সোমবার, ২৭ মে, ২০২৪ ০০:০০ টা

বান্দরবানে চলমান অভিযান ও কিছু কথা

ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. বায়েজিদ সরোয়ার, এনডিসি (অব.)

বান্দরবানে চলমান অভিযান ও কিছু কথা

সৌন্দর্য ও সম্প্রীতির বান্দরবানের বাতাসে এখন বারুদের গন্ধ। ‘কুকি-চিন ন্যাশনাল ফ্রন্ট’ বা কেএনএফ ও এর সামরিক শাখা ‘কুকি-চিন ন্যাশনাল আর্মি’ (কেএনএ)-এর কয়েক শ বিপথগামী তরুণের সন্ত্রাসী কর্মকান্ড ও এর ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়ায় সবুজ পাহাড়ের মধ্য দিয়ে আবার প্রবাহিত হচ্ছে হিংসার ঝরনাধারা। দীর্ঘদিন ধরে বান্দরবানের রুমা উপজেলায় অবস্থিত ক্রেওক্রাডং বাংলাদেশের উচ্চতম শৃঙ্গ হিসেবে পরিচিত ছিল।  দুঃখজনক হলো, এই ক্রেওক্রাডংসহ বেশকিছু উঁচু ও দুর্গম পার্বত্যাঞ্চলে বৈশাখের প্রচন্ড তাপপ্রবাহের মাঝেও বাংলাদেশ সেনাবাহিনীসহ নিরাপত্তা বাহিনীকে যৌথ অভিযান পরিচালনা করতে হচ্ছে। কেএনএফের উত্থানের ফলে ২০২২ সালের অক্টোবর থেকে বান্দরবান অশান্ত হয়ে ওঠে। তবে ২০২৩-এর জুলাই সরকারের সঙ্গে কেএনএফের আলোচনা শুরু হলে পরিস্থিতি আপাতদৃষ্টিতে শান্ত ছিল। কিন্তু গত ২-৫ এপ্রিল কেএনএফের বেপরোয়া সন্ত্রাসী কর্মকান্ড বিশেষত ব্যাংক ডাকাতি, অপহরণ, অস্ত্র লুট ও থানায় গুলিবর্ষণ ইত্যাদির ফলে বান্দরবানের পরিস্থিতি পাল্টে গেছে।

গত ৭ এপ্রিল থেকে বান্দরবানের রুমা, থানচি ও রোয়াংছড়িতে সেনাবাহিনীর নেতৃত্ব ও সমন্বয়ে কেএনএফের বিরুদ্ধে সাঁড়াশি অভিযান চলছে। র‌্যাব, বিজিবি, পুলিশ ও আনসার বাহিনী এ অভিযানে অংশ নিয়েছে। উল্লেখ্য, গত দুই বছরে এটি কেএনএফের বিরুদ্ধে পরিচালিত তৃতীয় অভিযান। ‘কাউন্টার ইন্সারজেন্সি’ অদ্ভুত একটা যুদ্ধ। প্রচলিত যুদ্ধ সাধারণত বিদেশি আক্রমণের বিরুদ্ধে পরিচালিত হয়। কিন্তু নিজ দেশের একটি এলাকার কিছু মানুষ বা জনগোষ্ঠী অস্ত্র তুলে নিয়ে সরকারকে চ্যালেঞ্জ করলে তাদের দমনের জন্য ‘কাউন্টার ইন্সারজেন্সি অপারেশন’ পরিচালনা করা হয়। এই যুদ্ধের মূলমন্ত্র হলো- ‘জনগণের হৃদয় ও মন জয়’। শান্তিবাহিনীর বিদ্রোহ মোকাবিলার জন্য বাংলাদেশ সেনাবাহিনী তথা নিরাপত্তা বাহিনী ১৯৭৬ থেকে ১৯৯৭ সাল (শান্তিচুক্তির স্বাক্ষর) পর্যন্ত অভিযান পরিচালনা করেছে। শান্তিচুক্তির পর পার্বত্য চট্টগ্রামে সেনাবাহিনী শান্তিচুক্তি বাস্তবায়নে প্রশাসনকে সহায়তা করে আসছে।

