বুধবার, ২৮ ডিসেম্বর, ২০২২ ০০:০০ টা

রোগ প্রতিরোধে ইসলামের দৃষ্টিভঙ্গি

মুফতি রুহুল আমিন কাসেমী

রোগ প্রতিরোধে ইসলামের দৃষ্টিভঙ্গি

রোগব্যাধি থেকে সতর্কতা অবলম্বনে ইসলাম বিশেষ গুরুত্বারোপ করেছে। ভালো-মন্দ, সুস্থ-অসুস্থ, হায়াত-মউত সবকিছুর ফায়সালা একমাত্র আল্লাহতায়ালার পক্ষ থেকেই বান্দার প্রতি আরোপিত হয়। তাই সুস্থতা, অসুস্থতা উভয়টিই আল্লাহতায়ালার নিয়ামত। সুস্থ অবস্থায় আল্লাহতায়ালার শুকরিয়া আদায় করা ও তার হুকুম মোতাবেক ইবাদত বন্দেগিতে আত্মনিয়োগ করা। অসুস্থ অবস্থায় ধৈর্য ধারণ করা এবং গুনাহ মাফের আশা করা। কেননা ইসলামে অসুস্থ ব্যক্তির গুনাহ মাফের আশ্বাস ও ইসলামের বিধিবিধান পালনে বিশেষ ছাড়ের অনুমতি রয়েছে। হাদিসপাকে এসেছে, অসুস্থতার আগে সুস্থতাকে মূল্যায়ন কর। তবে অযত্ন-অবহেলার কারণে নিজের সুস্থ শরীরকে অসুস্থতায় ঠেলে দেওয়া ইসলামে নাজায়েজ। বরং পুনরায় সুস্থ হয়ে ইবাদত বন্দেগি করার জন্য চিকিৎসাব্যবস্থা গ্রহণ করা সুন্নত। কারণ এ শরীরটি আল্লাহপাকের দান, এর যত্ন করা আমাদের প্রত্যেকের দায়িত্ব ও কর্তব্য। আজকের বিশ্বে এ কথা বলা হয়, রোগ প্রতিরোধ রোগ নিরাময় থেকে শ্রেয়। শুধু তাই নয়, বর্তমানে এ কথাও বলা যায় যে, রোগ প্রতিরোধ হচ্ছে নিরাময়ের চেয়েও সহজ। এ কারণে ইসলাম এ বিষয়ে বিশেষ গুরুত্বারোপ করেছে। হজরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম পানপাত্রের মধ্যে নিঃশ্বাস ফেলতে ও তার মধ্যে ফুঁ দিতে নিষেধ করেছেন (মিশকাত) মূলত এটাও এক ধরনের প্রতিরোধ ব্যবস্থা। কারণ নাক ও মুখের ভিতর অনেক ধরনের জীবাণু থাকতে পারে যেগুলো পানিকে দূষিত করে থাকে। আর এতে দেহের মধ্যে রোগের সৃষ্টি হতে পারে। ঠিক তেমনিভাবে পরিষ্কার পানি পান করা, পানি পান করার পাঁচটি সুন্নত যথাযথভাবে পালন করা। প্রস্রাব-পায়খানার পর যথাযথভাবে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা ও পবিত্রতা অবলম্বন করা। কারণ এখান থেকেও বিভিন্ন প্রকার জীবাণুতে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। খাবারের পর ভালোভাবে মুখ দাঁত পরিষ্কার করা এবং ঘুমের আগে মেসওয়াক করে সুন্নত তরিকায় ঘুমানো। কারণ এতে সুস্থতা ও নিরাপত্তার সম্ভাবনা রয়েছে। মহান রাব্বুল আলামিন কোরআনুল কারিমে ইরশাদ করেন- তার (মৌমাছি) উদর থেকে নির্গত হয় বিবিধ বর্ণের পানীয় (মধু) যাতে মানুষের জন্য রয়েছে আরোগ্য। (সুরা নাহল, আয়াত-৬৯)। কালোজিরা সম্পর্কে হজরত আবু হুরায়রা (রা.) বর্ণনা করেছেন, তিনি রসুলুল্লাহ (সা.)