প্রজন্ম Z বা জেনারেশন জেড হলো ১৯৯৭ সাল থেকে ২০১২ সালের মধ্যে জন্মগ্রহণকারী মানুষের প্রজন্ম। ২০২৪ সালে তাদের বয়স ১২ থেকে ২৭ বছরের মধ্যে। পশ্চিমা দেশগুলোতে এই প্রজন্ম নিয়ে প্রতিনিয়ত বিশ্লেষণ করা হচ্ছে। আমার বিশ্বাস বাংলাদেশের ছাত্র সমাজ এই শব্দ দুটোর সঙ্গে বেশ পরিচিত। বাংলাদেশে প্রায় ৫০% এর বেশি এই প্রজন্মের ছেলেমেয়ে রয়েছে। বলা হয় এই গ্রুপের ছেলেমেয়েরা এলজিবিটি অধিকারের পক্ষে, লিঙ্গ সমতা ও গর্ভপাতের পক্ষে এবং তুলনামূলকভাবে পূর্ববর্তী প্রজন্মের (মিলেনিয়াম প্রজন্ম) তুলনায় এই গ্রুপের সমাজতন্ত্রের পক্ষে আরও অনুকূল দৃষ্টিভঙ্গি রয়েছে। আমার ধারণা, বাংলাদেশেও একই রকম। এই গ্রুপের ছেলেমেয়েদের কিছু কিছু বৈশিষ্ট্য তুলে ধরা হলো :
১. ডিজিটাল অধিবাসী : এই গ্রুপ প্রযুক্তিগতভাবে বুদ্ধিমান এবং সমতল বিশ্বে বড় হয়েছে, তাই এরা ইন্টারনেট ছাড়া একটি বিশ্ব মনে করতে পারে না। কীভাবে কথা বলতে হয় তা শেখার আগে তারা একটি আইপ্যাড সোয়াইপ করে বড় হয়েছে এবং স্মার্টফোনের যুগে বড় হওয়া প্রথম প্রজন্ম।
২. উদ্যোক্তা : জেনারেশন জেড উবার এবং এয়ারবিএনবির মতো ব্যবসার সঙ্গে জড়িত, অর্থ উপার্জনের জন্য নিজের সময় এবং সংস্থানগুলো ব্যবহার করা কতটা সহজ দেখে। জেনারেশন জেড তাদের নিজস্ব ব্যবসা শুরু করতে চায়।
৩. বৈচিত্র্যময় : যুক্তরাষ্ট্রের প্রেক্ষাপটে এটি শেষ প্রজন্ম যা সংখ্যাগরিষ্ঠ সাদা (৫২%) হবে। ২০০০-২০১০ এর মধ্যে দেশটির হিস্পানিক জনসংখ্যা মোট জনসংখ্যার চার গুণ হারে বৃদ্ধি পেয়েছে। একজন কালো রাষ্ট্রপতির ধারণা তাদের কাছে ব্যতিক্রমী নয়- এটি স্বাভাবিক। জেনারেশন জেড বৈচিত্র্যের সম্মুখীন হয়ে বড় হয়েছে এবং তারা এটি সম্পর্কে অত্যধিক ইতিবাচক বোধ করেন।
৪. ধর্ম বিষয় : ধর্ম নিয়ে মাথাব্যথা কম।
৫. আবেগপ্রবণতা : এই প্রজন্ম বেশ আবেগপ্রবণ। যা কিছু করবে তা মন দিয়েই করে থাকে।
৬. একাকিত্ব : এই প্রজন্ম একাকিত্ব ভালোবাসে। আর সেজন্যই এদের মধ্যে উদ্বেগ এবং বিষণ্ণতা বৃদ্ধি পেয়েছে।
৭. প্রগতিশীল : এই প্রজন্ম তুলনামূলক সব বিষয়েই বেশ প্রগতিশীল এবং তাদের মদ্যপান, ধূমপান এবং মাদক গ্রহণের সম্ভাবনা কম। তবুও তারা মারিজুয়ানার বৈধতা এবং সমকামী বিবাহের নৈতিকতার মতো বিষয়গুলোতে আরও প্রগতিশীল দৃষ্টিভঙ্গি পোষণ করে।
কোটা নিয়ে বাংলাদেশের সাম্প্রতিক টালমাটাল ঘটনার আরম্ভটা হয় এই জেনারেশন জেড দ্বারাই। এরা আবেগপ্রবণ প্রজন্ম। সুতরাং দলবেঁধে যোগদান করেছে প্রটেস্ট মার্চে। হাইস্কুলের ছাত্রছাত্রী থেকে শুরু করে কলেজ বিশ্ববিদ্যালয় পর্যন্ত একজোট হয়ে গেল। একটা যৌক্তিক আন্দোলনে যোগদান করাটাও এক ধরনের রোমাঞ্চকর ছিল অনেকের জন্য। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর প্রতি দু-একটি ঢিল ছোড়াও রোমাঞ্চকর মনে হওয়াটাও অস্বাভাবিক নয় তাদের জন্য। ঘটনাটা ওই পর্যন্ত থাকলেই ভালো হতো।
অথবা একটা কনসার্ট আয়োজন করে সারা দেশ মাতিয়ে তোলা যেত। ক্রিয়েটিভের সঙ্গে দাবিগুলো আরও বলিষ্ঠভাবে তুলে ধরা যেত। আমার ধারণা, এই জেনারেশন জেড-এর কোনো অরাজনৈতিক উপদেষ্টা ছিল না। তা ছাড়া সোশ্যাল মিডিয়াগুলো তো আর বসে থাকে না। আমার মাত্র দুই মাসের অভিজ্ঞতা ফেসবুকের। এতেই আমি বুঝে গেছি, যুদ্ধ শুরুর জন্য হিটলারের প্রয়োজন নেই, এক ফেসবুকই যথেষ্ট। আর শুধু কি ফেসবুক? ইউটিউব আছে, টেক্সট মেসেজ আছে, আছে ইনস্টাগ্রাম, লিংকডিন, রেডিট, স্ন্যাপচ্যাট, হোয়াটসঅ্যাপ, আরও কত কী!