চলমান অভিযানের একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো, নিরাপত্তা বাহিনীর মধ্যে সমন্বয়। শান্তিচুক্তির আগে পার্বত্যাঞ্চলে একটি কার্যকর আভিযানিক কাঠামো ছিল। বর্তমান পরিস্থিতি বিবেচনায়, আগের মতো না হলেও একটি ‘ফাংশনাল কাঠামো’ তৈরি করা প্রয়োজন যেখানে সেনাবাহিনীর নেতৃত্বস্থানীয় ভূমিকা আবশ্যক। এ ধরনের অভিযানের আরেকটি অতি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো নিরাপত্তা বাহিনীর গোয়েন্দা কার্যক্রম।

বাংলাদেশে বেশ কয়েক সপ্তাহব্যাপী অসহনীয় দাবদাহ চলছিল। বৈশাখের সেই প্রচন্ড তাপপ্রবাহে বান্দরবানের উঁচু দুর্গম পাহাড়ে সেনাবাহিনী, বিজিবিসহ নিরাপত্তা বাহিনীর সৈনিকরা বিপথগামী কেএনএফের তরুণদের বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালনা করছে। যা এখনো চলমান। কেএনএফের হঠকারিতায় সীমান্তবর্তী উঁচু পাহাড়ের একসময়ের শান্ত জনপদ ক্রেওক্রাডং, রামজুতাং, সিলোপিপাড়া, থিনদলপে, বাকলাইপাড়া, টেবিলহিল, সাইজামপাড়া, রেমাক্রি প্রাংসা... এখন প্রায় অনাকাক্সিক্ষত রণাঙ্গনের অংশ।

অভিযানরত সেনা ও নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যদের সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হলো, এলাকার সাধারণ গ্রামবাসী থেকে কেএনএফের সন্ত্রাসী/অস্ত্রধারীদের পৃথক করা ও সুনির্দিষ্টরূপে চিহ্নিত করা। এ ধরনের যুদ্ধে অস্ত্রবাজরা জনগণের মধ্যে মিশে সন্ত্রাসী কর্মকান্ড চালিয়ে থাকে। তাদের পৃথক করা খুব কঠিন কাজ। এক্ষেত্রে মাও সেতুং স্মর্তব্য : ‘মাছ যেমন পানিতে বিচরণ করে বেঁচে থাকে, গেরিলারাও জনগণের মাঝে বিচরণ করে তেমনি টিকে থাকে।’ ইতোমধ্যে প্রায় ৭০ জনের মতো (মূলত বম জনগোষ্ঠীর) সন্দেহভাজন কেএনএফ সদস্যকে গ্রেফতার করা হয়েছে। নিরাপত্তা বাহিনীকে খুব ঠান্ডা মাথায়, ধৈর্য ধরে নিশ্চিত করতে হবে সত্যিকারের সন্ত্রাসী কারা। যারা সন্ত্রাসী নন, তাদের ছেড়ে দিতে হবে। এ জন্য পেশাদারি মনোভাবের প্রয়োজন। কেএনএফের কয়েকজন নারী সদস্যকে অপরাধের জন্য গ্রেফতার করা হয়েছে। শান্তিবাহিনীতে কোনো নারী সদস্য ছিল না। পাহাড়ের সংঘাতে এটি নতুন বাস্তবতা। নারীদের বিষয়গুলো বিশেষ সতর্কতা ও সংবেদনশীলতার সঙ্গে দেখা প্রয়োজন। কেএনএফের অস্ত্রধারীদের যেমন শাস্তি দিতে হবে, তেমনি নিরপরাধ ব্যক্তিদের রক্ষা করতে হবে। চলমান অভিযানে নিরীহ কেউ যেন হেনস্তা না হয়। এ ধরনের পরিবেশে শত্রুতাবশত ভুল তথ্য দিয়ে নিরপরাধ ব্যক্তিকে ধরিয়ে দেওয়ার ঘটনাও কিন্তু ঘটতে পারে।