কে বলতে শুনেছেন, কালোজিরার মধ্যে মৃত্যু ব্যতীত আর সব রোগের আরোগ্য রয়েছে। (বুখারি ও মুসলিম)। বর্তমানে মধু ও কালোজিরা নিয়ে বিশ্বের বিভিন্ন জায়গায় গবেষণা হচ্ছে। রোগ প্রতিরোধ এবং রোগ নিরাময়ে এর যে অপরিমেয় শক্তি তা ক্রমশ আবিষ্কার হচ্ছে। ইসলামে পুত্র সন্তানদের খতনা করানোর যে নিয়ম এটা তাকে বিভিন্ন রোগব্যাধি থেকে মুক্ত রাখে। স্বাস্থ্য রক্ষার জন্য দাঁত ও মুখ সর্বদাই পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখা জরুরি। পক্ষান্তরে দাঁত ও মুখ পরিষ্কার থাকলে এতে বিভিন্ন প্রকারের রোগব্যাধি সৃষ্টি হতে পারে। এ কারণে রসুলুল্লাহ (সা.) দাঁত ও মুখ পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখার ব্যাপারে বিশেষভাবে তাকিদ দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, আমি যদি মানুষের জন্য এটা কষ্টকর হবে বলে মনে না করতাম, তাহলে প্রত্যেক নামাজের অজুুর সঙ্গে মিসওয়াক করার নির্দেশ দিতাম। (মিশকাত)। অজুর মধ্য দিয়ে দিনে পাঁচবার কনুই থেকে হাতের আঙ্গুল পর্যন্ত, পায়ের কবজি থেকে পায়ের আঙ্গুল পরিষ্কার করা সম্ভব হয়। নাক, মুখ, কান ও চোখ দিনে পাঁচবার পরিষ্কার করা সম্ভব হয়ে থাকে। এর ফলে এসব অঙ্গে কোনো ধূলিকণা বা রোগজীবাণু লেগে থাকতে পারে না। ইসলামে মদ নিষিদ্ধ করা হয়েছে। ফলে মানুষ হৃদরোগ এবং ক্যান্সারের মতো ভয়াবহ রূপ থেকে রক্ষা পেতে পারে। নিরাময় সম্পর্কে ইসলামের দৃষ্টিভঙ্গি অত্যন্ত স্পষ্ট। হজরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, নবী করিম (সা.) বলেন, আল্লাহতায়ালা এমন কোনো রোগ সৃষ্টি করেননি যা নিরাময়ের ব্যবস্থা দেননি। (বুখারি ও মিশকাত)। মনে রাখতে হবে আল্লাহর পক্ষ থেকে হারাম করা প্রতিটি বস্তু, মানব শরীরের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর। ফলে শরীর ও স্বাস্থ্য বিনষ্ট হবে, ইমান ও আমল তথা আখেরাতও বিনষ্ট হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। তাই সব হারাম ও ক্ষতিকর বস্তু থেকে নিজেকে সম্পূর্ণরূপে মুক্ত রাখতে হবে। বিশেষ করে সারা বিশ্বের ভয়াবহ বিপর্যয়, মহামারি করোনাভাইরাস থেকে নিজের স্বাস্থ্য শরীর রক্ষা করার জন্য যাবতীয় সতর্কতা অবলম্বন করা জরুরি। জন্মের তৃতীয় সপ্তাহ থেকে শিশুকে নিয়মিতভাবে মারাত্মক কয়েকটি রোগের প্রতিরোধক টিকা অবশ্যই দিতে হবে। এক্ষেত্রে উপরোক্ত হাদিস স্মরণ রাখতে হবে যে, রোগও আল্লাহর সৃষ্টি, আর নিরাময়ের ব্যবস্থাও একমাত্র তাঁরই। যদি জ্বরে আক্রান্ত হয়, তাহলে জ্বর কমানোর জন্য আধুনিক বিশ্বের চিকিৎসা হলো, ঠান্ডা পানি দিয়ে শরীর ধুয়ে ফেলা কিংবা ঠান্ডা পানি দিয়ে গা মুছে ফেলা। প্রিয় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন : জ্বর জাহান্নামের উত্তাপ থেকে সৃষ্ট, তাই পানি দিয়ে তা ঠান্ডা কর। (বুখারি মুসলিম)।

লেখক : ইমাম ও খতিব, কাওলার বাজার জামে মসজিদ, দক্ষিণখান, ঢাকা

সর্বশেষ খবর