তারপর আছে ইন্ধন জোগানোর লোকজন। তারা সর্বদা ওত পেতে থাকে কখন আগুনে ঘি ঢালবে। আমি একজন শিক্ষকের কথা শুনে হতবাক। একজন শিক্ষকের মুখ থেকে এমন অকথ্য ভাষা আসে কী করে? তাও আবার আরেকজন স্বনামধন্য শিক্ষক সম্পর্কে।
একজন শিক্ষক যদি এমনতর হয় তাহলে সমগ্র বাংলাদেশে কত হাজারো সুযোগসন্ধানী অসৎ, ক্ষমতালোভী, জীবনযাত্রায় পজিটিভিটির অভাব লোকজন রয়েছে যারা অরাজকতা তৈরি করে ফায়দা লুটতে চায়। রাজনৈতিক প্রতিপক্ষরা তো আর বসে থাকবে না। তারাই বা সুযোগ নেবে না কেন? তবে একাত্তরের পরাজিত শক্তিরা বিশেষ করে শিবির-জামায়াতরা আগুন নিয়ে ভালোই খেলা করেছে।
বাংলাদেশের আইনশৃঙ্খলা বাহিনী বিশেষ করে সেনাবাহিনী দেশটাকে বাঁচিয়ে দিয়েছে এবং একটা ভয়ংকর গৃহযুদ্ধের হাত থেকে রক্ষা করেছে। সেনাবাহিনীকে আমি শ্রদ্ধা ও কৃতজ্ঞতা জানাতে চাই। বাংলাদেশ তো আমার শুধু মাতৃভূমি নয়। বাংলাদেশই আমাকে তৈরি করেছে। তাই আমি ২৫ বছর ধরে যুক্তরাষ্ট্রে থেকেও অনুভব করি বাংলাদেশকে।
আমার মনে হয়েছে, দেশে একটা ‘ফেইল্ড ক্যু’ হয়ে গেছে।
জেলখানাগুলো ভরবে বৈকি! কে জানে, বর্তমান সরকার হয়তো আরও শক্তিশালী হবে এবং সেই সঙ্গে আরও বিচক্ষণতার পরিচয় দেবে। গরিব-দুঃখীদের দুবেলা খাওয়ার ব্যবস্থা করবে, বিশেষ করে জেনারেশন জেড-এর প্রতি আরও ভালোভাবে দৃষ্টি রাখবে, তারা যেন ভালো মানুষ হয়ে উঠতে পারে।
এ প্রজন্মকে আরও ক্রিয়েটিভ বানাতে সাহায্য করতে হবে। একটা বড়সড়ো ফান্ডিংয়ের মাধ্যমে এদের ডিজিটাল, এআই, আরও নতুন প্রযুক্তি ট্রেন্ডআপ করতে হবে। এক্ষুনি একটা গবেষণা চালু করে এই প্রজন্মকে সার্ভে করে বের করুন এরা কী চায়? এই প্রজন্মকে সুখী রাখতে হবে। বিস্ময়কর হলেও সত্য, ইন্দোনেশিয়ায় প্রায় ৯০% এই প্রজন্মের ছেলেমেয়ে সুখী। ভারতে ৭০% কিন্তু বাংলাদেশ নিয়ে কোনো তথ্য নেই।
পাঠকদের জন্য এবং সরকারি কর্মকর্তাদের জন্য আমি একটি তথ্যসূত্র দিলাম, গবেষণার আইডিয়া পাবেন।
GENERATION Z: GLOBAL CITIZENSHIP SURVEY
Varkey Foundation
2nd Floor, St Albans House 57 - 59 Haymarket London,
SW1Y 4QX. UK
লেখক : বিজ্ঞান ও অঙ্ক বিভাগ, মিসিসিপি ইউনিভার্সিটি ফর উইম্যান, কলম্বাস, যুক্তরাষ্ট্র
Email: [email protected]