রবিবার, ১ জানুয়ারি, ২০২৩ ০০:০০ টা

নতুন বছরের প্রত্যাশা

আফতাব চৌধুরী

আরও একটু সৎ হব, সৎ পথে থাকব, মিথ্যা কথা কম বলব, কাজে ফাঁকি দেব না। অফিস-আদালতে গিয়ে কিছু টাকা গছিয়ে দিয়ে নিজের কাজটি তাড়াতাড়ি করে নেওয়ার ফন্দি-ফিকির খুঁজব না। যদি শিক্ষক হই, স্কুলটিকে ভালোবাসব। ছাত্রছাত্রীদের নিজের ছেলেমেয়ে মনে করে পড়াব। তাদের বলব মানুষ হওয়ার কথা। যদি ডাক্তার হই, আরও একটু সহানুভূতি দিয়ে রোগীর কথা শোনার চেষ্টা করব। চিকিৎসায় যত্ন নেব। যদি ইঞ্জিনিয়ার হই, কর্মক্ষেত্রে অন্যায়ের সঙ্গে বোঝাপড়া করার আগে দুই দণ্ড  ভাবব। যদি ব্যবসায়ী হই, তবে কথা আর কাজে মিল রাখব। অতিরিক্ত মুনাফার জন্য সব সময় ব্যস্ত থাকব না। যদি প্রশাসনিক স্তরের কেউ হই, তবে প্রশাসনকে স্বচ্ছ ও সুদৃঢ় রাখার চেষ্টা করব। এক কথায়, নতুন বছরের শুরুতে নিজের দায়িত্ব ও কর্তব্য সম্পর্কে নিজেরা আগে একটুখানি সজাগ হই, সতর্ক থাকি। এভাবে নিজেকে খানিকটা পাল্টে নিতে পারি কি না এ পরীক্ষা নিজের কাছে একেবারে নিজেই দেব। একটি বিষয় খেয়াল করলে দেখা যায়, ঘুষ দেওয়া-নেওয়া, কালোবাজারি, স্বজনপোষণ, দুর্নীতি, নানা ধরনের কারচুপি, উঠতে-বসতে মিথ্যাচার আজ আমাদের গা-সওয়া হয়ে গেছে। প্রতিদিনের কাজ যেমন বিছানা ছেড়ে ওঠা, ভাত খাওয়া, অফিস-আদালত-ব্যবসা কেন্দ্রে যাওয়া এগুলো আমাদের নিত্যসঙ্গী। যে বা যারা এগুলো করেন না, নানা ধরনের লোভের মধ্যে পড়েও সততার পরিচয় দিয়ে থাকেন তারা রীতিমতো ‘খবর’ হয়ে যান অন্যদের কাছে। একটু আড়চোখে সবাই তাকে দেখেন। কেউ বলেন খ্যাপা, কেউ বলেন ভালো মানুষ, তবে তাদের সংখ্যা খুবই কম। আবার অনেক ক্ষেত্রে দেখা যায় যার ভান্ডারে রাশি রাশি সোনাদানা ঠাসাঠাসি তার মনেও সুখ নেই। প্রায় সবাই আমরা সুখ-শান্তি ভোগের পেছনে ছুটছি কিন্তু তা পাচ্ছি কই? সমাজবদ্ধ জীব হিসেবে আমাদের কিছু অবশ্য করণীয় আছে। বেশির ভাগ মানুষ কারণে-অকারণে ছোট ছোট মিথ্যা বলে যাচ্ছে কিন্তু কাছেই শিশু সন্তানটি বড় বড় চোখে তাদের দিকে তাকাচ্ছে সেদিকে দৃষ্টিপাত নেই, আবার ইশারায় শিশু সন্তানকে চুপ থাকতেও বলছেন তারা। এসব দেখে সে যখন বড় হবে কোনো মিথ্যা কথায় আমাকে কিংবা আমাদের যে ভোলাবে না এর কোনো খোঁজখবর নিচ্ছি না এমন প্রশ্ন সবাই আমরা এড়িয়ে চলেছি। দুর্নীতিগ্রস্ত দেশগুলোর একটি তালিকা তৈরি করেছে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল নামে একটি সংস্থা। তাদের প্রধান কার্যালয় বার্লিনে। প্রায় ১৬০টি দেশের একটি তালিকা প্রস্তুত করেছে তারা। সে তালিকায় বাংলাদেশের স্থান ১৩। সংস্থাটির বিচারে বাংলাদেশের এ অবস্থান কত স্পষ্ট তা থেকে অনুমান করা যায়। সংস্থার চেয়ারম্যান জানিয়েছেন, বাংলাদেশের জনগণের দুর্নীতি ক্রমেই বেড়ে চলেছে। ফলে বাংলাদেশের অবস্থান দুর্নীতিগ্রস্ত দেশগুলোর তালিকায় কোথায় যেতে পারে তা ভাবলে শিহরিত হতে হয়।

সেটি আমরা আরও বেশি করে বুঝতে পেরেছি বিগত কয়েকটি দিনজুড়ে। নির্বাচনে জিতলে কে কত কম দামে চাল দিতে পারবেন, কে কতরকম সুযোগ-সুবিধা করে দিতে পারবেন দেশবাসীকে তার একটি অলিখিত প্রতিযোগিতা চলছিল যেন। দেশের সহজসরল মানুষ এসবে বিশ্বাস হারিয়ে ফেলেছে কবেই। তাই তারা আর এসব নিয়ে মাথা ঘামায় না বরং রাজনৈতিক নেতা এবং তাদের পারিষদের প্রতিশ্রুতিতে নিজেদের খুব অপমানিত বোধ করে। অর্থাৎ এক পক্ষের মিথ্যা আশ্বাসবাণী অন্য পক্ষকে রীতিমতো অস্তিত্বহীন করে দেয়। এটি আমাদের দেশের জননেতারা বোঝেন না, বুঝলেও দিনের পর দিন এর চর্চা করার মধ্যে নিজেদের নানাবিধ লোভের প্রত্যাশা পূরণের আশা রাখেন। নতুন বছরে আমরা যেন ভ্রান্তচারীদের পথ অনুসরণ না করি। আমাদের দেশের এক কবি কবে বলে গেছেন, ‘আপনার পায়ে দাঁড়াতে যে পারে/কোন শক্তি নাই বধিবে তাহারে/ নিজ হাতে যার রয়েছে সম্মান/কেন মানী তারে করে অপমান?’ আমরা যেন এ কথাগুলো একটু মনে রেখে বিদায় জানাই ২০২২ সালকে। স্বাগত ২০২৩।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর