শুক্রবার, ২৪ মে, ২০২৪ ০০:০০ টা

মুমিন জীবনে নেক আমলের গুরুত্ব

মুফতি মোহাম্মদ এহছানুল হক মুজাদ্দেদী

মুমিন জীবনে নেক আমলের গুরুত্ব

আল্লাহতায়ালাকে মুমিন বান্দা সদা সর্বদা ভয় করে। আল্লাহর একত্ববাদ ও রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের রিসালাতে পূর্ণ আন্তরিকতার সঙ্গে বিশ্বাস স্থাপন করে যে ব্যক্তি তার প্রতিটি হুকুম-আহকাম মেনে চলে তাকেই মুমিন বলে। অন্যভাবে বলা যায়- মহান আল্লাহ, তাঁর প্রেরিত সব নবী-রসুল, ফেরেশতা, আসমানি কিতাব, পরকাল ও তাকদিরের ওপর পূর্ণ আন্তরিকতার সঙ্গে বিশ্বাস স্থাপন করে আর ইমান গ্রহণের পর যে ব্যক্তি ইমান থেকে বিন্দুমাত্র বিচ্যুত হয়নি সে-ই প্রকৃত মুমিন। আল কোরআন ও হাদিসে মুমিনের চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য বর্ণনা করা হয়েছে। কোরআন মাজিদে ইরশাদ হয়েছে- ‘প্রকৃত ইমানদার তো তারাই আল্লাহর জিকির হলে যাদের অন্তর কেঁপে ওঠে। আর আল্লাহর আয়াত যখন তাদের সামনে পড়া হয় তাদের ইমান বেড়ে যায়। সুরা আনফাল, আয়াত-২। একজন মুমিন আল্লাহর ওপর ইমান আনার পর আর কখনো সন্দেহে পড়ে না। সে পূর্ণতার সঙ্গে আল্লাহর ওপর আস্থাশীল হয়।

মুমিনদের অন্যতম গুণ হলো- ‘তারা আল্লাহ ছাড়া আর কোনো প্রভুকে ডাকে না।’ সুরা ফুরকান, আয়াত-৬৮। মুমিনরা যে কোনো সংবাদকে যাচাইবাছাই করে গ্রহণ করে। ইরশাদ হয়েছে, ‘হে মুমিনগণ! যদি কোনো পাপাচারী তোমাদের কাছে কোনো সংবাদ নিয়ে আসে তবে তোমরা তা পরীক্ষা করে দেখবে, যাতে অজ্ঞতাবশত তোমরা কোনো সম্প্রদায়ের ক্ষতিসাধনে প্রবৃত্ত না হও। এরপর নিজেদের কৃতকর্মের জন্য অনুতপ্ত না হও।’ হুজুরাত, আয়াত-৬।

অহেতুক ও অপ্রয়োজনীয় বিষয়কে মুমিন বান্দারা এড়িয়ে চলে। ইরশাদ হচ্ছে- ‘দয়াময় আল্লাহর প্রকৃত বান্দা তারাই যারা মিথ্যা সাক্ষ্য দেয় না আর অহেতুক বিষয়ের পাশ দিয়ে যখন তারা গমন করে তখন ভদ্রভাবে পাশ কাটিয়ে যায়।’ সুরা ফুরকান, আয়াত-৭২।

সফল মুমিন কারা? এ প্রশ্নের জবাবে বলা হয়েছে- ‘মুমিনরা সফলকাম হয়ে গেছে, যারা নিজেদের নামাজে বিনয়ী-নম্র, যারা অনর্থক কথাবার্তা বলে না, যারা জাকাত দান করে থাকে এবং যারা নিজেদের লজ্জাস্থানকে সংযত রাখে। সুরা মুমিনুন, আয়াত ১-৪।

