এত আগুন, ধ্বংস, মৃত্যু দেখে অনেকের মতো আমারও বুকের ভিতরে রক্তক্ষরণ হচ্ছে। সবকিছু মেনে নিতে কষ্ট হচ্ছে। রাজপথের দুই ধারের ধ্বংসাবশেষ দেখে মনে হচ্ছে যুদ্ধবিধ্বস্ত কোনো দেশে বাস করছি। আন্দোলনে মৃত্যুর সংখ্যা দেড় শতাধিক। ছাত্রদের বাইরে অনেক সাধারণ মানুষ মারা গেছেন। মৃত্যুর মিছিলে আছেন আওয়ামী লীগ কর্মী, পুলিশ ও আনসার সদস্য। গাজীপুরে আওয়ামী লীগের একজন কর্মীকে উত্তরায় এবং যাত্রাবাড়ীতে এক পুলিশকে মেরে ঝুলিয়ে রাখা হয়েছিল। এ আন্দোলনে তিন সাংবাদিক মারা গেছেন। আহত শতাধিক। সাংবাদিক দেখলেই করা হয়েছে হামলা। তাদের বহনকারী গাড়ি ও মোটরসাইকেল পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। সংবাদপত্র বহনকারী গাড়িরও রেহাই মেলেনি। আন্দোলনে নিহতদের জন্য শোক প্রকাশ করছি। প্রতিবাদ জানাচ্ছি সব ধ্বংসাত্মক তৎপরতার। এ বাংলাদেশ আমরা দেখতে চাইনি। নিশ্চিত করে বলতে পারি এমন বাংলাদেশের জন্য লড়েননি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। এমন ভয়ংকর নাশকতা দেখতে যুদ্ধ করেননি ১৯৭১ সালের বীর মুক্তিযোদ্ধারা।
১৬ থেকে ১৯ জুলাই কয়েকটি দিনে তাণ্ডব বয়ে গেল বাংলাদেশের ওপর দিয়ে। এমন ভয়াবহতা অতীতে কেউ দেখেনি। সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ে প্রশ্ন অনেক। কেউ বলছেন, পরিকল্পিত হামলা হয়েছে সবখানে। দেশি-বিদেশি আড়ালের শক্তিগুলোর মদত ছিল। খেলা ছিল। আমি বলছি, গোছানো পরিকল্পিত নাশকতা তৎপরতার বিপরীতে সরকার ও দলের কোনো প্রস্তুতি ছিল না। অতি কনফিডেন্স ও দলকে উপেক্ষার নীতি সর্বনাশ করে দিয়েছে ভিতরে ভিতরে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারীরাও থমকে গিয়েছিল। বিএনপি-জামায়াত এমন একটি পরিবেশের অপেক্ষায় ছিল। সাধারণ ছাত্রদের এত কিছু বোঝার কথা নয়। অতীতে কোনো আন্দোলনে মিডিয়া টার্গেট ছিল না। ভয়াবহ নাশকতা জানান দিল এ দেশের নিয়ন্ত্রণ নিলে তারা কী করবে।
কোটা সংস্কারের দাবি নিয়ে ছাত্ররা মাঠে নামল। আন্দোলন করতেই পারে। ছাত্রদের দাবিকে ন্যায্য মনে করে সমর্থন জানালেন অভিভাবকরা। কোনো কিছুতে সমস্যা ছিল না। সমস্যা তৈরি হলো, সুযোগ বুঝে ছাত্রদের সামনে রেখে ভয়ংকর আড়ালের রাজনীতি শুরুর পর। একটা সাধারণ ছাত্র আন্দোলন ষড়যন্ত্রকারীরা নিয়ে গেল অরাজকতা, ভয়াবহ তাণ্ডবলীলা, বিশৃঙ্খলার আগুনে। ছাত্রদের আন্দোলন চলে গেল অছাত্রদের কাছে। সুযোগসন্ধানীরা মুখোশ পরে নামল জ্বালাও-পোড়াওতে! পুড়িয়ে দিল রাষ্ট্রীয় স্থাপনা। সরকারের দায়িত্ব ধ্বংসাত্মক কার্যক্রমে অংশগ্রহণকারীদের পরিচয় বের করা।