সময়ের সঙ্গে সঙ্গে পাহাড়ের রাজনৈতিক ও যুদ্ধের বাস্তবতা বদলে গেছে। সরকার ও নিরাপত্তা বাহিনীকে সেই বাস্তবতা মাথায় রেখেই কৌশল নির্ধারণ করতে হবে। পাহাড়ে যাতায়াত ব্যবস্থা, মিডিয়ার বিস্তার, মানবাধিকার নিয়ে আলোচনা, নতুন অস্ত্র ও প্রযুক্তি, নারী ইস্যু, পাহাড়ের মানুষের মনস্তত্ত্ব, নিরাপত্তা বাহিনীর মনস্তত্ত্ব ও সমানুপাতিক শক্তির ব্যবহার, গোয়েন্দা কার্যক্রম ইত্যাদি ফ্যাক্টর বিবেচনা করা দরকার। আটক সন্দেহভাজন কেএনএফ সদস্যদের অপরাধের সঙ্গে সঙ্গে তাদের রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে অস্ত্র ধরার মোটিভেশন বা উদ্বুদ্ধকরণ এর বিষয়টি জানা অত্যন্ত জরুরি। সংখ্যালঘু বা প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর ক্ষোভ, দুঃখকষ্টের কথা সংখ্যাগরিষ্ঠরা অনেক সময় বুঝতেই পারে না।

বম সম্প্রদায়ের যাদের জনসংখ্যা প্রায় ১৩ হাজার তাদের ক্ষোভ ও দুঃখের বিষয়গুলো জানা অতি জরুরি। রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে এভাবে অস্ত্র তোলার মতো কী কী সামাজিক-রাজনৈতিক-অর্থনৈতিক কারণ রয়েছে, তা সুনির্দিষ্টভাবে জানা ও বোঝা দরকার। বিদেশের কোনো শক্তি তাদের মদদ দিচ্ছে কি না এবং তারা অজান্তে কারও ‘প্রক্সি’ হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে কি না তাও গভীরভাবে খতিয়ে দেখতে হবে।

বর্তমান কনফ্লিক্ট বা সংঘাতটি খুব বড় নয়। দক্ষিণ এশিয়ার প্রেক্ষাপটে পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতি বা শান্তিবাহিনী অত্যন্ত শক্তিশালী ও সুসংঘটিত সামরিক-রাজনৈতিক দল ছিল। বাংলাদেশ তখন (১৯৭৬) মাত্র চার বছরের একটি শিশু রাষ্ট্র। সেই অস্থির সময়ে, বাংলাদেশ সেনাবাহিনী একটি শক্তিশালী বিচ্ছিন্নতাবাদী আন্দোলনের প্রচন্ড প্রাথমিক ধাক্কা সামাল দিয়েছিল। বাংলাদেশ সেনাবাহিনী তথা নিরাপত্তা বাহিনী অত্যন্ত পেশাদারির সঙ্গে সেই আন্দোলন মোকাবিলা করেছে। তবে এই অনাকাক্সিক্ষত ভ্রাতৃঘাতী যুদ্ধে উভয় পক্ষে অনেক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছিল। যা ছিল অত্যন্ত দুঃখজনক। বিশেষত দুটি কারণে, মূলত বম জনগোষ্ঠীভিত্তিক কেএনএফের এই আন্দোলন গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করা দরকার : খ্রিস্টান ধর্ম ও জো জাতীয়তাবাদ।

কেএনএফের আন্দোলনে ‘খ্রিস্টান’ ধর্মের বিষয়টি অত্যন্ত গুরুত্ব দিয়ে দেখা দরকার। বমসহ কুকি-চিনের ছয়টি সম্প্রদায়ের অধিকাংশই ‘খ্রিস্টান ধর্মাবলম্বী।’ কেএনএফ এ বিষয়টি ইস্যু করে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের দৃষ্টি আকর্ষণের চেষ্টা করতে পারে। কুকি-চিন-মিজো সমাজের ছোট একটি অংশ নিজেদের ‘বেনে মেনাশে’ নামে ইহুদি ঐতিহ্যের হারিয়ে যাওয়া একটি গোত্র হিসেবে মনে করে।