অন্য আয়াতে বলা হয়েছে- ‘আর ইমানদার পুরুষ ও ইমানদার নারী একে অন্যের সহায়ক। তারা সৎ কাজের আদেশ দেয় এবং মন্দ কাজ থেকে বিরত রাখে। নামাজ প্রতিষ্ঠা করে, জাকাত আদায় করে এবং আল্লাহ ও তাঁর রসুলের নির্দেশ অনুযায়ী জীবনযাপন করে। এদের ওপর আল্লাহ দয়া করবেন।’ সুরা তওবা, আয়াত-৭১। মুমিন জিন্দেগির অন্যতম বৈশিষ্ট্য মহব্বত ও দয়া। এজন্য মুমিনকে মহব্বত ও দয়ার প্রতীক বলা হয়। আল্লাহর প্রতি ভালোবাসা নবীজির সুন্নত আমলের প্রতি ভালোবাসা ও আল্লাহর সৃষ্টির প্রতি ভালোবাসা সব মুমিনের ভূষণ। আল্লাহতায়ালা ইরশাদ করেন, ‘নিশ্চয়ই সৎ কর্মশীল মুমিনদের জন্য দয়াময় আল্লাহ (মানুষের অন্তরেও) মহব্বত পয়দা করে দেন।’ সুরা মরিয়ম, আয়াত-৯৬।

প্রিয় নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন- একজন (মুমিন) মুসলিমের জন্য অন্য মুসলিমকে হত্যা করা, সম্পদ লুট করা ও সম্মানহানি করা নিষিদ্ধ।’ (বুখারি, হাদিস -৫১৪৪)।

আবু হুরায়রা (রা.) বর্ণনা করেছেন, এক দিন রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘আমার কাছ থেকে কিছু কথা শিখবে, অতঃপর তা অনুসারে আমল করবে? কিংবা এমন কাউকে শিক্ষা দেবে, যে তা অনুসারে আমল করবে।’ আমি বললাম, ‘আমি, হে আল্লাহর রসুল।’ অতঃপর তিনি আমার হাত ধরে পাঁচটি গণনা করে বললেন। তিনি বলেন, ‘সব ধরনের হারাম কাজ বর্জন করবে। তাহলে তুমি আল্লাহর কাছে সবচেয়ে বেশি ইবাদতকারী হিসেবে গণ্য হবে। আল্লাহ তোমার জন্য যা রেখেছেন তাতে তুমি সন্তুষ্ট থাকবে। তাহলে তুমি মানুষের মধ্যে সবচেয়ে ধনী হবে। প্রতিবেশীর সঙ্গে সুন্দর আচরণ কর। তাহলে তুমি মুমিন হবে। মানুষের জন্য তাই পছন্দ কর, যা তুমি নিজের জন্য পছন্দ কর। তাহলে তুমি মুসলিম হবে। বেশি হাসবে না। কারণ বেশি হাসলে অন্তর মরে যায়।’ (তিরমিজি, হাদিস-২৩০৫)।

হজরত আবু হুরায়রা (রা.) বলেন, হে আল্লাহর রসুল, আমি আপনাকে দেখলে আমার অন্তর প্রশান্ত হয় এবং আমার চোখ শীতল হয়। আপনি আমাকে সব বস্তু সম্পর্কে অবহিত করুন। তখন রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘পানি থেকে সব বস্তু তৈরি করা হয়েছে।’ আমি বললাম, ‘আমাকে এমন বিষয় সম্পর্কে অবহিত করুন আমি তা আঁকড়ে ধরলে জান্নাতে প্রবেশ করতে পারব।’

তিনি বলেন, ‘সালামের প্রচার কর। অন্যকে খাবার খাওয়াও। আত্মীয়দের সঙ্গে সম্পর্ক রাখ। রাতে যখন মানুষ ঘুমায় তখন তুমি নামাজ পড়। তাহলে তুমি নিরাপদে জান্নাতে প্রবেশ করবে।’ (মুসনাদে আহমদ, হাদিস : ৭৯৩২)।

আল্লাহতায়ালা সারা বিশ্বের মুসলমানদের প্রকৃত মুমিন হিসেবে ইসলামের বিধান মেনে সব ফরজ, ওয়াজিব, সুন্নত, মুস্তাহাবের ওপর আমল করে দুনিয়ার শান্তি আখেরাতে জান্নাতুল ফেরদৌস লাভ করার তৌফিক দান করুন। আমিন।

লেখক : বাংলাদেশের শ্রেষ্ঠ ইমাম, খতিব, মনিপুর বায়তুল আশরাফ (মাইকওয়ালা) জামে মসজিদ, মিরপুর-২, ঢাকা

সর্বশেষ খবর