বুকের ভিতরে ভয়াবহ ক্ষত নিয়ে আজ দাঁড়িয়ে আছে বাংলাদেশ। কোটা আন্দোলন ঘিরে নিষ্ঠুর সব চেহারা দেখেছি। হঠাৎ বদলে যাওয়া মানুষ দেখেছি। মেট্রোরেলের দুটি স্টেশন, এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের টোল প্লাজা এখন ফিলিস্তিনের গাজার কোনো ধ্বংসচিহ্ন। দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ভবন, বন ভবনের দিকে তাকানো যায় না। সেতু ভবন, বিআরটিএ ভবন এখন শুধুই ধ্বংসাবশেষ। সারা দেশের বেশির ভাগ জেলা শহরের গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা, সরকারি গাড়ি পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। ঢাকার আগুনে ব্যবহার হয়েছে গানপাউডার। পরিকল্পিতভাবে হামলা হয়েছে বিটিভিতে। ৯ ঘণ্টা বিটিভি দখলে নিয়ে আগুনে পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে মূল্যবান জাতীয় সম্পদ। ট্রান্সমিশন রুমে গিয়ে যা খুশি করা হয়েছে।
নারায়ণগঞ্জ, নরসিংদীসহ দেশের বেশির ভাগ জেলায় আইনশৃঙ্খলা বলে কিছু ছিল না। ঢাকাবাসী ছিলেন নিরাপত্তাহীনতায়। গাজীপুরের সাবেক মেয়র জাহাঙ্গীর নিষ্ঠুর হামলার শিকার হয়েছেন। তাঁর সঙ্গে থাকা আওয়ামী লীগের একজন কর্মীকে মেরে ঝুলিয়ে রাখা হয়েছিল। কারা এ কাজ করেছে? ঢাকার বাইরে আরও অনেক ভয়াবহ ঘটনা ঘটেছে। বেরিয়ে এসেছে আওয়ামী লীগের রাজনীতির অভ্যন্তরীণ জীর্ণদশা। শুনতাম সিআরআই, আইসিটি মন্ত্রণালয়ের ২ লাখ সাইবার যোদ্ধা আছেন। বাস্তবে দুজনকেও চোখে পড়েনি। বরং ‘এসো ইংরেজি শিখি’র মতো আইসিটি মন্ত্রণালয়ের কাজ পাওয়া প্রতিষ্ঠানগুলো উসকানিমূলক ভূমিকায় ছিল। আশীর্বাদপুষ্ট ৬০ শতাংশ প্রতিষ্ঠান ব্যস্ত ছিল সরকারকে ফেলে দেওয়ার প্রচারণায়। জানি না তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে কি না। দুই বছরে বিএনপি-জামায়াত ঘরানার কয়েক হাজার পেজ সামাজিক মাধ্যমে আওয়ামী লীগ ও শেখ হাসিনা বিরোধী জনমত গঠনে কাজ করল। কারও চোখে পড়ল না। সবখানে জবাবদিহির বড়ই অভাব।
একটা কঠিন সময় অতিক্রম করছে আওয়ামী লীগ। চারপাশে যাত্রার ঢংয়ে কথা বলা নেতা বেশি। চাটুকার, মিথ্যাবাদী, ‘আওয়ামী লীগের ক্ষমতার আমলে আওয়ামী লীগ’ বনে যাওয়ারাই ঘিরে আছে সবখানে। অর্থ দিয়ে দল ও সহযোগী সংগঠনে পদ বাগানোরাও এগিয়ে। বাপদাদা চৌদ্দগুষ্টি জামায়াত, বিএনপি, ফ্রীডম পার্টি করত, পোলা এখন আওয়ামী লীগ, ছাত্রলীগ, যুবলীগের নেতা! পয়সা দিলে দুনিয়া মেলে। বলার কিছু নেই। সাংগঠনিক সম্পাদকের পৃষ্ঠপোষকতায় এক বছরে একটি উপজেলায় তিনটি কমিটি হওয়ার নজির আছে। কয়েক বছর আগে দেখেছিলাম গাছের পাতাও আওয়ামী লীগ। মনোনয়ন নিতে তামাশার নায়িকা, গায়িকারা সেলফি লাইনে থাকেন। এ কঠিন সময়ে কোথায় ছিলেন তারা? অনেকে সামাজিক মাধ্যমে সরকারের বিরুদ্ধে লিখেছেন। এখন আবার সব কষ্ট করে মুছছেন।
