পদ্মা মেঘনা যমুনা পাড়ের মানুষ মহান মুক্তিযুদ্ধে অংশ নিয়েছে জাতি-ধর্ম-নির্বিশেষে। আমরা বাংলাদেশের সন্তান এই পরিচয়ে। স্বাধীনতার পর সে পরিচয়ে বিভক্তি আনা হয়েছে। রাষ্ট্রীয় পরিচয়ে আমরা সবাই বাংলাদেশি হলেও কে মুসলমান, কে হিন্দু, কে খ্রিস্টান, কে বৌদ্ধ এই বিভাজনের চর্চাও শুরু করেছে বিভেদকামীরা। রাজনৈতিক হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করা হয়েছে ধর্মকে। উপেক্ষিত হয়েছে মানুষের নাগরিক অধিকার। দীর্ঘ দেড় দশকেরও বেশি সময়ের কর্তৃত্ববাদী শাসনের অবসান ঘটিয়ে রাষ্ট্র সংস্কারের উদ্দেশ্য নিয়ে অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেওয়ার আগে থেকেই সক্রিয় হয়ে উঠেছে বিভেদকামীরা। এ ষড়যন্ত্রের মোকাবিলায় অন্তর্বর্তী সরকারের পক্ষ থেকে ইতোমধ্যে নানা ধরনের কার্যকর পদক্ষেপও নেওয়া হয়েছে। সনাতন ধর্মাবলম্বীদের উপাসনাগার এবং তাদের জানমালের নিরাপত্তায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কর্মীরা পাহারা বসিয়েছেন দেশের বিভিন্ন এলাকায়। যা সনাতন ধর্মাবলম্বীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করেছে। এ বিষয়ে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস মঙ্গলবার ঢাকেশ্বরী জাতীয় মন্দির পরিদর্শনে গিয়ে সনাতন ধর্মাবলম্বী নেতাদের সঙ্গে কথা বলেছেন। তিনি তাদের ‘সংখ্যালঘু ধারণার খোপে’ নিজেদের আবদ্ধ না রেখে বাংলাদেশের নাগরিক হিসেবে সাংবিধানিক অধিকার চাওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন। বলেছেন, ‘আমাদের গণতান্ত্রিক যে আকাক্সক্ষা, সেখানে আমরা বিবেচিত মুসলমান হিসেবে নয়, হিন্দু হিসেবে নয়, বৌদ্ধ হিসেবে নয়, মানুষ হিসেবে। আমাদের অধিকারগুলো নিশ্চিত করতে হবে। সমস্ত সমস্যার গোড়া হলো- আমরা যত প্রাতিষ্ঠানিক আয়োজন করেছি, সবকিছু পচে গেছে। এ কারণে এই গোলমালগুলো হচ্ছে। প্রাতিষ্ঠানিক আয়োজনগুলোকে ঠিক করতে হবে।’ প্রধান উপদেষ্টার বক্তব্যে জাতিকে বিভাজনের প্রক্রিয়া থেকে এবং সব নাগরিকের সাংবিধানিক অধিকারকে গুরুত্ব দেওয়ার যে প্রত্যয় প্রকাশ পেয়েছে, তা অভিনন্দনযোগ্য। আমাদের বিশ্বাস, বিভাজনের গন্ডি ডিঙিয়ে জাতিকে ঐক্যবদ্ধ করা সম্ভব হলে সংখ্যাগুরু সংখ্যালঘু তত্ত্বের ইতি ঘটানো সম্ভব হবে। নিশ্চিত হবে সবার ওপরে মানুষ সত্য তত্ত্ব।