তিনি যেমন দেশনন্দিত, তেমনি গণতন্ত্র ও শান্তি প্রতিষ্ঠায় বিশ্বনেতার মর্যাদায় প্রতিষ্ঠিত। তাঁর শাসনামলে আর্থসামাজিক ক্ষেত্রে হতদরিদ্র মানুষের মাঝে খাদ্য ও অর্থ বরাদ্দ এবং অন্যান্য সহযোগিতা মানুষকে অসহায়ত্ব থেকে রক্ষা করেছিল। দেশকে খাদ্য উৎপাদনে স্বয়ংসম্পূর্ণ করে তুলে তিনি দুর্ভিক্ষ ও দারিদ্র্যের কশাঘাত থেকে মানুষকে রক্ষা করে ভাগ্যোন্নয়নের পথে দাঁড় করিয়েছেন। কৃষি উন্নয়নের লক্ষ্যে কৃষককে ঋণ প্রদান, কৃষিসামগ্রীর মূল্যহ্রাস ও সহজপ্রাপ্যতাও ছিল বিরাট অবদান।

বাংলাদেশ এখন বিশ্বের দ্রুতবর্ধনশীল পাঁচটি অর্থনীতির মধ্যে অন্যতম। জিডিপিতে বিশ্বে ৪১তম। গত এক দশকে দারিদ্র্যের হার ৩১.৫ থেকে ২০.৫ শতাংশে নেমে এসেছে। এ সময়ে মাথাপিছু আয় তিন গুণ বেড়ে ২ হাজার ২২৭ মার্কিন ডলারে উন্নীত হয়েছে। বৈদেশিক মুদ্রার মজুদ সর্বকালের সর্বোচ্চ ৪৮ বিলিয়ন মার্কিন ডলার অতিক্রম করেছে। গত এক দশকে আর্থসামাজিক খাতে ও নারীর ক্ষমতায়নে বাংলাদেশ অভাবনীয় সাফল্য অর্জন করেছে। শিশুমৃত্যু হার প্রতি হাজারে ২৩.৬৭-এ কমে এসেছে। প্রতি লাখ জীবিত জন্মে মাতৃমৃত্যু হার ১৭৩-এ হ্রাস পেয়েছে। মানুষের গড় আয়ু বেড়ে হয়েছে ৭৩ বছর। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশি-বিদেশি নানা চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করে উন্নয়ন, অগ্রগতি আর সমৃদ্ধির পথে হাঁটছেন। ক্ষুধা ও দারিদ্র্যমুক্ত একটি প্রগতিশীল, গণতান্ত্রিক ও অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্যে নিরলস প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। বিগত ১৪ বছরে সব ক্ষেত্রে যে সফলতা অর্জিত হয়েছে তার পথ ধরে ২০৩০ সালের মধ্যে বাংলাদেশ উন্নত বিশ্বের কাতারে পৌঁছানোর অর্থাৎ বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা গড়ার ক্ষেত্রে আরও এক ধাপ এগিয়ে যাবে। টেকসই অর্থনীতি ও সামাজিক উন্নয়নের জন্য শেখ হাসিনা সরকারের সর্বাত্মক প্রচেষ্টা অব্যাহত রয়েছে। সরকারের উন্নয়ন ভাবনা ও তার যথাযথ বাস্তবায়নের ফলে আন্তর্জাতিক পরিমন্ডলে বাংলাদেশ আজ উন্নয়নের রোল মডেল হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। অথচ একবিংশ শতাব্দীর শুরুতে দেশের এ অগ্রযাত্রা থমকে দাঁড়ায়। ২০০১ সালে বিএনপি-জামায়াত জোট ক্ষমতায় আসে। আবার দুর্নীতির চক্রে নিপতিত হয় দেশ। হাওয়া ভবনের লুটপাটে দুর্নীতিতে বাংলাদেশ শীর্ষে অবস্থান করে। অর্থনৈতিক উন্নয়ন সূচকের প্রায় সবকটিতে বাংলাদেশ পিছিয়ে পড়তে থাকে। কিন্তু ২০০৯ সালে আমাদের অগ্রযাত্রা শুরু হয়। বিগত ১৪ বছরে সহস্রাব্দ উন্নয়ন লক্ষ্য (এমডিজি) অর্জনে আমাদের ঈর্ষণীয় সাফল্য দক্ষিণ এশিয়াসহ উন্নয়নশীল দেশগুলোর জন্য এক অনন্য দৃষ্টান্ত হিসেবে সমাদৃত হয়েছে।

লেখক : পরিচালক, বিজিএমইএ

সর্বশেষ খবর