শুক্রবার, ৩ মার্চ, ২০২৩ ০০:০০ টা

শাবান মাসে রমজানের প্রস্তুতি নেবেন যেভাবে

আবদুল্লাহ আল মামুন আশরাফী

শাবান মাসে রমজানের প্রস্তুতি নেবেন যেভাবে

শাবান মাস। আরবি বর্ষপঞ্জিকার অষ্টম মাস। পবিত্র রমজানুল মোবারকের পূর্ববর্তী এ মাসটি বিভিন্ন কারণেই মহিমান্বিত। রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এ মাসকে নিজের মাস বলে সম্মানিত করেছেন। হজরত আনাস ইবনে মালিক (রা.) বর্ণনা করেন, রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘রজব হলো আল্লাহর মাস। সুতরাং যে ব্যক্তি আল্লাহর মাস রজবকে সম্মান করল, সে আল্লাহর বিধানের প্রতি সম্মান প্রদর্শন করল। আর যে আল্লাহর বিধানের প্রতি সম্মান প্রদর্শন করবে, মহান আল্লাহ তাকে জান্নাতুন নাঈমে প্রবেশ করাবেন। আর শাবান হলো আমার মাস। আর যে ব্যক্তি শাবান মাসের প্রতি সম্মান প্রদর্শন করল সে আমার প্রতি সম্মান প্রদর্শন করল। আর যে আমার প্রতি সম্মান প্রদর্শন করবে, কেয়ামতের দিন আমি হব তার অগ্রবর্তী এবং নেকির ভান্ডার। আর রমজান মাস হলো আমার উম্মতের মাস। (শুআবুল ইমান-৩৫৩২)।

শাবান মাস রমজানুল মোবারকের প্রস্তুতি নেওয়ার মাস। এ মাসে যারা যথার্থভাবে রমজানের প্রস্তুতি গ্রহণ করবে তাদের জন্য রমজানের বরকত ও কল্যাণ পুরোপুরিভাবে অর্জন করা সহজ হয়ে যায়। বক্ষমান নিবন্ধে আমরা শাবান মাসে রমজানের প্রস্তুতিমূলক পাঁচটি আমলের বিষয়ে আলোকপাত করব ইনশা আল্লাহ।

১. দিন গণনা : রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, তোমরা রমজানের (প্রস্তুতির উদ্দেশ্যে) শাবানের দিনগুলো গণনা করতে থাক। (মুসান্নেফে আবদুর রাজ্জাক, হাদিস : ৭৩০৩, সুনানে তিরমিজি, হাদিস : ৬৭৮, আল-মুজামুল আওসাত, হাদিস : ৮২৪২)।

২. অধিক পরিমাণে রোজা রাখা।

শাবান মাসের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ আমল হচ্ছে- এ মাসে অধিক পরিমাণে রোজা রাখা। এতে করে রমজানের রোজার প্রাথমিক অনুশীলন চমৎকারভাবেই সম্পন্ন হয়ে যাবে। রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এ মাসে অধিক পরিমাণে রোজা রাখতেন।

হজরত আয়েশা (রা.) বর্ণনা করেন, তিনি বলেন, আমি রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে রমজান মাস ছাড়া অন্য কোনো মাসে পুরো মাস রোজা রাখতে দেখিনি এবং আমি তাঁকে শাবান মাসের মতো এত অধিক নফল রোজা অন্য কোনো মাসে রাখতে দেখিনি। (সহিহ আল-বোখারি, হাদিস : ১৯৬৯, সহিহ মুসলিম, হাদিস : ১১৫৬, সুনানে আবু দাউদ, হাদিস : ২৪৩৪, সুনানে তিরমিজি, হাদিস : ৭৩৬)।