একটি মুসলিম-সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশের নিরাপত্তা বাহিনীর হাতে খ্রিস্টান ক্ষুদ্র-নৃগোষ্ঠী নির্যাতিত-কেএনএফ এমন প্রচারণামূলক বয়ান বা ন্যারেটিভ তৈরি করতে পারে। এ ধরনের স্পর্শকাতর প্রচারণা বাংলাদেশের নিরাপত্তা বাহিনীর জন্য ক্ষতিকর হতে পারে। কেএনএফের বর্তমান সন্ত্রাসী কর্মকান্ড নিঃসন্দেহে বিচ্ছিন্নতাবাদী ও রাষ্ট্রদ্রোহিতার শামিল। বর্তমানে এ প্রসঙ্গে বিভিন্ন ষড়যন্ত্র তত্ত্বসহ ‘কুপল্যান্ড প্ল্যান’ ও ‘বৃহত্তর খ্রিস্টান রাষ্ট্র’-আলোচনায় আছে।

কুকি, চিন ও মিজোরা নিজেদের একই এথনিসিটি, একই সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের মানুষ বলে মনে করে। নৃতাত্ত্বিক বিশেষজ্ঞরা ওই জাতিগোষ্ঠীগুলোকে একত্রে ‘জো’ বলে অভিহিত করে থাকেন। এই নৃতাত্ত্বিক সংযোগ ও মিলের জন্য মনিপুর, মিজোরাম ও চিন রাজ্যের ঘটনাপ্রবাহ পার্বত্য চট্টগ্রামকে প্রভাবিত করতে পারে। জোদের পারস্পরিক বন্ধনকে বিবেচনায় রাখা দরকার। কেএনএফের আকস্মিক উত্থানের পেছনে কেএনএফের দূর-দূরান্তে থাকা ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠনগুলোর অনুপ্রেরণা ও সহানুভূতি কতখানি আছে, তা জানা জরুরি। আঞ্চলিক বাস্তবতা বিবেচনায় নেওয়া প্রয়োজন।

পার্বত্য চট্টগ্রামে পার্শ্ববর্তী চিন, মিজোরাম, ত্রিপুরা, মনিপুর, রাজ্যের রাজনৈতিক ঘটনাবলি গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করা প্রয়োজন। বিশেষ করে জো জাতীয়তাবাদের ঢেউ ও চঞ্চলতা বুঝতে হবে। মিজোরাম, চিন ও কাচিন রাজ্যের বিভিন্ন সশস্ত্র গোষ্ঠী থেকে প্রশিক্ষণ গ্রহণের কথা কেএনএফ স্বীকার ও প্রচার করেছে। বিষয়গুলো নিশ্চিত করা দরকার।

২০২২-এর জানুয়ারিতে চিন রাজ্যে মিয়ানমার সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে চিনের এথনিক সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলো তীব্র লড়াই চালিয়ে যাচ্ছিল। সেই সময়ে বাংলাদেশে এর সম্ভাব্য প্রভাব নিয়ে ‘বাংলাদেশ প্রতিদিন’ (২১ জানুয়ারি, ২০২২) পত্রিকায় লিখেছিলাম ‘মাউন্ট ভিক্টোরিয়ার পার্কে এখন অপরূপ রডোডেনড্রন ফুল ফোটার সময়। কিন্তু এই সময়ে চিন পুড়ছে হিংসার আগুনে। এ আগুন এখন সীমান্তের এপারে থানচি, রুমা, মোদক জনপদের গায়ে লাগারও উপক্রম।’

কেএনএফের বিরুদ্ধে পরিচালিত যৌথ অভিযানের সময়, ২০২২-এর নভেম্বর-ডিসেম্বর মাসে বান্দরবান জেলা থেকে ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর কয়েক শ ব্যক্তি ভারতের মিজোরামে আশ্রয় গ্রহণ করেছিল। পরবর্তীতে কেউ কেউ ফেরত এসেছে। আবার নতুন করেও কিছু ব্যক্তি ওপারে গেছে- এমন আলোচনা আছে।