সরকার ও দলের অনেক দুর্বলতা বেরিয়ে এসেছে। কঠিন বাস্তবতা অস্বীকারের সুযোগ নেই। দাম্ভিক মানুষের আকাশের দিকে তাকিয়ে পথচলার এ জটিল সময়ে মনে পড়ছে একজন সৈয়দ আশরাফুল ইসলামের কথা। বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। ব্যক্তিগত জীবনে কোনো চাওয়াপাওয়া ছিল না। কূটকৌশল, কথার মারপ্যাঁচে জড়াতেন না। স্পষ্টবাদী মানুষ ছিলেন। স্বচ্ছতা নিয়ে রাজনীতি করতেন। দলের আদর্শ ও নীতি ধারণ করতেন। ছাত্রজীবন থেকেই রাজনীতিতে জড়িয়ে ছিলেন। বাবা সৈয়দ নজরুল ইসলাম ছিলেন বঙ্গবন্ধুর রাজনৈতিক সহচর। বাবার পথ ধরে তিনিও ছিলেন ছাত্রলীগ নেতা। কোনো অহংকার ছিল না। সবার সঙ্গে মিশতেন। লোভলালসা তাঁকে স্পর্শ করতে পারেনি। অর্থবিত্ত থেকে নিজেকে দূরে রাখতেন। জীবনযাপন ছিল সাদামাটা। নিজের মন্ত্রণালয় থেকে আত্মীয়স্বজনকে দূরে রাখতেন। ব্যক্তিগত তদবির গ্রাহ্য করতেন না। বক্তব্য দেওয়ার সময় যাত্রার নায়কের মতো ঢং করতেন না। মেরুদণ্ড সোজা রাখতেন। সামাজিক মাধ্যমে সেলফিবাজদের সঙ্গে ঢলে পড়তেন না। নায়িকা-গায়িকাদের দেখে গলে যাননি। চাটুকাররা সুযোগ পেত না ঘিরে রাখার। সাদাকে সাদা, কালোকে বলতেন কালো।
একজন রাজনীতিবিদকে সময়ের সঙ্গে থাকতে হয়। বাস্তবতা দেখে কথা বলতে হয়। সৈয়দ আশরাফ জানতেন কখন কী বলতে হবে। কী করতে হবে। দল ও নেত্রীর প্রতি আনুগত্যের ঘাটতি ছিল না। পার্টি অফিসে কম যেতেন। মন্ত্রণালয়ের কাজগুলো করতেন বাড়িতে বসে। তার পরও কর্মীদের সঙ্গে কোনো দূরত্ব ছিল না। লাগামহীন বক্তৃতা দিয়ে বিপদের মুখে কর্মীদের অকারণে ঠেলে দেননি। হেফাজতের সময় অতিকথনে বিপদে ফেলেননি সহযোগী সংগঠনকে। ওয়ান-ইলেভেনের কঠিন সময় বলিষ্ঠতা নিয়ে মিডিয়ার সামনে কথা বলেছেন। কোনো বিতর্ক হয়নি। তাঁর চেহারা দেখে কেউ টিভি বন্ধ করেনি। হেফাজতের শাপলা চত্বরে অবস্থানের দিনে ১৪ দলের বৈঠক শেষে সমন্বয়কের সামনে অযাচিতভাবে মাইক টেনে নেননি। অযথা কথা বলেননি। কখনো ঠিকানাহীন চামচা পরিবেষ্টিত থাকেননি। কর্মীদের বিপদের সময় পাশে ছিলেন। প্রয়োজনীয় নির্দেশ দিয়েছেন। কারও অন্যায় আবদার শোনেননি। সেলফি তুলে দেননি ফেসবুকে। হাসিঠাট্টায় মাতেননি নারী কর্মীদের সঙ্গে। ব্যতিক্রমই ছিলেন আওয়ামী লীগের সৈয়দ আশরাফ।
সৈয়দ আশরাফের নিজস্ব একটা স্টাইল ছিল। সাদা পায়জামা-পাঞ্জাবি পরতেন। তিনি হেঁটে গেলে কর্মীদের শ্রদ্ধা পেতেন। সবাই তাঁকে সম্মান জানাতেন। তাঁর ব্যক্তিত্ব ছিল অনেক উচ্চতায়। তাঁর সামনে কেউ বিতর্ক তৈরি করতেন না। তিনি পছন্দ করতেন না চাটুকারিতা। সাদা চোখে দেখতেন সবকিছু। সততা-নিষ্ঠা নিয়ে রাজনীতি করেছেন। ওয়ান-ইলেভেনের সময় সেনা সরকারের রক্তচক্ষু উপেক্ষা করে নেত্রীর মুক্তির আন্দোলন বেগবান করেছিলেন। কর্মীদের চাঙা করেছিলেন। বঙ্গবন্ধুর মেয়েদের প্রতি অঙ্গীকার ছিল। আবদুল