শুক্রবার, ৩ মে, ২০২৪ ০০:০০ টা

মানবতার ব্যবসায়ী এক দুর্বৃত্ত

প্রয়োজন সব আশ্রয় কেন্দ্র, বৃদ্ধাশ্রম তদারকি

মিল্টন সমাদ্দার নামের এক দুর্বৃত্তকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। তার বিরুদ্ধে হাজারটা অভিযোগ। এর মধ্যে রয়েছে প্রতারণা, নির্যাতনসহ অসংখ্য গুরুতর অপরাধ। রাজধানীর মিরপুরে ‘চাইল্ড অ্যান্ড ওল্ড এইজ কেয়ার’ নামে একটি আশ্রয় কেন্দ্র গড়ে তোলেন মিল্টন। সেখানে অসহায় বৃদ্ধদের নিয়ে এসে যতটা না সেবাযত্ন করতেন, তার চেয়ে বেশি প্রচার করতেন। এর মাধ্যমে দেশ-বিদেশের হৃদয়বান মানুষের কাছ থেকে সাহায্য গ্রহণ করতেন; যার অধিকাংশই ব্যয় করতেন বিলাসিতা, মাদক সেবন এবং একদল দেহরক্ষী লালন-পালনে। মিল্টন সমাদ্দারের বিরুদ্ধে রোমহর্ষক অভিযোগ হচ্ছে- তিনি ইতোমধ্যে তার প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে প্রায় ৯০০ মৃতদেহ দাফন করেছেন, যাদের মৃত্যুসনদ তিনি নিজেই স্বাক্ষর করেছেন। তিনি তার আশ্রয় কেন্দ্রে অপারেশন থিয়েটার তৈরি করেছেন, যার আইনগত বৈধতা নেই। আশ্রয় কেন্দ্রে মারা যাওয়া ব্যক্তিদের গোসল ও জানাজার জন্য মিল্টন পাশের একটি মসজিদে ব্যবস্থা করেছিলেন। সেখানকার মুসল্লিরা লক্ষ্য করেন, অনেক মৃতদেহের শরীরে কাটাছেঁড়া ও রক্তের দাগ। তারা প্রশ্ন তুললে মিল্টন সেখান থেকে নিজেকে গুটিয়ে নেন। এ ছাড়া জমি দখল, আশ্রিতদের নির্যাতন, স্বজনদের মারধর, আশ্রিতদের হত্যা করে তাদের কিডনি বিক্রিসহ অসংখ্য অভিযোগ উঠেছে মিল্টনের বিরুদ্ধে। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে তিনি কিছু স্বীকারও করেছেন। পুলিশের সংশ্লিষ্ট ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা এসব বিষয় গণমাধ্যমের সামনে তুলে ধরেছেন। ওই দুর্বৃত্তকে গ্রেফতারের জন্য তাদের ধন্যবাদ। কিন্তু আমাদের প্রশ্ন হচ্ছে- এই মিল্টন কি এক দিনে এতবড় অপরাধ দুর্গ গড়ে তুলেছেন? রাতারাতি কি তিনি ৯০০ মানুষের মৃতদেহ দাফন করেছেন? তার দুর্বৃৃত্তায়ন তো এক দিনে মাথা চাড়া দিয়ে ওঠেনি। সামাজিক মাধ্যমে তিনি তো অনেক আগে থেকেই ফাঁপিয়ে ফুলিয়ে তার আশ্রয় কেন্দ্রের তথাকথিত মানবতার সেবার প্রচারণা চালিয়ে অসংখ্য মানুষের সঙ্গে প্রতারণা করেছেন। অনেক অর্থ হাতিয়ে নিয়েছেন। এগুলো দেখার কি কেউ ছিল না? দেশে নিশ্চয়ই এমন অনেক প্রতিষ্ঠান আছে- যাদের দায়িত্ব এসব দেখভাল ও তদারকি করা। তারা কী করেছেন? মিল্টন সমাদ্দারের কাছে পৌঁছাতে তাদের এত সময় লাগল কেন? জাতির দুর্ভাগ্য এখানেই। এমন আরও অনেক আশ্রয় কেন্দ্র, বৃদ্ধাশ্রম, শিশু যত্নকেন্দ্র দেশে আছে। সেসবের কোথাও কোথাও মানবতার সেবার নামে ব্যবসা কিংবা এমন ভয়ংকর কোনো অনিয়ম হচ্ছে কি না দ্রুত তা খতিয়ে দেখা জরুরি। আশা করি, সংশ্লিষ্ট সব বিভাগ-কর্তৃপক্ষ এ ব্যাপারে সার্বক্ষণিক কার্যকর সক্রিয় তৎপরতা গ্রহণ করবে।

 

সর্বশেষ খবর