উল্লেখ্য, নিরাপত্তা বাহিনীর অভিযান ও গ্রেফতারের অজুহাতে কেএনএফ-নেতৃত্ব বম সম্প্রদায়ের মানুষকে সীমান্তের ওপারে বা গ্রাম ছেড়ে যাওয়ার জন্য প্ররোচিত করতে পারে। অতীতে নেতৃস্থানীয় কিছু ব্যক্তি ও আঞ্চলিক দলের প্ররোচনায় এমন দুঃখজনক ঘটনা পার্বত্য চট্টগ্রামে বেশ কয়েকবার ঘটেছে। বম অধ্যুষিত অনেক গ্রামের মানুষ গ্রাম ছেড়ে পালিয়েছে। তারা কেএনএফ-এর প্রচারণা ও হুমকিরও শিকার হতে পারে। এ বিষয়ে স্থানীয় জনগণকে সচেতন করা প্রয়োজন।

বর্তমান সংঘাতময় পরিস্থিতির আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো- কেএনএফের মিডিয়া (গণমাধ্যম) ও প্রযুক্তির ব্যবহার। পাহাড়ে কেএনএফই প্রথম আঞ্চলিক দল, যারা সোশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে নিজেদের অস্তিত্ব জানান দিয়েছিল। পরবর্তীতে তারা সোশ্যাল মিডিয়ায় ঘোষণার মাধ্যমে নিরাপত্তা বাহিনীকে আক্রমণ করেছে। কেএনএফ সরকারের বিরুদ্ধে এক ধরনের ‘তথ্য যুদ্ধ’ চালিয়ে যাচ্ছে। কেএনএফ মিডিয়া ব্যবহার করে নিরাপত্তা বাহিনীর বিরুদ্ধে প্রচারণা চালাতে পারে। এ বিষয়ে বিশেষ সতর্কতা প্রয়োজন। লেখক হুমায়ুন আজাদ স্মর্তব্য : ‘শান্তিবাহিনীর সঙ্গে যুদ্ধ জিতেছে সেনাবাহিনী এবং হেরেছে প্রচারে।’

এ ধরনের পরিস্থিতি মোকাবিলায় সরকারের প্রয়োজন পরিকল্পিত বহুমুখী কৌশল। পার্বত্য চট্টগ্রামের মূল সমস্যা কিন্তু রাজনৈতিক। এর সামরিক সমাধান কাম্য নয়। তবে বর্তমানে কেএনএফের সন্ত্রাসী কর্মকান্ড যে স্তরে পৌঁছেছে, তা দমনের জন্য সামরিক অভিযান পরিচালনা করা হচ্ছে। আশা করি, পেশাদারি, উপযুক্ত রণকৌশল, অস্ত্র সরঞ্জামাদি, সমানুপাতিক শক্তির প্রয়োগ, একই সঙ্গে স্মার্ট, তেজোদীপ্ত ও মানবিকবোধ সংবলিত অভিযানের মাধ্যমে বান্দরবানে শান্তি ফিরে আসবে। পাহাড়ের প্রান্তিক মানুষকে আন্তরিকভাবে কাছে টানতে হবে। কুকি-চিন গোষ্ঠীর প্রকৃত সমস্যার কথা আমাদের অবশ্যই জানতে ও শুনতে হবে। এর বাস্তবিক সমাধানও প্রয়োজন। এদিকে শান্তিচুক্তির পূর্ণ বাস্তবায়ন প্রয়োজন।  বাস্তবায়নের বাধাগুলো ও বিতর্কিত হয়ে যাওয়া ইস্যু এবং অনুচ্ছেদগুলো নির্মোহভাবে দেখা দরকার। তবে এর গ্রহণযোগ্য ও বাস্তবিক সমাধানও দ্রুত করা প্রয়োজন। বহুত্ববাদ, সম্প্রীতি ও সহনশীলতাই বাংলাদেশের আত্মা। উদার বাংলাদেশের বিপুল বৈচিত্র্যের মধ্যেই আমাদের সব সংখ্যালঘু, ক্ষুদ্র-নৃগোষ্ঠী ও জনজাতির সুরভিত ফুল ফুটবে। সবাইকে সঙ্গে নিয়ে, সবাইকে সমমর্যাদায় অভিষিক্ত করেই আমরা একত্রে হাঁটব শান্ত সবুজ পাহাড়ে।

 

লেখক : গবেষক

[email protected]

সর্বশেষ খবর