জলিল কারাগারে যাওয়ার পর প্রথমে মুকুল বোস ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক হন। মুকুল বোসের উল্টাপাল্টা বক্তব্য-বিবৃতি কর্মীদের হতাশ, ক্ষুব্ধ করলে দায়িত্ব অর্পিত হয় সৈয়দ আশরাফুল ইসলামের প্রতি। ওয়ান-ইলেভেনের প্রতিটি ক্ষণে তিনি সে দায়িত্ব পালন করেছেন প্রলোভন ও হুমকির ঊর্ধ্বে উঠে। আওয়ামী লীগ সভানেত্রী তখন কারাগারে। নেত্রীর অবর্তমানে ভারপ্রাপ্ত সভাপতি জিল্লুর রহমানের সঙ্গে কাজ করেছেন একজন দক্ষ সাধারণ সম্পাদক হিসেবে। ২০০৮ সালে ভোটের সময় মাঠে ছিলেন নেত্রীর নির্দেশ অনুযায়ী। ভাবচক্কর দেখাননি। প্রকাশ ঘটাননি কোনো ধরনের দাম্ভিকতার।
অদক্ষ নেতৃত্বের ভাবসাবে কর্মীরা আহত হন। হতাশা কষ্ট নিয়ে তাদের ভাবনায় আসে-টানা ক্ষমতায় থাকা আওয়ামী লীগের মতো একটি দলের রাজনৈতিক কার্যালয় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে কেন পাহারা দিয়ে রাখতে হয়। এবার কতগুলো জেলা-উপজেলার আওয়ামী লীগ অফিস পোড়ানো হয়েছে বলতে পারবেন মাননীয়রা? আমলা, চাটুকার, হাইব্রিড, অর্থের বিনিময়ে পদ পাওয়া কাউকে দেখা যায়নি আগুনসন্ত্রাসের সময়। ধানমন্ডি এলাকার মাননীয় এমপি সাহেবও ছিলেন না মাঠে। বসেননি দলের অফিসে। ঢাকার মেয়ররা ছিলেন নিজ বাড়িতে। কাউন্সিলর সাহেবরা ঢুকে গিয়েছিলেন গর্তে। যুবলীগ এখন মৃত সংগঠন, চেয়ারম্যান বিদেশ ভ্রমণে। দল ও সরকারের অর্থ উপার্জনকারীদের বেশির ভাগ উড়াল দিয়েছেন। ভরদুপুরে পার্টি অফিসে কর্মীদের ভাত খাওয়ানোর লোকও পাওয়া যায়নি। অবহেলিত বঞ্চিতরা দুঃখভরা মন নিয়ে পার্টি অফিসে গেছেন। জানি সুবিধাভোগীরা অনেক কিছু করার গল্প শোনাবেন। নিজেকে জাহির করতে গল্প শোনাবেন। অতিকথনে লাভ নেই। সংগঠনের দুর্বলতা বালির বাঁধ দিয়ে ঠেকানো যায় না। ঘুরে দাঁড়াতে হলে শুরু করতে হবে দল ও সরকারে শুদ্ধি অভিযান। অন্যথায় আগামীতে সামাল দেওয়া কঠিন হবে। তখন মহররমের শোকের মাতমে বুক চাপড়িয়ে লাভ হবে না। ঘরের বেড়া কীভাবে কাটতে হয় চোর জেনে গেছে।
সে রাতে কারফিউ জারি না হলে কী হতো ভাবতেও পারছি না। নিজেদের আত্মসমালোচনা করুন। পরিস্থিতি ঘোলাটে করতে উসকানিমূলক প্রস্তুতি অনেক দিনের। ১৫ থেকে ১৯ জুলাই মাত্র কয়েকটি দিনে সবকিছু বদলে গেছে। ছাত্রছাত্রীদের ব্যবহার করে সুযোগসন্ধানীরা চেষ্টা করেছিল বাংলাদেশকে আফগানিস্তান ও সিরিয়া বানাতে। গানপাউডার দিয়ে পুড়িয়ে দেওয়া তাণ্ডব দেখে পরিস্থিতির ভয়াবহতা টের পাওয়া যায়। পরিকল্পনা বোঝা যায়। আঁতকে ওঠে বুকটা। এ বাংলাদেশ আমরা দেখতে চাইনি। গত ১৫ বছরে বাংলাদেশকে শেখ হাসিনা অনেক উঁচুতে উঠিয়েছেন। বিশ্বের বুকে দিয়েছেন নতুন মর্যাদা। সে মর্যাদা আজ ভূলুণ্ঠিত ভয়াবহ নাশকতায়।