শাবান মাসে বান্দার আমল আল্লাহর কাছে উত্থিত হয়।

হজরত উসামা বিন জায়েদ (রা.) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, একবার আমি রসুলুল্লাহ (সা.)-কে জিজ্ঞেস করলাম, ইয়া রসুলুল্লাহ! আপনাকে শাবান মাসে যে পরিমাণ রোজা রাখতে দেখি, অন্য কোনো মাসে সে পরিমাণ দেখি না। রসুলুল্লাহ (সা.) বললেন : এ মাস হলো রজব ও রমজানের মধ্যবর্তী মাস। লোকেরা যার সম্পর্কে গাফেল। এটি এমন মাস, যে মাসে বান্দাদের আমলগুলো আল্লাহপাকের দরবারে উত্থিত হয়। আর আমি চাই, রোজাদার অবস্থায় যেন আমার আমল পেশ করা হয়। (সুনানে নাসাই-২৩৫৭)।

৩. প্রচুর পরিমাণে কোরআন তেলাওয়াত করা শাবান মাসে প্রচুর পরিমাণে কোরআন তেলাওয়াত করা উচিত। এতে অন্তরে ইমানি শক্তি বৃদ্ধি পাবে। আর ইমানি শক্তি বৃদ্ধি পেলে আমল করা সহজ হবে। পবিত্র কোরআন মাজিদে ইরশাদ হয়েছে-

“যারা ইমানদার তারা এমন যে, যখন আল্লাহর নাম নেওয়া হয় তখন ভীত হয়ে পড়ে তাদের অন্তর। আর যখন তাদের সামনে পাঠ করা হয় কালাম তখন তাদের ইমান বেড়ে যায় এবং তারা স্বীয় পরওয়ারদেগারের প্রতি ভরসা পোষণ করে”। (সুরাতুল আনফাল-২)। কোরআন তেলাওয়াতের মাধ্যমে অন্তর পরিচ্ছন্ন হয়। দিলের মরিচা দূরীভূত করার অনন্য উপায় কোরআন তেলাওয়াত করা। হজরত আবদুল্লাহ ইবনে ওমর (রা.) বলেন, হুজুরে আকরাম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, লোহায় পানি লাগলে যেরূপ মরিচা পড়ে, অনুরূপ মানুষের কলবের (অন্তরের) মধ্যেও মরিচা পড়ে যায়। কেউ জিজ্ঞাসা করল, ইয়া রসুলাল্লাহ! এটা পরিষ্কার করার উপায় কী? হুজুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উত্তরে বলেন, মৃত্যুকে বেশি করে স্মরণ করা ও কোরআন তেলাওয়াত করা। - (বায়হাকির সূত্রে মিশকাতুল মাসাবিহ- ২১৬৮)।

৪. নফল ইবাদতে আত্মনিয়োগ করা।

শাবান মাসে অধিক পরিমাণে নফল ইবাদতে আত্মনিয়োগ করা উচিত। তাহাজ্জুদ, ইশরাক নামাজসহ যাবতীয় নফল ইবাদতে মনোযোগী হওয়া শাবান মাসের একটি অন্যতম দাবি। এতে আল্লাহর সঙ্গে বান্দার সম্পর্ক গভীর হয়।

৫. অধিক পরিমাণে দান সদকা করা।

শাবান মাসে অধিক পরিমাণে দান সদকা করা। উচিত। এতে সমাজের গরিব অসহায় মানুষেরা অর্থনৈতিকভাবে কিছুটা হলেও স্বাবলম্বী হবে। ফলে রমজানে তাদের অর্থকষ্ট খানিকটা হলেও লাঘব হবে। দান সদকা আল্লাহতায়ালার কাছে অনেক পছন্দনীয় একটি আমল। ইরশাদ হয়েছে-

“যারা স্বীয় ধন-সম্পদ ব্যয় করে, রাতে ও দিনে, গোপনে ও প্রকাশ্যে, তাদের জন্য তাদের সওয়াব রয়েছে তাদের পালনকর্তার কাছে। তাদের কোনো আশঙ্কা নেই এবং তারা চিন্তিতও হবে না। (সুরাতুল বাকারা-২৭৪)।

লেখক : মুহাদ্দিস, জামিয়া গাফুরিয়া মাখজানুল উলুম টঙ্গী গাজীপুর। খতিব, আউচপাড়া জামে মসজিদ, টঙ্গী, গাজীপুর

সর্বশেষ খবর