আওয়ামী লীগকে এবার একটি অসহায় দল মনে হয়েছে। সহযোগী সংগঠনের নেতা-কর্মীরা ঘুরে বেড়িয়েছেন নিরাপদ আশ্রয়ের সন্ধানে। দয়া করে কেউ আর দাম্ভিক হবেন না। আগামীর কথা চিন্তা করুন। সৈয়দ আশরাফের মতো বিনয় নিয়ে কাজ করুন। ২০১৬ সালের সম্মেলনের কথা মনে পড়ছে। সেদিন রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে পরিবেশ ছিল অন্যরকম। বক্তব্য দিতে দলের সাধারণ সম্পাদক হিসেবে মঞ্চে উঠলেন সৈয়দ আশরাফ। রীতি অনুযায়ী লিখিত বক্তব্য পড়ার কথা। তিনি লিখিত বক্তব্য পড়লেন না। সবাইকে অনুরোধ করলেন লিখিত বক্তব্য পড়ে নিতে। তারপর তিনি বললেন, ‘প্রিয় ভাই ও বোনেরা, আমি আওয়ামী লীগের সন্তান, আওয়ামী লীগের ঘরেই আমার জন্ম। আওয়ামী লীগ যদি ব্যথা পায়, আমিও বুকে ব্যথা পাই। আওয়ামী লীগের কোনো কর্মী যদি ব্যথা পায়, আমারও অন্তরে ব্যথা লাগে। আওয়ামী লীগ তো আওয়ামী লীগই, এটা কোনো দল না, এটা আমার কাছে একটা অনুভূতির নাম। হাজারো বন্ধুর রক্ত, জাতির পিতা ও চার নেতার রক্ত, ভাষা আন্দোলনের রক্ত- সেই অনুভূতি এই অনুভূতিতে সৃষ্টি হয়েছে আওয়ামী লীগ।’ আবেগাপ্লুত আশরাফ বলেন, ‘আমাদের রক্ত খাঁটি। আমাদের রক্ত পরীক্ষিত। আমি আওয়ামী লীগ, আমৃত্যু আওয়ামী লীগ।’
২০১৩ সালের ৫ মে হেফাজতের আন্দোলনের দিন ঢাকার পরিবেশ ছিল অন্যরকম। সারা দেশ তখন টেনশনে। কী হচ্ছে, কী হবে এই ছিল আলোচনা। মতিঝিলের শাপলা চত্বর দখল নিয়েছিল হেফাজতে ইসলাম। সৈয়দ আশরাফ দলের সাধারণ সম্পাদক হিসেবে সারাক্ষণ যোগাযোগ রাখলেন আওয়ামী লীগ সভানেত্রী, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে। নেত্রীর নির্দেশ-আদেশ বাস্তবায়নে বৈঠক করলেন দলীয় নেতাদের সঙ্গে। কথা বললেন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সঙ্গে। তারপর এলেন মিডিয়ার সামনে। তাঁর চলনে-বলনে কোনো টেনশনের ছায়া ছিল না। তিনি কয়েক ঘণ্টা সময় বেঁধে দিয়ে হেফাজতের বিরুদ্ধে হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করলেন। বললেন, ‘ঢাকা ত্যাগ করুন। বিশৃঙ্খলার বিরুদ্ধে হবে অভিযান।’ কণ্ঠস্বরে বলিষ্ঠতা ছিল। তিনি একবারের জন্য দল ও সহযোগী সংগঠনকে টানলেন না। একটি শব্দও উসকানিমূলক বললেন না।
এই হলেন সৈয়দ আশরাফ। অন্য কারও সঙ্গে তাঁর তুলনা হয় না। নেত্রীর পাশে এবার আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা একজন সৈয়দ আশরাফুল ইসলামের অভাব অনুভব করেছেন। সামাজিক মাধ্যমে অনেকে লিখেছেন। আলাপ-আলোচনায় বলেছেন। আমাদের রাজনৈতিক দলগুলোয় প্রজ্ঞা-দূরদর্শিতা সম্পন্ন নেতার এখন বড় বেশি অভাব। আওয়ামী লীগের কয়েক মেয়াদের ক্ষমতার এই সময়ে একজন সৈয়দ আশরাফের দরকার ছিল দলের জন্য, নেত্রীর জন্য, কর্মীদের জন্য।
লেখক : সম্পাদক, বাংলাদেশ প্রতিদিন